আচরণবিধির লঙ্ঘন
সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়াশোনা করতে এসে মৌলভী বুধপাড়াতেই থিতু হয়েছেন আবদুল ওহাব সোহেল। এ এলাকাতেই বিয়ে করেছেন। তিনি ছিলেন রাবি শিবিরের সেক্রেটারিয়েট মেম্বার। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর মতিহার থানার আমির হয়েছিলেন।
স্ট্রিম সংবাদদাতা
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি করে স্থায়ী বসত গড়েছেন। পরে সেখানে প্রভাব বিস্তার করে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনেও ‘পরোক্ষভাবে’ প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা–কর্মীদের রাকসু নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে শিবিরের প্যানেল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্থানীয়দের আশ্রয়ে অনেক আগে থেকেই সংগঠিত ছাত্রশিবির। আসন্ন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মী ছাড়াও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এমনটি করার সুযোগ নেই। যদিও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রচারণায় অংশ নেওয়াকে আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে না শিবির।
রাকসু নির্বাচনে বামপন্থী সংগঠনের প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’-এর ভিপিপ্রার্থী ফুয়াদ রাতুল অভিযোগ করে বলছেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বা সাবেক ছাত্রদের প্রচারণায় অংশগ্রহণ আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু এসব প্রকাশ্যে হলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এ বিষয়ে শিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, স্থানীয়রা তো ভোট দেবেন না। তবে যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে আশপাশে থাকেন, তাদের কাছ থেকে তো একটা সুবিধা পাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে এটা সম্পূর্ণ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে। কিন্তু এই বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি যে কোথায় তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। কে কোথায় প্রচারণা করছে সেটা তো আমরা জানব না।
রাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর। নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা হলে বেশিরভাগ প্যানেল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে শিবির সমর্থিত প্যানেল এর বিরোধিতা করে। দুর্গাপূজার ছুটির পর আবার ভোটের প্রচারণা জমেছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের প্যানেলের প্রচার চালাচ্ছেন। ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকার ছাত্রাবাসগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীদের সমর্থন চাচ্ছেন স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে সবখানেই তাদের প্রচারণা চলছে।
এটা আসলে অপপ্রচার। আমাদের ওই সময়েও এই অপপ্রচার ছিল। এখনও আছে। এর সাথে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। ভোট দেবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারাই শিবিরের কার্যক্রম দেখে তাদের পাশে এসেছেন। তারা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পান, তাহলে বিপুল ভোটে শিবির সমর্থিত প্যানেল জিতবে। নুরুল ইসলাম বুলবুল, আমির, জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। তাঁদের মধ্যে ৯ হাজার ৬৭৩ জন আবাসন সুবিধা পান। প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনাবাসিক। তাঁরা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিবিরের প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াত ও শিবিরের বহিরাগত নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগ আছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় থেকেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর পক্ষে ক্যাম্পাসের আশপাশের জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ভোটের প্রচার করেছেন। তবে এটিকে আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে মনে করছেন না শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে রয়েছে সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড। এসব এলাকা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে বিনোদপুর, মির্জাপুর, কাজলা, বাজে কাজলা, বুধপাড়া, মেহেরচন্ডী, লেবু বাগান ও ডাঁসমারী এলাকা জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শিবিরের শক্ত অবস্থানের কারণে বুধপাড়ার একটি অংশ শিবির বুধপাড়া নামেও পরিচিতি পেয়েছে। আরেকটি অংশের নাম মৌলভী বুধপাড়া। আশির দশকে ক্যাম্পাস থেকে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার পর শিবির এসব এলাকায় থাকতে গিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। অনেকে বিয়েও করেছেন এ এলাকায়।
তারপর আর তাঁরা নিজের জেলায় ফিরে যাননি। সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়াশোনা করতে এসে মৌলভী বুধপাড়াতেই থিতু হয়েছেন আবদুল ওহাব সোহেল। এ এলাকাতেই বিয়ে করেছেন। তিনি ছিলেন রাবি শিবিরের সেক্রেটারিয়েট মেম্বার। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর মতিহার থানার আমির হয়েছিলেন। তিনি এখন কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষক। রাবি শিবিরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিকুর রহমানও আর নিজের জেলায় ফিরে যাননি। এ এলাকায় বিয়ে করে থাকেন বিনোদপুরে।
সাবেক এক শিবির নেতার ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে খুঁজলে এমন অন্তত অর্ধশত সাবেক শিবির নেতাকে পাওয়া যাবে, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর ফিরে যাননি, এ এলাকায় বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলও ঝিনাইদহ থেকে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। ছিলেন রাবি শিবিরের সভাপতি। দলের প্রয়াত এক নেতার মেয়েকে বিয়ে করে তিনি রাজশাহীতেই থেকে গেছেন।
সাবেক ওই শিবির নেতা জানান, একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কোনো প্রভাব ছিল না। কিন্তু হলে সিট না পাওয়া শিবির নেতারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে থাকতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের বীজ বপণ করে দিয়েছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বগুড়ার গাবতলীর জামায়াত নেতা আবদুস সাত্তারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জায়গা না পেয়ে আবদুস সাত্তার খড়খড়ি এলাকার একটি বাড়িতে লজিং থাকতে শুরু করেন। তখন এ এলাকায় জামায়াত-শিবির করার মতো কোন পরিবার ছিল না। এখন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘১৯৮২ সালে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার পর শিবির আবার ক্যাম্পাসে এসেছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরেও একটা সময় পর্যন্ত শিবির ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে আর সম্ভব হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে শিবির আশপাশের এলাকায় দাওয়াতি কাজ করেছে, শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে, গাইড বই দিয়ে কিংবা যে বিপদে পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করেছে। তাই ক্যাম্পাসের চারপাশেও শিবিরের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। জামায়াতের সমর্থক বেড়েছে।’
তবে বিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক করে শিবিরের অবস্থান শক্ত করার বিষয়টিকে ‘অপপ্রচার’ মনে করেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে অপপ্রচার। আমাদের ওই সময়েও এই অপপ্রচার ছিল। এখনও আছে। এর সাথে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। ভোট দেবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারাই শিবিরের কার্যক্রম দেখে তাদের পাশে এসেছেন। তারা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পান, তাহলে বিপুল ভোটে শিবির সমর্থিত প্যানেল জিতবে।’
রাবিতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। চার বছরের মাথায় ১৯৮২ সালেই শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছিল। ওই বছরের ১১ মার্চ ক্যাম্পাসে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিবির। এ জন্য আগের দিন প্রচারণা চলছিল। তাতে হামলার ঘটনা ঘটে। তারপরও পরদিন ওই নবীন বরণ অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সেদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনটি বাসে করে বহিরাগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে এসেছিল শিবির। সেদিন সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন ছাত্রলীগের এক নেতা ও শিবিরের বহিরাগত চারজন কর্মী মারা যায়। এই সহিংস ঘটনায় রাবি প্রশাসন ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ হয়। শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পায়।
রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল ‘নৃশংসতার নীরব সাক্ষী’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘১১ মার্চে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ওরা শিবিরকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে মরণ কামড় দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বুমেরাং হয়েছে। তারাই তাদের ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে আটকে পড়ে। ওরা আমাদের উৎখাত করতে পারেনি। মতিহারে সবুজ চত্বর হয়েছে শিবিরের একক মজবুত ঘাঁটি। ১১ মার্চের শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। সেদিনের নৃশংসতা, আহতদের আহাজারি আর আর্তচিৎকার এবং আহত-শহীদের রক্ত প্রতিটি শিবিরকর্মীর প্রাণে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিবিরকর্মীরা ভাই হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েনি। তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। তারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকেও অকাতরে বিলিয়ে দেবার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করেছে।’
আশপাশের এলাকায় শিবিরের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘সেদিন শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতা তারা নিষিদ্ধ করেছিল। শিবির নেতৃবৃন্দ এতে ভড়কে যাননি। সংগঠনকে আরো মজবুত করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্যাতিত নিপীড়িত ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পাষণ্ডদের নৃশংসতা তুলে ধরে। তুলে ধরে শিবির কর্মীদের প্রকৃত অপরাধ “তারা আল্লাহর পথে কাজ করে।” সংগঠনের আদর্শিক সৌন্দর্য ও নিজেদের উন্নত আচরণ, উন্নত নৈতিক চরিত্রের মাধ্যমে শিবির পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের হৃদয়ে নিজেদের অবস্থান করে নেয়; রচিত হয় শিবিরের প্রাথমিক শক্তিশালী ভিত্তি।’
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন। পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি করে স্থায়ী বসত গড়েছেন। পরে সেখানে প্রভাব বিস্তার করে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনেও ‘পরোক্ষভাবে’ প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা–কর্মীদের রাকসু নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে শিবিরের প্যানেল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্থানীয়দের আশ্রয়ে অনেক আগে থেকেই সংগঠিত ছাত্রশিবির। আসন্ন নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মী ছাড়াও প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এমনটি করার সুযোগ নেই। যদিও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের প্রচারণায় অংশ নেওয়াকে আচরণবিধির লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে না শিবির।
রাকসু নির্বাচনে বামপন্থী সংগঠনের প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’-এর ভিপিপ্রার্থী ফুয়াদ রাতুল অভিযোগ করে বলছেন, স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বা সাবেক ছাত্রদের প্রচারণায় অংশগ্রহণ আচরণবিধির লঙ্ঘন। কিন্তু এসব প্রকাশ্যে হলেও কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এ বিষয়ে শিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, স্থানীয়রা তো ভোট দেবেন না। তবে যে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে আশপাশে থাকেন, তাদের কাছ থেকে তো একটা সুবিধা পাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে এটা সম্পূর্ণ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে। কিন্তু এই বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি যে কোথায় তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। কে কোথায় প্রচারণা করছে সেটা তো আমরা জানব না।
রাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৫ সেপ্টেম্বর। নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করা হলে বেশিরভাগ প্যানেল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে শিবির সমর্থিত প্যানেল এর বিরোধিতা করে। দুর্গাপূজার ছুটির পর আবার ভোটের প্রচারণা জমেছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের প্যানেলের প্রচার চালাচ্ছেন। ক্যাম্পাসসংলগ্ন এলাকার ছাত্রাবাসগুলোতে থাকা শিক্ষার্থীদের সমর্থন চাচ্ছেন স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে সবখানেই তাদের প্রচারণা চলছে।
এটা আসলে অপপ্রচার। আমাদের ওই সময়েও এই অপপ্রচার ছিল। এখনও আছে। এর সাথে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। ভোট দেবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারাই শিবিরের কার্যক্রম দেখে তাদের পাশে এসেছেন। তারা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পান, তাহলে বিপুল ভোটে শিবির সমর্থিত প্যানেল জিতবে। নুরুল ইসলাম বুলবুল, আমির, জামায়াতে ইসলামী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। তাঁদের মধ্যে ৯ হাজার ৬৭৩ জন আবাসন সুবিধা পান। প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনাবাসিক। তাঁরা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিবিরের প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন জামায়াত ও শিবিরের বহিরাগত নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগ আছে, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় থেকেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’-এর পক্ষে ক্যাম্পাসের আশপাশের জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ভোটের প্রচার করেছেন। তবে এটিকে আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে মনে করছেন না শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে রয়েছে সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড। এসব এলাকা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে বিনোদপুর, মির্জাপুর, কাজলা, বাজে কাজলা, বুধপাড়া, মেহেরচন্ডী, লেবু বাগান ও ডাঁসমারী এলাকা জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শিবিরের শক্ত অবস্থানের কারণে বুধপাড়ার একটি অংশ শিবির বুধপাড়া নামেও পরিচিতি পেয়েছে। আরেকটি অংশের নাম মৌলভী বুধপাড়া। আশির দশকে ক্যাম্পাস থেকে ‘বিতাড়িত’ হওয়ার পর শিবির এসব এলাকায় থাকতে গিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। অনেকে বিয়েও করেছেন এ এলাকায়।
তারপর আর তাঁরা নিজের জেলায় ফিরে যাননি। সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়াশোনা করতে এসে মৌলভী বুধপাড়াতেই থিতু হয়েছেন আবদুল ওহাব সোহেল। এ এলাকাতেই বিয়ে করেছেন। তিনি ছিলেন রাবি শিবিরের সেক্রেটারিয়েট মেম্বার। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর মতিহার থানার আমির হয়েছিলেন। তিনি এখন কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষক। রাবি শিবিরের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফিকুর রহমানও আর নিজের জেলায় ফিরে যাননি। এ এলাকায় বিয়ে করে থাকেন বিনোদপুরে।
সাবেক এক শিবির নেতার ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে খুঁজলে এমন অন্তত অর্ধশত সাবেক শিবির নেতাকে পাওয়া যাবে, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর ফিরে যাননি, এ এলাকায় বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলও ঝিনাইদহ থেকে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। ছিলেন রাবি শিবিরের সভাপতি। দলের প্রয়াত এক নেতার মেয়েকে বিয়ে করে তিনি রাজশাহীতেই থেকে গেছেন।
সাবেক ওই শিবির নেতা জানান, একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কোনো প্রভাব ছিল না। কিন্তু হলে সিট না পাওয়া শিবির নেতারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে থাকতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের বীজ বপণ করে দিয়েছেন। উদাহরণ দিয়ে তিনি বগুড়ার গাবতলীর জামায়াত নেতা আবদুস সাত্তারের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জায়গা না পেয়ে আবদুস সাত্তার খড়খড়ি এলাকার একটি বাড়িতে লজিং থাকতে শুরু করেন। তখন এ এলাকায় জামায়াত-শিবির করার মতো কোন পরিবার ছিল না। এখন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘১৯৮২ সালে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার পর শিবির আবার ক্যাম্পাসে এসেছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরেও একটা সময় পর্যন্ত শিবির ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে আর সম্ভব হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে শিবির আশপাশের এলাকায় দাওয়াতি কাজ করেছে, শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে, গাইড বই দিয়ে কিংবা যে বিপদে পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করেছে। তাই ক্যাম্পাসের চারপাশেও শিবিরের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। জামায়াতের সমর্থক বেড়েছে।’
তবে বিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক করে শিবিরের অবস্থান শক্ত করার বিষয়টিকে ‘অপপ্রচার’ মনে করেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে অপপ্রচার। আমাদের ওই সময়েও এই অপপ্রচার ছিল। এখনও আছে। এর সাথে রাকসুর কোনো সম্পর্ক নেই। ভোট দেবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারাই শিবিরের কার্যক্রম দেখে তাদের পাশে এসেছেন। তারা যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পান, তাহলে বিপুল ভোটে শিবির সমর্থিত প্যানেল জিতবে।’
রাবিতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। চার বছরের মাথায় ১৯৮২ সালেই শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছিল। ওই বছরের ১১ মার্চ ক্যাম্পাসে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল শিবির। এ জন্য আগের দিন প্রচারণা চলছিল। তাতে হামলার ঘটনা ঘটে। তারপরও পরদিন ওই নবীন বরণ অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সেদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তিনটি বাসে করে বহিরাগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে এসেছিল শিবির। সেদিন সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন ছাত্রলীগের এক নেতা ও শিবিরের বহিরাগত চারজন কর্মী মারা যায়। এই সহিংস ঘটনায় রাবি প্রশাসন ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ হয়। শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পায়।
রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল ‘নৃশংসতার নীরব সাক্ষী’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘১১ মার্চে হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ওরা শিবিরকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে মরণ কামড় দিয়েছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বুমেরাং হয়েছে। তারাই তাদের ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদে আটকে পড়ে। ওরা আমাদের উৎখাত করতে পারেনি। মতিহারে সবুজ চত্বর হয়েছে শিবিরের একক মজবুত ঘাঁটি। ১১ মার্চের শহীদদের রক্ত বৃথা যায়নি। সেদিনের নৃশংসতা, আহতদের আহাজারি আর আর্তচিৎকার এবং আহত-শহীদের রক্ত প্রতিটি শিবিরকর্মীর প্রাণে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। শিবিরকর্মীরা ভাই হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েনি। তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করেছে। তারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকেও অকাতরে বিলিয়ে দেবার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করেছে।’
আশপাশের এলাকায় শিবিরের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘সেদিন শিবিরের সাংগঠনিক তৎপরতা তারা নিষিদ্ধ করেছিল। শিবির নেতৃবৃন্দ এতে ভড়কে যাননি। সংগঠনকে আরো মজবুত করার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্যাতিত নিপীড়িত ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পাষণ্ডদের নৃশংসতা তুলে ধরে। তুলে ধরে শিবির কর্মীদের প্রকৃত অপরাধ “তারা আল্লাহর পথে কাজ করে।” সংগঠনের আদর্শিক সৌন্দর্য ও নিজেদের উন্নত আচরণ, উন্নত নৈতিক চরিত্রের মাধ্যমে শিবির পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের হৃদয়ে নিজেদের অবস্থান করে নেয়; রচিত হয় শিবিরের প্রাথমিক শক্তিশালী ভিত্তি।’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৬০ জন নিহত এবং ৮ হাজার ৫০ জন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশনারদের একজন একটি রাজনৈতিক দলের মতো করে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
৭ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
৮ ঘণ্টা আগেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ অভিযোগ করেছে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে তারা আজকের (১৪ অক্টোবর) নির্ধারিত প্রজেকশন মিটিং স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে