তেভাগা আন্দোলনের নেত্রীর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে। প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সরকারি গেজেট প্রকাশের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বাড়িটি অধিগ্রহণ শেষ করা যায়নি। পৈতৃকসূত্রে বাড়িটির বর্তমান মালিকরা বলছেন, তারা পুনর্বাসন পেলে বাড়ি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। আর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দাবি, বাড়িটি সংরক্ষণে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর বিষয়টিকে স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
এর আগে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ হিসেবে ২০১৪ সালে সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে ইলা মিত্রের ওই বাড়িসহ ২২ শতাংশ জমি সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ৪ জানুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে গেজেট করে। গেজেট প্রকাশের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও জমির অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা যায়নি।
বাড়িটিতে বসবাসকারীদের দাবি, ইলা মিত্রের পূর্বপুরুষেরা দেশত্যাগের পর বাড়িটি কিনে নেন খোদাবক্স নামের স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যক্তি। পরে তাঁর কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিক হন হাজি কিয়াম উদ্দিন। ১৯৭০ থেকে বাড়িটিতে বসবাস করছেন কিয়াম উদ্দিনের উত্তরসূরীরা।
তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস ও ইলা মিত্রের জীবনী-গ্রন্থ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৬-১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র। তবে বেঙ্গলের ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকরির সুবাদে ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম তাঁর। ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রাম তাঁর পৈতৃক নিবাস। সেই সুবাদে ছোট বেলায় বেশ কয়েকবার বাগুটিয়া গ্রামে এসেছেন ইলা মিত্র। পার্শ্ববর্তী গোপালপুর, শেখরা, রঘুনন্দপুর, শাহাবাজপুরসহ কয়েকটি গ্রামে তাঁর শৈশব-কৈশরের স্মৃতি রয়েছে। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মারা যান তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র।
শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বাগুটিয়া গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের জরাজীর্ণ ও কর্দমাক্ত মেঠোরাস্তার পাশে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথা ৯টি কক্ষের কারুকার্যমণ্ডিত নকশাকারে পুরনো ভবন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১২৯৯ বঙ্গাব্দ) এই বাড়িটি নির্মাণ করেন ইলা মিত্রের দাদা রাজমহন সেন।
ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১৭ শতাংশ জমির ওপর পুরনো আমলের নিদর্শন চুন-সুড়কির তৈরি দোতলা ও একতলা দুটি ভবনে ৯টি কক্ষ। প্রধান ফটকযুক্ত বাড়িটিতে বসবাস করছেন হাজি কিয়াম উদ্দিনের চার সন্তান আলী হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রশিদ ও রাশিদুল ইসলাম। বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় একটি ভবনের ছাদের অনেকাংশই ভেঙে পড়েছে, দেয়ালে ধরেছে ফাটল।
বাড়িটিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। পরে আলী হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে ডিসি-ইউএনও (জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) এসে শুধু আশা দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ নেই। বাড়িতে আসার জন্য যে কাচা রাস্তা আছে, সেটির সংস্কারে একটা ইটও ফেলা হয়নি।’
প্রত্নসম্পদ ঘোষণার পরও দখল না ছাড়া প্রসঙ্গে আলী হোসনে বলেন, ‘আমরা তো বাড়িটি দিতে রাজি আছি। আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ছেড়ে দিব। প্রতিবছর বারবার আপনারা এসে আমাদের বিরক্ত ও হয়রানি করেন। আপনারা কেউ আর আসবেন না।’
এদিকে স্বাধীনতার পর ইলা মিত্রকে নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। ঐতিহাসিক বিচারে বারবার দাবি উঠে তাঁর পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করার। ২০১১ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও ঢাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্বারকলিপি পেশ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে পুরার্কীতি ও প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত ও ২০১৭ সালে বাড়িটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে প্রত্নসম্পদ ঘোষণার প্রায় ৯ বছরেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি সংরক্ষণে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে ইলা মিত্রের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা, ইলা মিত্রের নামে জাদুঘর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র, ছাত্রীনিবাস ও সড়কের নামকরণের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে।
বর্তমান প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ইলা মিত্রের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণ জরুরি মনে করেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যসচিব সুজন বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘ইলা মিত্র ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, নাচোল বিদ্রোহের রানিমা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুহৃদ। তাঁর পৈতৃক ভূমিটি উদ্ধারের জন্য সরকারের আদেশ আছে। ডিসি-প্রশাসন মাঝেমধ্যে এখানে আসেন, চলে যান, কিন্তু কাজের কোনো কাজ হয় না। বাড়ির বর্তমান বসবাসরতদের অন্যত্র পুনর্বাসন করলেই সেই সমস্যা মিটে যায়।’
প্রায় আড়াই দশক ধরে ইলা মিত্রের ভিটাবাড়ি রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন জানিয়ে স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাড়িটি সংরক্ষণ করা হয়নি। মূলত স্থানীয় প্রশাসনের যে দুর্বলতা ও গাফিলতির কারণে এটি থমকে আছে। গেজেট প্রকাশ হওয়ার প্রায় ৯ বছরেও একটি সাইনবোর্ডও সেখানে লাগানো হয়নি। ফলে বাড়িটির কারুকাজ, সৌন্দর্য যে নকশা ছিল সবই বিলীন হয়ে বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঝিনাইদহ জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়াব অপু বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্র কৃষকের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন। তাঁর স্মরণে পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তাঁর সংগ্রামী জীবন ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জাদুঘর, পাঠাগার এবং গবেষণাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
ইলা মিত্রের বাড়ির সংরক্ষণে জমি অধিগ্রহণের কোনো নির্দেশনা আসেনি জানিয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘বাড়িটিতে বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তাঁদের দাবি, তাঁরা সম্পদটি কিনে নিয়েছেন। তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের পর জমি অধিগ্রহণের কোনো পরবর্তী কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাড়িটি বেদখলে থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন জানিয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘২০১৭ সালে বাড়ি সংরক্ষণে গেজেট প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা দেননি। যেকারণে সে অবস্থাতে থেমে আছে।’ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আঞ্চলিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’
পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রত্নসম্পদ তালিকা করা হয়েছে, সেগুলোতে প্রায়োরিটি বেসিসে কাজ চলছে। সেই হিসেবে ইলা মিত্রের পৈত্রিক ভিটা কী পর্যায়ে আছে, তা আমাকে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে। প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সরকারি গেজেট প্রকাশের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বাড়িটি অধিগ্রহণ শেষ করা যায়নি। পৈতৃকসূত্রে বাড়িটির বর্তমান মালিকরা বলছেন, তারা পুনর্বাসন পেলে বাড়ি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। আর জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দাবি, বাড়িটি সংরক্ষণে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর বিষয়টিকে স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতি বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
এর আগে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি পুরাকীর্তি ও প্রত্নসম্পদ হিসেবে ২০১৪ সালে সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত করে। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে ইলা মিত্রের ওই বাড়িসহ ২২ শতাংশ জমি সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ৪ জানুয়ারি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে গেজেট করে। গেজেট প্রকাশের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও জমির অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা যায়নি।
বাড়িটিতে বসবাসকারীদের দাবি, ইলা মিত্রের পূর্বপুরুষেরা দেশত্যাগের পর বাড়িটি কিনে নেন খোদাবক্স নামের স্থানীয় এক ধনাঢ্য ব্যক্তি। পরে তাঁর কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে বাড়িটির মালিক হন হাজি কিয়াম উদ্দিন। ১৯৭০ থেকে বাড়িটিতে বসবাস করছেন কিয়াম উদ্দিনের উত্তরসূরীরা।
তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস ও ইলা মিত্রের জীবনী-গ্রন্থ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৬-১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র। তবে বেঙ্গলের ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকরির সুবাদে ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম তাঁর। ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রাম তাঁর পৈতৃক নিবাস। সেই সুবাদে ছোট বেলায় বেশ কয়েকবার বাগুটিয়া গ্রামে এসেছেন ইলা মিত্র। পার্শ্ববর্তী গোপালপুর, শেখরা, রঘুনন্দপুর, শাহাবাজপুরসহ কয়েকটি গ্রামে তাঁর শৈশব-কৈশরের স্মৃতি রয়েছে। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মারা যান তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র।
শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বাগুটিয়া গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামের জরাজীর্ণ ও কর্দমাক্ত মেঠোরাস্তার পাশে চুন-সুড়কি দিয়ে গাঁথা ৯টি কক্ষের কারুকার্যমণ্ডিত নকশাকারে পুরনো ভবন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১২৯৯ বঙ্গাব্দ) এই বাড়িটি নির্মাণ করেন ইলা মিত্রের দাদা রাজমহন সেন।
ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১৭ শতাংশ জমির ওপর পুরনো আমলের নিদর্শন চুন-সুড়কির তৈরি দোতলা ও একতলা দুটি ভবনে ৯টি কক্ষ। প্রধান ফটকযুক্ত বাড়িটিতে বসবাস করছেন হাজি কিয়াম উদ্দিনের চার সন্তান আলী হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রশিদ ও রাশিদুল ইসলাম। বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় একটি ভবনের ছাদের অনেকাংশই ভেঙে পড়েছে, দেয়ালে ধরেছে ফাটল।
বাড়িটিতে বসবাসরত বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। পরে আলী হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘১৯৭০ সাল থেকে ডিসি-ইউএনও (জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) এসে শুধু আশা দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ নেই। বাড়িতে আসার জন্য যে কাচা রাস্তা আছে, সেটির সংস্কারে একটা ইটও ফেলা হয়নি।’
প্রত্নসম্পদ ঘোষণার পরও দখল না ছাড়া প্রসঙ্গে আলী হোসনে বলেন, ‘আমরা তো বাড়িটি দিতে রাজি আছি। আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ছেড়ে দিব। প্রতিবছর বারবার আপনারা এসে আমাদের বিরক্ত ও হয়রানি করেন। আপনারা কেউ আর আসবেন না।’
এদিকে স্বাধীনতার পর ইলা মিত্রকে নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। ঐতিহাসিক বিচারে বারবার দাবি উঠে তাঁর পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করার। ২০১১ সাল থেকে সাংগঠনিকভাবে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও ঢাকায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্বারকলিপি পেশ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে পুরার্কীতি ও প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের তালিকাভুক্ত ও ২০১৭ সালে বাড়িটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে প্রত্নসম্পদ ঘোষণার প্রায় ৯ বছরেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি সংরক্ষণে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে ইলা মিত্রের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তা, ইলা মিত্রের নামে জাদুঘর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা কেন্দ্র, ছাত্রীনিবাস ও সড়কের নামকরণের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে।
বর্তমান প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে ইলা মিত্রের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণ জরুরি মনে করেন ইলা মিত্র স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যসচিব সুজন বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘ইলা মিত্র ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, নাচোল বিদ্রোহের রানিমা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সুহৃদ। তাঁর পৈতৃক ভূমিটি উদ্ধারের জন্য সরকারের আদেশ আছে। ডিসি-প্রশাসন মাঝেমধ্যে এখানে আসেন, চলে যান, কিন্তু কাজের কোনো কাজ হয় না। বাড়ির বর্তমান বসবাসরতদের অন্যত্র পুনর্বাসন করলেই সেই সমস্যা মিটে যায়।’
প্রায় আড়াই দশক ধরে ইলা মিত্রের ভিটাবাড়ি রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন জানিয়ে স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান মিল্টন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাড়িটি সংরক্ষণ করা হয়নি। মূলত স্থানীয় প্রশাসনের যে দুর্বলতা ও গাফিলতির কারণে এটি থমকে আছে। গেজেট প্রকাশ হওয়ার প্রায় ৯ বছরেও একটি সাইনবোর্ডও সেখানে লাগানো হয়নি। ফলে বাড়িটির কারুকাজ, সৌন্দর্য যে নকশা ছিল সবই বিলীন হয়ে বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।’
কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ঝিনাইদহ জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়াব অপু বলেন, ‘কমিউনিস্ট পার্টির বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্র কৃষকের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন। তাঁর স্মরণে পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও তাঁর সংগ্রামী জীবন ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জাদুঘর, পাঠাগার এবং গবেষণাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন।’
ইলা মিত্রের বাড়ির সংরক্ষণে জমি অধিগ্রহণের কোনো নির্দেশনা আসেনি জানিয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘বাড়িটিতে বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তাঁদের দাবি, তাঁরা সম্পদটি কিনে নিয়েছেন। তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের পর জমি অধিগ্রহণের কোনো পরবর্তী কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাড়িটি বেদখলে থাকার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন জানিয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘২০১৭ সালে বাড়ি সংরক্ষণে গেজেট প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা দেননি। যেকারণে সে অবস্থাতে থেমে আছে।’ তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আঞ্চলিক পরিচালকের সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।’
পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রত্নসম্পদ তালিকা করা হয়েছে, সেগুলোতে প্রায়োরিটি বেসিসে কাজ চলছে। সেই হিসেবে ইলা মিত্রের পৈত্রিক ভিটা কী পর্যায়ে আছে, তা আমাকে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।’
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের এই প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
২২ মিনিট আগেজুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
৩০ মিনিট আগের্যাগিংয়ের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর ছাত্র হলের (সাবেক শেখ রাসেল হল) প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য নায়েক মো. আক্তার হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে