রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় মোট ১১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়, যাঁদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী মহানগরের সাবেক আমির আতাউর রহমানও ছিলেন।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার ১৫ বছর পর সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক জুলফিকার উল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন।
ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় মোট ১১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়, যাঁদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী মহানগরের সাবেক আমির আতাউর রহমানও ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম জানান, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, মামলার ১১৪ আসামির মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন। জীবিতদের মধ্যে ২৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক হোসেন হত্যা ছাড়াও বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে এসব অতীত অভিযোগ ভোটারদের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষার্থী।
শেখ হাসিনার পতনের পর ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপরে শিবিরের হামলার ঘটনাও বিচারের মুখ দেখেনি। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে বলে মনে হয়। রাকিবুল হাসান, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাবি
শিবির সম্পর্কে তেমন কিছু্ জানা ছিল না বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষার্থীরা। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা বলেন, ‘শিবির তো ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত অনেকটা গুপ্ত অবস্থায় ছিল। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তখন আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তারা নিজেদের উপস্থিতি বা সংগঠনের পরিচয়ও গোপন রাখত। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর থেকে পর থেকে তারা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে এবং এবং এখন পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজই করে চলছে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ৫ আগস্টের পর আইন, বিচারসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ পদ যে রাজনৈতিকভাবে দখল করা হয়েছে তা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার কথাতেই প্রমাণ হয়। হাসিনার সময়ে আমরা জনতুষ্টিমূলক রায় যেমন দেখেছি, একই সঙ্গে ক্ষমতা দ্বারা প্রভাবিত অনেক রায়ও দেখেছি।
সম্প্রতি সকল সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রভাব যে মাত্রায় দেখা যাচ্ছে তাতে মানুষের মনে সন্দেহের উদ্রেক অমূলক নয় বলে মনে করছেন তিনি। রাকিবুল বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপরে শিবিরের হামলার ঘটনাও বিচারের মুখ দেখেনি। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে বলে মনে হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত একাধিক সহিংস ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা মীর মোশতাক এলাহী নিহত হন। ওই ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়।
১৯৮৮ সালের মে মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জামিল আকতার রতনকে হত্যার অভিযোগও ওঠে শিবিরের বিরুদ্ধে।
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত। এ ঘটনায় আরও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন।
পরের বছর, ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ ও নতুন নিহত হন ছাত্রশিবিরের হামলায়। ওই হামলায় আহত ছাত্র ইউনিয়ন নেতা তপন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্র মৈত্রীর নেতা জুবায়ের হোসেন রিমু হত্যার অভিযোগও সংগঠনটির বিরুদ্ধে ওঠে।
১৯৯৪ সালে ছাত্র মৈত্রী নেতা প্রদ্যুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কবজি কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিবিরের বিরুদ্ধে।
আদালতের কাছে যারা মামলার বাদী ছিলেন, তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আজকে যেমন আমরা মামলায় খালাস পেয়েছি, আগের সময়গুলোতেও ঠিক একইভাবে খালাস পেয়েছি। আজিজুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, ইসলামী ছাত্রশিবির
১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা–রাজশাহী রুটের একটি বাস থেকে নামিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৈত্রীর নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে অভিযুক্ত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
এর পরের বছর, ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, এই অভিযোগের তীরও শিবিরের দিকে।
২০১৩ সালের ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের ওপর হামলার ঘটনায়ও ছাত্রশিবিরের নাম উঠে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সহপ্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুমকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাসুম হামলার দায় স্বীকার করেছেন; তবে ছাত্রশিবির দাবি করে, স্বীকারোক্তিটি জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
‘ছাত্রশিবিরকে ডিহিউম্যানাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে’
ছাত্রশিবিরকে ঘিরে অতীতে যে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে সংগঠনটিকে ‘ডিহিউম্যানাইজ’ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ।
তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘ছাত্রশিবিরকে বরাবরই ডিহিউম্যানাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ছাত্রশিবির গঠনমূলক কাজ করে বলে, যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, শিবিরের নামে ব্লেমিং দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
আজাদ আরও বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখন যেমন আছে, আগেও ছিল। শিবির হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকলে আদালতে তা প্রমাণ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে যারা মামলার বাদী ছিলেন, তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আজকে যেমন আমরা মামলায় খালাস পেয়েছি, আগের সময়গুলোতেও ঠিক একইভাবে খালাস পেয়েছি।’
১৯৭৮ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রাবি ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বলে দাবি করেছেন আজাদ। তিনি বলেন, যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটির সঙ্গেই সংগঠনটি জড়িত নয়।
সম্প্রতি রাকসুর ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর রাবিকে ছাত্রশিবিরের ‘ক্যান্টনমেন্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে আজাদ বলেন, ‘রাবি যদি আমাদের ক্যান্টনমেন্ট হয়ে থাকে, তাহলে তো এই জায়গায় আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় থাকত। কিন্তু আপনি দেখেন, আমাদের এখানে ২১ জন শহীদ। শিবিরের সবচাইতে বেশি শহীদ হয়েছে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে। শিবিরের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা ক্যাম্পাসে হয়েছে, সবচেয়ে বেশি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে হয়েছে। শিবিরের আহত, পঙ্গুত্ববরণকারীর সংখ্যা রাজশাহীতে বেশি।’
শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অন্য দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ধামা চাপা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন আজাদ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যা মামলার ১৫ বছর পর সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল রোববার দুপুরে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক জুলফিকার উল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন।
ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় মোট ১১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়, যাঁদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী মহানগরের সাবেক আমির আতাউর রহমানও ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম জানান, অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত আসামিদের খালাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, মামলার ১১৪ আসামির মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন। জীবিতদের মধ্যে ২৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক হোসেন হত্যা ছাড়াও বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে এসব অতীত অভিযোগ ভোটারদের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষার্থী।
শেখ হাসিনার পতনের পর ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপরে শিবিরের হামলার ঘটনাও বিচারের মুখ দেখেনি। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে বলে মনে হয়। রাকিবুল হাসান, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাবি
শিবির সম্পর্কে তেমন কিছু্ জানা ছিল না বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষার্থীরা। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা বলেন, ‘শিবির তো ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত অনেকটা গুপ্ত অবস্থায় ছিল। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তখন আমরা তেমন কিছুই জানতাম না। তারা নিজেদের উপস্থিতি বা সংগঠনের পরিচয়ও গোপন রাখত। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পারেনি। ৫ আগস্টের পর থেকে পর থেকে তারা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে এবং এবং এখন পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজই করে চলছে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ৫ আগস্টের পর আইন, বিচারসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ পদ যে রাজনৈতিকভাবে দখল করা হয়েছে তা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার কথাতেই প্রমাণ হয়। হাসিনার সময়ে আমরা জনতুষ্টিমূলক রায় যেমন দেখেছি, একই সঙ্গে ক্ষমতা দ্বারা প্রভাবিত অনেক রায়ও দেখেছি।
সম্প্রতি সকল সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রভাব যে মাত্রায় দেখা যাচ্ছে তাতে মানুষের মনে সন্দেহের উদ্রেক অমূলক নয় বলে মনে করছেন তিনি। রাকিবুল বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের উপরে শিবিরের হামলার ঘটনাও বিচারের মুখ দেখেনি। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে বলে মনে হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত একাধিক সহিংস ঘটনায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
১৯৮২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা মীর মোশতাক এলাহী নিহত হন। ওই ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়।
১৯৮৮ সালের মে মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জামিল আকতার রতনকে হত্যার অভিযোগও ওঠে শিবিরের বিরুদ্ধে।
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত। এ ঘটনায় আরও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন।
পরের বছর, ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ ও নতুন নিহত হন ছাত্রশিবিরের হামলায়। ওই হামলায় আহত ছাত্র ইউনিয়ন নেতা তপন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ছাত্র মৈত্রীর নেতা জুবায়ের হোসেন রিমু হত্যার অভিযোগও সংগঠনটির বিরুদ্ধে ওঠে।
১৯৯৪ সালে ছাত্র মৈত্রী নেতা প্রদ্যুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কবজি কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিবিরের বিরুদ্ধে।
আদালতের কাছে যারা মামলার বাদী ছিলেন, তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আজকে যেমন আমরা মামলায় খালাস পেয়েছি, আগের সময়গুলোতেও ঠিক একইভাবে খালাস পেয়েছি। আজিজুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, ইসলামী ছাত্রশিবির
১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা–রাজশাহী রুটের একটি বাস থেকে নামিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৈত্রীর নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে অভিযুক্ত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
এর পরের বছর, ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়, এই অভিযোগের তীরও শিবিরের দিকে।
২০১৩ সালের ২২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের ওপর হামলার ঘটনায়ও ছাত্রশিবিরের নাম উঠে আসে। এ ঘটনায় পুলিশ রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সহপ্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুমকে গ্রেপ্তার করে। সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মাসুম হামলার দায় স্বীকার করেছেন; তবে ছাত্রশিবির দাবি করে, স্বীকারোক্তিটি জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
‘ছাত্রশিবিরকে ডিহিউম্যানাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে’
ছাত্রশিবিরকে ঘিরে অতীতে যে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে সংগঠনটিকে ‘ডিহিউম্যানাইজ’ করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ।
তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘ছাত্রশিবিরকে বরাবরই ডিহিউম্যানাইজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ছাত্রশিবির গঠনমূলক কাজ করে বলে, যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, শিবিরের নামে ব্লেমিং দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’
আজাদ আরও বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা এখন যেমন আছে, আগেও ছিল। শিবির হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকলে আদালতে তা প্রমাণ করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আদালতের কাছে যারা মামলার বাদী ছিলেন, তারা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে আজকে যেমন আমরা মামলায় খালাস পেয়েছি, আগের সময়গুলোতেও ঠিক একইভাবে খালাস পেয়েছি।’
১৯৭৮ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে রাবি ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয়েছেন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা বলে দাবি করেছেন আজাদ। তিনি বলেন, যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোর কোনোটির সঙ্গেই সংগঠনটি জড়িত নয়।
সম্প্রতি রাকসুর ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর রাবিকে ছাত্রশিবিরের ‘ক্যান্টনমেন্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়ে আজাদ বলেন, ‘রাবি যদি আমাদের ক্যান্টনমেন্ট হয়ে থাকে, তাহলে তো এই জায়গায় আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় থাকত। কিন্তু আপনি দেখেন, আমাদের এখানে ২১ জন শহীদ। শিবিরের সবচাইতে বেশি শহীদ হয়েছে রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে। শিবিরের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা ক্যাম্পাসে হয়েছে, সবচেয়ে বেশি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে হয়েছে। শিবিরের আহত, পঙ্গুত্ববরণকারীর সংখ্যা রাজশাহীতে বেশি।’
শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অন্য দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ধামা চাপা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন আজাদ।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৬০ জন নিহত এবং ৮ হাজার ৫০ জন আহত হয়েছেন।
৪ ঘণ্টা আগেসিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পড়াশোনা করতে এসে মৌলভী বুধপাড়াতেই থিতু হয়েছেন আবদুল ওহাব সোহেল। এ এলাকাতেই বিয়ে করেছেন। তিনি ছিলেন রাবি শিবিরের সেক্রেটারিয়েট মেম্বার। পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর মতিহার থানার আমির হয়েছিলেন।
৬ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশনারদের একজন একটি রাজনৈতিক দলের মতো করে কথা বলছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
৭ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
৮ ঘণ্টা আগে