leadT1ad

গণভোট নিয়ে বিভাজন, বিএনপির অভিযোগ ‘প্রহসন’, জামায়াত ও এনসিপির সমর্থন

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৪২
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গণভোট আয়োজনের সময়সূচি ও প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দল — বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, কমিশনের প্রস্তাব ‘একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’, অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, গণভোট নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

চলমান এই বিরোধ দেশের রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করছে, তবে এটা রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশলও বটে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটা আসলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) গ্রহণ করছে। …তবে এটা নিয়ে তেমন ধরণের সংকট হবে বলে মনে হয় না। কারণ নির্বাচন তো আসছে, হবে। সেইখানেও রাজনৈতিক কৌশল নেওয়ার সুযোগ আছে দলগুলোর।’

নির্বাচন করতে হলে দলগুলোকে ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সময়ে এসে আসলে সব দলেরই কম্প্রোমাইজ করে নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত।

বিএনপি বলছে, ‘প্রহসনমূলক ও প্রতারণা’

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও সুপারিশকে ‘একপেশে’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এর ফলে প্রায় এক বছর ধরে সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল জানান, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রয়োজনে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবে।

গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল মঈন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

আজ বা কালই সনদ বাস্তবায়নের দাবি জামায়াতের

অন্যদিকে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দ্রুত জারির দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলছে, আদেশ জারির পর গণভোট আয়োজন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আর সময়ক্ষেপণ না করে, আজকের ভিতরে হলে খুবই উত্তম।… যদি দেরি হতে থাকে, তাহলে জনমনে আবার নানা ধারণা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হবে। আপনার সম্পর্কে, আপনার সরকার সম্পর্কেও জনগণ ধীরে ধীরে আস্থা হারাতে শুরু করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর গণভোটের আয়োজন করতে হবে। কারণ, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ দলের প্রার্থীকে জেতাতে ব্যস্ত থাকবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, হামিদুর রহমান আযাদ এবং প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।

নির্বাচনের আগেই গণভোট চায় এনসিপি

গণভোটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হলে তা দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকবে এবং জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্যের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে ঠেলে দিতে পারব না আমরা। গণভোট আগে না পরে হবে, এটা জামায়াত ও বিএনপির কুতর্ক। এটা থেকে বেরিয়ে তাদের নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে।’

দলের যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘আদর্শিকভাবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া ভালো। তবে সরকার যদি মনে করে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করবে, তাহলে সেটাও হতে পারে। আমাদের কনসার্ন মূলত গণভোটের আদেশ নিয়ে।’

‘দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান উপদেষ্টা’

গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু ভাইটাল প্রশ্নে তাদের আসলে ঐকমত্য হয় নাই। এখন আবার দেখলাম, দুই ধরনের বিরোধ বের হয়েছে—একটা কীভাবে পাস হবে, আরেকটা কবে হবে। এত দৃঢ়, পরস্পরবিরোধী এবং উত্তেজিত ভূমিকা নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল।’

তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবেন, এবং উপদেষ্টারা তাঁকে সহায়তা করবেন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত