leadT1ad

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আলোচনা ছিল জাতির সঙ্গে প্রতারণা: মির্জা ফখরুল

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: বিএনপির প্রেস উইং

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এরফলে প্রায় এক বছর ধরে সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল ‘অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা’।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামায় বিএনপি সই করেছে। গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের দিন জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে প্রিন্টেড কপি যখন হাতে এসেছে তখন দেখা যাচ্ছে, সনদের যে সব দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল চূড়ান্ত সনদে তা উল্লেখ করা হয়নি।’

কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতিবাচক হলেও এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে প্রয়োজনে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট ‘অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত’ বলেও সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম বৈঠকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় সনদ প্রণীত ও স্বাক্ষরিত হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সেই সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে। তিনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া বিভিন্ন ভাষণেও তার এই বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জুলাই ঘোষণাপত্রেও এই বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট সহকারে ঐকমত্য হয়েছে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, তাতে নোট অব ডিসেন্টের অংশে এই বক্তব্য স্পষ্ট উল্লেখ আছে— ভিন্নমত, নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

যেসব অসংগতির কথা বলছে বিএনপি

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা বিএনপির অগোচরে সংশোধন করা হয়েছে। এগুলো হলো—শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও, সেটি চূড়ান্ত সনদে সংশোধনী আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ ২৮ অক্টোবর সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রেরিত চিঠিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা সই করেন।

গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং সে কারণে সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ভিন্নমত পোষণে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকারকে আমলেই নেয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, আব্দুল মঈন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত