leadT1ad

ডাকসু নির্বাচন

ডাকসুর শীর্ষ পদে কখনোই জয় পায়নি শিবির

ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। আর স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালে। ফলে ওই নির্বাচন এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি ছাত্রশিবির। এর বাইরে পাঁচটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সংগঠনটি।

ফারুক হোসাইনঢাকা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৮
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৫১
স্ট্রিম কোলাজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) কখনোই সাফল্য পায়নি ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সাতবার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। এ সব নির্বাচনে শীর্ষ পদগুলোতে ছাত্রশিবিরের কেউ জয় পায়নি।

অন্যদিকে ছাত্রদল, ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ও বামপন্থী সংগঠনগুলো থেকে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) অন্যান্য শীর্ষপদে জয়ের অতীত রয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরের প্রার্থীও শীর্ষপদে জিতেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার ১০৪ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৩৭ বার। স্বাধীনতার আগেই হয়েছে ৩০টি নির্বাচন।

ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে। আর স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালে। ফলে ওই নির্বাচন এবং ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি ছাত্রশিবির।

এই দুই নির্বাচনের মধ্যেও আরও পাঁচবার ডাকসু হয়েছে। ১৯৭৯, ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছে ছাত্রশিবির। শুধু ১৯৮২ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলের আবুল আহসান নামে একজন ডাকসুর কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রশিবির ডাকসুর সব নির্বাচনেই প্যানেল দিয়েছে। কিছু পদে জয় ছিল। তবে ভিপি-জিএসের মতো পদে জয় নেই। কারণ তখন প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল ছাত্রশিবির। তবে এখন ভালো অবস্থানে আছি। আজিজুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, ছাত্রশিবির

কেমন করেছিল ছাত্র সংগঠনগুলো

স্বাধীনতার পর প্রায় সব নির্বাচনে সরকারবিরোধী ছাত্রসংগঠনই ডাকসুতে সাফল্য পেয়েছে। যদিও ২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ২৩টি পদে জয়ী হয়। যদিও নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।

স্বাধীনতার পর হওয়া প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ১৯৭২ সালে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও জিএস পদে জয়ী হন একই সংগঠনের মাহবুব জামান।

১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছিল। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে ওই নির্বাচনে ফল শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি। ওই বছরই অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি ডাকসু নির্বাচন। ১৯৭৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে অংশ নেয় ছাত্রদল। তবে সেবার কোনো পদেই জয় পায়নি সংগঠনটি।

ওই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না। একই প্যানেলের আখতারুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ডাকসুর ১৯টির মধ্যে ১৫টি পদে জয় পায় তাঁদের প্যানেল।

এরপর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালের ১১ নভেম্বর। ওই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ভিপি হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং জিএস হন আখতারুজ্জামান। আগের নির্বাচনে তাঁরা ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের প্রার্থী, তবে ওই সময় অংশ নেন নবগঠিত বাসদ ছাত্রলীগের ব্যানারে।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর এক বছরের ব্যবধানে ১৯৮২ সালের ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভিপি পদে জয় পান মান্না-সমর্থিত বাসদ ছাত্রলীগের আখতারুজ্জামান। জিএস নির্বাচিত হন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ছাত্রদলের গোলাম সারোয়ার মিলন ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন প্যানেল হল সংসদে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। ১১টি হল সংসদে মোট ১৩২ আসনের মধ্যে ছাত্রদল জয় পায় ৬৫টিতে।

প্রায় ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভিপি পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে নুরুল হক নুর। তিনি বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি।

দীর্ঘ সাত বছর বিরতির পর ১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ছাত্রদলের প্রভাব ঠেকাতে একত্রিত হয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, বাসদ ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রলীগ (মু-না) এবং ছাত্রলীগ (সু-র) মিলে গঠন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

ডাকসুর সব পদে জয় পায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ভিপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জিএস হন জাসদ ছাত্রলীগের মুশতাক হোসেন এবং সহকারী সাধারন সম্পাদক হন ছাত্র ইউনিয়নের নাসির। অন্যদিকে, নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রদলের শামসুজ্জামান দুদু ও আসাদুজ্জামান রিপন।

১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। সেবার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার। প্রচারণায় ছাত্রদল সামনে আনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অঙ্গীকার, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলে।

এই নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান এবং জিএস হন খায়রুল কবির খোকন। সেবার ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ১৮৮ পদের মধ্যে ১৫১টিতেই বিজয়ী হয় ছাত্রদল।

প্রায় ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভিপি পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে নুরুল হক নুর। তিনি বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি।

২০১৯ সালে ডাকসুতে জিএস হন ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হন ছাত্রলীগের (বর্তমান সভাপতি) সাদ্দাম হোসেন। ওই নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি এবং সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩টি পদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া আখতার হোসেন তখন ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব।

১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। সেবার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার।

আশাবাদী ছাত্রশিবির

রাত পেরোলেই ৩৮তম ডাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে অংশ নিচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। জোর প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা।

সংগঠনটির নেতারা অবশ্য বলছেন, অতীতে জয়ের রেকর্ড যে একেবারে নেই, তা নয়। হল সংসদে তাঁদের প্রার্থীরা প্রায়ই জয় পেতেন। এবার কেন্দ্রীয় সংসদে জয়ের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।

এ ব্যাপারে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী সাদিক কায়েম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে আমরা আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাগুলো শুনছি, সমস্যা সমাধানে আমাদের রূপরেখাগুলো তাঁদের সামনে তুলে ধরছি। এ ছাড়া অনলাইনেও প্রচার চলছে। এক বছর ধরে আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। হোক সেটা আর্থিক সংকট, নিরাপত্তা সংকট, একাডেমিক জীবনের কোনো সংকট। ফলে শিক্ষার্থীরা আমাদের চেনেন। প্রচারে গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া ও উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি।’

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি এবার দলীয় ক্ষমতা দেখে নয়, বরং যাঁরা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করছে তাঁদেরকেই শিক্ষার্থীরা ভোট দেবে। আমাদের প্যানেলে যোগ্য প্রার্থীরা আছেন, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন। এসব দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা সমর্থন দেবেন ও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

আজিজুর রহমান আজাদ আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর ছাত্রশিবির ডাকসুর সব নির্বাচনেই প্যানেল দিয়েছে। কিছু পদে জয় ছিল। তবে ভিপি-জিএসের মতো পদে জয় নেই। কারণ তখন প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছিল ছাত্রশিবির। তবে এখন ভালো অবস্থানে আছি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত