চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি সংসদ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত দলীয় তিন প্রার্থী এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে যে বিষয়টি অস্বস্তির কারণ হয়ে থেকেছে— সেটি হচ্ছে ফারাক্কা। ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, বহু নদীর মৃত্যু, জীবন-জীবিকা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসহ বহুমাত্রিক প্রভাব বিবেচনায় ফারাক্কা বাঁধের জোরালো বিরোধিতা রয়েছে।
আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে শিবগঞ্জ সরকারি মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে উপজেলা বিএনপির ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে এসব প্রসঙ্গ। এই আয়োজনে অংশ নেয় বিএনপি ও এর মিত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। এ সময় ‘চলো জি ভাই, হাঁরঘে পদ্মা বাঁচাই’, ‘পদ্মা বাঁচাতে ঐক্য গড়ি’, ‘আমাদের গঙ্গা-পদ্মা, আমাদের অধিকার’ স্লোগানে উত্তাল ওই এলাকা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, প্রধান বক্তা ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ ও বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই সব আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের নাম।
পদ্মার উজানে ভারতের ফারাক্কায় বাঁধ তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের ভারতীয় ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চের ডাক দেন তিনি। সেদিন তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দেশপ্রেমিক মানুষ। পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ওই লংমার্চ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। দীর্ঘ ৫০ বছর পর একই দাবিতে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি।
এর আগে রবিবার (২ নভেম্বর) ‘পদ্মা বাঁচাও’ দাবিতে জেলা শহরের শহিদ শাটু হল অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর ভোলাহাটে সমাবেশ করবে বিএনপি।
সমাবেশে যোগ দেওয়া জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তবিউল ইসলাম তারিফ স্ট্রিমকে বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অর্থনীতি পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল। যখন পানির প্রয়োজন হয়, তখন ভারত পানি দেয় না। যখন প্রয়োজন নেই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে ফসল নষ্ট করে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে রাজপথে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। যাতে ভারতের আগ্রাসন থেকে আমরা বাঁচতে পারি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারুনুর রশিদ জানান, পদ্মার উজানে ভারতের ফারাক্কায় বাঁধ তৈরি করে গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে এ দেশে পানি সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর অকাল মৃত্যুতে সেই কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা ব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাশ হয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি।
পদ্মা নদীর ন্যায্য পানি বণ্টনের দাবি তুলে ধরে সমাবেশে প্রধান বক্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি থাকলেও আশানুরূপ ফল পাইনি। …ভারত বাংলাদেশের শত্রুদের আশ্রয় দিয়েছে, তারা আমাদের পানিতে মারছে, সীমান্তে মারছে, বাণিজ্যে মারছে। এসব দাবি আদায়ে আমরা একটি বিরাট জনমত গঠন করতে চাই।’
দেশের প্রয়োজনে নদী রক্ষায় ঐক্য গড়ার বিকল্প নেই জানিয়ে সমাবেশের প্রধান অতিথি অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ফারাক্কা পয়েন্টে ভারত পানি সরিয়ে নেওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় মারাত্মক পানি সংকট তৈরি হচ্ছে। আবার বর্ষাকালে সেই ফারাক্কারই সব গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। এরে ফলে প্রায় প্রতিবছরই পদ্মা অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা ও ভাঙনের সমস্যা দেখা দেয়। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ আর কৃষির প্রধান শর্ত হচ্ছে পানি। দেশ বাঁচাতে হলে কৃষিতে বাঁচাতে হবে, নদী বাঁচাতে হবে।’