leadT1ad

জাকসুতে যে কারণে বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য হলো না

বামপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলগুলো হলো ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’ সমর্থিত প্যানেল।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩: ৪৪
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর বিভক্তির কারণে একক প্যানেল দিতে পারেনি। স্ট্রিম কোলাজ

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামীকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নানা মেরুকরণের এই নির্বাচনে বামপন্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূর করতে পারেনি। ঐক্যের চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। ফলে তিনটি আলাদা প্যানেলে নির্বাচনে লড়ছেন বামপন্থী শিক্ষার্থীরা, যা ভোটের মাঠে তাঁদের অবস্থানকে দুর্বল করেছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বামপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলগুলো হলো ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’ সমর্থিত প্যানেল।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’

ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক অংশ) নেতৃত্বে গঠিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায়। কিন্তু কোর্টের নির্দেশে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। ফলে এই প্যানেলে কোনো ভিপি প্রার্থী নেই। এই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের একাংশের সাবেক সভাপতি শরণ এহসান, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস-ছেলে) পদে জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি নূরে তামিম স্রোত এবং এজিএস (মেয়ে) পদে জাহাঙ্গীরনগর ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফারিয়া জামান নিকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’

ছাত্র ইউনিয়নের (জাহিদ-ইমন অংশ) ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের অন্য একটি অংশ মিলে ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে প্যানেল দিয়েছে। কেন্দ্রের ২৫টি পদের মধ্যে মাত্র ৫টি পদে তারা প্রার্থী দিতে পেরেছে, বাকি ২০টি পদই ফাঁকা রয়েছে।

এই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে প্রার্থী হয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জন্নাতুল ফেরদৌস।

ঘোষিত অন্য প্রার্থীরা হলেন তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে সৈয়দ তানজিম আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে তানজিল আহমেদ এবং সহসমাজসেবা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) পদে সাদিয়া ইমরোজ ইলা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্যানেল

জাকসু নির্বাচনে যোগ দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী)। সংগঠনটি তিন সদস্যের একটি আংশিক প্যানেল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ঘোষিত প্যানেলে সহসাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে লড়বেন ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজিব আহম্মদ জেনিচ। এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) হিসেবে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) হিসেবে মো. সুমন হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ঐক্য কেন হলো না

নির্বাচনের আগে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করেছিল সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী)। তবে ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশের সঙ্গে আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে সেই আলোচনা আর এগোয়নি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক (মার্কসবাদী) সজীব আহমেদ জেনিচ স্ট্রিমকে বলেন, ‘জাকসুকে কেন্দ্র করে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা করেছিলাম। কিন্ত ছাত্র ইউনিয়ন (অদ্রি-অর্ক) রাজি না থাকায় তা করা সম্ভব হয়নি।’

অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) সভাপতি অদ্রি অংকুর জানান, আদর্শিক কারণে কিছু বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে জোট করা সম্ভব হয়নি।

এই বিভাজনের মূলে রয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাঙন। ২০২১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি বিভক্ত হয়, যার প্রভাব পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের পাল্টা কমিটি গঠিত হয়।

অদ্রি-অর্ক অংশের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন জাহিদুল ইসলাম ইমন ও তানজীম আহমেদ।

তবে নির্বাচনী বিভাজন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে এক থাকার কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক সোহাগি সামিয়া স্ট্রিমকে বলেন,‘ছাত্র ইউনিয়নের বিভাজন আমাদের দুর্বল করলেও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আমরা এক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির আত্মপ্রকাশের দিন আমরা একসাথেই প্রতিবাদ করেছি।’

এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জোট ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’-ও দুই ভাগে বিভক্ত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে। পরে কয়েকটি সংগঠন মিলে সাংস্কৃতিক জোটের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়।

এই জোটের একাংশের সাবেক সভাপতি শরণ এহসান সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল থেকে লড়ছেন, অন্যদিকে আরেক অংশের বর্তমান মুখপাত্র মাহফুজ ইসলাম মেঘ ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে আরেকটি প্যানেলের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এই প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়ছেন।

অন্যান্যদের মধ্যে সহসাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নাজমুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে সৈয়দা মেহের আফরোজ শাঁওলি, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সাহিদুল ইসলাম শিমুল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে সাদিয়া রহমান মোহনা, সহসাংস্কৃতিক পদে শেখ আল ইমরান, নাট্য সম্পাদক পদে তপু চন্দ্র দাস এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে শাশ্বত পিকেকে মনোনীত করা হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত