leadT1ad

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ, ল্যাবএইডে ভর্তি

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৩২
আহমদ রফিক। সংগৃহীত ছবি

ভাষাসৈনিক, কবি, গবেষক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়েছে।

রোববার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে ল্যাবএইড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক এ এম শামীম জানিয়েছেন।

আহমদ রফিককে দেখভাল করা ল্যাবএইডের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৯৮ বছর বয়সী আহমদ রফিকের কিডনি–সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত। তাঁর শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে, রক্তচাপ ও হার্ট রেট কিছুটা বেড়েছে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার কারণেও এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর চিকিৎসার পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে।

এদিকে, ল্যাবএইড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চিকিৎসক এ এম শামীম বলেন, আহমদ রফিক দেশের জন্য অমূল্য অবদান রেখেছেন। তাঁকে সুস্থ রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। চিকিৎসার ব্যয়ভার হাসপাতাল বহন করবে এবং তিনি বাসায় ফেরার পর সাপ্তাহিক ভিত্তিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে।

গত ৩৬ বছর ধরে আহমদ রফিকের সহকারী হিসেবে আছেন আবুল কালাম। তিনি জানান, আহমদ রফিক দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে তাঁর পা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সালে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং ২০২৩ সাল নাগাদ তিনি প্রায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। লেখালেখি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবেও তিনি কষ্টে ছিলেন।

ল্যাবএইড হাসপাতাল। স্ট্রিম ছবি
ল্যাবএইড হাসপাতাল। স্ট্রিম ছবি

আবুল কালাম আরও জানান, গত মাসেও তাঁকে এক দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মগবাজারের একটি হাসপাতালে তখন টানা সাতদিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। এরপর চলাফেরার শক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। কয়েক মাস আগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।

আহমদ রফিক বর্তমানে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকেন আবুল কালাম এবং একজন গাড়িচালক। ২০০৬ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যান। তাঁর কোনো সন্তান নেই।

১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আহমদ রফিক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ফজলুল হক হল ও মিটফোর্ডের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। সভা-সমাবেশ ও মিছিলে নিয়মিত অংশ নেন। ১৯৫৪ সালে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মধ্যে একমাত্র তাঁর বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

চিকিৎসাশাস্ত্রে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করলেও পেশা হিসেবে চিকিৎসাকে বেছে নেননি তিনি। লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস—বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তাঁর দুটি বই—‘ভারত-পাকিস্তান বাংলাদেশ কথা’ এবং ‘শিল্প-সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য’।

তাঁর আরেক পরিচয় হল তিনি রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও তিনি এই পরিচয়ে সমাদৃত। কলকাতার একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি। দেশে তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত