leadT1ad

নারীদের নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যের এক তৃতীয়াংশই যৌন হয়রানিমূলক, টার্গেট রাজনীতিবিদেরা

২০২১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ছয়বার অপতথ্যের শিকার হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। দুইবার অপথ্যের শিকার হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের পরিবারের সদস্যরা।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ২১: ৩০
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৯: ৪৪
স্ট্রিম গ্রাফিক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নিয়ে বেড়েছে অপতথ্য ও গুজব। যার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন নারী রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি ও অ্যাক্টিভিস্টরা। কয়েকটি তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত নারীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে অন্তত ৩০০টি গুজব বা অপতথ্য।

এসব অপতথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল যৌন হয়রানিমূলক কনটেন্ট। যার সংখ্যা প্রায় ৯৫টি। এগুলো মোট কন্টেন্টের এক-তৃতীয়াংশের কাছাকাছি। এছাড়া নারীদের জড়িয়ে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের সংখ্যা ২৬টি, যা মোট সংখ্যার ৯ শতাংশ।

তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যাচাই করা অপতথ্যের ধরন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ভূয়া ফটোকার্ড, ডিপ ফেইক (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি অবিকল প্রতিচ্ছবি), সম্পাদিত ছবি এবং বিভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ ব্যবহার করে প্রায়ই নারীদের হেনস্থা করা হচ্ছে। রিউমার স্ক্যানার, ফ্যাক্টওয়াচ, বুম বাংলাদেশ ও ডিসমিস ল্যাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

যে পেশার নারীরা ছিলেন প্রধান লক্ষ্য

মোট ভুয়া বা অপতথ্যের মধ্যে ৭৭ শতাংশের বেশি কন্টেন্টের টার্গেট হয়েছেন নারী রাজনীতিবিদেরা। বাকিদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ছিলেন বিনোদন অঙ্গনের পরিচিত মুখ, আর ৪ শতাংশ ছিলেন অ্যাক্টিভিস্ট বা আন্দোলনকর্মী এবং অবশিষ্ট প্রায় ৫ শতাংশ হলো অন্যান্য পেশার নারীরা।

সংখ্যার বিচারে রাজনীতিতে যুক্ত নারীরাই অনলাইনে অপতথ্যের সবচেয়ে বড় শিকার। অপতথ্যের নিশানা হয়েছেন এমন নারীদের তালিকায় শীর্ষে আছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ও আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। যাচাইকৃত অন্তত ৩০০ গুজবের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভুল বা অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানাকে নিয়ে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁকে নিয়া ছড়ানো প্রায় ৭০ টি অপতথ্য চিহ্নিত করেছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

দলভিত্তিক ভুক্তভোগী নারীদের পরিসংখ্যান (মোট ২০৫টি)। স্ট্রিম গ্রাফিক
দলভিত্তিক ভুক্তভোগী নারীদের পরিসংখ্যান (মোট ২০৫টি)। স্ট্রিম গ্রাফিক

রুমিন ফারহানার পর নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ অপতথ্যের শিকার হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সাংসদ ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাবন্দী এই নারীকে নিয়ে অনলাইনে ছড়ানো হয়েছে ৩৩ টি অপতথ্য ও গুজব।

যেসব কনটেন্টে নারীকে হেয় করা হয়, সেগুলো ভাইরাল হতে সময় নেয় না। এটা সমাজের ভেতরকার সাংস্কৃতিক অসুস্থতাকেই সামনে আনে। যেখানে নারীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তীব্রভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। সুমন রহমান, সম্পাদক, ফ্যাক্টওয়াচ

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে নিয়ে এই সময়কালে ছড়ানো হয়েছে ২০টি অপতথ্য। এদিকে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিমা জারাকে নিয়ে খুব অল্প সময়েই ছড়ানো হয়েছে ১৫টি ভুল বা অপতথ্য। আর এনসিপির নেত্রী নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে আটটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী উমামা ফাতেমাকে নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছয়টি ভুল বা অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

গুজব বা অপতথ্যের নিশানা থেকে বাদ যাননি রাজনীতিবিদ, সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা পেশাজীবীদের পরিবারের সদস্যরাও। ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত ছয়বার অপতথ্যের শিকার হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান। দুইবার অপথ্যের শিকার হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের পরিবারের সদস্যরা।

অন্যদিকে বিনোদন জগতে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। তাঁকে নিয়ে অন্তত ২০টি ভুল বা অপতথ্য ছড়িয়েছে অনলাইনে। এ ছাড়া আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি সম্পর্কেও পাওয়া গেছে অন্তত আটটি ভুয়া তথ্যের নজির। অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে উদ্দেশ্য করেও অন্তত পাঁচটি ভুল বা অপতথ্য প্রচারিত হয়েছে।

যৌন হয়রানিমূলক অপতথ্য ছাড়াও নারীদের নিয়ে ছড়ানো মোট অপতথ্যের প্রায় ৯ শতাংশ ছিল সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক অপতথ্য। যা দিয়ে কোনো ঘটনা বা ব্যক্তিকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার শিকারে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অপতথ্য গবেষকেরা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের নিয়ে ভুল বা অপতথ্যের প্রভাব নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক স্বীকৃত তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচের সম্পাদক সুমন রহমান। তিনি বলেন, ‘ইদানিং নারী রাজনীতিক বা তারকাদের বিরুদ্ধে অপতথ্যের প্রবণতা শুধু বেড়েই যাচ্ছে না, বরং তা নতুন ধরনের সহিংসতা হিসেবে কাজ করছে। এই অপতথ্যগুলো মূলত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীদের হেনস্থা করছে। কেউ জনপ্রিয় হলেই তাকে যৌন হয়রানিমূলক বা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক গুজবে জড়ানো হচ্ছে।’

সুমন রহমান বলেন, ‘যেসব কনটেন্টে নারীকে হেয় করা হয়, সেগুলো ভাইরাল হতে সময় নেয় না। এটা সমাজের ভেতরকার সাংস্কৃতিক অসুস্থতাকেই সামনে আনে। যেখানে নারীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তীব্রভাবে পক্ষপাতদুষ্ট।’

Ad 300x250

মৃত্যুর মুখেও গাড়ি থেকে কেউ কাউকে ছেড়ে বের হননি

ঢাবিতে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন: মুখোমুখি শিবির ও বামপন্থীরা

‘এই বছরেই তারেক রহমান দেশে আসবেন’

জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ বিশিষ্ট নাগরিকের

‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি’, সংশোধন চায় জামায়াত

সম্পর্কিত