leadT1ad

তৃতীয় তিস্তা সেতুর উদ্বোধন আজ

স্ট্রিম সংবাদদাতাগাইবান্ধা
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ০৪
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১০: ০৫
নবনির্মিত তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতু। ছবি: স্ট্রিম

বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা গার্ডার সেতুটি অবশেষে আজ বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে এই সেতু। সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মওলানা ভাসানী সেতু’।

আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গাইবান্ধার সংযোগস্থল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করবেন।

সেতুটি উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানিয়েছেন গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সেতুটির নামকরণ ইতোমধ্যে মওলানা ভাসানী সেতু করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর বিকেল থেকে সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলজিইডির প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ মিয়া, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।’

গাইবান্ধা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর বুকে এটি হলো তৃতীয় সড়ক সেতু। তবে ধৈর্ঘ্যে এই সেতুটিই সবচেয়ে বড়। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বরু সেতু প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজের দায়িত্ব পায় চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’।

স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সেতুটি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাটকে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারি উপজেলার চিলমারি খেয়াঘাটের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সেতুটি চালু হলে দুই জেলারই যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে যাবে। সুন্দরগঞ্জ একটি উপজেলা শহর। সুন্দরগঞ্জের সঙ্গে চিলমারীর সড়ক পথে সংযোগ না থাকায় এই দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষই এতদিন ভোগান্তিতে ছিলেন। সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত ছিলেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এতদিন পাইকাররা আসতো না। চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতেন না তাঁরা। সেতুটি হওয়ায় তাঁদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন। এছাড়া দুই জেলার চরাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, শিল্পজাত পণ্য সহজে ও স্বল্পব্যয়ে স্থানান্তর করা যাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। পাশাপাশি শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। শুধু তাই নয়, সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমে আসবে। অবসান হবে দীর্ঘ বঞ্চনার।

উদ্বোধন ঘিরে স্থানীয়দের উচ্ছ্বাস

উদ্বোধনের আগেই সেতু দেখতে স্থানীয়দের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন সেতুর দুই প্রান্তে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ায় উচ্ছ্বাসে ভাসছেন দুই জেলার লাখো মানুষ।

বামনডাঙ্গা থেকে সেতু দেখতে আসা সোহান মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি দেখতে এসে খুব ভালো লাগছে। সেতু এলাকাটি ঘুরে দেখলাম, নদীতে নৌকায় ঘুরলাম, সব মিলিয়ে বেশ আনন্দ লাগছে।’

হরিপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘এই সেতুর ফলে আমাদের যোগাযোগ যেমন সহজ হবে, তেমনি জীবনমানেরও উন্নতি ঘটবে। আগে আমরা নৌকায় চলাচল করেছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। সেই ভোগান্তির অবসান হচ্ছে সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে।’

চিলমারী উপজেলার ব্যবসায়ী আইনুল হক বলেন, ‘সেতুটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা হবে। এক মুল্লুক আর ঘোরা লাগবে না। চরের জিনিসপাতির সঠিক দাম পাবেন কৃষকরা।’

কৃষক তারা মিয়া বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় চরের কাঁচামালগুলোর দাম আমরা পাই না। এখন দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসবেন। আশা করছি জিনিসপাতির ন্যায্যমূল্য থেকে আর আমরা বঞ্চিত হব না।’

সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের ছিচা বাজারের বাসিন্দা শামীম মন্ডল বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল। সেতুটি চালু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার খুলে যাবে। সুন্দরগঞ্জ একটি উপজেলা শহর। এখান থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি যাতায়াত করে না। সেতুটি চালু হলে অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেই এলাকার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।’

শিক্ষক মোছা. আফিয়া জাহান বলেন, ‘যেকোনো এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপ হলো যাতায়াত ব্যবস্থা। আর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই সেই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়। তিস্তা সেতুটি গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষদের জীবন উন্নয়নের এক মাইল ফলক হবে।’

বেসরকারি চাকরিজীবী রাইসুল কামাল বলেন, ‘আমি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত বেশি থাকলে নৌকায় চলতে ভয় লাগে। তাই ঘুরে রংপুর হয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুই-ই বাড়ে। সেতু চালু হলে সেই কষ্ট থাকবে না, ঝুঁকিও কমবে।’

চরাঞ্চলের কৃষক মোজাহার আলী বলেন, ‘আমরা কৃষকরা চরে সোনা ফলাই, কিন্তু তার ন্যায্য মূল্য পাই না। চরাঞ্চলের মরিচ, ভুট্টা, পাট, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদন করি। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে দূর থেকে কোনো পাইকার আসে না। এজন্য এতদিন ধরে আমরা অবহেলিত ছিলাম। এখন সেতুটি চালু করলে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসবে দরকষাকষি হবে। এতে আমরা আমাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাব। সেতু ও সংযোগ সড়ক চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার কমে আসবে।’

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘দেশে এলজিইডির সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই তিস্তা সেতু। সেতুটি আগামীকাল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুই জেলার মানুষদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে করে এলাকার মানুষদের জীবনমান আরও উন্নয়ন হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত