leadT1ad

বিএনপির বিজয় র‍্যালি, শিক্ষার্থীদের অবরোধ, জাগপার ঘেরাও—যানজটে অচল ঢাকা

আজ রাজধানীতে পৃথক দাবিতে দুই স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজধানী ঢাকায় ‘বিজয় র‍্যালি’ করবে বিএনপি।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ০৮
যানজটে ধীরে চলছে ঢাকা। স্ট্রিম গ্রাফিকস

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে ‘ক্ষোভ-বিক্ষোভের নগরী’ হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। প্রায় প্রতিদিনই প্রধান প্রধান সড়কে চলছে বিক্ষোভ। ফলে অসহনীয় যানজটের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিক্ষোভ হলেই চারপাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে সংযোগ সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত। কখনো শাহবাগ চত্বর, কখনো সচিবালয়, আবার কখনো প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে চলছে অবরোধ। আজও রাজধানীতে পৃথক দাবিতে দুই স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজধানী ঢাকায় ‘বিজয় র‍্যালি’ করবে বিএনপি।

আজ প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ প্রকাশের দাবিতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। সরেজমিনে দেখা যায়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় হয়ে সাইন্সল্যাবে অবস্থান নেন। এ সময় সাইন্সল্যাব মোড়সংলগ্ন সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানোর দাবিতে আজ সকালে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছিল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। তবে রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে পুলিশের বাধায় আটকে যায় তাদের মিছিল। পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কর্মসূচি শেষ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৪৫ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখে জাগপার বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। এতে রামপুরা-কুড়িল, গুলশান ও হাতিরঝিল থেকে বিমানবন্দরগামী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজধানী ঢাকায় ‘বিজয় র‍্যালি’ বের করছে বিএনপি। আজ বুধবার বেলা তিনটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‍্যালি শুরু হওয়ার কথা। কর্মসূচি ঘিরে ঘণ্টা দেড়েক আগে থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন দলটির নেতা–কর্মীরা। বিজয় র‍্যালি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর, পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।

এতগুলো আন্দোলন, মানববন্ধন ও বিজয় র‍্যালি কর্মসূচির কারণে নগরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে অচল অবস্থায় পরিণত হয়েছে নগরী। এতে সকাল থেকেই অফিসগামীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

ঢাকার সিদ্দিকবাজারে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন আমিনুল ইসলাম। ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই মোটরসাইকেল রেখে মেট্রোরেলে রওনা দেন অফিসের উদ্দেশে। সচিবালয় স্টেশনে নামার পর রিকশা নেন। সেখান থেকেই বিপত্তির শুরু। সামনে সড়ক বন্ধ। বিএনপির বিজয় র‍্যালির জন্য রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর কূলকিনারা না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। তিনি বলেন, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ঢাকা শহর। এই শহরে থাকা আর ভোগান্তি যেন নামান্তর। সপ্তাহে তিন-চার দিন ভুগতে হয় সড়কে।

সকাল ৯টা থেকে রাজধানী আগারগাঁও, মহাখালী, উড়োজাহাজ ক্রসিং, বিজয় সরণি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মালিবাগ, কাকরাইল মোড়, গুলিস্তান, মতিঝিলজুড়ে কোথাও তীব্র যানজট কোথাও গাড়ির চাপ রয়েছে। অনেক স্থানের যাত্রীদের বাস থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

সড়কে বাসে ভোগান্তিতে পড়া আতিকুর রহমান নামে এক যাত্রী বিজয় সরণি মোড়ে নেমে হেঁটে রাস্তা পার হন। এরপর সিএনজিতে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘চারদিকে খারাপ অবস্থা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাব। তাই বাস ছেড়ে সিএনজিতে উঠতে বাধ্য হলাম। গুগল ম্যাপ বলছে নিউ মার্কেট সড়ক অনেকটা ক্লিয়ার।’

অন্যদিকে রাজিব হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে হাতিরঝিল আসেন লোকাল সিএনজিতে। এরপর রিকশায় করে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা করেন তিনি। কিছুদূর যেতেই দেখেন সব রাস্তা অচল অবস্থা হয়ে আছে। দিশাহারা হয়ে নেমে হাঁটা শুরু করেন তিনি। রাজিব হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘বাস চলছেই না। মগবাজার, কাকরাইল, শাহবাগসহ আশপাশের সব সড়ক বন্ধ। বাধ্য হয়ে হেঁটে ইস্কাটন হয়ে শাহবাগ আসি। যেদিকে তাকাই সেদিকেই যেন যানজট, ছোট-বড় সব ধরনের গাড়িই দাঁড়িয়ে আছে। দুদিন পরপর সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করার কোনো মানে নেই। এতে জনগণের ভোগান্তি হয়।’

এত আন্দোলন অবরোধকে ঘিরে সড়কে বিকল্পব্যবস্থা নিলেও যানজট নিরসন হচ্ছে না উল্লেখ করে ডিএমপির ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, অফিস দিনগুলোতে এমনিতেই সড়কে তীব্র চাপ তৈরি হয়। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান কাকরাইল, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব ও গুলিস্তানে অবরোধ কর্মসূচি হওয়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। যে কারণে সড়কে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চাপ থাকে। সে চাপ অধিকাংশ স্থানে যানজট তৈরি করেছে।

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, অফিসগামী যাত্রী, পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় বিভিন্ন পয়েন্টে ডাইভারশন করেন। গুলিস্তান-মতিঝিল গন্তব্য হলে নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়। বাংলা মোটর-হেয়ার রোড দিয়ে ডাইভারশন করা হয়। কাকরাইলের সড়ক ক্লিয়ার করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করা হলেও তা পারা যায়নি। যানজট ভোগান্তিতে পড়া নগরবাসীকে বিকল্প সড়ক ও ডাইভারশন মেনে চলাচলে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু ডাইভারশন বা বিকল্প চিন্তায় ট্রাফিকব্যবস্থা করলেও যানজট নিরসন হয় না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত