leadT1ad

চবি শিক্ষার্থী মামুন-নাজমুল আইসিইউতে, গভীর উৎকণ্ঠায় সহপাঠীরা

স্ট্রিম সংবাদদাতাচট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪০
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৯
চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন চবি শিক্ষার্থী মো. মামুন। স্ট্রিম ছবি

চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনের বারান্দায় লোকজনের ভিড়। অধিকাংশই রোগীর সঙ্গে আসা স্বজন। তাঁদের মধ্যেই আসা-যাওয়া করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের চোখে-মুখে গভীর উদ্বেগের ছাপ। কারো চোখ ছলছল। আইসিইউতে ভর্তি তাঁদেরই সহপাঠী মো. মামুন। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাই বাইরে পালা ধরে অপেক্ষা করছেন তাঁর সহপাঠীরা।

রোববার (৩১ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদেরই একজন মামুন। তিনি চবিরসমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, পরে জরুরি ভিত্তিতে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মস্কিষ্কের অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা অপর শিক্ষার্থী হলেন চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান। তিনি রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে, পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউর সামনে অপেক্ষমাণ মামুনের সহপাঠী শাহাব উদ্দিন চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বলেন, ‘ওর মাথার আঘাত ডাক্তারের আশঙ্কার চেয়েও তীব্র ছিল। ব্রেনের ওপরের ব্লাড-ক্লট অপসারণ করলেই যেখানে জটিলতা কেটে যাওয়ার আশা ছিল, সেখানে ব্রেনের ওপর হাড়ের টুকরো অংশ ঘিরে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। এটি অপসারণে পুরো খুলি খুলে অপারেশন করতে হয়েছে। ফলে পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে এটি সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত খুলি বসানো যাবে না। তাঁকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে অনেকটা সময় কেটে গেছে। পর্যবেক্ষণ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই তাঁর শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।’ কথাগুলো বলার সময় শাহাব উদ্দিনের চোখ ছল ছল করছিল।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের পাশাপাশি মামুনের নাক ও মুখ থেকেও রক্তক্ষরণ হয়েছে। কানের পর্দাও ফেটে গেছে।

সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। সংঘর্ষের দিনের ছবি। স্ট্রিম ছবি
সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। সংঘর্ষের দিনের ছবি। স্ট্রিম ছবি

৭২ ঘণ্টার পর্যরেক্ষণে রাখার তথ্য নিশ্চিত করে আজ পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ন বলেন, ‘চবির মো. মামুন এখনো আইসিইউতে। অবজারভেশনে রেখেছেন চিকিৎসকরা।’

এদিকে, রোববার রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় অপর শিক্ষার্থী নাইমুরকে প্রথমে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর মাথা, পেট ও হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে সেদিন রাতেই তাঁকে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে জরুরি অস্ত্রোপচারের পর এখন তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

রাজধানীতে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের নাইমুলের সঙ্গে আছেন তাঁর বন্ধু আদনান শরীফ। মঙ্গলবার বিকেলে স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার জন্য নাইমুলকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ডাক্তার জানিয়েছেন, আপাতত পর্যবেক্ষণের রাখা হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে কেবিনে স্থানান্তর করা হবে।’

এদিকে, নাইমুরের সহপাঠী আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমাদের বন্ধু নাইমুর পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী ছিল। কখনো কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াত না। এমন একজন মানুষ আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে-এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা সবাই দোয়া করছি নাইমুর সুস্থ হয়ে আবার ক্লাসে ফিরুক।’

মামুন ও নাইমুরের সহপাঠীরা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অস্থিরতার কারণে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁরা চান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মামুন ও নাইমুরের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দরকার।

চমেক হাসপাতালে ভর্তি কয়েকজন

রোববারের সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিকভাবে চমেক হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে আহত শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নেন। এখন অধিকাংশ আহত শিক্ষার্থী চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কারও কারও মাথায় ব্যান্ডেজ। অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অভিভাবকরা এসেছেন সন্তানের খবর নিতে।

চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়েল্টি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সবুজ। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, কণ্ঠ কাঁপছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দিকে একসঙ্গে ইট ছুঁড়তে শুরু করে স্থানীয়রা। মাথায় আঘাত পেয়ে চোখে অন্ধকার দেখি। বন্ধুরা ধরে হাসপাতালে নিয়ে না এলে আমি হয়তো বাঁচতাম না।’

একই ওয়ার্ডে ছিলেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদ। তাঁর হাত কেটে গেছে ধারালো অস্ত্রে। তিনি বলেন, ‘রাতে সংঘর্ষের পর ভেবেছিলাম সকালের পর সব শান্ত হবে। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ করে গ্রাম থেকে বহিরাগতরা এসে আমাদের ধরে ফেলে। ধানক্ষেতে নিয়ে রামদা দিয়ে কোপায়। অনেক বন্ধুকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়।’

চবির আইইআর বিভাগের শিক্ষার্থী তানসিকুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘জোবরা গ্রামবাসী পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শনিবার রাতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলেও রোববার ভোরে তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে বোধগম্য নয়।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চবি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শয্যা রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর, তবে সবার জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

Ad 300x250

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকানোর পরিকল্পনা হয় গণভবনে: রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন

রিটকারীকে গণধর্ষণের হুমকি: শিবিরের দিকে আঙুল তুলছে সবাই

নির্বাচন বানচালের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, সতর্ক হতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

হিউম্যান রাইটস ডিউ ডিলিজেন্স বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিল বিলস

তাহারির স্কয়ারের আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অনেক মিল আছে

সম্পর্কিত