leadT1ad

বিদ্যালয়ে থেকেও পরীক্ষাকেন্দ্রে নেই সহকারী শিক্ষকেরা, সাতজনকে কারণ দর্শানোর চিঠি

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
গাইবান্ধা ও লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৭
গাইবান্ধার রায়দাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার কক্ষ পাহারায় একজন অফিসসহকারী। স্ট্রিম ছবি

গাইবান্ধায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গতকাল বুধবার (১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা)। একই সময়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষকেরা। বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেও পরীক্ষাকেন্দ্রে যাননি তাঁরা। এতে অনেক বিদ্যালয়ে ভেঙে পড়েছে পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। জেলা প্রশাসন থেকে পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব দিলেও সহযোগিতা করছেন না দায়িত্বরত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

জেলার সদর উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকায় অধিকাংশ কেন্দ্রের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে প্রধান শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের (দপ্তরি-আয়া) ওপর। কোথাও একজন শিক্ষককে একসঙ্গে একাধিক কক্ষ তদারকি করতে দেখা গেছে। এতে পরীক্ষা কক্ষে ছিল না নিয়ম-শৃঙ্খলা, খাতা ও প্রশ্নপত্র বিতরণে ঘটেছে বিলম্ব। অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চেঁচামেচি, ইচ্ছে মতো শ্রেণিকক্ষ ত্যাগের নজরদারিহীন অবস্থায় দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত এ পরিস্থিতিতে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরাও।

গাইবান্ধা সদরের রায়দাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এক-দুজন পিয়নের সহযোগিতায় তিনটি শ্রেণি কক্ষে পরীক্ষা নিচ্ছেন। ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে একজন কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি সকালে আধা ঘণ্টা থেকে ও দুপুরে ১০ মিনিট চক্কর দিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এদিকে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা পাশেই বসে আছেন।

ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আসনিম তাবাচ্ছুমের মা শামছুন নাহার শিমু বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে বাচ্চারা সারা বছর পড়াশোনা করেছে। কিন্তু পরীক্ষার দিনে এসে দেখি কক্ষে শিক্ষক নেই, কেউ ঠিক মতো খেয়াল রাখছে না। এভাবে পরীক্ষা হলে প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব নয়। এতে শিশুর ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ‘ একই কথা বললেন আরেক অভিভাবক মিনু বেগম।

কর্মবিরতি শুরু করেছেন বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষকেরা। স্ট্রিম ছবি
কর্মবিরতি শুরু করেছেন বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষকেরা। স্ট্রিম ছবি

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাদী হাবীবা সুলতানা পলাশ জানান, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে থাকায় এককভাবে শত শত শিক্ষার্থী সামলানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে একজন কৃষি অফিসারকে এই কেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এসে ঘুরেই চলে গেছেন। আশা করেছিলাম কেন্দ্রে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আমাদের সহযোগিতা করবে, কিন্তু তাঁরা তা করেনি।’

কর্মবিরতি প্রসঙ্গ বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির (বাপ্রসশিস) জেলা পর্যায়ের এক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালু থাকবে। দাবি পূরণ হলে আমরা পরীক্ষাসহ সব দায়িত্বে ফিরে যাব।’

এদিকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লক্ষ্মণ কুমার বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও দপ্তরি দিয়ে পরীক্ষা চালানোর হচ্ছে। আর যে সব সহকারী শিক্ষকরা সরকারি আইন অমান্য করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লক্ষ্মীপুরে প্রাথমিকের ৭ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ‘সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিপরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধে’ আন্দোলনকারী ৭ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা বর্জন ও বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে পত্র জারির পর তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ফাতেমা ফেরদৌসী স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে এই নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত শিক্ষকেরা হলেন, উপজেলার নাগমুদ বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল বাশার, সহকারী শিক্ষক প্রিয়াংকা রাণী ভৌমিক, ফেরদৌসি বেগম; জয়পুরা এসআরএমএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন, সহকারী শিক্ষক নুরুন নাহার, মেহেদী হাসান ফরিদ ও মর্জিনা আক্তার।

রামগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা ফেরদৌসী বলেন, ‘শোকজপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিপরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের আচরণ দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন। সরকারি আদেশ-নির্দেশ অমান্যের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর কেন সুপারিশ করা হবে না, তার গ্রহণযোগ্য লিখিত জবাব ৩ কর্মদিবসের মধ্যে আমার কাছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত