ফারুক হোসাইন
মোবাইল ফোনে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক নিশ্চিতের কথা বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি টাওয়ার স্থাপনের চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে টাওয়ার স্থাপনের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাওয়ার স্থাপনের জন্য যেসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে তার আশপাশেই আছে জলাশয়। এ সব জলাশয়ে শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা দলবেঁধে আসে, অস্থায়ী বসত গড়ে অন্তত তিন মাসের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি জলাশয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পাখি আসতে শুরু করে। এ সময় জলাশয়গুলো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে পাখি দেখতে আসেন। বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার অতিথি পাখি ক্যাম্পাসে আসে।
বিভিন্ন গবেষণা এবং পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক যে রেডিয়েশন আদানপ্রদান করে তা পাখিদের জন্য বিপজ্জনক। এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে নানা কারণে জাহাঙ্গীরনগরে পরিযায়ী আসার হার কমে গেছে। এর মধ্যে বিপজ্জনক মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে পাখিরা হয়তো আর আসবেই না, আসলেও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পাঁচটি টাওয়ার বসানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, অংশীজনদের প্রয়োজনের কথা ভেবেই জরিপ চালানোর পর টাওয়ার বসানোর চুক্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপনের জন্য ই ডট কো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে এ চুক্তি করা হয়। টাওয়ার স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক জব্বার হলের পাশে ছাত্রদের জন্য নতুন করে নির্মিত হল এলাকা, পরিবহন চত্বর সংলগ্ন জলাশয়ের পাশের জাহানারা ইমাম হল, প্রান্তিক গেট, বিশমাইল এলাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব এলাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান স্ট্রিমকে বলেন, মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ফলে পরিবেশ কিংবা পাখির আসা বা না আসার ওপর বড় আকারের প্রভাব পড়বে, তা ঠিক না। তবে কিছু প্রভাব তো থাকেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমার জানা নেই।
বছরের একটি সময়ে স্থানান্তরিত হওয়া অতিথি পাখির জীবনচক্রের অংশ বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান। জীববৈচিত্র্যের জন্য অতিথি পাখির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, শীতের মৌসুমে স্থানান্তরিত না হলে অতিথি পাখিরা টিকে থাকতে পারবে না। কারণ তাদের আবাস্থল বরফে ঢেকে যায়। ১৯৮৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগরে নিয়মিত অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখির কারণে ইকো সিস্টেম ঠিক থাকে। যেসব জলাশয়ে তারা থাকে সেখানকার প্রাণিকূলের ‘প্রোডাক্টিভিটি’ বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘টাওয়ার স্থাপন বিষয়ে যে সভা হয়েছে, সেখানে আমি প্রকৃতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ইস্যুগুলো উঠিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে সেখানে আলোচনাও হয়েছে। জাহানারা ইমাম হল এলাকায় যে টাওয়ার বসানোর কথা, সেই বিষয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছি। কারণ সেখানকার জলাশয়টি প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
মোবাইল টাওয়ার থেকে সৃষ্ট রেডিয়েশনে পাখির চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় বলে উঠে এসেছে মিউটেশন রিসার্চ, জেনেটিক টক্সিকোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল মিউটেজেনসিস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এ গবেষণার শিরোনাম ‘সেল ডেথ ইনডিউসড বাই জিএসএম ৯০০-এমএইচজেড অ্যান্ড ডিসিএস ১৮০০-এমএইচজেড মোবাইল টেলিফোনি রেডিয়েশন’। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, পাখিরা মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি গেলে (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড) দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এতে পরিযায়ী পাখিরা ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। চড়ুই, কবুতর, হাঁসজাতীয় পাখির জন্য মোবাইল টাওয়ার এক ধরনের ‘শত্রুর’ মতো।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি থাকা পাখিদের আচরণগত পরিবর্তনের তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটির শিরোনাম ছিল ‘অ্যা পসিবল ইফেক্ট অব ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ফ্রম মোবাইল ফোন বেইজ স্টেশনস অন দ্য নাম্বার অব ব্রিডিং হাউজ স্প্যারোস’।
প্রজননক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য বেলজিয়ামে ২০০৩ সালের মে থেকে জুন পর্যন্ত ৬০টি পাখির বাসার ওপর এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩০টি পাখির বাসা মোবাইল টাওয়ার থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে ছিল। বাকি ৩০টি ছিল কোনো টাওয়ার থেকে ৩০০ মিটারের বেশি দূরত্বে। দেখা যায়, টাওয়ারের কাছের ৪০ শতাংশ পাখির বাসায় কোনো ছানা ছিল না। অন্যদিকে, দূরে থাকা পাখির বাসার ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাসায় পাখির ছানা ছিল।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজা মোবারক মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কথা বলতে চাননি।
ক্যাম্পাসে যথাযথ নেটওয়ার্কের অভাব, ডার্ক পয়েন্ট (দুর্বল নেটওয়ার্ক) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি মোবাইল টাওয়ার থাকায় টাওয়ারের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করীম পাটোয়ারি।
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) এই অধ্যাপক স্ট্রিমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মোবাইল ডাটা ব্যবহার করেন। পার্শ্ববর্তী এলাকার টাওয়ার থেকে ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক সাপোর্ট দেওয়া হয়। ফলে যথেষ্ট সিগন্যাল পাওয়া যায় না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, কমিটি খোঁজ নিয়ে দেখেছে, কোথায় কোথায় নেটওয়ার্কে সমস্যা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টাওয়ার বসানোর জায়গা নির্ধারণ করা হয়। আমরা সেগুলোর নীতিগতভাবে ও টেকনিক্যালি অনুমোদন দিয়েছি। শর্ত ছিল টাওয়ার কোম্পানি এসব টাওয়ারে প্রত্যেকটি অপারেটর রাখবে।
নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ‘ভ্যাকিউম’ থাকলে তীব্র তরঙ্গ তৈরি হয়, যা আরও বেশি ক্ষতিকর উল্লেখ করে ফজলুল করীম পাটোয়ারি বলেন, সঠিকভাবে কানেকশন পেলে কম ক্ষতি হয়। তবে প্রত্যেক তরঙ্গেই ক্ষতি হয়। ভয় পেলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এখানে লেটেস্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যেগুলো কম ক্ষতিকর।
পাঁচটি মোবাইল টাওয়ারের প্রয়োজন আছে কি-না সেটিও ভেবে দেখার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী রাকিবুল রনি ক্যাম্পাসের ভেতরে পাঁচটি টাওয়ার বসানো নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফলে পাখির সংখ্যা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ার প্রমাণ আছে প্রচুর রিসার্চে। অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ার প্রমাণও তো আছে। সঙ্গে মানুষের স্বাস্থে এর ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। তবু ক্যাম্পাসের ভেতরেই পাঁটি মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের চুক্তি!’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার পাখি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘একাধিক টাওয়ার বসানো কিছু অর্থে ভালো, কেননা এর কারণে এলাকা ভাগ হয়ে যায় এবং উচ্চশক্তির ফ্রিকোয়েন্সি তৈরির প্রয়োজন কমে আসে।’
তবে সবুজে আচ্ছাদিত এলাকা, জলাভূমি, পরিযায়ী পাখি আসে এ ধরনের অঞ্চলে অতিরিক্ত টাওয়ার স্থাপন ‘মোটেই ঠিক নয়’ বলে জানান তিনি। অরিত্র বলেন, পাঁচটি টাওয়ার বসানো পরিবেশবান্ধব হবে না। এতে ক্ষতিই হবে।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া বলেন, ‘মোবাইল টাওয়ার যেন সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়, অর্থাৎ যেখানে টাওয়ার বসবে, সেটি যেন পাখির ফ্লাইং জোনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। টাওয়ারের বিকিরণের বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন স্ট্রিমের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা মুত্তালী নাবিল
মোবাইল ফোনে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক নিশ্চিতের কথা বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি টাওয়ার স্থাপনের চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে টাওয়ার স্থাপনের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাওয়ার স্থাপনের জন্য যেসব স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে তার আশপাশেই আছে জলাশয়। এ সব জলাশয়ে শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা দলবেঁধে আসে, অস্থায়ী বসত গড়ে অন্তত তিন মাসের জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি জলাশয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পাখি আসতে শুরু করে। এ সময় জলাশয়গুলো পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেকে পাখি দেখতে আসেন। বছরে চার থেকে পাঁচ হাজার অতিথি পাখি ক্যাম্পাসে আসে।
বিভিন্ন গবেষণা এবং পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক যে রেডিয়েশন আদানপ্রদান করে তা পাখিদের জন্য বিপজ্জনক। এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে নানা কারণে জাহাঙ্গীরনগরে পরিযায়ী আসার হার কমে গেছে। এর মধ্যে বিপজ্জনক মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে পাখিরা হয়তো আর আসবেই না, আসলেও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পাঁচটি টাওয়ার বসানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, অংশীজনদের প্রয়োজনের কথা ভেবেই জরিপ চালানোর পর টাওয়ার বসানোর চুক্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপনের জন্য ই ডট কো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে এ চুক্তি করা হয়। টাওয়ার স্থাপনের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক জব্বার হলের পাশে ছাত্রদের জন্য নতুন করে নির্মিত হল এলাকা, পরিবহন চত্বর সংলগ্ন জলাশয়ের পাশের জাহানারা ইমাম হল, প্রান্তিক গেট, বিশমাইল এলাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব এলাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান স্ট্রিমকে বলেন, মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের ফলে পরিবেশ কিংবা পাখির আসা বা না আসার ওপর বড় আকারের প্রভাব পড়বে, তা ঠিক না। তবে কিছু প্রভাব তো থাকেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমার জানা নেই।
বছরের একটি সময়ে স্থানান্তরিত হওয়া অতিথি পাখির জীবনচক্রের অংশ বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান। জীববৈচিত্র্যের জন্য অতিথি পাখির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, শীতের মৌসুমে স্থানান্তরিত না হলে অতিথি পাখিরা টিকে থাকতে পারবে না। কারণ তাদের আবাস্থল বরফে ঢেকে যায়। ১৯৮৬ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগরে নিয়মিত অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখির কারণে ইকো সিস্টেম ঠিক থাকে। যেসব জলাশয়ে তারা থাকে সেখানকার প্রাণিকূলের ‘প্রোডাক্টিভিটি’ বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘টাওয়ার স্থাপন বিষয়ে যে সভা হয়েছে, সেখানে আমি প্রকৃতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ইস্যুগুলো উঠিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে সেখানে আলোচনাও হয়েছে। জাহানারা ইমাম হল এলাকায় যে টাওয়ার বসানোর কথা, সেই বিষয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছি। কারণ সেখানকার জলাশয়টি প্রাকৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
মোবাইল টাওয়ার থেকে সৃষ্ট রেডিয়েশনে পাখির চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় বলে উঠে এসেছে মিউটেশন রিসার্চ, জেনেটিক টক্সিকোলজি এবং এনভায়রনমেন্টাল মিউটেজেনসিস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায়। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এ গবেষণার শিরোনাম ‘সেল ডেথ ইনডিউসড বাই জিএসএম ৯০০-এমএইচজেড অ্যান্ড ডিসিএস ১৮০০-এমএইচজেড মোবাইল টেলিফোনি রেডিয়েশন’। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, পাখিরা মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি গেলে (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড) দিগ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এতে পরিযায়ী পাখিরা ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। চড়ুই, কবুতর, হাঁসজাতীয় পাখির জন্য মোবাইল টাওয়ার এক ধরনের ‘শত্রুর’ মতো।
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বায়োলজি অ্যান্ড মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি থাকা পাখিদের আচরণগত পরিবর্তনের তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটির শিরোনাম ছিল ‘অ্যা পসিবল ইফেক্ট অব ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ফ্রম মোবাইল ফোন বেইজ স্টেশনস অন দ্য নাম্বার অব ব্রিডিং হাউজ স্প্যারোস’।
প্রজননক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য বেলজিয়ামে ২০০৩ সালের মে থেকে জুন পর্যন্ত ৬০টি পাখির বাসার ওপর এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩০টি পাখির বাসা মোবাইল টাওয়ার থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে ছিল। বাকি ৩০টি ছিল কোনো টাওয়ার থেকে ৩০০ মিটারের বেশি দূরত্বে। দেখা যায়, টাওয়ারের কাছের ৪০ শতাংশ পাখির বাসায় কোনো ছানা ছিল না। অন্যদিকে, দূরে থাকা পাখির বাসার ৯৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাসায় পাখির ছানা ছিল।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজা মোবারক মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনে জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন। তবে তিনি বিস্তারিত কথা বলতে চাননি।
ক্যাম্পাসে যথাযথ নেটওয়ার্কের অভাব, ডার্ক পয়েন্ট (দুর্বল নেটওয়ার্ক) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি মোবাইল টাওয়ার থাকায় টাওয়ারের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ফজলুল করীম পাটোয়ারি।
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) এই অধ্যাপক স্ট্রিমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা মোবাইল ডাটা ব্যবহার করেন। পার্শ্ববর্তী এলাকার টাওয়ার থেকে ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক সাপোর্ট দেওয়া হয়। ফলে যথেষ্ট সিগন্যাল পাওয়া যায় না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, কমিটি খোঁজ নিয়ে দেখেছে, কোথায় কোথায় নেটওয়ার্কে সমস্যা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে টাওয়ার বসানোর জায়গা নির্ধারণ করা হয়। আমরা সেগুলোর নীতিগতভাবে ও টেকনিক্যালি অনুমোদন দিয়েছি। শর্ত ছিল টাওয়ার কোম্পানি এসব টাওয়ারে প্রত্যেকটি অপারেটর রাখবে।
নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ‘ভ্যাকিউম’ থাকলে তীব্র তরঙ্গ তৈরি হয়, যা আরও বেশি ক্ষতিকর উল্লেখ করে ফজলুল করীম পাটোয়ারি বলেন, সঠিকভাবে কানেকশন পেলে কম ক্ষতি হয়। তবে প্রত্যেক তরঙ্গেই ক্ষতি হয়। ভয় পেলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এখানে লেটেস্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যেগুলো কম ক্ষতিকর।
পাঁচটি মোবাইল টাওয়ারের প্রয়োজন আছে কি-না সেটিও ভেবে দেখার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী রাকিবুল রনি ক্যাম্পাসের ভেতরে পাঁচটি টাওয়ার বসানো নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফলে পাখির সংখ্যা অত্যাধিক মাত্রায় কমে যাওয়ার প্রমাণ আছে প্রচুর রিসার্চে। অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ার প্রমাণও তো আছে। সঙ্গে মানুষের স্বাস্থে এর ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। তবু ক্যাম্পাসের ভেতরেই পাঁটি মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের চুক্তি!’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র সাত্তার পাখি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে আসছেন। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘একাধিক টাওয়ার বসানো কিছু অর্থে ভালো, কেননা এর কারণে এলাকা ভাগ হয়ে যায় এবং উচ্চশক্তির ফ্রিকোয়েন্সি তৈরির প্রয়োজন কমে আসে।’
তবে সবুজে আচ্ছাদিত এলাকা, জলাভূমি, পরিযায়ী পাখি আসে এ ধরনের অঞ্চলে অতিরিক্ত টাওয়ার স্থাপন ‘মোটেই ঠিক নয়’ বলে জানান তিনি। অরিত্র বলেন, পাঁচটি টাওয়ার বসানো পরিবেশবান্ধব হবে না। এতে ক্ষতিই হবে।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া বলেন, ‘মোবাইল টাওয়ার যেন সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়, অর্থাৎ যেখানে টাওয়ার বসবে, সেটি যেন পাখির ফ্লাইং জোনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। টাওয়ারের বিকিরণের বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন স্ট্রিমের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা মুত্তালী নাবিল
প্রাণিসম্পদ খাতে মহিষের গুরুত্ব যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন উপদেষ্টা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
১৪ মিনিট আগেগাজাগামী মানবিক সহায়তা বহনকারী ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর নৌবহর দখল এবং তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ জাহাজে থাকা সব অধিকারকর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে স্বাধীন গণমাধ্যমসংস্থা দৃক।
১৫ মিনিট আগেইসরায়েলি বাহিনীর হাতে স্বামী শহিদুল আলম আটক হওয়ার পরও নিজেকে একা মনে হয়নি বলে জানিয়েছেন লেখক, কলামনিস্ট ও দৃক পিকচার লাইব্রেরির পরিচালক রেহনুমা আহমেদ।
২৯ মিনিট আগেদৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ সব অ্যাক্টিভিস্টকে অপহরণ করে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দৃকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ।
১ ঘণ্টা আগে