সংকটের বিবরণ তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বললেন
স্ট্রিম ডেস্ক
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেষারেষি অত্যন্ত লজ্জাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানে মারামারি, হুমকি, হিংসাত্মক আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উভয়পক্ষ রাস্তার আন্দোলনে নেমেছে। দুই গ্রুপ প্রকৌশলীর মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়, তবে হানাহানি ও হিংসাত্মক উসকানি নতুন। এসব পেশাগত দক্ষতা কিংবা উৎকর্ষকে নির্দেশ করে না।’
আজ বুধবার দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। অবশ্য পোস্টে সতর্ক করে দিয়ে বুয়েটের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেছেন, এই লেখার মতামত ব্যক্তিগত। লেখাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনোভাব নয়।
একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোনো একক প্রতিষ্ঠান, একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘উপরন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংজ্ঞা শুধু বাংলাদেশের মানহীন, মধ্যমান কিংবা সীমিত পরিসরের উচ্চমান বিএসসি ডিগ্রি বা বিএসসি কারিকুলাম দিয়েই নির্ধারণ হবে এটা কেন হয়ে গেল না?’
ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ীদেশের প্রকৌশল শিক্ষা তিন রকমের হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তাঁর মতে সেই তিন প্রকার শিক্ষার প্রথমটি হল, মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন। যেমন বাংলাদেশের বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট; এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ওয়ার্কগুলো মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তারসঙ্গে যুক্ত থিউরিটিক্যাল সায়েন্স। এখানে হাতেকলমে শিক্ষা কম, ম্যাথ ফরমুলা থিওরি বেশি। অর্থাৎ যাকে আমরা সেশনাল কোর্স বলি, তা মোট কোর্সওয়ার্কের ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব ২০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘এই ধারার কোর্সের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ার ইনোভেশন, রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশনস, মেইন্টেনেন্স এবং ডিজাইন প্ল্যানিং ইত্যাদি। বিশেষ করে ট্রেনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল কলেজের শিক্ষকতা, অধ্যাপনা।’
দ্বিতীয়ত ‘ফিফটি-ফিফটি মিক্স’ প্রকৌশল শিক্ষা। তাঁর মতে, শিক্ষার এই অংশে থাকে থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ৫০-৫০ থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড কোর্স ওয়ার্ক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই জাতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা নেই বললেই চলে। আমি একটা করার চেষ্টা করছি। ইন্ডাস্ট্রির দক্ষতা তৈরির জন্য আমি এমন একটা ইনস্টিটিউট করার চেষ্টা করছি। যেখানে শ্রমবাজারের দক্ষতার ভিত্তিতে কোর্স ওয়ার্ক তৈরি হবে।’
আর তৃতীয় প্রকার শিক্ষা হল ‘২৫-৭৫ মিক্স’। এই ধারায় ২৫ শতাংশ থিউরিটিক্যাল এবং ৭৫ শতাংশ অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন থাকে। এর উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিল্পের সাধারণ অপারেশন, মেইন্টেনেন্স, ডিজাইন এবং প্ল্যানিং। বাংলাদেশে এই জনবল সরবরাহ করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো। পাশাপাশি সব ডোমেইনেই গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন ও ডেভেলপমেন্টও একটা ন্যাচারাল বিষয়।
বাংলাদেশে প্রকৌশল খাতের মূল সমস্যা তিনটি বলে মনে করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তাঁর মতে, এই সমস্যাগুলোর প্রথমটি হলো এই কোর্স ওয়ার্কের মধ্যে কোনো অ্যাকাডেমিক সংযোগ নেই। আপার কিংবা লোয়ার অ্যাকাডেমিক ফ্লো কোনোটাই নেই। কেউ একটায় খুব ভাল করলে, অন্যটাতে যেতে পারেন না বা একটা কারো কাছে কঠিন লাগলে অন্যটায় যেতে পারেন না। ইউরোপে এটা আছে।
দেশ চলতে সবার দরকার উল্লেখ করে দ্বিতীয় সমস্যাটিতে তিনি বলেন, ‘দেশে কেউ নিজ পেশার বাইরে অন্যকে পেশাগত সম্মান দিতে চায় না।’
আর তৃতীয়ত দেশে চাকরির হাহাকার। মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি কম থাকায় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের ১০ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আবেদন করতে চান। আবার পদ স্বল্পতা থাকা ৯ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও মনে করেন তিনি। ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘এখানে ১১তম গ্রেডের বিষয়টি এনে একটা সেটেলমেন্ট দরকার যা প্রকৌশলীদের লিডারশিপকে সলভ করতে হবে। আবার অপরাপর কারণের পাশাপাশি এই চাকরি কম থাকার কারণেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বিসিএস-এ ঝুঁকছে।’ নরমালি একটা দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সংখ্যায় বেশি থাকে, বাংলাদেশে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বেশি হয়ে গেছে; যার দরকার নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রদত্ত শিক্ষা কোর্স ও সার্টিফিকেট সংখ্যার আলোকে ১১তম, ১০ম ও ৯ম; এই তিনটি গ্রেডের আসন সংখ্যার বিন্যাসকে রিভিউ করা দরকার উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সমস্যার ফাঁকে ভাল প্রকৌশলীরা দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখেছি, বুয়েটের চারভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশ যাতে চান এবং অন্তত অর্ধেক তাতে সফল। দেখা যাচ্ছে বুয়েটের ছেলেমেয়েরা হয় বিদেশ যাচ্ছেন, না হয় বিসিএস-এ।
দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান কে করবে প্রশ্ন হচ্ছে— এমন প্রশ্ন তুলে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘‘এই যখন বাস্তবতা, তখন কিছুটা বেশি পড়া (কিন্তু একই বা প্রায় একই কাজ করা) একদল অভিজাত ভাবা ইঞ্জিনিয়ার বলছে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামের এই এলিট স্টেজে অন্যরা উঠতে পারবে না। তারা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করতে পারবে না। এর বাইরে প্রাইভেট-পাবলিক ক্যাচাল তো আছেই। এইরকম দাবি শুনলে বিব্রতবোধ করি আমি।’’
যদিও নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ উপাধি ব্যবহারের পক্ষে নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেশা জিনিসটা মা-বাবার দেওয়া নাম না। তবে কেউ পিএইচডি করলে সেটা অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স হিসেবে ভিন্ন বিষয়।’
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবির প্রশ্নে নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করেন ফয়েজ আহমদ। নিজের ব্যাখ্যার প্রথম পয়েন্টে তিনি বলেন, ‘৯ম গ্রেড বন্ধ বা পদ কমানো যাবে না। ৯ম গ্রেড বিভিন্ন অপকৌশলে পদ সংখ্যা কমানো আছে বলে অভিযোগ এসেছে। এটা বিএসসি পাস ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য পদ সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রেডটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। পাশাপাশি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বিসিএসও দেবেন। এবং নিয়োগদাতা, প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবেন। কোটার ভিত্তিতে না।’
আর দ্বিতীয় পয়েন্টে তিনি বলেন, ‘১০ম গ্রেড ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকবে এবং নিয়োগদাতা প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবে, কোটার ভিত্তিতে না। ৩৩ শতাংশ কোটা থেকে থাকলে সেটা যৌক্তিক নয়, এটা বন্ধ করা দরকার।’
‘একই পেশার অন্যকে অপমান করার কথা’, তৃতীয় পয়েন্টে এমন মন্তব্য করেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কাউকে নিয়োগ দিলে, তাকে ভাল পারফর্মেন্সের সাপেক্ষে প্রমোশনও দেবেন। তবে সেটা কোটার ভিত্তিতে হতে পারবে না, হবে ডিফাইন্ড পার্ফর্মেন্স কেপিআই এর ভিত্তিতে।’
নিজের পোস্টে প্রকৌশলীদের সংগঠনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন নামে দুটি ‘নামমাত্র’ প্রতিষ্ঠান আছে। এরা কেউই ইন্সটিটিউশন নয়, এরা আসলে ক্লাব। এখানে প্রকৃত প্রকৌশলীর কোনও কাজ নেই, এখানকার কাজ হল সিন্ডিকেট করা।’
বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এই দুই সংগঠনের সমাধান করার কথা ছিল বলেও মনে করেন ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, ‘এখানে মূলত দলাদলি হয়, ভাগাভাগি হয়, রাজনীতি হয়। সবচেয়ে কম হয় ইনস্টিটিউশন সংক্রান্ত কাজ। আমি এসবে মেম্বার হইনি, হওয়ার ইচ্ছাও আপাতত নেই।’
এর বাইরে আরেকটা কথার অবতারণা করে ফয়েজ আহমদ কর্ম কমিশনে আরেকটি ক্যাডার সৃজনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রশাসনে ডেটা সায়েন্স, টেলিকম, আইসিটি, এআই, জেন-এআই মিলিয়ে দ্রুত একটি ক্যাডার সৃজন করা দরকার। এটা স্থগিত হয়ে পড়া টেলিকম ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে করা যেতে পারে। যেহেতু দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের কাজ আছে এবং লাগবে, তাই এটা এডহক নিয়োগ এবং কন্সাল্টেন্ট নির্ভর হওয়া উচিৎ না। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ করবো বলে মনঃস্থির করেছি।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘সবশেষে এই যে মারামারি, কেন জানেন? ৫ শতাংশ চাকরির জন্য, যা সরকার দেয়। বাকি ৯৫ শতাংশের কথা কেউ বলেন না। উনাদের চাকরি, ভাতা, কাজের পরিবেশ কিংবা স্বাস্থ্য বীমা, পরিবহন খরচ কিংবা পেনশন নিয়ে কোনো আলাপ নেই, নেই কোনো আন্দোলন।’
তিনি সবাইকে বাকি ৯৫ শতাংশ বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের কথাও ভাবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তবেই দেশের টেকসই উন্নয়নের একটা ভিত্তি তৈরি হবে। দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, ‘বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের রেষারেষি অত্যন্ত লজ্জাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখানে মারামারি, হুমকি, হিংসাত্মক আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। উভয়পক্ষ রাস্তার আন্দোলনে নেমেছে। দুই গ্রুপ প্রকৌশলীর মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়, তবে হানাহানি ও হিংসাত্মক উসকানি নতুন। এসব পেশাগত দক্ষতা কিংবা উৎকর্ষকে নির্দেশ করে না।’
আজ বুধবার দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। অবশ্য পোস্টে সতর্ক করে দিয়ে বুয়েটের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেছেন, এই লেখার মতামত ব্যক্তিগত। লেখাটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মনোভাব নয়।
একটি দেশের প্রকৌশল সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কোনো একক প্রতিষ্ঠান, একক ডিগ্রি কিংবা একটি মাত্র ডোমেইন দিয়ে বিবেচনা করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘উপরন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সংজ্ঞা শুধু বাংলাদেশের মানহীন, মধ্যমান কিংবা সীমিত পরিসরের উচ্চমান বিএসসি ডিগ্রি বা বিএসসি কারিকুলাম দিয়েই নির্ধারণ হবে এটা কেন হয়ে গেল না?’
ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ীদেশের প্রকৌশল শিক্ষা তিন রকমের হতে পারে বলে উল্লেখ করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তাঁর মতে সেই তিন প্রকার শিক্ষার প্রথমটি হল, মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন। যেমন বাংলাদেশের বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট; এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ওয়ার্কগুলো মূলত থিউরিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তারসঙ্গে যুক্ত থিউরিটিক্যাল সায়েন্স। এখানে হাতেকলমে শিক্ষা কম, ম্যাথ ফরমুলা থিওরি বেশি। অর্থাৎ যাকে আমরা সেশনাল কোর্স বলি, তা মোট কোর্সওয়ার্কের ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব ২০ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘এই ধারার কোর্সের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ার ইনোভেশন, রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, উচ্চতর ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশনস, মেইন্টেনেন্স এবং ডিজাইন প্ল্যানিং ইত্যাদি। বিশেষ করে ট্রেনিং, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল কলেজের শিক্ষকতা, অধ্যাপনা।’
দ্বিতীয়ত ‘ফিফটি-ফিফটি মিক্স’ প্রকৌশল শিক্ষা। তাঁর মতে, শিক্ষার এই অংশে থাকে থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ৫০-৫০ থিউরিটিক্যাল এবং অ্যাপ্লায়েড কোর্স ওয়ার্ক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই জাতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা নেই বললেই চলে। আমি একটা করার চেষ্টা করছি। ইন্ডাস্ট্রির দক্ষতা তৈরির জন্য আমি এমন একটা ইনস্টিটিউট করার চেষ্টা করছি। যেখানে শ্রমবাজারের দক্ষতার ভিত্তিতে কোর্স ওয়ার্ক তৈরি হবে।’
আর তৃতীয় প্রকার শিক্ষা হল ‘২৫-৭৫ মিক্স’। এই ধারায় ২৫ শতাংশ থিউরিটিক্যাল এবং ৭৫ শতাংশ অ্যাপ্লায়েড ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন থাকে। এর উদ্দেশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিল্পের সাধারণ অপারেশন, মেইন্টেনেন্স, ডিজাইন এবং প্ল্যানিং। বাংলাদেশে এই জনবল সরবরাহ করে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো। পাশাপাশি সব ডোমেইনেই গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন ও ডেভেলপমেন্টও একটা ন্যাচারাল বিষয়।
বাংলাদেশে প্রকৌশল খাতের মূল সমস্যা তিনটি বলে মনে করেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তাঁর মতে, এই সমস্যাগুলোর প্রথমটি হলো এই কোর্স ওয়ার্কের মধ্যে কোনো অ্যাকাডেমিক সংযোগ নেই। আপার কিংবা লোয়ার অ্যাকাডেমিক ফ্লো কোনোটাই নেই। কেউ একটায় খুব ভাল করলে, অন্যটাতে যেতে পারেন না বা একটা কারো কাছে কঠিন লাগলে অন্যটায় যেতে পারেন না। ইউরোপে এটা আছে।
দেশ চলতে সবার দরকার উল্লেখ করে দ্বিতীয় সমস্যাটিতে তিনি বলেন, ‘দেশে কেউ নিজ পেশার বাইরে অন্যকে পেশাগত সম্মান দিতে চায় না।’
আর তৃতীয়ত দেশে চাকরির হাহাকার। মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি কম থাকায় ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের ১০ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আবেদন করতে চান। আবার পদ স্বল্পতা থাকা ৯ম গ্রেডে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও মনে করেন তিনি। ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘এখানে ১১তম গ্রেডের বিষয়টি এনে একটা সেটেলমেন্ট দরকার যা প্রকৌশলীদের লিডারশিপকে সলভ করতে হবে। আবার অপরাপর কারণের পাশাপাশি এই চাকরি কম থাকার কারণেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা বিসিএস-এ ঝুঁকছে।’ নরমালি একটা দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সংখ্যায় বেশি থাকে, বাংলাদেশে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বেশি হয়ে গেছে; যার দরকার নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রদত্ত শিক্ষা কোর্স ও সার্টিফিকেট সংখ্যার আলোকে ১১তম, ১০ম ও ৯ম; এই তিনটি গ্রেডের আসন সংখ্যার বিন্যাসকে রিভিউ করা দরকার উল্লেখ করে ফয়েজ আহমদ বলেন, সমস্যার ফাঁকে ভাল প্রকৌশলীরা দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখেছি, বুয়েটের চারভাগের তিন ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশ যাতে চান এবং অন্তত অর্ধেক তাতে সফল। দেখা যাচ্ছে বুয়েটের ছেলেমেয়েরা হয় বিদেশ যাচ্ছেন, না হয় বিসিএস-এ।
দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যার সমাধান কে করবে প্রশ্ন হচ্ছে— এমন প্রশ্ন তুলে ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘‘এই যখন বাস্তবতা, তখন কিছুটা বেশি পড়া (কিন্তু একই বা প্রায় একই কাজ করা) একদল অভিজাত ভাবা ইঞ্জিনিয়ার বলছে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামের এই এলিট স্টেজে অন্যরা উঠতে পারবে না। তারা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহার করতে পারবে না। এর বাইরে প্রাইভেট-পাবলিক ক্যাচাল তো আছেই। এইরকম দাবি শুনলে বিব্রতবোধ করি আমি।’’
যদিও নামের আগে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ উপাধি ব্যবহারের পক্ষে নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেশা জিনিসটা মা-বাবার দেওয়া নাম না। তবে কেউ পিএইচডি করলে সেটা অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্স হিসেবে ভিন্ন বিষয়।’
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবির প্রশ্নে নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান ব্যাখ্যা করেন ফয়েজ আহমদ। নিজের ব্যাখ্যার প্রথম পয়েন্টে তিনি বলেন, ‘৯ম গ্রেড বন্ধ বা পদ কমানো যাবে না। ৯ম গ্রেড বিভিন্ন অপকৌশলে পদ সংখ্যা কমানো আছে বলে অভিযোগ এসেছে। এটা বিএসসি পাস ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য পদ সংখ্যার ভিত্তিতে গ্রেডটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। পাশাপাশি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বিসিএসও দেবেন। এবং নিয়োগদাতা, প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবেন। কোটার ভিত্তিতে না।’
আর দ্বিতীয় পয়েন্টে তিনি বলেন, ‘১০ম গ্রেড ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকবে এবং নিয়োগদাতা প্রার্থীর পারফর্মেন্স সাপেক্ষে প্রমোশন দিবে, কোটার ভিত্তিতে না। ৩৩ শতাংশ কোটা থেকে থাকলে সেটা যৌক্তিক নয়, এটা বন্ধ করা দরকার।’
‘একই পেশার অন্যকে অপমান করার কথা’, তৃতীয় পয়েন্টে এমন মন্তব্য করেন ফয়েজ আহমদ।
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কাউকে নিয়োগ দিলে, তাকে ভাল পারফর্মেন্সের সাপেক্ষে প্রমোশনও দেবেন। তবে সেটা কোটার ভিত্তিতে হতে পারবে না, হবে ডিফাইন্ড পার্ফর্মেন্স কেপিআই এর ভিত্তিতে।’
নিজের পোস্টে প্রকৌশলীদের সংগঠনের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন নামে দুটি ‘নামমাত্র’ প্রতিষ্ঠান আছে। এরা কেউই ইন্সটিটিউশন নয়, এরা আসলে ক্লাব। এখানে প্রকৃত প্রকৌশলীর কোনও কাজ নেই, এখানকার কাজ হল সিন্ডিকেট করা।’
বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এই দুই সংগঠনের সমাধান করার কথা ছিল বলেও মনে করেন ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, ‘এখানে মূলত দলাদলি হয়, ভাগাভাগি হয়, রাজনীতি হয়। সবচেয়ে কম হয় ইনস্টিটিউশন সংক্রান্ত কাজ। আমি এসবে মেম্বার হইনি, হওয়ার ইচ্ছাও আপাতত নেই।’
এর বাইরে আরেকটা কথার অবতারণা করে ফয়েজ আহমদ কর্ম কমিশনে আরেকটি ক্যাডার সৃজনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রশাসনে ডেটা সায়েন্স, টেলিকম, আইসিটি, এআই, জেন-এআই মিলিয়ে দ্রুত একটি ক্যাডার সৃজন করা দরকার। এটা স্থগিত হয়ে পড়া টেলিকম ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে করা যেতে পারে। যেহেতু দেশের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের কাজ আছে এবং লাগবে, তাই এটা এডহক নিয়োগ এবং কন্সাল্টেন্ট নির্ভর হওয়া উচিৎ না। বিষয়টি নিয়ে কিছু কাজ করবো বলে মনঃস্থির করেছি।’
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘সবশেষে এই যে মারামারি, কেন জানেন? ৫ শতাংশ চাকরির জন্য, যা সরকার দেয়। বাকি ৯৫ শতাংশের কথা কেউ বলেন না। উনাদের চাকরি, ভাতা, কাজের পরিবেশ কিংবা স্বাস্থ্য বীমা, পরিবহন খরচ কিংবা পেনশন নিয়ে কোনো আলাপ নেই, নেই কোনো আন্দোলন।’
তিনি সবাইকে বাকি ৯৫ শতাংশ বিএসসি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের কথাও ভাবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তবেই দেশের টেকসই উন্নয়নের একটা ভিত্তি তৈরি হবে। দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিলে তা কবে থেকে কার্যকর হবে, এমন প্রশ্ন করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
৫ মিনিট আগেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল তৃতীয়বারের মতো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। ১৩ দিন পেছানো হয়েছে ভোটগ্রহণের সময়। এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করেছে ছাত্রদল ছাড়া ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠন।
৪৩ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। ঢাবি হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।
১ ঘণ্টা আগেসাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে দুপুর দেড়টার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
১ ঘণ্টা আগে