leadT1ad

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন শেষ হয়েছে। সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহসাধারণ সম্পাদকপদসহ (এজিএস) ডাকসুতে পদ আছে ২৮টি। এই ২৮ পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা। এই নির্বাচন ও ফলাফল ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁরা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। এতে কোনো জোরজবরদস্তির ঘটনা ঘটেনি। তবে কিছু অসঙ্গতির কথাও বলেছেন তাঁরা। ঢাবি শিক্ষার্থীরা মনে করেন, নির্বাচন ঘিরে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো এড়ানো গেলে নির্বাচনটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো।

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক স্ট্রিমকে বলেন, ‘প্রথমবার ডাকসু নির্বাচনে ভোট দেওয়া সত্যি আমার কাছে অন্যরকম অনুভূতির ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুবই সুন্দর সুশৃঙ্খল নির্বাচন আয়োজন করেছে। প্যানেলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা নির্বাচনে ছাত্রদের মন জয় করেছে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। হার-জিত মেনে নিয়ে আশা করি ছাত্রসংগঠনগুলো সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবে।’

তবে অসঙ্গতি ও প্রসাশনের পক্ষপাতিত্বের কথা বলেছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজ কল্যাণ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের এক শিক্ষার্থী স্ট্রিমকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে কিছু অসঙ্গতি রয়ে গেছে। গতকাল বিভিন্ন প্রার্থী অনেকগুলো অভিযোগ জানিয়েছে, আমরা সেগুলো দেখেছি৷ কিন্তু প্রসাশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই৷ ফলে এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন তৈরী হয়েছে৷’

একটা প্যানেলের ব্যপারে ঢাবি প্রশাসন বায়াসড ছিল মন্তব্য করে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'আমরা নির্বাচনের শুরু থেকেই দেখেছি, প্রসাশন একটা পক্ষকে সুবিধা দিয়েছে৷ শিবির যে জয়ী হলো, তাদের ব্যাপারেও অনেক অভিযোগের খবর শুনেছি৷ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) অভিযোগ জানিয়েছে, প্রসাশন শিবিরের হয়ে কাজ করছে। ছাত্রদল ও অন্য অনেক প্যানেল এবং প্রার্থীও বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু প্রসাশন সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই মনে হচ্ছে, প্রসাশন শিবিরের ব্যাপারে বায়াসড ছিলো। পাঁচ আগস্টের পরে আমরা সবার সমান অধিকার চেয়ে এসেছি। এমন বায়াসড আচরণ আশা করি নাই।'

তবে এসব অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই বলেও মনে করছেন অনেক শিক্ষার্থী। ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী কানজুল কারাম কৌষিক স্ট্রিমকে বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রার্থীরা কিছু অভিযোগও তুলছেন। আমরা নিউজ দেখেছি, সব কেন্দ্রের নির্বচন দেখেছি। কিন্তু সেসব অভিযোগের সুস্পষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ আমরা দেখি নাই।'

শিবিরের নেতৃত্বে ভবিষ্যত ক্যাম্পাস কেমন হবে প্রশ্ন করলে কানজুল কারাম বলেন, 'আশা করি শিবির তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে৷ এমন কিছু করবে না, যাতে তাদের ক্ষতি হয়।'

এ দিকে ঢাবির জগন্নাথ হলে একেবারেই জুত করতে পারেনি ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট'। এই হলে হাতেগোনা কয়েকটি ভোট পেয়েছেন বিপুল ভোটে জেতা সাদিক-ফরহাদরা। জগন্নাথ হলে ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১০ ভোট, জিএস প্রার্থী ফরহাদ পেয়েছেন মাত্র ৫ ভোট। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শিবিরসমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হওয়াতে চাপে পড়তে পারে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা।

ঢাবির ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী দেবব্রত স্ট্রিমকে বলেন, 'আপনি জানেন, দেশে কী পরিমাণ মবের ঘটনা ঘটছে৷ যে যার মতো মব তৈরি করে উত্তেজনা তৈরি করছে। আর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মানে একটা ফুটবল। সব রাজনৈতিক দল এই বল নিয়ে খেলে। শেখ হাসিনাও খেলে গেছে অনেকদিন৷ সেই খেলা ঢাবিতেও শুরু হয়েছে৷ আপনি দেখে থাকবেন, শিবির জগন্নাথ হলে ভোট কম পেয়েছে। এর পর থেকে জগন্নাথ হলকে "হিন্দুস্তানী", "ভারতপন্থী" ট্যাগ দেওয়া শুরু হয়ে গেছে৷ এটা কারা করছে, কেন করছে?'

তবে এখনো জগন্নাথ হল কোন চাপ অনুভব করছে না বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ হলের আরেক শিক্ষার্থী। জিওলজি বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা জগন্নাথ হলের ছাত্ররা এই জিনিসটা একটু বোঝার চেষ্টা করতেছি, ব্যাপারটা আসলে কী হইলো? আমরা এখন এটাকে অবজারভেশনেই রাখছি। আর আলাদা করে চাপের ব্যাপারটা যেইটা, সেইটা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা আপনিও জানেন, আমিও জানি। কিন্তু জগন্নাথ হলের প্রতি এখনো কোনো চাপ তৈরি হয় নাই বা এটা নিয়ে জগন্নাথ হল আলাদা করে ভাবতেছে না।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এই পরিবর্তিত যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতাতে যদি আসলে চাপ তৈরি হয়, তাহলে জগন্নাথ হল সেটা তাদের নিজেদের মতো করে সলিউশন করার চেষ্টা করবে। আর দশটা পলিটিক্যাল পার্টিকে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা সারাজীবন যেইভাবে ডিল করেছে, শিবিরকেও পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবেই ডিল করা হবে। এবং তাদের যে প্রিভিয়াস ট্র্যাক রেকর্ড, সেই ট্র্যাক রেকর্ডটা মাথায় রেখেই। এর বাইরে হলে আসলে ঐভাবে কেউ কিছু এখন ভাবতেছে না।’

এদিকে ক্যাম্পাসে শিবির নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি করবে বলে আশাবাদী অনেকে। ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী নেছার উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময় এখন বদলে গেছে। ফলে আমার মনে হয়, ক্যাম্পসে শিবির নতুন বন্দোবস্তের রাজনীতি করবে। আমারা শিবিরকে যেভাবে চিনি বা যে সব গল্প আমরা শুনি, সেসবের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না আশা করি।’

অন্যদিকে সবাই মিলে সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী তাহমীদ আহমেদ শুভ্র স্ট্রিমকে বলেন, ‘ডাকসু আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের চাওয়া ছিল। ডাকসুটা হয়ে গেছে ভালোয় ভালোয়, আলহামদুলিল্লাহ। কেউ নির্বাচিত হইছে, কেউ হইতে পারে নাই। কিন্তু এখন যেহেতু ক্যান্ডিডেট সিলেক্ট হয়ে গেছে, শিক্ষার্থীদের ভোটের প্রেক্ষিতে হইছে, তো সবার একসাথে মিলে কাজ করা উচিত। ক্যাম্পাসটা সুন্দর করার জন্য বা স্টুডেন্টদের ক্যাম্পাস লাইফটা সুন্দর করার জন্য।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত