leadT1ad

সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খুলনা

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৯
আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বিশ্বের বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব। প্রতিবছর পূর্ণিমার তিথিতে পুণ্যস্নান ও পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। তবে এবারও রাস উৎসবে কোনো মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে না।

রাসমেলা মূলত মণিপুরীদের প্রধান উৎসব হলেও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ও বিভিন্ন স্থানে এ উৎসব পালন করে থাকে। রাস উৎসব উদযাপন কমিটি ও দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিথি অনুযায়ী আজ থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর ভোরে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবেন।’

রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে কড়া বিধিনিষেধ

এদিকে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে প্রবেশে কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে বন বিভাগ। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই বন বিভাগের নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে আলোরকোলে যেতে পারবেন। অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘এ বছর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই অংশ নিতে পারবেন। পর্যটকদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুণ্যার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পাঁচটি নির্ধারিত রুটে টহল দল মোতায়েন আছে। সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও নৌযান থামানো যাবে না। কোনো ধরনের বিস্ফোরক, আগ্নেয়াস্ত্র বা অবৈধ সামগ্রী বহন নিষিদ্ধ। এগুলোর পাশাপাশি হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, কুঠার, করাত ইত্যাদি পাওয়া গেলেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক যেমন পানির বোতল, প্লেট, গ্লাস ও চামচ বহন করা যাবে না। এছাড়া মাইক বাজানো বা শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বছরও রাস উৎসব উপলক্ষে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।

রাস উৎসবের ইতিহাস

কবে থেকে দুবলার চরে রাসমেলা শুরু হয়, কবে থেকে জেলেরা এখানে মৎস্য আহরণ করতে আসে, কিংবা দুবলার চরের নামকরণ নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। দুবলারচরের রাসমেলা সম্পর্কে খুলনা অঞ্চলের লেখক ও গবেষক সঞ্জিব হাউলী বলেন, এটি মূলত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের একটি পুণ্যোৎসব। হিন্দু পৌরাণিক মতে, রাস হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের মিলন।

অনেকের মতে, প্রায় ২০০ বছর আগে বৃহত্তর ফরিদপুরের (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে) জন্ম হয় মতুয়া সাধক ব্রাহ্মণপুত্র হরিঠাকুরের। তিনি বৃদ্ধ বয়সে স্বপ্নাদ্রষ্ট হয়ে দুবলার চরে পূজা-পার্বণ শুরু করেন এবং তাঁর অনুসারীদের সেই পথ অনুসরণের নির্দেশ দেন।

সেই থেকে প্রতিবছর বাংলা কার্তিক মাসের রাসপূর্ণিমা তিথিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষ দুবলার চরে আসেন। পাপমোচন ও পার্থিব জীবনের কামনা-বাসনা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করে আসছেন তারা।

আবার কারও কারও মতে, বার ভূইয়ার অন্যতম প্রতাপাদিত্য এ পূজা ও মেলার প্রবর্তন করেন।

মৎস্য আহরণের মৌসুমে এটি হয় বলে দুবলার চরের এই মেলাকে মৎস্য আহরণ শুরুর উৎসবও মনে করা হয়। প্রাচীন যুগে নানা কারণে সমুদ্রযাত্রা ও মৎস্য আহরণের আগে মানুষ তীরে পূজা-অর্চনা করে সমুদ্রে নামতেন।

দুবলার চর মূলত সমুদ্রের একটি বড় প্রবেশদ্বারে নদীসংলগ্ন মোহনা। মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের দ্বীপ আলোরকোল, ককিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহেরআলির চর এবং শেলারচর নিয়ে দুবলারচরের আয়তন ৮১ বর্গমাইল। এ কারণেই হয়তো এই নদী মোহনাসংলগ্ন দ্বীপে পূজা প্রচলিত হতে পারে—যা ধীরে ধীরে লোকসমাগমের মাধ্যমে রূপ নেয় বৃহৎ রাসমেলায়।

প্রতি বছর রাসমেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে সমবেত হন। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ রয়েছে। এ সময় হরিণ শিকার বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য ২০২২ সাল থেকে রাসমেলায় হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়া অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত