leadT1ad

বিশেষ সাক্ষাৎকার

সরকারের সঙ্গে সখ্যতার কথা ঠিক নয়, আমাদের আগে পরিচয় ছিল না: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট, সংস্কার, গণভোটের দাবি এবং আগামী নির্বাচনসহ জামায়াতে ইসলামীর সার্বিক মূল্যায়ন ও রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা স্ট্রিমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন দলটির সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি জামায়াতের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা, বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক, জুলাই সনদ এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা স্ট্রিমের সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৪১
স্ট্রিমের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। স্ট্রিম ছবি

জামায়াতে ইসলামী একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। অনেকে মনে করছেন, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো সময় পার করছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মুজিবুর রহমান: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনো নতুন সংগঠন নয়। দেশের বর্তমান দলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সিনিয়র। ১৯৪১ সাল থেকে এর পদযাত্রা শুরু এবং বাংলাদেশে বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, এই দুনিয়া আমাদের আসল জীবন নয়, এরপর আখেরাতের এক বিশাল জীবন রয়েছে। তাই দুনিয়াতে ভালো কাজ করে আখেরাতের প্রস্তুতি নেওয়াই প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানের দায়িত্ব।

আমরা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আল্লাহর বিধান, অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমাদের কাজের পদ্ধতি দুটি: এক, আদর্শ মানুষ তৈরি করা এবং দুই, জনমত গঠন করা। আমরা বিশ্বাস করি, যদি ভালো মানুষ তৈরি হয় এবং জনমত আমাদের আদর্শকে বুঝতে পারে, তবে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

ছাত্রজীবনেই যেন তরুণরা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সেজন্য ইসলামী ছাত্রশিবির কাজ করছে। আমাদের বর্তমান নেতৃত্বের সিংহভাগই ছাত্রজীবনে কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন এবং চরিত্র গঠনের মাধ্যমেই জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছে। তবে আমাদের ওপর জুলুমের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আমরা ভালো কাজ করলেও অনেক সময় তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়। সম্প্রতি এমন কথাও বলা হচ্ছে যে, আমরা সব সময় সরকারের বিরোধিতা করি, তাই আমাদের রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত।

কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে তো আপনাদের বেশ ভালো সম্পর্ক এবং প্রশাসনে আপনাদের প্রভাব বাড়ছে বলেও আলোচনা আছে। এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

মুজিবুর রহমান: প্রথমত, আমাদের ওপর অত্যাচার ও মিথ্যাচারের ইতিহাস দীর্ঘ। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে শুরু করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ (রাহিমাহুল্লাহ) বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড এবং এর বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত যাওয়ার পরিকল্পনা রাখি।

আমাদের প্রায় ১৪ লক্ষ নেতাকর্মী ও সমর্থককে বিভিন্ন সময়ে আসামি করা হয়েছে এবং প্রায় ১৩ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এমন খুব কমই আছেন, যারা জেল খাটেননি। আমাদের বক্তব্য হলো, কে কী বলল, তা আমরা পরোয়া করি না। আমরা হকের কথা বলি। যখন আমাদের হকের কথা কারো সঙ্গে মিলে যায়, তখন বলা হয় আমরা তাদের সঙ্গে আছি।

আমাদের কথা হচ্ছে আমরা সব সব সময় হকের পথে আছি এবং থাকব। কে আমাদের সাথে থাকল, কার সাথে মিললো…। যখন আওয়ামী লীগের সাথে বা আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে, আমরা আওয়ামী লীগের সাথে যাই নাই। কেয়ারটেকার সরকারের আন্দোলনে যখন আওয়ামী লীগ এল তখন তারা বলল যে এটা আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করছে। এটা প্র্যাকটিক্যালি সত্য না। সত্য ছিল আমরাই প্রথমে শুরু করেছি কেয়ারটেকার। অধ্যাপক গোলাম আযম… মানে এটা তাঁর দেখিয়ে দেওয়া একটা পথ।

যেমন, দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা কেয়ারটেকার সরকারের ধারণা দিয়েছিলাম। অধ্যাপক গোলাম আযম (রাহিমাহুল্লাহ) এই পথ দেখিয়েছিলেন। প্রথমে অনেকে একে ‘পাগল আর শিশুর’ কথা বলে উড়িয়ে দিলেও পরে সবাই এর গুরুত্ব বুঝেছে এবং এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ যখন এই দাবিতে আন্দোলন করেছে, তখন বলা হলো আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করছি, যা সত্য নয়। সত্য হলো, আমরা আমাদের নীতিতে অটল ছিলাম। কিন্তু পরে যখন আরেকটি সরকার দেখল যে এই ব্যবস্থা তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পথে বাধা, তখন তারা সংবিধান থেকে এটি বাতিল করে দেয়।

যাই হোক, আমাদের কথা হচ্ছে আমরা সব সব সময় হকের পথে আছি এবং থাকব। কে আমাদের সাথে থাকল, কার সাথে মিললো…। যখন আওয়ামী লীগের সাথে বা আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে, আমরা আওয়ামী লীগের সাথে যাই নাই। কেয়ারটেকার সরকারের আন্দোলনে যখন আওয়ামী লীগ এল তখন তারা বলল যে এটা আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করছে। এটা প্র্যাকটিক্যালি সত্য না। সত্য ছিল আমরাই প্রথমে শুরু করেছি কেয়ারটেকার। অধ্যাপক গোলাম আযম… মানে এটা তাঁর দেখিয়ে দেওয়া একটা পথ।

আপনারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জুলাই সনদ স্বাক্ষরের শেষ মুহূর্তে আপনাদের অবস্থান নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায়। গণভোট নিয়েও একই অভিযোগ উঠছে যে, আপনারা শেষ মুহূর্তে সরকারের প্রতি নমনীয় হয়ে একটি আপসমূলক অবস্থানে চলে যান। এই অভিযোগকে কীভাবে খণ্ডন করবেন?

মুজিবুর রহমান: আপনার এই তথ্যটি সঠিক নয় যে আমাদের আওয়াজ দুর্বল ছিল বা আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলাম। আমরা আমাদের দাবিতে আগেও সোচ্চার ছিলাম, সনদ স্বাক্ষরের দিনেও ছিলাম এবং এখনো আছি। আমরা এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কণ্ঠ কখনো দুর্বল ছিল না। এখনো সবল আছে। আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, ইলেকশন ঠান্ডা—এই পলিসি এরশাদ আমল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ পিরিয়ডে এটা চলতেই আছে এবং এটা চলতেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত এই সিস্টেমটা থাকবে।

পুরোনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ২০১৪, ২০১৮ বা ২০২৪ সালের মতো দিনের ভোট রাতে হওয়া, আমি-ডামি নির্বাচন এবং টাকার খেলার পুনরাবৃত্তি হবে। এ সবগুলোই কিন্তু প্রচলিত নিয়মের মধ্য দিয়ে তারা জোর খাটিয়ে এগুলো করেছে। যার টাকা এবং মাস্তান আছে, সেই কেন্দ্র দখল করবে—এই প্রবণতা বন্ধ হবে না। তাই আমরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চেয়েছি।

আমরা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির কথা বলছি কারণ এতে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হবেন না, দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। ফলে নির্বাচনে টাকা এবং পেশিশক্তির প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকবে না। বর্তমান ব্যবস্থায় একটি বড় ত্রুটি রয়েছে। ধরুন, কোনো আসনে ১০০ জন ভোটার এবং ৪ জন প্রার্থী আছেন।

আর সরকারের সঙ্গে সখ্যতার যে কথা বলা হচ্ছে, তা-ও ঠিক নয়। এই সরকারের সঙ্গে আমাদের আগে কোনো পরিচয় ছিল না। কিন্তু দেশের ক্রান্তিকালে যখন একজন ব্যক্তি দেশকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নেন, তখন সবাই তাকে স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও জানিয়েছি। তিনি যদি হকের ওপর টিকে থাকেন এবং জুলাই সনদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন, আমরা তার সঙ্গে থাকব। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত কখনোই ছিল না। এনসিপি কেন বা কী বলছে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে।

তাহলে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা এবং এর সময়কাল নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? অনেকে বলছেন, সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে হতে পারে।

মুজিবুর রহমান: আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। রাজনৈতিক দলগুলো যখন কোনো বিষয়ে একমত হতে পারে না, তখন গণভোটের প্রয়োজন হয়। অতীতেও আমাদের দেশে গণভোটের ইতিহাস রয়েছে। যেহেতু বড় দলগুলো নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে একমত হতে পারছে না, তাই জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। গণভোটে জনগণ যে রায় দেবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে।

কিন্তু গণভোটের মূল উদ্দেশ্যই হলো সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য একটি পদ্ধতি ঠিক করা। এখন যদি সংসদ নির্বাচন আর গণভোট একই দিনে হয়, তাহলে তো গণভোটের কোনো অর্থই থাকে না। যারা বলছেন যে গণভোট চান কিন্তু নির্বাচনের দিনেই চান, তাদের চাওয়ার স্পিরিট নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা চাই, নির্বাচনের আগেই গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থার মতো মৌলিক সংস্কারগুলো চূড়ান্ত করা হোক, যাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ তৈরি হয়।

কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এমন অভিযোগ উঠছে যে, আপনারা গণভোটের দাবি তুলে মূলত জাতীয় নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন। এই অভিযোগের বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

মুজিবুর রহমান: এই ধারণাটি মোটেও সত্য নয়। আমাদের কোনো নেতাই বলেননি যে আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই না বা নির্বাচন বিলম্বিত হোক। তিন দিন আগে আলফালাতে আমাদের যে সাংবাদিক সম্মেলন হলো, সেখানে আমরা প্রথমেই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। আমাদের দ্ব্যর্থহীন মতামত হলো, আমরা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চাই। কিন্তু সেই নির্বাচনের আগে আমাদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়া, বিশেষ করে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।

তাহলে গণভোটের দাবিটি কি আপনাদের কৌশলগত, নাকি একটি আপোষহীন নীতিগত অবস্থান?

মুজিবুর রহমান: এটা মোটেও কোনো কৌশল নয়। আমরা প্রকৃত অর্থেই একটি সুন্দর নির্বাচন চাই, যেখানে মানুষ তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে। অতীতের মতো ‘আমার ভোট আমি দেব, তোমারটাও আমি দেব’–এই সংস্কৃতি আমরা আর দেখতে চাই না। সম্প্রতি একটি পত্রিকার জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ গণভোটের পক্ষে।

আমরা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির কথা বলছি কারণ এতে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হবেন না, দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। ফলে নির্বাচনে টাকা এবং পেশিশক্তির প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকবে না। বর্তমান ব্যবস্থায় একটি বড় ত্রুটি রয়েছে। ধরুন, কোনো আসনে ১০০ জন ভোটার এবং ৪ জন প্রার্থী আছেন। একজন ২৫ শতাংশ, একজন ২৪ শতাংশ, একজন ২৩ শতাংশ এবং একজন ২২ শতাংশ ভোট পেলেন। বিজয়ী হবেন ২৫ শতাংশ ভোট পাওয়া প্রার্থী। কিন্তু বাকি ৭৫ শতাংশ ভোটারের মতামতের কোনো প্রতিফলনই থাকল না। গ্রামের ভাষায় যাকে বলে ‘ভোট পচে যাওয়া’। ২৫ শতাংশ ভোটারের প্রতিনিধি বাকি ৭৫ শতাংশের ওপর তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন, যা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে ২৫ শতাংশ ভোট পাওয়া দল ২৫টি আসন পাবে, ২৪ শতাংশ পাওয়া দল ২৪টি আসন পাবে, একইভাবে বাকিরাও তাদের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসন পাবে। এর মাধ্যমে সকল ভোটারের মতামতের মূল্যায়ন হবে এবং জনগণের প্রকৃত অধিকার ও স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

অনেক সময় নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য মানুষ নানা ধরনের কৌশল বা ‘হিকমত’ অবলম্বন করতে পারে। ইসলামেও এর স্বীকৃতি আছে। তবে আমি মনে করি না যে, ছাত্রলীগ ভোট দিয়ে শিবিরকে জিতিয়েছে—এই কথা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।

আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ এনেছিলেন, যেখানে আপনাদের শুরু করা আন্দোলনে পরে আওয়ামী লীগ যোগ দিয়েছিল। বর্তমানেও কি একই ধরনের কোনো সমীকরণ দেখা যাচ্ছে? যেমনটা বলা হচ্ছে, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভোট শিবিরের পক্ষে গেছে এবং আপনাদের জয়ের পেছনে তাদের ভূমিকা ছিল। আপনাদের সঙ্গে তাদের কোনো গোপন আঁতাত আছে কি?

মুজিবুর রহমান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি আমরাই শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগ আন্দোলনে এসে এটিকে নিজেদের দাবি বলে ‘হাইজ্যাক’ করে নেয়। কারণ তাদের সমর্থক সংখ্যা বেশি ছিল।

আর বর্তমানের যে কথা বলছেন, আমাদের ব্যাপারে এমন অনেক কথাই বলা হয়। কিন্তু আপনারাই ভেবে দেখুন, যে দলটিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, যার শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, যার নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল করা হয়েছে, সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাতের কথা বললে সাধারণ মানুষ কি তা বিশ্বাস করবে? ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের নিজেদের আদর্শ, চরিত্র ও আচরণের কারণেই বিজয়ী হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেই এই রায় দিয়েছে।

কিন্তু এমন প্রমাণও তো সামনে আসছে যে, ছাত্রলীগের অনেক কর্মী এখন শিবিরে যোগ দিচ্ছেন বা শিবিরের পরিচয়ে নিজেদের প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, দুঃসময়ে আপনারা একে অপরকে আশ্রয় দিচ্ছেন—এটা কি এক ধরনের কৌশল?

মুজিবুর রহমান: অনেক সময় নিজের অস্তিত্ব রক্ষা এবং আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য মানুষ নানা ধরনের কৌশল বা ‘হিকমত’ অবলম্বন করতে পারে। ইসলামেও এর স্বীকৃতি আছে। তবে আমি মনে করি না যে, ছাত্রলীগ ভোট দিয়ে শিবিরকে জিতিয়েছে—এই কথা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।

ওরা ভোগবাদী রাজনীতি করে, সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ করে। কিন্তু শিবির একটি আদর্শবাদী সংগঠন। আদর্শের জন্যই এর কর্মীরা জেল খেটেছে, মার খেয়েছে, শহীদ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ছাত্র শহীদ হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে ‘রগ কাটার’ অপপ্রচার চালানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি একজনও প্রমাণসহ দেখাতে পেরেছে যে শিবির কারও রগ কেটেছে? আমাদের নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (রাহিমাহুল্লাহ) সংসদে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে ছাত্রশিবির কারও রগ কেটেছে, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ এত বড় চ্যালেঞ্জের পরও কেউ তা প্রমাণ করতে পারেনি।

মূল কথা হলো, হকের পথে বা ইসলামের পথে চললে বিরোধিতা ও সমালোচনা আসবেই। এটাকে আপনি কখনোই এড়িয়ে যেতে পারবেন না। আমরা বিষয়টিকে এভাবেই দেখি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত