সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাতিল করেছে সরকার। গত ২৮ আগস্ট জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধনী এনে ওই দুই বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার (৩ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
যদিও ২৮ আগস্ট প্রকাশিত বিধিমালায় এ দুই ক্যাটাগরি ছাড়াও সঙ্গীত এবং শারিরীক শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কথাও বলা হয়েছিল।
প্রাথমিকে সঙ্গীত ও শারিরীক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন আপত্তি তুলেছিল।
গত ৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে সঙ্গীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে সংগীত ও নৃত্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সংগীত বা নৃত্য (গান বাজনা) শিক্ষার্থীর আবশ্যিক কোনো বিষয় হতে পারে না।
১৯ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। ওই কর্মসূচির মূল দাবি ছিল দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বাধ্যতামূলক ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই গানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।’
গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক পর্যায়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা বাতিল চায় হেফাজতে ইসলাম। ওইদিন সংবাদমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দেয় সংগঠনটি। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বরং ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান।
১৩ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিকে সঙ্গীত শিক্ষক বাতিল ও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা প্রণয়নের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।
একই দিন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের দাবির প্রেক্ষিতে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপাতত গানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
এরপরই অবশ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধনী আনা হলো। সংশোধনীতে একটি শব্দগত পরিবর্তনও আনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে, সহকারী শিক্ষকের ২০ শতাংশ পদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের এবং বাকি ৮০ শতাংশ বিজ্ঞানসহ অন্য বিষয়ের প্রার্থীদের।