leadT1ad

৫ বছরে দেড় হাজার পোশাক কারখানায় আগুন

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৫৮
স্ট্রিম গ্রাফিক

দেশে গত ৫ বছরে দেড় হাজারের বেশি পোশাক কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২২৭ কোটি টাকার। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের বার্ষিক পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। অভিযোগ আছে, ভবন নির্মাণের সময় বিধিমালা মানা হয় না। পাশাপাশি বড় আগুনের ঘটনার বিচারও নিশ্চিত করা যায়নি। এসব কারণে আগুনের ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে।

এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

দেশের পোশাক কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণক্ষয়ী আগুনের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। এ দিন ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড কারখানায় আগুনে প্রাণ যায় ১১৭ শ্রমিকের। আহত হন দুইশতের বেশি। ওই ঘটনার প্রায় ১৩ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত বিচার পাননি ভুক্তভোগীরা।

বিষয়টি উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের বড় ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। শ্রমিকদের নামমাত্র কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে মালিকরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন। ফলে তাঁদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব রয়ে গেছে।

দিনে গড়ে প্রায় ১টি অগ্নিকাণ্ড

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, গত বছর পোশাক শিল্প-প্রতিষ্ঠানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২৩৬টি। এসব ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এমন ৪০৩টি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয় প্রায় ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রাণ হারান দুজন।

এ ছাড়া ২০২২ সালে পোশাক কারখানায় ৩৮৪টি আগুনের ঘটনা ঘটে। ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭ কোটি ২ লাখ টাকা। আর ২০২১ সালে ২৭৫টি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগুনে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার এবং ২০২০ সালে ২৭৩টি আগুনের ঘটনায় প্রায় ৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। সবমিলিয়ে গত পাঁচ বছরে পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৫৭১টি আগুনের ঘটনা ঘটে।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

পোশাক কারখানায় ঘন ঘন আগুন লাগা নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান স্ট্রিমকে বলেন, দেশে পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান কিংবা কলকারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয় না। যেমন বহু পোশাক কারখানা নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা শহরের ভেতরে এবং সেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখা যায়, সেসব স্থানে অগ্নিনির্বাপণেও ফায়ার সার্ভিসকে বেগ পেতে হয়।

আগুনে বড় প্রাণহানি হলে সরকারের টনক নড়ে, তবে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হয় না বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দীন খান। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। শহরের মধ্যে কলকারখানা চালু রাখার ব্যাপারে আইনি বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু, সেগুলো মানা হচ্ছে না। বড় কোনো ঘটনা ঘটলে তখন আলোচনা হয়, টনক নড়ে। দেখা যায় তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু ফলোআপ করা হয় না কিংবা স্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া হয় না।

শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা আছে উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দীন খান বলেন, বহির্বিশ্বের মতো শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি শক্ত করা গেলে কারখানা মালিকেরা সতর্ক হয়ে যেতেন। তখন দুর্ঘটনা কমে আসত। রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কলকারাখানা সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম-কানুন মেনে ভবন নির্মাণ ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আক্তারুজ্জামান এ বিষয়ে স্ট্রিমকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পোশাক শিল্পকারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমে আসছে। এখন ছোট ছোট আগুনের ঘটনা ঘটে। চার-পাঁচ বছর আগে আমরা একটি সেফটি প্ল্যান নিয়েছিলাম। কারখানাগুলোকে কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, বিশেষ করে ভবনে কী কী রাখতে হবে এবং কোন জিনিসগুলো রাখা যাবে না—এ সংক্রান্ত এবং এগুলো বাস্তবায়ন করার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।’

ছোট কারখানাগুলোতে সমস্যা রয়ে গেছে স্বীকার করে তিনি বলেন, তারা অনেক সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। আবার লুকিয়ে অনেক কারখানা চলছে। সেখানেও নিয়ম মানা হচ্ছে না।

শহরের মধ্যে কারখানা থাকলে সেখানে আগুন নির্বাপণ জটিল হয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত