leadT1ad

জুলাই সনদে স্বাক্ষর শেষে সব দলকে নির্বাচনী ঐকমত্যে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর আনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।

শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। এই সুর, যে সুর আজকে আমরা বাজালাম, সেই সুর নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাবো– এই সুর ঐক্যের সুর।”

তিনি বলেন, এই সুরকে সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে ঐক্যের ব্যাপারে আমরা যেমন সনদ করলাম। রাজনীতির ব্যাপারেও, নির্বাচনের ব্যাপারেও, রাজনৈতিক নেতারা বসে, বিভিন্ন দলের নেতারা বসে একটা সনদ করেন কীভাবে নির্বাচনটা করবেন। যেমন-তেমনভাবে নির্বাচন করলে তো সেই আবার পুরোনো জায়গায় ফিরে যাওয়া। এতো কিছু করে লাভটা কী হলো।

তিনি ঐকমত্য কমিশন বা কমিটি নিয়ে বসে কীভাবে সুন্দরভাবে, উৎসবমুখরভাবে ও ইতিহাসে স্মরণীয়ভাবে নির্বাচন করা যায় তা চূড়ান্ত করার জন্য উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক নেতারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, পরবর্তীতেও তারা সুন্দরভাবে করেন।

মঞ্চ থেকে দর্শকদের দিকে জুলাই সনদ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঞ্চ থেকে দর্শকদের দিকে জুলাই সনদ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, যাঁরা এই সনদ রচনা করেছেন, তাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশের জন্য অনন্য অবদান রেখে গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে স্বাক্ষরিত এই সনদ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্যভাবে আয়োজিত করতে সহায়তা করবে।

ড. ইউনূস জুলাই সনদে স্বাক্ষর শেষে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ও সংহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাইরের কেউ যেনো এসে বলতে না পারে—এখানে ক্ষতি হয়েছে, এখানে গোলমাল হয়েছে।”

জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে পরিবর্তন এসেছে তা ওই গণঅভ্যুত্থানের ফলে সম্ভব হয়েছে। জুলাই সনদকে গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আজকে যে কাজটা করলাম, এখানে স্বাক্ষর করলাম সবাই মিলে। সেটা দিয়ে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তন সম্ভব হলো সেই গণ-অভুত্থানের কারণে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের কারণে। সেটা তাঁরা করেছিলো বলেই আজকে আমরা এ সুযোগ পেলাম। তাদের জন্য এই দিনটা করা সম্ভব হয়েছে।

ড. ইউনূসের মতে, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের ফলে পুরোনো কথাবার্তা সব পাল্টে ফেলে নতুন কথাগুলো সংবিধান পরিবর্তনে নিয়ে আসা সম্ভব করেছে। সরকার চালানোর বিষয়সহ অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনতে সহায়তা করেছে। “এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের জন্য আজকে নবজন্ম। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম”।

অধ্যাপক ইউনূস সনদ স্বাক্ষরের ঘটনাটিকে ‘অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এ সনদ ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণার উৎস হয়ে থাকায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই সনদ জাতির জন্য ও বিদেশিদের জন্য গবেষণার বিষয় হয়ে উঠবে।

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি উল্লেখ করেন যে সনদটি গভীর আলোচনা, লেখাপড়া, তর্ক ও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে গঠিত— এটি কোনো সদলবলে বা সীমিত কক্ষের আলোচনার ফল নয়। বরং পুরো জাতিকে বিষয়ভুক্ত করে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সনদটি তৈরি করা হয়েছে। ইউনূস বলেন, প্রথমদিকে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি করা কঠিন মনে হলেও ক্রমান্বয়ে সব পক্ষ ঐকমত্যে এসেছেন এবং দীর্ঘ একটি তালিকা নিয়ে সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে।

জুলাই সনদ তরুণদের জানানোর জন্য পাঠ্যপুস্তকে থাকবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, আমরা যারা এখানে আছি, কীভাবে করেছি—তারা যেন দেখে তাঁদের নেতাকে কীভাবে এটা করছেন। কীভাবে সিদ্ধান্তে এসেছেন। তারা যেনো অনুপ্রাণিত হয়। সারা দেশ যেনো অনুপ্রাণিত হতে পারে।

ইউনূস বলেন, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ, প্রায় অর্ধেক ২৭ বছরের নিচে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই দেশ তরুণদের দেশ এবং তরুণরা শুধু দেশ নয়, বিশ্বকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, তরুণদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ঘটালে দেশকে ‘নতুন সিঙ্গাপুর’ বানানো যাবে। তাঁর মতে, মাতারবাড়ি, কক্সবাজার, মহেশখালীসহ উপকূলীয় এলাকা একত্র করে একটি বন্দর-উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে আঞ্চলিক অর্থনীতি গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে এবং নেপাল, ভুটান ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্‌সের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিস্তৃত করা সম্ভব হবে।

ইউনূস বলেন, “আমরা যদি গভীর সমুদ্র বন্দর করে দেই, তাহলে সারা পৃথিবীর সকল জাহাজ আমাদের বন্দরে ভিড় করবে। আমাদের পণ্য সিঙ্গাপুরে খালাস করে দিয়ে চলে যেতে হবে না। অন্য দেশের পণ্য সিঙ্গাপুরে খালাস করে দিয়ে যেতে হবে না। আমার দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারবে এবং অন্যান্য দেশের যারা সুযোগ দিতে পারবে না, তাদের পণ্য এখানে দেওয়া যাবে। আমাদের এখান থেকে তারা নিয়ে যাবে। কাজেই একটা বিরাট সুযোগ।” তিনি বর্তমানে দেশের সম্ভাবনাময় সমুদ্রসীমা ও উপকূলীয় সম্পদ ব্যবহার করে বৃহৎ অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত