leadT1ad

পাঁচ দিনে দেশের তিন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ০১
স্ট্রিম গ্রাফিক

পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশের তিন স্থানে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ শনিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেছে আগুন লাগে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামের সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কের ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইম লিমিটেড’ নামের কারখানায় আগুন লাগে। এর আগে, ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদাম ও সংলগ্ন সাততলা পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এতে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।

এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। এসব ঘটনায় নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন

আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) বেলা সোয়া দুইটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট চেষ্টা চালায়। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে অন্তত ১০ জন আহত হন।

এদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের পর এলাকাজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাঁচ হাজার সদস্য ছাড়াও র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের সিইপিজেডের আগুন

১৬ অক্টোবর বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ৫ নম্বর এলাকায় অবস্থিত অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুন পাশের জিন হং মেডিকেল কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে, ফলে দুইটি কারখানাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুনের তীব্রতায় ভবনের ছাদ পর্যন্ত ধসে পড়ে।

এই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট টানা কাজ করেছে। পাশাপাশি সহায়তা দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর এবং বিজিবি সদস্যরা। প্রায় ১৭ ঘণ্টার চেষ্টার পর পরের দিন শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, টেক্সটাইল কারখানায় থাকা কাপড়, সুতা ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলকর্মীরা ব্যাপক বেগ পেতে থাকেন। আগুন লাগার সময় ভবনে থাকা অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জনকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করা হয়।

মিরপুরের রাসায়নিক গুদামে আগুন

গত ১৪ অক্টোবর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির একটি রাসায়নিক গুদাম ও সংলগ্ন সাততলা পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। এতে ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। রাসায়নিক গুদামটিতে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো দাহ্য পদার্থ থাকায় হতাহত বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে, ওই দিন বেলা ১১টার পর বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। পরে দেখা যায় একটি কাপড় ওয়াশের কারখানা এবং রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলছে। আগুন ছড়িয়ে সড়কের বিপরীতে থাকা পাঁচতলা একটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীরা ধোঁয়ার কুণ্ডলিতে আটকে পড়েন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, বিস্ফোরণের প্রায় ৪০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ ৯টি অগ্নিদগ্ধ মরদেহ ওই পোশাক কারখানা থেকে বের করে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়।

সরকার বলছে, নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় পদক্ষেপ

সাম্প্রতিক এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৮ অক্টোবর রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। আমরা সকল নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই—নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—যদি এসব অগ্নিকাণ্ড নাশকতা হিসেবে প্রমাণিত হয়, এবং এর উদ্দেশ্য হয় জনমনে আতঙ্ক বা বিভাজন সৃষ্টি করা, তবে তারা সফল হবে কেবল তখনই, যখন আমরা ভয়কে আমাদের বিবেচনা ও দৃঢ়তার ওপর প্রাধান্য দিতে দেব।’

‘বাংলাদেশ অতীতেও বহু কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। আমরা ঐক্য, সংযম ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যেকোনো হুমকির মোকাবিলা করব। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই’—বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত