leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিরা দেদারসে সম্পদ কিনছেন কেন?

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৩৭
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৫২
সংগৃহীত ছবি

একদিকে বলা হচ্ছে, মার্কিন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় সুদের হার কয়েক ধাপে কমাতে হবে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা ঢুকছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা এখনো আমেরিকাকে ভবিষ্যতের জন্য সেরা জায়গা ভাবছেন। এই দুটো বিষয় একসঙ্গে সত্য হতে পারে না। কিন্তু সুদের হারের বাজার আর সম্প্রতি মূলধন প্রবাহের তথ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো চিত্রই দেখাচ্ছে। কোথাও না কোথাও হিসাবের গরমিল হচ্ছে।

অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্বাভাবিক ও জনতুষ্টিমূলক (পপুলিস্ট) নীতি দেখে বিদেশিরা ভয় পাবেন। তারা মার্কিন বাজার ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঠিক উল্টো হয়েছে।

ট্রেজারি ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটালের (টিআইসি) তথ্য বলছে, জুন মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ থেকে ১৯২ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনেছেন। মে মাসে যেখানে কেনা হয়েছিল ৩২৬ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে ব্যক্তি খাতের (প্রাইভেট সেক্টর) বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে।

এই সময়ে অবশ্য মার্কিন বিনিয়োগকারীরাও বিদেশি সম্পদ কিনেছেন। কিন্তু সব হিসাব মিলিয়ে জুন মাসে নেট মূলধন প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১৫১ বিলিয়ন ডলার। শুধু দ্বিতীয় প্রান্তিকেই (সেকেন্ড কোয়ার্টার) যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে মোট ৪১০ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ।

আরও দূরে তাকালে দেখা যায়, এই বছরের প্রথম ছয় মাসে নেট প্রবাহ হয়েছে ৬৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের রেকর্ড ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান হওয়ার পথেই আছে। শুধু গত ১২ মাসে (জুন পর্যন্ত) মার্কিন শেয়ার, ট্রেজারি, এজেন্সি ও করপোরেট ঋণে ঢালা হয়েছে নেট ১ দশমিক ২৭ ট্রিলিয়ন ডলার। তাহলে কি আমেরিকার বিশেষত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে? তথ্য দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।

আমেরিকার বিশেষত্বের অবসান?

অনেকে এখনো বলে, ‘ডি-ডলারাইজেশন’ হচ্ছে। মানে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং বিনিয়োগকারী মার্কিন ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রা ব্যবহার শুরু করেছেন। কিন্তু সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সম্পদে এখনো আগ্রহী। সম্ভবত তারা মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। ফলে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশেষজ্ঞ রবিন ব্রুকস বলেন, এত বিপুল পরিমাণ প্রবাহের মধ্যে দিয়ে কোনোভাবেই ‘ডি-ডলারাইজেশন’ বা ‘আমেরিকার বিশেষত্ব শেষ’ এর গল্প বলা সম্ভব নয়।

সত্যি বলতে, ডি-ডলারাইজেশন কথাটার পেছনে কিছু যুক্তিও আছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ডলার মূল্য ১০ শতাংশ কমেছে, যা গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে বছরের সবচেয়ে খারাপ সূচনা। কিন্তু সেই পতন হয়েছে মূলত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে। তারপর থেকে প্রায় গত চার মাস ধরে ডলার মূল্য স্থির আছে।

বিদেশি মূলধনের প্রবাহ থাকা সত্ত্বেও ডলারের দুর্বলতা সত্যিই বেশ রহস্যময়। বিদেশিরা মার্কিন সম্পদে বিনিয়োগ করছে, কিন্তু ডলারের মান ততটা বাড়ছে না। এখন প্রশ্ন আসে, ডলার দুর্বল হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এত টাকা আসছে কেন? অনেকে বলছে বিদেশিরা ডলারের ঝুঁকি এড়াতে মুদ্রা বিকল্প ও ডেরিভেটিভের মতো বিভিন্ন ঝুঁকি কমানোর (হেডজিং) পদ্ধতি ব্যবহার করছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) শিগগিরই সুদের হার কমাবে, এই প্রত্যাশা থেকেই ডলারে স্বল্পমেয়াদি ওঠানামা দেখা যাচ্ছে।

চূড়ান্ত ধাঁধা

ফেডের প্রত্যাশা, মার্কিন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ ও মূলধন প্রবাহ একে অপরের সঙ্গে মেলে না। বাজার আশা করছে, ফেড সুদের হার কমাবে। একই সময়ে, অর্থনীতি মোটামুটি ভালো দেখাচ্ছে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সম্পদ কিনতে আগ্রহী। তিনটি তথ্য একসঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। যা এক চূড়ান্ত ধাঁধার জন্ম দিয়েছে।

ট্রেডাররা আশা করছেন, ফেড আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত প্রায় ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ কমাবে। এটি যেকোনো বড় দেশের তুলনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সর্বোচ্চ ‘নরম’ নীতির প্রত্যাশা। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, এত বড় মাত্রার সুদ কমানো শুধু তখনই হয়, যখন অর্থনীতি তীব্রভাবে ধীরগতি (শার্প শাটডাউন) গ্রহণ করে।

নিশ্চিতভাবেই শ্রমবাজারে কিছু লাল সংকেত দেখা গেছে। শ্রমবাজারে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থাতেও চাপ বাড়ছে। সরকারি অর্থনীতি বা বাজেট ঘাটতিও বাড়ছে। এর সঙ্গে যদি শুল্ক-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা যোগ হয়, তাহলে ঝুঁকি আরও বাড়ে।

তবুও সামগ্রিকভাবে আমেরিকার অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় নেই। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৬ সালে হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। যা মোটামুটি শক্ত অর্থনীতিরই বৈশিষ্ট্য।

এমন অর্থনীতি কি আগামী ১৬ মাসে ছয়বার সুদ কমানোর মতো দুর্বল? প্রবৃদ্ধি ভালো হবে বলেই বিনিয়োগকারীরা ধরে নিচ্ছেন, ফেড এতটা শিথিল হতে পারবে? এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আপাতত দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সিকিউরিটিজে শেয়ার কিনেই চলেছেন। তারা অন্তত আমেরিকা ও বিশেষ করে আমেরিকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিয়ে খুব একটা হতাশ নন।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, টিআইসির তথ্য বলছে, মে ও জুনে যেসব টাকা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে তার বড় অংশ গেছে শেয়ারে। ট্রেজারির মতো নিরাপদ সম্পদে নয়। যার মানে হচ্ছে, বিদেশিরা করপোরেট আমেরিকাকে সরকারের চেয়ে বেশি ভরসা করছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মার্কিন বিশেষত্ব হয়তো কোনো একদিন শেষ হবে। কিন্তু এখনো সেই দিন অনেক দূরে।

*রয়টার্সের অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিক জেমি ম্যাকগিভারের মতামত অনুবাদ করেছেন তুফায়েল আহমদ

Ad 300x250

৩৪ বছর পর চাকসু নির্বাচনের তফসিল আসছে বৃহস্পতিবার

৭১ ইস্যুতে ইসহাক দারের মন্তব্যের সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

'ভেজাল লাগাইয়া দিয়া যেভাবে নির্লিপ্ত আছেন, এটা আপনাকে সেভ করবে না'

জামায়াতের আমিরের সঙ্গে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

নির্বাচন কমিশন একটি দলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ

সম্পর্কিত