স্ট্রিম ডেস্ক
ভারতে আবারও কাশির সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশটির মধ্যপ্রদেশের ছোট একটি গ্রামে বেশ কয়েকজন শিশুর মৃত্যর ঘটনায় স্বাস্থ্য কর্মীরা হতভম্ব হয়ে যান। গ্রামটিতে কয়েকদিনের ব্যবধানে একটি সাধারণ কাশির সিরাপ খাওয়ার পর ১ থেকে ৬ বছর বয়সী অন্তত ১১ শিশুর মৃত্যু হয়।
কর্তৃপক্ষ এসব মৃত্যুর পেছনের কারণ বের করতে খাবার পানি থেকে শুরু করে মশা—সবকিছু পরীক্ষা করেন। সবশেষে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে—তাদের মৃত্যু হয়েছে কিডনি বিকল হয়ে।
এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর চেন্নাইয়ের দক্ষিণের এক শহরের রাষ্ট্রীয় এক গবেষণাগারের গবেষণায় পরিস্থিতির ভয়াবহতার বিষয়টি ওঠে আসে। প্রশ্নবিদ্ধ ওই সিরাপে ডাইইথিলিন গ্লাইকল উপাদান ছিল ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এই উপাদানটি একটি বিষাক্ত টক্সিক যা কখনোই ওষুধে পাওয়া উচিত নয়। এই বিষাক্ত অ্যালকোহল ব্যবহারের পর কিডনি বিকল হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
ভারতে সিরাপ ব্যবহারে শিমশু মৃত্যুর এই ভয়াবহতা শুধু মধ্যপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ না। পার্শ্ববর্তী রাজস্থান প্রদেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি ডেক্সট্রোমেথোরফান সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুরর মৃত্যু হয়। কাশি দমনকারী এই সিরাপও ছোট শিশুদের জন্য নিরাপদ না। দুই শিশুর মৃত্যুর পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি এখন সরকার তদন্ত করছে।
গত কয়েক বছরে ডাইইথিলিন গ্লাইকল উপাদান সমৃদ্ধ ভারতের তৈরি কাশির সিরাপে কয়েক ডজন শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০ শিশু এবং উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে ভারতের তৈরি এই সিরাপের যোগসূত্র ছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত শাসিত জম্মুতে পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী অন্তত ১২ শিশু কাশির সিরাপ খাওয়ার পর মারা যায়। অধিকার কর্মীদের ধারণা এই সংখ্যা আরও বেশি। অতীতে কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপের অপব্যবহারও ঘটেছে। এটি হালকা ওপিওয়েড যা উচ্চ মাত্রায় আনন্দ তৈরি করতে পারে এবং আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও ব্যবস্থাপত্রে ছোট বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হয় না।
ঘটনা ঘটার পর প্রতিবারই ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরবর্তী এই সিরাপগুলো ফের বাজারে দেখা যায়। সমালোচকদের অভিযোগ, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান এই সিরাপ প্রস্তুত করছে এবং যত্রতত্র বিক্রি করছে।
সর্বশেষ শিশু মৃত্যুর কয়েকদিন পর ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ধরনের ওষুধের ‘যৌক্তিক’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করার সময় চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে বলেছে। এছাড়া, সিরাপের নমুন জব্দ, বিক্রয় স্থগিত এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, সমস্যা হলো কাশির সিরাপ ব্যবহার ব্যবস্থাপত্রের বাইরে আরও গভীরের বিষয়। প্রত্যেকটি ট্র্যাজেডিই ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও প্রয়োগের গোলকধাঁধাকে সামনে নিয়ে আসে। ২০২৪ সালে ভারতীয় কাশির সিরাপের বাজার ২৬২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০৩৫ সালে ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা। মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের মতে যা বার্ষিক ৯ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এসবের কিছুই ঘটতো না যদি ভারত এবং ভারতীয়রা নিজেরা কাশির সিরাপে আসক্ত না হতো। কয়েক দশক ধরে ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে এগুলি লিখে আসছেন এবং রোগীরাও সেগুলি গ্রহণ করেছেন। যদিও বেশিরভাগই খুব কম উপকার করে এবং সম্ভাব্যভাবে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
গলা ব্যথা এবং টানা কাশির দ্রুত উপশম হিসেবে বাজারজাত করা এই মিষ্টি সিরাপগুলো চিনি, রঙ এবং গন্ধের সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামাইন, ডিকনজেস্ট্যান্ট এবং এক্সপেক্টোরেন্টের মিশ্রণে তৈরি।
তত্ত্বগতভাবে প্রতিটি উপাদানই আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করে। একটি স্রাব শুকিয়ে দেয়, আরেকটি কফ আলগা করে, তৃতীয়টি কাশির প্রতিফলনকে নিস্তেজ করে। বাস্তবে, এতে খুব বেশি উপকারের প্রমাণ খুব কম। কারণ বেশিরভাগ কাশিই কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
কাশি সংক্রমণ অথবা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। কাশি সিরাপগুলি মূলত দুই ধরনের হয়—শিশুকে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে এমন সিডেটিভ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে এমন ব্রঙ্কোডাইলেটর। ডাক্তাররা সাধারণত দুটির যেকোনো একটির পরামর্শ দেন।
ব্যাপকমাত্রায় প্রেসক্রাইবের প্রধান কারণ হলো ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছোট শহরগুলোতে। ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের ফলে ক্রমাগত কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই নিয়মিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সমস্যা আরও প্রকট। গ্রামীণ ভারতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী স্ব-শিক্ষিত (আরএমপি)। আবার কারও কারও আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণও নেই।
সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব, পর্যাপ্ত লোকবল না থাক এবং বন্ধ থাকার কারণে ওই হাতুড়ে ডাক্তাররাই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেন। আর তাদের কাছে একমাত্র বিশ্বস্ত অস্ত্র হলো এই কাশির সিরাপ। ডা. কাফিল খান নামে সরকারি এক শিশু ডাক্তার এই ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, তিনি যখন উত্তর প্রদেশের গোরাকপুরে পোস্টেড ছিলেন তখন দেখেছেন—সর্বত্রই এই সিরাপ দেওয়া হয়। এমনকি যার ডিগ্রি নেই সেও এই সিরাপ দিচ্ছেন।
এসব শহরের রোগীরা হাতুড়ে ডাক্তার থেকে দোকানি—মেডিক্যালি জ্ঞান আছে মনে করা এমন যে কারও ওপর নির্ভর করেন। শুধু তাই নয়, নিয়মিত কাশি হলেও তাদের ওপর নির্ভর করেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দিনেশ ঠাকুর বলেন, অনেক গরিব রোগী ফার্মাসিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী যতবার দরকার ততবারই কাশির ওষুধ নেন। এটা একটা ভুল ধারণা। ঘটনাক্রমে এই সমস্যা মূলত ছোট শহর এবং গ্রামীণ ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তথ্য বলছে বিষয়টি তেমন নয়। আমরা বড় শহরগুলির মানুষের মধ্যেও একই রকম প্রবণতা দেখতে পাই। তবে গ্রাম আর শহরের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল—ছোট শহরগুলিতে ওষুধের মান বড় শহরগুলির তুলনায় অনেক খারাপ।
এই প্রবণতার আরেকটি কারণ হলো উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের সম্মিলিত চাপ এবং চিকি’//সা জ্ঞানের অভাব। ডা. কাফিল খান বলেন, অভিভাবকরা সব সময় অবগত থাকেন না এবং তারা অধৈর্য হয়ে উঠতে পারেন। যদি কয়েক দিনের মধ্যে কোনো শিশুর কাশি বা ঠান্ডার উন্নতি না হয় তখন অভিভাবকরা কাশির সিরাপ দেন এমন ডাক্তারের পরামর্শ নেন।
ডাক্তারদের কম জ্ঞান সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ডা. কাফিল খান জানান, তিনি এমনও দেখেছেন শিশু ডাক্তারও শিশুদের জন্য কাশির জন্য অ্যাম্ব্রোক্সল প্রেসক্রাইব করছেন। এই ওষুধ কাশি বের হওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা থুথু ফেলতে পারে না। তাই শ্লেষ্মা ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। যার ফলে নিউমোনিয়া হতে পারে। তারপরও এই সিরাপ দেওয়া হয়।
কাশি সিরাপ সম্পর্কে স্পষ্ট নীতিমালা, ডাক্তার ও অভিভাবকদের মধ্যে এর বেপরোয়া ব্যবহার রোধে সচেতনতার কথা বলছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ কাশির সিরাপের ঝুঁকির বিষয়টি বাস্তব। মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি যে সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ১৫ বছর ধরে আমি এই কাশির সিরাপটি লিখে আসছি।
সূত্র: বিবিসি
ভারতে আবারও কাশির সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশটির মধ্যপ্রদেশের ছোট একটি গ্রামে বেশ কয়েকজন শিশুর মৃত্যর ঘটনায় স্বাস্থ্য কর্মীরা হতভম্ব হয়ে যান। গ্রামটিতে কয়েকদিনের ব্যবধানে একটি সাধারণ কাশির সিরাপ খাওয়ার পর ১ থেকে ৬ বছর বয়সী অন্তত ১১ শিশুর মৃত্যু হয়।
কর্তৃপক্ষ এসব মৃত্যুর পেছনের কারণ বের করতে খাবার পানি থেকে শুরু করে মশা—সবকিছু পরীক্ষা করেন। সবশেষে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে—তাদের মৃত্যু হয়েছে কিডনি বিকল হয়ে।
এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর চেন্নাইয়ের দক্ষিণের এক শহরের রাষ্ট্রীয় এক গবেষণাগারের গবেষণায় পরিস্থিতির ভয়াবহতার বিষয়টি ওঠে আসে। প্রশ্নবিদ্ধ ওই সিরাপে ডাইইথিলিন গ্লাইকল উপাদান ছিল ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এই উপাদানটি একটি বিষাক্ত টক্সিক যা কখনোই ওষুধে পাওয়া উচিত নয়। এই বিষাক্ত অ্যালকোহল ব্যবহারের পর কিডনি বিকল হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার।
ভারতে সিরাপ ব্যবহারে শিমশু মৃত্যুর এই ভয়াবহতা শুধু মধ্যপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ না। পার্শ্ববর্তী রাজস্থান প্রদেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে স্থানীয়ভাবে তৈরি ডেক্সট্রোমেথোরফান সিরাপ খাওয়ার পর দুই শিশুরর মৃত্যু হয়। কাশি দমনকারী এই সিরাপও ছোট শিশুদের জন্য নিরাপদ না। দুই শিশুর মৃত্যুর পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি এখন সরকার তদন্ত করছে।
গত কয়েক বছরে ডাইইথিলিন গ্লাইকল উপাদান সমৃদ্ধ ভারতের তৈরি কাশির সিরাপে কয়েক ডজন শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২৩ সালে গাম্বিয়ায় ৭০ শিশু এবং উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে ভারতের তৈরি এই সিরাপের যোগসূত্র ছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত শাসিত জম্মুতে পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী অন্তত ১২ শিশু কাশির সিরাপ খাওয়ার পর মারা যায়। অধিকার কর্মীদের ধারণা এই সংখ্যা আরও বেশি। অতীতে কোডিনযুক্ত কাশির সিরাপের অপব্যবহারও ঘটেছে। এটি হালকা ওপিওয়েড যা উচ্চ মাত্রায় আনন্দ তৈরি করতে পারে এবং আসক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও ব্যবস্থাপত্রে ছোট বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হয় না।
ঘটনা ঘটার পর প্রতিবারই ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু পরবর্তী এই সিরাপগুলো ফের বাজারে দেখা যায়। সমালোচকদের অভিযোগ, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান এই সিরাপ প্রস্তুত করছে এবং যত্রতত্র বিক্রি করছে।
সর্বশেষ শিশু মৃত্যুর কয়েকদিন পর ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ধরনের ওষুধের ‘যৌক্তিক’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করার সময় চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে বলেছে। এছাড়া, সিরাপের নমুন জব্দ, বিক্রয় স্থগিত এবং তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, সমস্যা হলো কাশির সিরাপ ব্যবহার ব্যবস্থাপত্রের বাইরে আরও গভীরের বিষয়। প্রত্যেকটি ট্র্যাজেডিই ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও প্রয়োগের গোলকধাঁধাকে সামনে নিয়ে আসে। ২০২৪ সালে ভারতীয় কাশির সিরাপের বাজার ২৬২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০৩৫ সালে ৭৪৩ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা। মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের মতে যা বার্ষিক ৯ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এসবের কিছুই ঘটতো না যদি ভারত এবং ভারতীয়রা নিজেরা কাশির সিরাপে আসক্ত না হতো। কয়েক দশক ধরে ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে এগুলি লিখে আসছেন এবং রোগীরাও সেগুলি গ্রহণ করেছেন। যদিও বেশিরভাগই খুব কম উপকার করে এবং সম্ভাব্যভাবে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
গলা ব্যথা এবং টানা কাশির দ্রুত উপশম হিসেবে বাজারজাত করা এই মিষ্টি সিরাপগুলো চিনি, রঙ এবং গন্ধের সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামাইন, ডিকনজেস্ট্যান্ট এবং এক্সপেক্টোরেন্টের মিশ্রণে তৈরি।
তত্ত্বগতভাবে প্রতিটি উপাদানই আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করে। একটি স্রাব শুকিয়ে দেয়, আরেকটি কফ আলগা করে, তৃতীয়টি কাশির প্রতিফলনকে নিস্তেজ করে। বাস্তবে, এতে খুব বেশি উপকারের প্রমাণ খুব কম। কারণ বেশিরভাগ কাশিই কয়েক দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়।
কাশি সংক্রমণ অথবা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে। কাশি সিরাপগুলি মূলত দুই ধরনের হয়—শিশুকে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে এমন সিডেটিভ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে এমন ব্রঙ্কোডাইলেটর। ডাক্তাররা সাধারণত দুটির যেকোনো একটির পরামর্শ দেন।
ব্যাপকমাত্রায় প্রেসক্রাইবের প্রধান কারণ হলো ভারতের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুর্বলতা। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ছোট শহরগুলোতে। ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের ফলে ক্রমাগত কাশির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই নিয়মিত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এর অপব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে।
একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সমস্যা আরও প্রকট। গ্রামীণ ভারতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী স্ব-শিক্ষিত (আরএমপি)। আবার কারও কারও আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণও নেই।
সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব, পর্যাপ্ত লোকবল না থাক এবং বন্ধ থাকার কারণে ওই হাতুড়ে ডাক্তাররাই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেন। আর তাদের কাছে একমাত্র বিশ্বস্ত অস্ত্র হলো এই কাশির সিরাপ। ডা. কাফিল খান নামে সরকারি এক শিশু ডাক্তার এই ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, তিনি যখন উত্তর প্রদেশের গোরাকপুরে পোস্টেড ছিলেন তখন দেখেছেন—সর্বত্রই এই সিরাপ দেওয়া হয়। এমনকি যার ডিগ্রি নেই সেও এই সিরাপ দিচ্ছেন।
এসব শহরের রোগীরা হাতুড়ে ডাক্তার থেকে দোকানি—মেডিক্যালি জ্ঞান আছে মনে করা এমন যে কারও ওপর নির্ভর করেন। শুধু তাই নয়, নিয়মিত কাশি হলেও তাদের ওপর নির্ভর করেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দিনেশ ঠাকুর বলেন, অনেক গরিব রোগী ফার্মাসিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী যতবার দরকার ততবারই কাশির ওষুধ নেন। এটা একটা ভুল ধারণা। ঘটনাক্রমে এই সমস্যা মূলত ছোট শহর এবং গ্রামীণ ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তথ্য বলছে বিষয়টি তেমন নয়। আমরা বড় শহরগুলির মানুষের মধ্যেও একই রকম প্রবণতা দেখতে পাই। তবে গ্রাম আর শহরের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য হল—ছোট শহরগুলিতে ওষুধের মান বড় শহরগুলির তুলনায় অনেক খারাপ।
এই প্রবণতার আরেকটি কারণ হলো উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের সম্মিলিত চাপ এবং চিকি’//সা জ্ঞানের অভাব। ডা. কাফিল খান বলেন, অভিভাবকরা সব সময় অবগত থাকেন না এবং তারা অধৈর্য হয়ে উঠতে পারেন। যদি কয়েক দিনের মধ্যে কোনো শিশুর কাশি বা ঠান্ডার উন্নতি না হয় তখন অভিভাবকরা কাশির সিরাপ দেন এমন ডাক্তারের পরামর্শ নেন।
ডাক্তারদের কম জ্ঞান সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ডা. কাফিল খান জানান, তিনি এমনও দেখেছেন শিশু ডাক্তারও শিশুদের জন্য কাশির জন্য অ্যাম্ব্রোক্সল প্রেসক্রাইব করছেন। এই ওষুধ কাশি বের হওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা থুথু ফেলতে পারে না। তাই শ্লেষ্মা ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। যার ফলে নিউমোনিয়া হতে পারে। তারপরও এই সিরাপ দেওয়া হয়।
কাশি সিরাপ সম্পর্কে স্পষ্ট নীতিমালা, ডাক্তার ও অভিভাবকদের মধ্যে এর বেপরোয়া ব্যবহার রোধে সচেতনতার কথা বলছেন দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কারণ কাশির সিরাপের ঝুঁকির বিষয়টি বাস্তব। মধ্যপ্রদেশে সম্প্রতি যে সিরাপে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ১৫ বছর ধরে আমি এই কাশির সিরাপটি লিখে আসছি।
সূত্র: বিবিসি
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি। তারা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ (এমওএফ’স) নামে এক নতুন ধরনের উপাদান তৈরির পথিকৃৎ হিসেবে এই পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন।
৩৭ মিনিট আগেবাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, তার সঙ্গে ভারত কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের রায়ের অপেক্ষায় আছি।
২ ঘণ্টা আগেকিন্তু এবারের এই মূর্তি প্রদর্শনী শুধু রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নয়, ছিল এক সময়ের ঘনিষ্ঠ দুই মিত্র ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনেরও প্রতিফলন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফল এই টানাপোড়েন।
৩ ঘণ্টা আগেএখন থেকে যেকোনো ধরনের ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থানকালে পবিত্র ওমরা পালন করতে পারবেন মুসলিমরা। দেশটির হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগে