.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

ইসলামাবাদের পাশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে বড় হয়েছেন মাহনুর ওমর। আজও তিনি স্কুলে পিরিয়ড হওয়ার সময়কার ভয় ও লজ্জার কথা ভুলতে পারেন না। টয়লেটে স্যানিটারি প্যাড নেওয়াটাও ছিল যেন অপরাধ ঢাকার মতো কাজ।
তিনি বলেন, ‘আমি হাতার ভেতরে প্যাড লুকিয়ে বাথরুমে যেতাম, যেন মাদক নিচ্ছি।’ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহনুরের বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। একবার তার এক সহপাঠী বলেছিল, তার মা মনে করেন প্যাড কেনা ‘অপচয়’।
সেই সময় মাহনুর উপলব্ধি করেন—যদি মধ্যবিত্ত পরিবারেই এমন ধারণা থাকে, তাহলে দরিদ্র মেয়েদের জন্য এসব পণ্য কতটা অপ্রাপ্য তা সহজেই বোঝা যায়।
এখন ২৫ বছর বয়সে মাহনুর একজন আইনজীবী। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ তিনি লাহোর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। এতে তিনি পাকিস্তানের নারীদের ওপর আরোপিত তথাকথিত ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ চ্যালেঞ্জ করেন।
১৯৯০ সালের সেলস ট্যাক্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে তৈরি স্যানিটারি প্যাডের ওপর ১৮ শতাংশ বিক্রয়কর এবং আমদানি করা প্যাড বা কাঁচামালের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য স্থানীয় করসহ প্যাডের কার্যকর করহার প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে।
মাহনুরের যুক্তি—এই কর নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানে প্রদত্ত সমতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের অধিকার লঙ্ঘন করে।
পাকিস্তানের অধিকাংশ পরিবারে মাসিক নিয়ে আলোচনা এখনো নিষিদ্ধ। এই ট্যাক্স নারীদের জন্য স্যানিটারি পণ্য আরও অপ্রাপ্য করে তুলেছে। বর্তমানে ১০টি প্যাডের একটি সাধারণ প্যাকেটের দাম প্রায় ৪৫০ রুপি (প্রায় ১.৬০ ডলার)।
দেশের মাথাপিছু মাসিক আয় যেখানে মাত্র ১২০ ডলার, সেখানে এই খরচ নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য একবেলার খাবারের সমান। যদি ৪০ শতাংশ কর কমানো যায়, প্যাড অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে।
ইউনিসেফ ও ওয়াটারএইডের ২০২৪ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, পাকিস্তানের মাত্র ১২ শতাংশ নারী বাণিজ্যিকভাবে তৈরি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। বাকিরা কাপড় বা অন্য উপকরণ ব্যবহার করেন, অনেকে পরিষ্কার পানিও পান না।
দাস্তাক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিরা আমজাদ বলেন, ‘যদি এই রিট সফল হয়, তাহলে প্যাড অনেক সস্তা হয়ে যাবে।’ তার মতে, এটি শুধু স্বাস্থ্য নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও সূচনা করতে পারে।
মাহনুর বলেন, ‘এই মামলা কেবল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি নারীদের অস্তিত্বের লড়াই—যেন এটি “নারী বনাম পাকিস্তান” লড়াই।’
‘এটা লজ্জার কিছু নয়’
মাহওয়ারি জাস্টিস নামের শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বুশরা মাহনুরও পিরিয়ড নিয়ে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা বয়ে এনেছেন। (তিনি মাহনুর ওমরের আত্মীয় নন।)
পাঞ্জাব প্রদেশের অ্যাটক শহরে চার বোনের পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। ‘প্রতি মাসে দেখতে হতো, প্যাড যথেষ্ট আছে কি না। যদি আমার আর বোনের পিরিয়ড একসঙ্গে হয়, তখন সমস্যা হতো’, বলেন তিনি।
স্কুলেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না। এক শিক্ষক এক ছাত্রীকে পোশাকে দাগ পড়ায় দুই ক্লাস ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ‘এটা ছিল অমানবিক’, বলেন বুশরা।
দশ বছর বয়সে প্রথম তাঁর পিরিয়ড হয়। ‘কেউ শেখায়নি কীভাবে প্যাড ব্যবহার করতে হয়। আমি উল্টো দিক দিয়ে লাগিয়েছিলাম, আঠালো দিকটা ত্বকে লেগেছিল—খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।’
গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন মেয়ে মাসিক নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়। ৩ জনের মধ্যে ২ জন মেয়েই মাসিক শুরু হওয়ার আগে কোনো তথ্য জানে না। এই নীরবতা তাদের মধ্যে দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক বর্জন ও স্কুল ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বুশরা ‘মাহওয়ারি জাস্টিস’ প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নারীদের মাসিকের প্রয়োজন উপেক্ষিত না হয়। তারা এখন পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি পিরিয়ড কিট বিতরণ করেছে—যেখানে থাকে প্যাড, সাবান, অন্তর্বাস, ডিটারজেন্ট ও ব্যথানাশক ওষুধ। সংগঠনটি গান ও কমিকসের মাধ্যমে মাসিক বিষয়ে সচেতনতা ছড়াচ্ছে।
বুশরা বলেন, ‘যখন আমরা “মাহওয়ারি” শব্দটা জোরে বলি, তখন মানুষ শিখছে—এটা লজ্জার কিছু নয়, এটা জীবনেরই অংশ।’
হিরা আমজাদ বলেন, পিরিয়ড সংক্রান্ত সামাজিক ট্যাবু অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। অধিকাংশ পরিবারে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষরা। ‘নারী উপার্জন করলেও টাকাটা পুরুষের হাতে তুলে দেয়, আর তিনিই ঠিক করেন কোথায় খরচ হবে’, বলেন তিনি।
যখন নারীর স্বাস্থ্যের খরচ বেশি মনে হয়, তখন সেটি উপেক্ষিত হয়। ‘ট্যাক্সের কারণে প্যাডের দাম বেড়ে গেছে, ফলে অনেক পরিবারে এ নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয় না’, বলেন হিরা।
২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি নারী স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেন না।
হিরার মতে, কর বাতিল হলে শুধু স্বাস্থ্য নয়, শিক্ষা ও সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মেয়েদের স্কুলে উপস্থিতির হার বাড়বে, যা বর্তমানে পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম।
তিনি বলেন, ‘কর উঠলে আমরা আরও সুখী, সুস্থ ও চাপমুক্ত নারী সমাজ পাব।’

ন্যায়বোধ
ওমর জানান, নারীদের ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন যে অবিচার ও নিপীড়ন দেখি, সেটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। নারীরা রাস্তায়, গণমাধ্যমে কিংবা ঘরে—সব জায়গায় অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে শোষিত হন। এটা কখনোই মেনে নিতে পারিনি।’
তিনি তাঁর মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি তাঁকে সহানুভূতিশীল ও মানবিক হতে শিখিয়েছেন।
স্কুল শেষ করে ওমর কাজ করেন পাকিস্তানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রসরোডস কনসালটেন্টস-এ, যেখানে তিনি লিঙ্গ ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে কাজ করেন। পাশাপাশি, ১৯ বছর বয়সে তিনি আওরাত মার্চ-এ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন—যা আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আয়োজিত এক নারীবাদী আন্দোলন। সেই অংশগ্রহণ এখনো অব্যাহত আছে।
ওমরের সক্রিয়তা শুরু হয় ১৬ বছর বয়সে। তখন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ইসলামাবাদের নিম্নআয়ের মহল্লাগুলোর নারীদের জন্য ‘ডিগনিটি কিট’ বানাতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেক বিক্রি করে বা নিজেদের টাকায় তহবিল তুলতাম।’
তাঁদের সংগৃহীত অর্থে প্রায় ৩০০টি কিট বিতরণ করা হয়। প্রতিটি কিটে ছিল প্যাড, অন্তর্বাস, ব্যথানাশক ও ওয়াইপস। তবে ওমর আরও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আইন সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এ জেন্ডার, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি জানান, পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে আইনচর্চা শুরু করবেন।
সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় আইনজীবী আহসান জেহাঙ্গির খান-এর সঙ্গে, যিনি কর ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাঁদের আলোচনাতেই ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ বা মাসিক পণ্যে কর বাতিলের ধারণা আসে।
ওমর বলেন, ‘ওই তিনিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন—শুধু অভিযোগ নয়, আদালতে ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য।’
সহ-আবেদনকারী খান মনে করেন, এই মামলা কেবল পণ্যের দাম নয়, ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘এটা এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর কর—যা অমানবিক।’ তাঁর মতে, পাকিস্তানের করনীতি তৈরি হয় এমন এক সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির হাতে, যাঁদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং সাধারণ নারীর বাস্তবতা বোঝেন না। সংবিধান স্পষ্টভাবে বলে—কোনো লিঙ্গের বিরুদ্ধে বৈষম্য চলবে না।
দাস্তাক ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ মনে করেন, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এই লড়াই জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের সঙ্গেও যুক্ত। সাম্প্রতিক বন্যার মতো দুর্যোগ নারীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, ‘ভাবুন, আপনি তাঁবুতে আশ্রিত, আর তখনই জীবনে প্রথমবার মাসিক শুরু হয়েছে। কোনো নিরাপত্তা বা প্রস্তুতি নেই—এটা আজীবনের মানসিক আঘাত।’
তাঁর মতে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে নারীদের ঘন ঘন প্যাড বদলাতে হয়, ফলে পর্যাপ্ত পণ্য না পেলে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই তিনি তুলা দিয়ে তৈরি প্যাডে কর প্রত্যাহারের পক্ষে, তবে প্লাস্টিকের নয়—কারণ সেগুলো ‘হাজার বছরেও পচে না।’
আমজাদ আরও চান মাসিক ছুটি বাধ্যতামূলক হোক। তিনি বলেন, ‘অনেক নারীকে চাকরি হারাতে হয়েছে শুধু মাসিকজনিত যন্ত্রণায় কাজ না করতে পারায়। তখন মনোযোগ রাখা সম্ভব হয় না।’
বিরোধীরা আশা করছেন, ওমরের মামলা সরকারকে ভারত, নেপাল ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণে বাধ্য করবে। দেশগুলো ইতিমধ্যে পিরিয়ড ট্যাক্স বাতিল করেছে।
ওমর জানান, সরকারবিরোধী মামলায় যাওয়া তাঁর জন্য সহজ ছিল না। প্রথমে তাঁর বাবা-মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া কখনোই ভালো নয়।’
তবে এখন তাঁরা মেয়ের ওপর গর্বিত। ওমর বলেন, ‘তাঁরা বুঝেছেন কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
ওমরের কাছে এই মামলা শুধু আইন নয়, এক অনুভূতি। তিনি বলেন, ‘এই মামলার কথা ভাবলে আমার চোখে আদালত নয়, এক ন্যায়বিচারের ছবি ভেসে ওঠে। এটা আমাকে গর্বিত করে, কারণ আমি ভয় না পেয়ে সঠিক কাজটি করতে পেরেছি।’
সূত্র: আল-জাজিরা

ইসলামাবাদের পাশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে বড় হয়েছেন মাহনুর ওমর। আজও তিনি স্কুলে পিরিয়ড হওয়ার সময়কার ভয় ও লজ্জার কথা ভুলতে পারেন না। টয়লেটে স্যানিটারি প্যাড নেওয়াটাও ছিল যেন অপরাধ ঢাকার মতো কাজ।
তিনি বলেন, ‘আমি হাতার ভেতরে প্যাড লুকিয়ে বাথরুমে যেতাম, যেন মাদক নিচ্ছি।’ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহনুরের বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। একবার তার এক সহপাঠী বলেছিল, তার মা মনে করেন প্যাড কেনা ‘অপচয়’।
সেই সময় মাহনুর উপলব্ধি করেন—যদি মধ্যবিত্ত পরিবারেই এমন ধারণা থাকে, তাহলে দরিদ্র মেয়েদের জন্য এসব পণ্য কতটা অপ্রাপ্য তা সহজেই বোঝা যায়।
এখন ২৫ বছর বয়সে মাহনুর একজন আইনজীবী। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ তিনি লাহোর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। এতে তিনি পাকিস্তানের নারীদের ওপর আরোপিত তথাকথিত ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ চ্যালেঞ্জ করেন।
১৯৯০ সালের সেলস ট্যাক্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে তৈরি স্যানিটারি প্যাডের ওপর ১৮ শতাংশ বিক্রয়কর এবং আমদানি করা প্যাড বা কাঁচামালের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, অন্যান্য স্থানীয় করসহ প্যাডের কার্যকর করহার প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে।
মাহনুরের যুক্তি—এই কর নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানে প্রদত্ত সমতা, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়ের অধিকার লঙ্ঘন করে।
পাকিস্তানের অধিকাংশ পরিবারে মাসিক নিয়ে আলোচনা এখনো নিষিদ্ধ। এই ট্যাক্স নারীদের জন্য স্যানিটারি পণ্য আরও অপ্রাপ্য করে তুলেছে। বর্তমানে ১০টি প্যাডের একটি সাধারণ প্যাকেটের দাম প্রায় ৪৫০ রুপি (প্রায় ১.৬০ ডলার)।
দেশের মাথাপিছু মাসিক আয় যেখানে মাত্র ১২০ ডলার, সেখানে এই খরচ নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য একবেলার খাবারের সমান। যদি ৪০ শতাংশ কর কমানো যায়, প্যাড অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে।
ইউনিসেফ ও ওয়াটারএইডের ২০২৪ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, পাকিস্তানের মাত্র ১২ শতাংশ নারী বাণিজ্যিকভাবে তৈরি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন। বাকিরা কাপড় বা অন্য উপকরণ ব্যবহার করেন, অনেকে পরিষ্কার পানিও পান না।
দাস্তাক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হিরা আমজাদ বলেন, ‘যদি এই রিট সফল হয়, তাহলে প্যাড অনেক সস্তা হয়ে যাবে।’ তার মতে, এটি শুধু স্বাস্থ্য নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও সূচনা করতে পারে।
মাহনুর বলেন, ‘এই মামলা কেবল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি নারীদের অস্তিত্বের লড়াই—যেন এটি “নারী বনাম পাকিস্তান” লড়াই।’
‘এটা লজ্জার কিছু নয়’
মাহওয়ারি জাস্টিস নামের শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বুশরা মাহনুরও পিরিয়ড নিয়ে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা বয়ে এনেছেন। (তিনি মাহনুর ওমরের আত্মীয় নন।)
পাঞ্জাব প্রদেশের অ্যাটক শহরে চার বোনের পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। ‘প্রতি মাসে দেখতে হতো, প্যাড যথেষ্ট আছে কি না। যদি আমার আর বোনের পিরিয়ড একসঙ্গে হয়, তখন সমস্যা হতো’, বলেন তিনি।
স্কুলেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না। এক শিক্ষক এক ছাত্রীকে পোশাকে দাগ পড়ায় দুই ক্লাস ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ‘এটা ছিল অমানবিক’, বলেন বুশরা।
দশ বছর বয়সে প্রথম তাঁর পিরিয়ড হয়। ‘কেউ শেখায়নি কীভাবে প্যাড ব্যবহার করতে হয়। আমি উল্টো দিক দিয়ে লাগিয়েছিলাম, আঠালো দিকটা ত্বকে লেগেছিল—খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।’
গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জন মেয়ে মাসিক নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়। ৩ জনের মধ্যে ২ জন মেয়েই মাসিক শুরু হওয়ার আগে কোনো তথ্য জানে না। এই নীরবতা তাদের মধ্যে দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক বর্জন ও স্কুল ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় বুশরা ‘মাহওয়ারি জাস্টিস’ প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নারীদের মাসিকের প্রয়োজন উপেক্ষিত না হয়। তারা এখন পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি পিরিয়ড কিট বিতরণ করেছে—যেখানে থাকে প্যাড, সাবান, অন্তর্বাস, ডিটারজেন্ট ও ব্যথানাশক ওষুধ। সংগঠনটি গান ও কমিকসের মাধ্যমে মাসিক বিষয়ে সচেতনতা ছড়াচ্ছে।
বুশরা বলেন, ‘যখন আমরা “মাহওয়ারি” শব্দটা জোরে বলি, তখন মানুষ শিখছে—এটা লজ্জার কিছু নয়, এটা জীবনেরই অংশ।’
হিরা আমজাদ বলেন, পিরিয়ড সংক্রান্ত সামাজিক ট্যাবু অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। অধিকাংশ পরিবারে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষরা। ‘নারী উপার্জন করলেও টাকাটা পুরুষের হাতে তুলে দেয়, আর তিনিই ঠিক করেন কোথায় খরচ হবে’, বলেন তিনি।
যখন নারীর স্বাস্থ্যের খরচ বেশি মনে হয়, তখন সেটি উপেক্ষিত হয়। ‘ট্যাক্সের কারণে প্যাডের দাম বেড়ে গেছে, ফলে অনেক পরিবারে এ নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত হয় না’, বলেন হিরা।
২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি নারী স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেন না।
হিরার মতে, কর বাতিল হলে শুধু স্বাস্থ্য নয়, শিক্ষা ও সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মেয়েদের স্কুলে উপস্থিতির হার বাড়বে, যা বর্তমানে পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম।
তিনি বলেন, ‘কর উঠলে আমরা আরও সুখী, সুস্থ ও চাপমুক্ত নারী সমাজ পাব।’

ন্যায়বোধ
ওমর জানান, নারীদের ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন যে অবিচার ও নিপীড়ন দেখি, সেটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। নারীরা রাস্তায়, গণমাধ্যমে কিংবা ঘরে—সব জায়গায় অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে শোষিত হন। এটা কখনোই মেনে নিতে পারিনি।’
তিনি তাঁর মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি তাঁকে সহানুভূতিশীল ও মানবিক হতে শিখিয়েছেন।
স্কুল শেষ করে ওমর কাজ করেন পাকিস্তানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রসরোডস কনসালটেন্টস-এ, যেখানে তিনি লিঙ্গ ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে কাজ করেন। পাশাপাশি, ১৯ বছর বয়সে তিনি আওরাত মার্চ-এ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন—যা আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আয়োজিত এক নারীবাদী আন্দোলন। সেই অংশগ্রহণ এখনো অব্যাহত আছে।
ওমরের সক্রিয়তা শুরু হয় ১৬ বছর বয়সে। তখন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ইসলামাবাদের নিম্নআয়ের মহল্লাগুলোর নারীদের জন্য ‘ডিগনিটি কিট’ বানাতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেক বিক্রি করে বা নিজেদের টাকায় তহবিল তুলতাম।’
তাঁদের সংগৃহীত অর্থে প্রায় ৩০০টি কিট বিতরণ করা হয়। প্রতিটি কিটে ছিল প্যাড, অন্তর্বাস, ব্যথানাশক ও ওয়াইপস। তবে ওমর আরও বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আইন সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস-এ জেন্ডার, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। তিনি জানান, পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে আইনচর্চা শুরু করবেন।
সেখানেই তাঁর পরিচয় হয় আইনজীবী আহসান জেহাঙ্গির খান-এর সঙ্গে, যিনি কর ও সাংবিধানিক আইন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাঁদের আলোচনাতেই ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ বা মাসিক পণ্যে কর বাতিলের ধারণা আসে।
ওমর বলেন, ‘ওই তিনিই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন—শুধু অভিযোগ নয়, আদালতে ন্যায়বিচার চাওয়ার জন্য।’
সহ-আবেদনকারী খান মনে করেন, এই মামলা কেবল পণ্যের দাম নয়, ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘এটা এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ওপর কর—যা অমানবিক।’ তাঁর মতে, পাকিস্তানের করনীতি তৈরি হয় এমন এক সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির হাতে, যাঁদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং সাধারণ নারীর বাস্তবতা বোঝেন না। সংবিধান স্পষ্টভাবে বলে—কোনো লিঙ্গের বিরুদ্ধে বৈষম্য চলবে না।
দাস্তাক ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ মনে করেন, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে এই লড়াই জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটের সঙ্গেও যুক্ত। সাম্প্রতিক বন্যার মতো দুর্যোগ নারীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। তিনি বলেন, ‘ভাবুন, আপনি তাঁবুতে আশ্রিত, আর তখনই জীবনে প্রথমবার মাসিক শুরু হয়েছে। কোনো নিরাপত্তা বা প্রস্তুতি নেই—এটা আজীবনের মানসিক আঘাত।’
তাঁর মতে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে নারীদের ঘন ঘন প্যাড বদলাতে হয়, ফলে পর্যাপ্ত পণ্য না পেলে সমস্যা আরও বাড়বে। তাই তিনি তুলা দিয়ে তৈরি প্যাডে কর প্রত্যাহারের পক্ষে, তবে প্লাস্টিকের নয়—কারণ সেগুলো ‘হাজার বছরেও পচে না।’
আমজাদ আরও চান মাসিক ছুটি বাধ্যতামূলক হোক। তিনি বলেন, ‘অনেক নারীকে চাকরি হারাতে হয়েছে শুধু মাসিকজনিত যন্ত্রণায় কাজ না করতে পারায়। তখন মনোযোগ রাখা সম্ভব হয় না।’
বিরোধীরা আশা করছেন, ওমরের মামলা সরকারকে ভারত, নেপাল ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর উদাহরণ অনুসরণে বাধ্য করবে। দেশগুলো ইতিমধ্যে পিরিয়ড ট্যাক্স বাতিল করেছে।
ওমর জানান, সরকারবিরোধী মামলায় যাওয়া তাঁর জন্য সহজ ছিল না। প্রথমে তাঁর বাবা-মা খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া কখনোই ভালো নয়।’
তবে এখন তাঁরা মেয়ের ওপর গর্বিত। ওমর বলেন, ‘তাঁরা বুঝেছেন কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
ওমরের কাছে এই মামলা শুধু আইন নয়, এক অনুভূতি। তিনি বলেন, ‘এই মামলার কথা ভাবলে আমার চোখে আদালত নয়, এক ন্যায়বিচারের ছবি ভেসে ওঠে। এটা আমাকে গর্বিত করে, কারণ আমি ভয় না পেয়ে সঠিক কাজটি করতে পেরেছি।’
সূত্র: আল-জাজিরা
.png)

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে, সমুদ্রতলজুড়ে ছড়িয়ে আছে বাদামী ও কালো রঙের শিলাখণ্ড। এই শিলাগুলোকে বলা হয় পলিমেটালিক নডিউলস। এতে এমন গুরুত্বপূর্ণ ধাতব উপাদান রয়েছে যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও আধুনিক শিল্পের ভবিষ্যৎ গঠনে ব্যবহৃত হতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
এ বছরের শুরুতে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই সেনাবাহিনী শহরটি পুনর্দখল করে নেয়। এই পরিবর্তন প্রমাণ করে, মিয়ানমারে এখন সামরিক ভারসাম্য কতটা জান্তার পক্ষে চলে গেছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরে যায়। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ১৮ যাত্রী আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন।
৫ ঘণ্টা আগে
ভারতের জেনারেশন জেড বিশাল, অস্থির ও প্রযুক্তিনির্ভর একটি প্রজন্ম। ২৫ বছরের নিচে এমন প্রায় ৩৭ কোটি মানুষ আছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের কাছাকাছি। স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের কারণে তারা রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন।
৫ ঘণ্টা আগে