leadT1ad

একের পর এক অঞ্চল পুনর্দখল করছে মিয়ানমার জান্তা, কেন পিছু হটছে বিদ্রোহীরা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ২৯
গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরত বিদ্রোহীরা সামরিক বাহিনীর মতো সুসজ্জিত নয়। ছবি: সংগৃহীত।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গত বছর বিদ্রোহী সংগঠন তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) কিয়াউকমে শহরটি দখল করে। শহরটি এশিয়ান হাইওয়ে ১৪ বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের বিখ্যাত ‘বার্মা রোড’-এর উপর অবস্থিত। তখন অনেকেই এটিকে সামরিক জান্তার মনোবল ভাঙার প্রতীকী জয় হিসেবে দেখেছিলেন।

কিন্তু এ বছরের শুরুতে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই সেনাবাহিনী শহরটি পুনর্দখল করে নেয়। এই পরিবর্তন প্রমাণ করে, মিয়ানমারে এখন সামরিক ভারসাম্য কতটা জান্তার পক্ষে চলে গেছে।

কিয়াউকমে শহর ভয়াবহ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। টিএনএলএর দখলে থাকাকালীন প্রতিদিনই বিমান হামলা হয়েছে। যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ পাউন্ড বোমা ফেলা হয়েছে, আর্টিলারি ও ড্রোন হামলায় শহরের বড় অংশ ধ্বংস হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ পালিয়ে যায়, যদিও সেনা দখলের পর কিছু লোক ফেরার চেষ্টা করছে।

টিএনএলএর মুখপাত্র তার পার্ন লা জানান, ‘কিয়াউকমে ও সিপাউ এলাকায় প্রতিদিনই তীব্র যুদ্ধ চলছে। এ বছর সেনাবাহিনীর সৈন্য, ভারী অস্ত্র ও বিমান শক্তি অনেক বেশি।’ পরে সেনারা সিপাউও দখল করে নেয়, ফলে চীনা সীমান্ত পর্যন্ত সড়কপথের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি জান্তার হাতে ফিরে আসে।

এই পুনর্দখলে সাফল্যের অন্যতম কারণ চীনের সমর্থন। চীন ডিসেম্বর মাসে জান্তার নির্বাচনের পরিকল্পনাকে সমর্থন দিচ্ছে। এই নির্বাচন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, কারণ এতে অংশ নিতে পারছে না অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। পাশাপাশি দেশের বড় অংশ এখনো গৃহযুদ্ধে জর্জরিত।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে হাজারো মানুষ নিহত ও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন যুদ্ধের গতি আবার জান্তার পক্ষে ঘুরে যাচ্ছে।

জান্তা এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে হারানো এলাকা পুনর্দখল করতে, যাতে নির্বাচনের আয়োজন করা যায়। তারা পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছে এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

বিশেষ করে, আগে বিদ্রোহীরা সস্তা ড্রোন ব্যবহার করে যে সুবিধা পেয়েছিল, সেনারা এখন চীন থেকে হাজার হাজার ড্রোন কিনেছে এবং সেগুলোর ব্যবহার শিখে নিয়েছে। এগুলো মারাত্মক কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।

সেনারা ধীরে চলা মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা হালকা প্রতিরক্ষা এলাকার ওপর দিয়ে উড়ে নিখুঁতভাবে বোমা ফেলতে পারে। চীন ও রাশিয়ার সরবরাহকৃত যুদ্ধবিমান দিয়ে অবিরাম বোমাবর্ষণে এবার বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর অন্তত এক হাজার মানুষ মারা গেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

অন্যদিকে, বিদ্রোহী শিবিরের ভেতরেই দুর্বলতা ও বিভাজন রয়ে গেছে। শত শত স্থানীয় ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ বা পিডিএফ গঠিত হয়েছে—এরা অনেকেই গ্রামের লোক বা শহর থেকে পালানো তরুণ। তাদের সঙ্গে আছে অভিজ্ঞ জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা বহু বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

কিন্তু এসব গোষ্ঠীর নিজস্ব উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা বার্মিজ সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে এবং ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে অপসারিত সরকারের নেতৃত্বে গঠিত ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর কর্তৃত্বও মানে না। ফলে আন্দোলনের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে হাজারো মানুষ নিহত ও লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন যুদ্ধের গতি আবার জান্তার পক্ষে ঘুরে যাচ্ছে।

এই পুনর্দখলে সাফল্যের অন্যতম কারণ চীনের সমর্থন। ছবি: বিবিসি।
এই পুনর্দখলে সাফল্যের অন্যতম কারণ চীনের সমর্থন। ছবি: বিবিসি।

জান্তার হারানো শক্তি পুনরুদ্ধার

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শান রাজ্যে তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী একত্র হয়ে ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করেছিল। এর আগে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ চলছিল, কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি।

‘অপারেশন ১০২৭’-এর পর পরিস্থিতি বদলে যায়। তিনটি সংগঠন—তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং আরাকান আর্মি—একত্র হয়ে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গঠন করে। তারা মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপক ড্রোন ও ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে অভিযান চালায়।

তারা সেনা ঘাঁটিগুলোকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রমণ করে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ১৮০টি ঘাঁটি দখল করে নেয় এবং উত্তর শান রাজ্যের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।

এই জয় মিয়ানমারের বিরোধী আন্দোলনে নতুন উদ্দীপনা জাগায়। বিভিন্ন অঞ্চলের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নিজ নিজ এলাকায় হামলা বাড়িয়ে দেয়। তখন অনেকে ধারণা করেছিল, সামরিক জান্তা হয়তো ভেঙে পড়বে।

তবে তা ঘটেনি।

সব মিলিয়ে, জান্তা আবারও সামরিক শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ক্রমেই চাপের মুখে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক কৌশল বিশ্লেষক মর্গান মাইকেলস বলেন, ‘এই সংঘাতের শুরুতে দুটি বিষয় অতিরঞ্জিতভাবে দেখা হয়েছিল। প্রথমত, শান অঞ্চলের এই তিন বিদ্রোহী সংগঠন বহু বছর ধরেই একসঙ্গে কাজ করছিল। অন্য গোষ্ঠীগুলো তাদের সাফল্য দেখে নিজ নিজ জায়গায় আক্রমণ শুরু করেছিল, কিন্তু সেটিকে ভুলভাবে জাতীয় পর্যায়ের ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহ মনে করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ভুল ধারণা ছিল—সেনাবাহিনীর মনোবল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে, বাস্তবে তা হয়নি।’

২০২৩ সালের শেষ দিকে জান্তা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করে। বহু তরুণ পুরুষ পালিয়ে যায় বা বিদেশে আশ্রয় নেয়, কেউ কেউ প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেয়। তবুও প্রায় ৬০ হাজার নতুন সদস্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। তারা অনভিজ্ঞ হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। বিদ্রোহী সূত্রগুলোও স্বীকার করেছে, নতুন সৈন্যদের পাশাপাশি ড্রোন ও বিমান হামলাই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

‘আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট’-এর (এসিএলইডি) বিশ্লেষক সু মনের মতে, ড্রোন জান্তাকে আকাশে নিরঙ্কুশ সুবিধা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, লাগাতার ড্রোন হামলায় তাদের বহু যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। আমাদের তথ্যেও দেখা যাচ্ছে, বিমান হামলাগুলোর নির্ভুলতা বেড়েছে—সম্ভবত ড্রোনের নির্দেশনায় তা ঘটছে।’

অন্যদিকে, চীনের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোর হওয়া এবং দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে বিদ্রোহীদের জন্য ড্রোন বা এর যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে এবং জান্তার উন্নত জ্যামিং প্রযুক্তির কারণে তাদের অনেক ড্রোনই এখন আটকানো যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, জান্তা আবারও সামরিক শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ক্রমেই চাপের মুখে পড়ছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের শান রাজ্যের কিয়াউকমেতে একটি বাজারের দৃশ্য। ছবি: বিবিসি।
২০২৪ সালের জুলাই মাসের শান রাজ্যের কিয়াউকমেতে একটি বাজারের দৃশ্য। ছবি: বিবিসি।

বহুমুখী যুদ্ধক্ষেত্রে মিয়ানমার

তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) একমাত্র নয়, আরও কয়েকটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এখন পিছু হটছে। চীনের প্রবল চাপের মুখে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আরেক সদস্য মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) লাশিও শহর ছেড়ে দেয়। এই শহরটি ছিল শান রাজ্যে সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর এবং বিদ্রোহীদের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

এমএনডিএএ এখন জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী ও সজ্জিত শান বিদ্রোহী সংগঠন ইউনাইটেড ওয়াসা আর্মি (ইউডব্লিউএসএ)-ও চীনের চাপে অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধ করেছে।

এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত এলাকায় কাজ করে এবং টিকে থাকার জন্য নিয়মিত চীনের সহযোগিতা দরকার হয়। চীন সীমান্ত গেট বন্ধ করে এবং কয়েকজন নেতাকে আটক করে সহজেই তাদের চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।

দক্ষিণে, কারেন রাজ্যে সেনাবাহিনী থাইল্যান্ড সীমান্তের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় দখল করেছে। বিদ্রোহী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) দেড় বছর আগে এই পথের সামরিক ঘাঁটিগুলো দখল করেছিল। এখন তারা তাদের পরাজয়ের জন্য নতুন সৈন্য, উন্নত ড্রোন এবং অন্যান্য কারেন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করছে।

তবে কিছু অঞ্চলে জান্তা এখনো সাফল্য পায়নি। রাখাইন ও চিন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় সশস্ত্র প্রতিরোধকারীরা এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং অনেক জায়গায় সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করছে।

তারা এমনকি ২০১৫ সালে জাপানের সহায়তায় নির্মিত লেই কে কও নামের শহরটিও হারিয়েছে—যা একসময় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির অংশ ছিল।

পাশের কায়াহ রাজ্যে, যেখানে গত দুই বছর ধরে বিদ্রোহীরা অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছিল, সেনাবাহিনী এখন ডেমোসো শহর এবং শান রাজ্যের সীমানার ভেতর মোবয়ে শহর দখল করেছে। উত্তরে কাচিন রাজ্যেও তারা অগ্রসর হচ্ছে, আর সাগাইং ও মান্দালয়ের কিছু বিতর্কিত এলাকাতেও যুদ্ধ জারি আছে।

তবে কিছু অঞ্চলে জান্তা এখনো সাফল্য পায়নি। রাখাইন ও চিন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় সশস্ত্র প্রতিরোধকারীরা এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং অনেক জায়গায় সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করছে।

আন্তর্জাতিক কৌশল বিশ্লেষক মর্গান মাইকেলসের মতে, জান্তা এখন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ওপরেই মনোযোগ দিচ্ছে—যেমন প্রধান বাণিজ্যপথ ও নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত শহরগুলো। কিয়াউকমে ও সিপাউ—দুটোই এমন স্থান যেখানে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

সরকার স্বীকার করেছে, ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে অন্তত ৫৬টিতে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে না। তবে বিরোধীদের বিশ্বাস, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।

টিএনএলএ এবং জান্তার মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের পর শান রাজ্যের কিয়াউকমে শহরের দৃশ্য। ছবি: বিবিসি।
টিএনএলএ এবং জান্তার মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের পর শান রাজ্যের কিয়াউকমে শহরের দৃশ্য। ছবি: বিবিসি।

‘চীন বিশৃঙ্খলা চায় না’

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চীনের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। চাইলে চীন ২০২৩ সালের ‘অপারেশন ১০২৭’ ঠেকাতে পারত। কিন্তু তখন তারা তা করেনি। কারণ, তখন জান্তা-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে প্রতারণামূলক ‘স্ক্যাম সেন্টার’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। এই কেন্দ্রগুলো বন্ধ করাকেই ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স তাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিল।

বর্তমানে চীন সম্পূর্ণভাবে জান্তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বাচনের জন্য প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিকভাবে জান্তাকে প্রকাশ্য সমর্থন জানাচ্ছে। এ বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের মধ্যে দুটি বৈঠকও আয়োজন করেছে চীন। এটি ঘটছে এমন এক সময়, যখন ২০২১ সালের অভ্যুত্থান ও তার পরিণতি নিয়ে বেইজিং নিজেও উদ্বিগ্ন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগস্ট মাসে বলেন, ‘চীন মিয়ানমারে বিশৃঙ্খলা ও যুদ্ধের বিরোধিতা করে।’ এই বক্তব্যই চীনের অবস্থান স্পষ্ট করে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মর্গান মাইকেলস বলেন, ‘চীনের নীতি হলো—রাষ্ট্রের পতন নয়। তারা জান্তাকে ভালোবাসে না, কিন্তু যখন দেখল সরকার টলে যাচ্ছে, তখন রাষ্ট্র ভেঙে পড়বে এই আশঙ্কায় হস্তক্ষেপ করল।’

তবুও চীনের জন্য যুদ্ধ থামানো সহজ হবে না। জান্তার হাতে মিয়ানমারের জনগণ যে ভয়াবহ নির্যাতন সহ্য করেছে, তার ক্ষত বহু প্রজন্ম ধরে রয়ে যাবে।

চীনের মিয়ানমারে স্বার্থ দীর্ঘদিনের। দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। মিয়ানমারকে চীন দেখে ভারত মহাসাগরে প্রবেশের পথ হিসেবে, যা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তেল ও গ্যাস সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বহু চীনা কোম্পানি সেখানে বড় বিনিয়োগ করেছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সংকট সমাধানে অন্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে জান্তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল রাখার চীনা প্রচেষ্টায় আঞ্চলিক দেশগুলোও সমর্থন দিতে পারে।

তবুও চীনের জন্য যুদ্ধ থামানো সহজ হবে না। জান্তার হাতে মিয়ানমারের জনগণ যে ভয়াবহ নির্যাতন সহ্য করেছে, তার ক্ষত বহু প্রজন্ম ধরে রয়ে যাবে।

মর্গান মাইকেলসের মতে, ‘সেনাবাহিনী শুষ্ক অঞ্চলে অন্তত এক লাখ দশ থেকে এক লাখ বিশ হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। সহিংসতার মাত্রা অতি ভয়াবহ, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন যিনি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এই কারণেই এখন কোনো রাজনৈতিক সমাধান কল্পনা করা কঠিন। যুদ্ধক্ষেত্র ধরে রাখতে না পেরে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সম্ভব হলেও, স্থায়ী শান্তি চুক্তি এখনো অনেক দূরের বিষয়।’

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত