.png)
সাবান কি কেবল পরিষ্কার রাখার উপকরণ, নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ঔপনিবেশিক ক্ষমতার কোনো চিহ্ন?

রাতুল আল আহমেদ

ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। যদিও কথাটি পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কের গুরুত্ব হিসেবেই শেখানো হয়েছিল। তবে এমন ভাবনা এ অঞ্চলের অন্যান্য ধর্মগুলোর সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। ফলে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ঐতিহাসিকভাবেই সচেতন একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
তবুও হাত ধোয়ার অভ্যাসকে উৎসাহিত ও প্রচার করার উদ্দেশ্যে পত্রিকা-টেলিভিশনে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেখা যায়, হাতধোয়া দিবসও পালিত হয়। সবখানেই হাত ধোয়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে প্রায় একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত হয় সাবান। কিন্তু কেন সাবান? যখন মাটি বা ছাইয়ের মতো প্রাকৃতিক বিকল্পগুলো বহু আগেই আধুনিক বিজ্ঞানে জীবাণুনাশক হিসেবে স্বীকৃত, তখন কেন কেবল সাবানই এত প্রচারিত? ফলে প্রশ্ন ওঠে, সাবান কি কেবল পরিষ্কার রাখার উপকরণ, নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ঔপনিবেশিক ক্ষমতার কোনো চিহ্ন?
আধুনিককালের সাবানের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, আরব রসায়নবিদেরা সাবান তৈরির প্রক্রিয়াটিকে নিখুঁত করে তুলেছিলেন। তারা জলপাই তেল ব্যবহার করে সাবান প্রস্তুত করতেন ও তাতে সুগন্ধও যোগ করতেন। ধারণা করা হয়, মধ্যযুগে ক্রুসেডাররা ইউরোপে এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে আসে এবং ফ্রান্সের মার্সেই ও ইতালির সাভোনা শহরে সাবান উৎপাদন শিল্প গড়ে ওঠে। যদিও এর আগেও ইউরোপীয়রা প্রাণীর চর্বি থেকে তৈরি সাবান ব্যবহার করত, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ছিল এবং এর গন্ধও ছিল কটূ।
১৮শ শতাব্দীর ইউরোপের শিল্পবিপ্লব সাবান উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একদিকে তৎকালীন উন্নত যন্ত্রপাতি ও কৌশল সাবানের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শ্রমজীবী মানুষের হাতে থাকা কাঁচা টাকার ফলে বিলাসদ্রব্য থেকে গৃহস্থালির অপরিহার্য জিনিসে রূপান্তরিত হয় সাবান। এর মধ্যে ১৮০৭ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ অ্যান্ড্রু পিয়ার্স নিজের নামে স্বচ্ছ গ্লিসারিন সাবান বিক্রি শুরু করেন। আধুনিক বিপণন ও ব্র্যান্ডিংয়ের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয় পিয়ার্স সাবান।
ঠিক একই সময়ে ইউরোপ শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন। ‘হোয়াইট ম্যান্স বার্ডেন’ বা সাদা মানুষের বোঝা’র ধারণাটি তখন প্রায়ই ব্যবহার করা হতো উপনিবেশকারীদের তথাকথিত ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত দায়িত্ব’ হিসেবে বাকি বিশ্বকে ‘সভ্য’ করার যুক্তি হিসেবে।
মজার বিষয় হলো, পিয়ার্স সাবান নিজেদের ব্র্যান্ড প্রচারে এই ধারণাটিকেই ব্যবহার করেছিল। তাদের দাবি ছিল, তারা বিশ্বের ‘অন্ধকার কোণগুলোকে উজ্জ্বল করার’ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো পিয়ার্স সাবানের একটি বিজ্ঞাপন, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য হোয়াইট ম্যান্স বার্ডেন’। এই প্রবচনের উৎস মূলত রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত একটি কবিতা থেকে নেওয়া, যেখানে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের ‘অ-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীকে সভ্য করার’ নৈতিক বাধ্যবাধকতা দেখানো হয়েছিল।

এই বিজ্ঞাপনে চিত্র ও লেখার মাধ্যমে উপনিবেশিক বার্তা দেওয়া হয় যে পশ্চিমা ‘সভ্যতা’ ও ‘পরিচ্ছন্নতা’ সমার্থক ধারণা। আর পরিচ্ছন্ন হতে হলে আপনাকে পশ্চিমা উপনিবেশের আশ্রয় নিতে হবে।
বিজ্ঞাপনের ছবিতে দেখা যায় এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক, সম্ভবত একজন ঔপনিবেশিক কর্মকর্তা পিয়ার্স সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। পরিবেশটি আধুনিক, শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক, যা কি না পশ্চিমা সভ্যতার সাথে সম্পৃক্ত। বিজ্ঞাপনের পেছনের ছবিতে থাকা জাহাজগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের বিস্তারের প্রতীক। আর ছবির ডানদিকের নিচে দেখা যায় এক শ্বেতাঙ্গ নারী এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষকে সাবান দিচ্ছেন, যেন বা পশ্চিমা পরিচ্ছন্নতা ও নৈতিকতার মাধ্যমে তাকে ‘উন্নত মানুষ’ করছেন।
সমস্যার কথা হলো তখন এ ধরনের বিজ্ঞাপন সমাজের মানসিকতা প্রতিফলনের সঙ্গে সঙ্গে তা গঠন করত। পরিচ্ছন্নতা, নৈতিকতা ও জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসের এই সম্পর্ক বিশ শতক জুড়ে টিকে ছিল। আর আজও বৈশ্বিক সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা শিল্পে এর ছাপ রয়ে গেছে, যেখানে ত্বক ফর্সাকারী পণ্য পশ্চিমা সৌন্দর্যের মানদণ্ডই প্রাধান্য পায়।
এই ‘পশ্চিমা সভ্যতার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার’ আহ্বান আজও বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য প্রচারণার পেছনে লুকিয়ে থাকে—যেখানে প্রথাগত জীবাণুনাশক পদ্ধতিগুলো উপেক্ষিত হয় এবং অ-পশ্চিমা বিশ্বকে দেখানো হয় ‘সভ্যতার পথে অগ্রসরমান’ হিসেবে।
এখন আসা যাক আধুনিক বিজ্ঞাপনে। এখানে বলা যেতে পারে একটি বহুজাতিক কোম্পানির উৎপাদিত হ্যান্ডওয়াশ ক্যাম্পেইনের কথা। মূলত হিন্দিতে নির্মিত এই বিজ্ঞাপন পরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করা হয়, যার মধ্যে বাংলাও আছে।
বিজ্ঞাপনে দেখা যায় এক কিশোরকে। তার বন্ধু জিজ্ঞেস করে, ‘তার সাবান কি স্লো?’ বন্ধুটি গর্ব করে বলে, তার সাবান এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র ১০ সেকেন্ডেই সব ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। বান্টিকে বলতে দেখা যায়, তার মা বলেন হাত পরিষ্কার করতে কমপক্ষে এক মিনিট সময় লাগে। বন্ধুটি তখন তাকে ঠাট্টা করে বলে সে পুরোনো ধ্যানধারণায় আটকে আছে। আর পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন উপাদানের সঙ্গে, যেটা নাকি নতুন, স্মার্ট ও আধুনিকদের প্রিয়।
যেভাবে পিয়ার্স সাবান একসময় পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ‘পশ্চিমা আলোকপ্রাপ্তি’ বিক্রি করত, জনপ্রিয় এই বহুজাতিক কোম্পানিটি আজ সেই একই বয়ান বিক্রি করছে ‘বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি’র নামে। তফাৎ, এবার রাসায়নিক উপাদানের আবরণে।
যদিও বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা দেখিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পরিচ্ছন্নতার পদ্ধতি যেমন মাটি বা ছাই দিয়ে হাত ধোয়া ৯৯.৯% পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম। তবুও বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো এমন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভোক্তার বিশ্বাস অর্জন করে, জনমানসে ধারণা বদলে দেয়, এবং ধীরে ধীরে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলে।
পরিচ্ছন্নতা নিঃসন্দেহে জীবন বাঁচায়, আর সাবান এই যুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক। কিন্তু এর বৈশ্বিক প্রভাব কেবল বিজ্ঞান বা স্বাস্থ্যচর্চার ফল নয়। বরং এটি ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ আর প্রযুক্তি ও মূল্যবোধের শ্রেণিবিন্যাসের প্রতিফলন। পরিচ্ছন্নতাকে অস্বীকার না করে তার রাজনীতিও বোঝা জরুরি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রশ্ন করা–আমরা ঠিক কার ধারণার পরিচ্ছন্নতাকে রক্ষা করছি, আর তার মূল্য দিচ্ছি কতটা?

ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। যদিও কথাটি পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কের গুরুত্ব হিসেবেই শেখানো হয়েছিল। তবে এমন ভাবনা এ অঞ্চলের অন্যান্য ধর্মগুলোর সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। ফলে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ঐতিহাসিকভাবেই সচেতন একটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
তবুও হাত ধোয়ার অভ্যাসকে উৎসাহিত ও প্রচার করার উদ্দেশ্যে পত্রিকা-টেলিভিশনে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেখা যায়, হাতধোয়া দিবসও পালিত হয়। সবখানেই হাত ধোয়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে প্রায় একচেটিয়াভাবে ব্যবহৃত হয় সাবান। কিন্তু কেন সাবান? যখন মাটি বা ছাইয়ের মতো প্রাকৃতিক বিকল্পগুলো বহু আগেই আধুনিক বিজ্ঞানে জীবাণুনাশক হিসেবে স্বীকৃত, তখন কেন কেবল সাবানই এত প্রচারিত? ফলে প্রশ্ন ওঠে, সাবান কি কেবল পরিষ্কার রাখার উপকরণ, নাকি এর ভেতরে লুকিয়ে আছে ঔপনিবেশিক ক্ষমতার কোনো চিহ্ন?
আধুনিককালের সাবানের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, আরব রসায়নবিদেরা সাবান তৈরির প্রক্রিয়াটিকে নিখুঁত করে তুলেছিলেন। তারা জলপাই তেল ব্যবহার করে সাবান প্রস্তুত করতেন ও তাতে সুগন্ধও যোগ করতেন। ধারণা করা হয়, মধ্যযুগে ক্রুসেডাররা ইউরোপে এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে আসে এবং ফ্রান্সের মার্সেই ও ইতালির সাভোনা শহরে সাবান উৎপাদন শিল্প গড়ে ওঠে। যদিও এর আগেও ইউরোপীয়রা প্রাণীর চর্বি থেকে তৈরি সাবান ব্যবহার করত, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ছিল এবং এর গন্ধও ছিল কটূ।
১৮শ শতাব্দীর ইউরোপের শিল্পবিপ্লব সাবান উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দেয়। একদিকে তৎকালীন উন্নত যন্ত্রপাতি ও কৌশল সাবানের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেয়, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শ্রমজীবী মানুষের হাতে থাকা কাঁচা টাকার ফলে বিলাসদ্রব্য থেকে গৃহস্থালির অপরিহার্য জিনিসে রূপান্তরিত হয় সাবান। এর মধ্যে ১৮০৭ সালে ইংরেজ রসায়নবিদ অ্যান্ড্রু পিয়ার্স নিজের নামে স্বচ্ছ গ্লিসারিন সাবান বিক্রি শুরু করেন। আধুনিক বিপণন ও ব্র্যান্ডিংয়ের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয় পিয়ার্স সাবান।
ঠিক একই সময়ে ইউরোপ শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন। ‘হোয়াইট ম্যান্স বার্ডেন’ বা সাদা মানুষের বোঝা’র ধারণাটি তখন প্রায়ই ব্যবহার করা হতো উপনিবেশকারীদের তথাকথিত ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত দায়িত্ব’ হিসেবে বাকি বিশ্বকে ‘সভ্য’ করার যুক্তি হিসেবে।
মজার বিষয় হলো, পিয়ার্স সাবান নিজেদের ব্র্যান্ড প্রচারে এই ধারণাটিকেই ব্যবহার করেছিল। তাদের দাবি ছিল, তারা বিশ্বের ‘অন্ধকার কোণগুলোকে উজ্জ্বল করার’ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো পিয়ার্স সাবানের একটি বিজ্ঞাপন, যার শিরোনাম ছিল ‘দ্য হোয়াইট ম্যান্স বার্ডেন’। এই প্রবচনের উৎস মূলত রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত একটি কবিতা থেকে নেওয়া, যেখানে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের ‘অ-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীকে সভ্য করার’ নৈতিক বাধ্যবাধকতা দেখানো হয়েছিল।

এই বিজ্ঞাপনে চিত্র ও লেখার মাধ্যমে উপনিবেশিক বার্তা দেওয়া হয় যে পশ্চিমা ‘সভ্যতা’ ও ‘পরিচ্ছন্নতা’ সমার্থক ধারণা। আর পরিচ্ছন্ন হতে হলে আপনাকে পশ্চিমা উপনিবেশের আশ্রয় নিতে হবে।
বিজ্ঞাপনের ছবিতে দেখা যায় এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক, সম্ভবত একজন ঔপনিবেশিক কর্মকর্তা পিয়ার্স সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন। পরিবেশটি আধুনিক, শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতীক, যা কি না পশ্চিমা সভ্যতার সাথে সম্পৃক্ত। বিজ্ঞাপনের পেছনের ছবিতে থাকা জাহাজগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের বিস্তারের প্রতীক। আর ছবির ডানদিকের নিচে দেখা যায় এক শ্বেতাঙ্গ নারী এক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষকে সাবান দিচ্ছেন, যেন বা পশ্চিমা পরিচ্ছন্নতা ও নৈতিকতার মাধ্যমে তাকে ‘উন্নত মানুষ’ করছেন।
সমস্যার কথা হলো তখন এ ধরনের বিজ্ঞাপন সমাজের মানসিকতা প্রতিফলনের সঙ্গে সঙ্গে তা গঠন করত। পরিচ্ছন্নতা, নৈতিকতা ও জাতিগত শ্রেণিবিন্যাসের এই সম্পর্ক বিশ শতক জুড়ে টিকে ছিল। আর আজও বৈশ্বিক সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা শিল্পে এর ছাপ রয়ে গেছে, যেখানে ত্বক ফর্সাকারী পণ্য পশ্চিমা সৌন্দর্যের মানদণ্ডই প্রাধান্য পায়।
এই ‘পশ্চিমা সভ্যতার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার’ আহ্বান আজও বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য প্রচারণার পেছনে লুকিয়ে থাকে—যেখানে প্রথাগত জীবাণুনাশক পদ্ধতিগুলো উপেক্ষিত হয় এবং অ-পশ্চিমা বিশ্বকে দেখানো হয় ‘সভ্যতার পথে অগ্রসরমান’ হিসেবে।
এখন আসা যাক আধুনিক বিজ্ঞাপনে। এখানে বলা যেতে পারে একটি বহুজাতিক কোম্পানির উৎপাদিত হ্যান্ডওয়াশ ক্যাম্পেইনের কথা। মূলত হিন্দিতে নির্মিত এই বিজ্ঞাপন পরে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করা হয়, যার মধ্যে বাংলাও আছে।
বিজ্ঞাপনে দেখা যায় এক কিশোরকে। তার বন্ধু জিজ্ঞেস করে, ‘তার সাবান কি স্লো?’ বন্ধুটি গর্ব করে বলে, তার সাবান এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র ১০ সেকেন্ডেই সব ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। বান্টিকে বলতে দেখা যায়, তার মা বলেন হাত পরিষ্কার করতে কমপক্ষে এক মিনিট সময় লাগে। বন্ধুটি তখন তাকে ঠাট্টা করে বলে সে পুরোনো ধ্যানধারণায় আটকে আছে। আর পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন উপাদানের সঙ্গে, যেটা নাকি নতুন, স্মার্ট ও আধুনিকদের প্রিয়।
যেভাবে পিয়ার্স সাবান একসময় পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ‘পশ্চিমা আলোকপ্রাপ্তি’ বিক্রি করত, জনপ্রিয় এই বহুজাতিক কোম্পানিটি আজ সেই একই বয়ান বিক্রি করছে ‘বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি’র নামে। তফাৎ, এবার রাসায়নিক উপাদানের আবরণে।
যদিও বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা দেখিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পরিচ্ছন্নতার পদ্ধতি যেমন মাটি বা ছাই দিয়ে হাত ধোয়া ৯৯.৯% পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম। তবুও বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো এমন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভোক্তার বিশ্বাস অর্জন করে, জনমানসে ধারণা বদলে দেয়, এবং ধীরে ধীরে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলে।
পরিচ্ছন্নতা নিঃসন্দেহে জীবন বাঁচায়, আর সাবান এই যুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক। কিন্তু এর বৈশ্বিক প্রভাব কেবল বিজ্ঞান বা স্বাস্থ্যচর্চার ফল নয়। বরং এটি ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ আর প্রযুক্তি ও মূল্যবোধের শ্রেণিবিন্যাসের প্রতিফলন। পরিচ্ছন্নতাকে অস্বীকার না করে তার রাজনীতিও বোঝা জরুরি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রশ্ন করা–আমরা ঠিক কার ধারণার পরিচ্ছন্নতাকে রক্ষা করছি, আর তার মূল্য দিচ্ছি কতটা?
.png)

ভয় পেতে কারও কি ভালো লাগে? কিন্তু হরর সিনেমার ক্ষেত্রে যেন সব হিসাব পাল্টে যায়। ভয় পাই, চমকে উঠি, তবু দেখতেই থাকি। আর সিনেমা শেষ না করে উঠতে পারি না। প্রশ্ন জাগে, ভয় পেলেও কেন আমরা হরর সিনেমা দেখি? কেন হরর সিনেমা আমাদের এত টানে?
১ দিন আগে
গতকাল মঙ্গলবার চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস নামে নতুন ব্রাউজার উন্মুক্ত করেছে এআই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই।
২ দিন আগে
সমুদ্রের নিচে লুকিয়ে আছে অসংখ্য রহস্য, অসংখ্য বিস্ময়। আর সেই বিস্ময়ের ভেতরেও এমন প্রাণী আছে, যারা প্রকৃতির নিয়মকানুনই উল্টে দিয়েছে।
২ দিন আগে
আজ কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুদিন। তাঁর অগণিত কবিতায় অজস্রবার ব্যবহৃত আকাশ নক্ষত্র নিহারীকা উল্কা ইত্যদি শব্দকল্প পড়তে পড়তে আপনার মনে কী গোপনে এই ভাবনার উদয় হয়না যে, তিনি খানিকটা সৌরজগৎপ্রেমীও ছিলেন?
২ দিন আগে