যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) কারণে আকাশপথে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দরে ১ হাজার ৪০০-এরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার জানায়, এদিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিলম্বিত ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল ৭ হাজারেরও বেশি।
ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন (এফএএ) সপ্তাহের শুরুতে জানায়, আকাশপথে উড্ডয়ন সক্ষমতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। দেশটির ৪০টি ব্যস্ততম বিমানবন্দরে এই কাটছাঁট কার্যকর হচ্ছে। কারণ, শাটডাউনের মধ্যে বেতন না পেয়ে কাজ করা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে।
অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল গত ১ অক্টোবর। শনিবার ৩৯তম দিনে গড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম এই সরকারি শাটডাউন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তহবিল আবারও অনুমোদন নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি।
সপ্তাহান্তেও সিনেটররা ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন দ্বিদলীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে। খাদ্য সহায়তা ও বিমান চলাচলে প্রভাব পড়তে শুরু করায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্স ওয়াশিংটনের নেতাদের উদ্দেশে দ্রুত সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানায়।
ফ্লাইটে সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হচ্ছে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে। শনিবার বিকেলের তথ্য অনুযায়ী, ওই বিমানবন্দরে আগমনী ফ্লাইটের গড় বিলম্ব ছিল চার ঘণ্টার বেশি এবং প্রস্থানকারী ফ্লাইটের বিলম্ব প্রায় দেড় ঘণ্টা।
শনিবার ফ্লাইট বাতিলের তালিকায় শীর্ষে ছিল শার্লট বা ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল ও শিকাগো ও’হেয়ার ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর।
জেএফকে ইন্টারন্যাশনাল, আটলান্টার হার্টসফিল্ড–জ্যাকসন ও লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকেও যথাক্রমে তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা বিলম্বে ফ্লাইট ছাড়ে।
এফএএ বলেছে, থ্যাংকসগিভিং ছুটি (২৭ নভেম্বর) ঘনিয়ে আসায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুম। এ কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। অবস্থা চলমান থাকলে ফ্লাইট বাতিলের হারও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, শুক্রবার ৪ শতাংশ ফ্লাইট কমানো হয়েছে; ১১ নভেম্বর তা হবে ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা জরুরি কর্মী হওয়ায় তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে বেতন ছাড়া। অনেকে ক্লান্ত হয়ে অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা জীবনযাত্রার খরচ জোগাতে অন্য কাজ করছেন।
শুধু বাণিজ্যিক বিমান চলাচল নয়, ব্যক্তিগত জেট উড়ানেও সীমাবদ্ধতা আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন সচিব ডাফি এক্স–এ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বেসরকারি বিমানের সংখ্যা ব্যস্ত বিমানবন্দরে কমানো হয়েছে। তারা এখন ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করছে, যাতে বাণিজ্যিক উড্ডয়নে নিয়োজিত কন্ট্রোলাররা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেন।’
‘এটাই ন্যায্য’, বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
এফএএ জানিয়েছে, নিরাপত্তা বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ। বর্তমানে ১৪ লাখের বেশি ফেডারেল কর্মচারীর কেউ বিনা বেতনে কাজ করছেন, কেউ জোরপূর্বক ছুটিতে আছেন।
এদিকে পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থা (টিএসএ)-এর ৬৪ হাজার কর্মীও বেতন পাচ্ছেন না। আগের শাটডাউনে (২০১৮ সালে) দেখা গিয়েছিল, ১০ শতাংশ পর্যন্ত টিএসএ কর্মী বিনা বেতনে কাজ না করে বাসায় থেকে গিয়েছিলেন।