এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন হাঙ্গেরির কথাসাহিত্যিক লাজলো ক্রাসনাহোরকাই। ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক হারি কুঞ্জরু ই-মেলের মাধ্যমে নিয়েছিলেন তাঁর এই সাক্ষাৎকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘দ্য ইয়েল রিভিউ’-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটিতে লাজলো ক্রাসনাহোরকাই কথা বলেছেন বিচিত্র প্রসঙ্গে। কথায় কথায় এখানে যেমন এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বর্তমান দুনিয়ার ডিজিটাল স্পেস নিয়ে লেখকের ব্যাখ্যা, তেমনি তিনি মুখ খুলেছেন নিজের লেখালেখি নিয়েও। কথোপকথনের সঙ্গে এই লেখক সম্পর্কে রয়েছে হারি কুঞ্জরুর মূল্যায়নও। অনুবাদ করেছেন ওয়াহিদ কায়সার
স্ট্রিম ডেস্ক
হারি কুঞ্জরু: আপনার গল্প ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’ ইউক্রেনের ওপর ভিত্তি করে লেখা। আপনার কাছে ইউক্রেনের যুদ্ধের অর্থ কী? একজন ইউরোপীয়, একজন হাঙ্গেরীয়, দীর্ঘদিন ধরে জার্মানিতে বসবাসকারী হিসেবে এই সংঘাত সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, এটা নিয়ে আমার কি ভাবনা? বিষয়টি আমাকে আতংকিত করে। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরি। এখানে অরবান (হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান) রেজিম এক অভূতপূর্ব অবস্থান নিচ্ছে, যা হাঙ্গেরির ইতিহাসে আর কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়। এর আংশিক কারণ হলো, এখন পর্যন্ত সবসময় আমরাই আক্রমণের শিকার হচ্ছি আর হেরে যাচ্ছি; এবং আংশিক কারণ, আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে হাঙ্গেরির রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে তথাকথিত নিরপেক্ষতার কথা বলবেন!
রাশিয়ানরা যখন প্রতিবেশী দেশ আক্রমণ করে, তখন কীভাবে একটা দেশ নিরপেক্ষ থাকতে পারে? আর তারা কি প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়দের হত্যা করে চলছে না? ‘এটা স্লাভিকদের একটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান?—যেমনটা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন? যখন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তখন এটা কীভাবে একটা অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে? এটা এমন একটা দেশের নেতা বলছেন, ইতিহাসজুড়ে যাদের ওপর ক্রমাগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে খুঁজলে দেখা যায়, রাশিয়ানরাই আসলে আক্রমণ করেছে; এবং এখনকার এই রাশিয়ানরা আগের সেই রাশিয়ানই।
এখনকার এই হাঙ্গেরীয় শাসনব্যবস্থা একটা মানসিক রোগের মতো ব্যাপার। এর পেছনে প্রচুর হিসাব করা হয়েছে: হয়তো তারা ইতিমধ্যেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু আমি এটা মেনে নেব যাতে তারা আমার মাকে আর ক্ষতি না করে। কিন্তু তারা তার ক্ষতি করবে। ওরা দুজনকেই মেরে ফেলবে। এই ব্যাপার বোঝা কি এত কঠিন?
এখনকার এই হাঙ্গেরীয় শাসনব্যবস্থা একটা মানসিক রোগের মতো ব্যাপার। এর পেছনে প্রচুর হিসাব করা হয়েছে: হয়তো তারা ইতিমধ্যেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু আমি এটা মেনে নেব যাতে তারা আমার মাকে আর ক্ষতি না করে। কিন্তু তারা তার ক্ষতি করবে। ওরা দুজনকেই মেরে ফেলবে। এই ব্যাপার বোঝা কি এত কঠিন?
~লাজলো ক্রাসনাহোরকা
হারি কুঞ্জরু: ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’ নাটকের কাহিনিতে দুজন মৃতপ্রায় মানুষের দেখা মেলে, যাদের একজন অন্যজনকে বিশ্বায়নের বিস্ময় সম্পর্কে এক ধরনের রূপকথার গল্প বলে। সেই রূপকথার গল্প এবং দুই মৃতপ্রায় মানুষের বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য খুবই স্পষ্ট। এটা দ্রুতগামী দুনিয়া সম্পর্কে এই গল্পের আশাবাদী প্রযুক্তির সুরকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে হয়। আপনি কেন এই দুটো উপাদানকে পাশাপাশি রাখতে চেয়েছেন, এ সম্পর্কে আরও কিছু বলবেন?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: আমি নিজের চোখের সামনে একটা নোংরা, পচে ওঠা যুদ্ধ দেখতে পাই শুধু। এর সঙ্গে বিশ্ব অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে। আমি এতে অভ্যস্ত হতে পারছি না। একজন মানুষ যে অন্য আরেকজনকে হত্যা করছে, তা আমি মেনে নিতে পারছি না। হয়তো আমি একজন মানসিক রোগী। ডিজিটাল স্পেসে ভবিষ্যতের একটা দৃষ্টিভঙ্গির সময় এসব ঘটছে, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যে প্রযুক্তির ভয়াবহ রকমের দ্রুত অগ্রগতির মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর নতুন দুনিয়া আসবে। এটা পুরোপুরি একটা উন্মাদনা। যখন দেখা যাচ্ছে, মৌলিকতার দিক দিয়ে একটা বিংশ শতাব্দীয় যুদ্ধ চলছে, তখন কেউ একজন জানাচ্ছেন, আমরা খুব তাড়াতাড়ি মঙ্গল গ্রহে কীভাবে যাব। আমি আশা করি, পুতিন এবং তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীলরা এর প্রথম যাত্রী হবেন।
হারি কুঞ্জরু: আপনার লেখার বর্ণনাকারী জোর দিয়ে বলে যে ‘সে ভবিষ্যতের বিশ্লেষক ছিল না। তার চেয়ে বরং প্রবণতা আর তথ্যের বিশ্লেষক ছিল।’ সে ‘মহাজাগতিক’ স্তর ও ব্যক্তিগত ‘মনস্তাত্ত্বিক স্তর’ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। সামাজিক স্তর সে পছন্দ করে। ‘ভবিষ্যতের’ জ্ঞান কি এ ধরনের অভিজ্ঞতামূলক এবং ‘তথ্যের ওপর ভর করা’ জ্ঞানের চেয়ে বেশি আধ্যাত্মিক বা মেটাফিজিক্যাল কিছু?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: এটা বেশ অস্বস্তিকর প্রশ্ন। তার ওপর এই লেখায় ঘটনাগুলো সাধারণ কোনো প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত হয় না। এর চেয়ে বরং একজন আহত মানুষ মারাত্মকভাবে আহত অন্য আরেকজনকে একটা খাদে জীবিত রাখার চেষ্টা করছে। সে তার সঙ্গে আশার কথা বলে, একটা সুন্দর নতুন পৃথিবী সম্পর্কে বলে, যেখানে সবকিছু আলাদা হবে, সবকিছু যেখানে হবে দুর্দান্ত। এটা হলো সেই মৌলিক মানবিক প্রবৃত্তি তাকে আরেকটা মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ায়। তাদের অন্য কোনো আশা নেই। এমনকি যে ডিজিটাল ভবিষ্যতের গল্প বলছে, সে নিজেও জানে, সে শুধু সময়ের জন্য থেমে আছে, আশা করছে যে তাদের সহকর্মীরা তাদের জন্য ফিরে আসবে—যদিও সে অন্যজনের মতো জানে যে তাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা অসম্ভব। তাই এই বক্তৃতার কোনো আধ্যাত্মিক বা মেটাফিজিক্যাল মাত্রা নেই; আসলে এটা গভীরভাবে বাস্তবসম্মত: নিরর্থক আশার পরামর্শ দিয়ে নিজের চেয়ে আরও গুরুতর আহত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
আমরা অতীত সম্পর্কে কিছুই জানি না। কারণ, আমরা যাকে অতীত বলে মনে করি তা কেবল অতীতের গল্প। বাস্তবে, বর্তমানও কেবল একটা গল্প। এতে অতীত আর ভবিষ্যতের গল্প রয়েছে, যা কখনো আসবে না। তবে বর্তমান আছে বলে আমাদের এখন অস্তিত্ব আছে। আর শুধু সেটাই আছে। নরক ও স্বর্গ—দুটোই পৃথিবীতে আছে। আর তারা এখন এখানেই আছে। তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। তবুও আমরা আশার আলোয় নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে যাই।
~লাজলো ক্রাসনাহোরকা
হারি কুঞ্জরু: একটা নৃশংস ট্রেঞ্চ ওয়্যারের মুখোমুখি—এই দৃশ্যপট আপনার লেখায় কিছুটা পরিচিত। আমি জানি সনটাগ (সুজান সনটাগ) আপনাকে ‘মহাপ্রলয়ের মাস্টার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আপনার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে। কিন্তু আপনার লেখা যদি মহাপ্রলয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে হয়, তাহলে এটা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বলে মনে হয় না; বরং ধীরগতির ও ক্ষয়িষ্ণু কিছু বলে মনে হয়। ভবিষ্যতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী? এটাই কি শেষ সময়? নাকি আমরা কোন ধরণের মহাপ্রলয়ের পরে বাস করছি?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: মহাপ্রলয়ের একক কোনো ঘটনা না, যেমনটা নিউ টেস্টামেন্টের শেষ বিচারের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা জানি। এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যা অনেক দিন ধরে চলছে; এবং অনেক দিন ধরে চলবে। মহাপ্রলয় এই মুহূর্তেও চলছে। মহাপ্রলয় একটা চলমান বিচার।
আমরা শুধু ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে নিজেদের বিভ্রান্ত করতে পারি; আশা সব সময় ভবিষ্যতের। আর ভবিষ্যৎ কখনো আসে না। সব সময়ই মনে হয়, এটা চলে আসছে। শুধু এখন যা আছে তা থেকে যায়।
আমরা অতীত সম্পর্কে কিছুই জানি না। কারণ, আমরা যাকে অতীত বলে মনে করি তা কেবল অতীতের গল্প। বাস্তবে, বর্তমানও কেবল একটা গল্প। এতে অতীত আর ভবিষ্যতের গল্প রয়েছে, যা কখনো আসবে না। তবে বর্তমান আছে বলে আমাদের এখন অস্তিত্ব আছে। আর শুধু সেটাই আছে। নরক ও স্বর্গ—দুটোই পৃথিবীতে আছে। আর তারা এখন এখানেই আছে। তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। তবুও আমরা আশার আলোয় নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে যাই।
হারি কুঞ্জরু: আপনি অনেক কিছু লিখেছেন, বিশেষ করে শিল্প নিয়ে লেখা সেইবো দেয়ার বিলো-তে। ভবিষ্যতকে কল্পনা করা, অস্তিত্বে আনার ক্ষেত্রে শিল্পের ভূমিকা কী? শিল্পে কি উদ্ধার করা অথবা বা মুক্তি দেওয়ার মতো কিছু আছে?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: ভাগ্য নামের হারিয়ে ফেলার অনুভূতির বিরুদ্ধে শিল্প হচ্ছে মানবজাতির অসাধারণ জবাব। সৌন্দর্যের অস্তিত্ব আছে। এটা একটা সীমানার বাইরে, যেখানে আমাদের ক্রমাগত থামতে হয়; আমরা সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে বা স্পর্শ করতে পারি না, আমরা শুধু এই সীমানা থেকে এর দিকে তাকাতে পারি এবং স্বীকার করতে পারি যে হ্যাঁ, একটু সামনে সত্যিই কিছু আছে। সৌন্দর্য একটা নির্মাণ। এটা আশা ও উচ্চতর শৃঙ্খলার একটা জটিল সৃষ্টি।
হারি কুঞ্জরু: আমরা আগেও কথা বলেছি যে গল্পের চরিত্রগুলো কীভাবে লেখকদের মাধ্যমে পৃথিবীতে উপস্থিত হয়ে অস্তিত্ব লাভ করে। ‘দ্য প্যারিস রিভিউ’-এর এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, ‘তথাকথিত চিরায়ত ফিকশন’-এর প্রতিটা চরিত্র সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে এসেছে। এটা একটা গোপন প্রক্রিয়া, তবে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে এটা সত্য।’ বিষয়টি কি আপনি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: শুধু সাধারণ মানুষেরই অস্তিত্ব আছে; এবং তারা পবিত্র।
‘শেষবার লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় তিনি আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন। কথা বলতে গিয়ে সত্যি বলতে, তিনি নিজের একক গদ্যশৈলী সম্পর্কে একটা রেটোরিক্যাল বক্তব্য তুলে ধরছিলেন। আমরা একটা আর্ট গ্যালারিতে দর্শকদের সামনে কথা বললেও সেটা ভালো লেগেছিল। ক্রাসনাহোরকাই অসাধারণ এক কথাসাহিত্যিক, এ কারণে তিনি হাঙ্গেরির অন্যতম বিশিষ্ট লেখক আর নোবেল পুরস্কারের জন্য একজন চিরকালীন প্রার্থী হয়ে উঠেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা তারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর প্রাথমিক কাজগুলো অস্তিত্বগত হিমশীতল পরিবেশকে বিশ্বজুড়ে সিনেমা-দর্শকদের সামনে নিয়ে এসেছে। তাঁর লেখায় দেখা মেলে একক অবিচ্ছিন্ন বাক্যের, যার ভেতর আবার প্রায় এক ধরনের নমনীয়তা থাকে। একই সঙ্গে থাকে গোলকধাঁধার মতো দার্শনিক চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে লৌকিক হাস্যরসও। লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মতে, প্রেমের মতো অভিজ্ঞতা—বিশেষত যে প্রেম প্রকাশ করতে সময় ও সাহস লাগে—তা ছোট ছোট বাক্যাংশে ধারণ করা যায় না। এর আগে লাজলো ক্রাসনাহোরকাই বলেছিলেন, ফুল স্টপের মালিক আসলে ঈশ্বর; এবং তাঁর লেখার প্রবাহে গভীর মানবতাবাদ রয়েছে। এটা আগের সেই আধুনিকতাবাদী ‘স্ট্রিম অব কনশাসনেস’-এর ভেতর থাকা খণ্ডিত আবরণ নয়; বরং দুনিয়ার ব্যাপারে এক ধরনের সর্বব্যাপী কৌতূহল, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় তার স্রোতের মধ্যে।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য কোথাও যেতে না পারার সময় দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শুরু চিহ্নিত করা যায় (গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করেছিল); এবং তাঁর উপন্যাস, যেমন সেইটানটাঙ্গো ও দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স-এ প্রায় অসহনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায়। আয়রন কার্টেনের পতনের পর তিনি সেওবো দেয়ার বিলো-এর মতো রচনায় এমন একটা হালকা ভাব খুঁজে পেয়েছিলেন, যা এশিয়ান শিল্প ও দর্শনের, বিশেষত বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস হার্শট ০৭৭৬৯-এ য়োহান সেবাস্তিয়ান বাখকে জার্মান নব্য-নাৎসিবাদের বিপরীতমুখী বলে দেখান হয়েছে। ‘দ্য ইয়েল রিভিউ’-এ প্রকাশ করা তাঁর গল্প ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’-এ দেখা যায় ইউক্রেনের যুদ্ধের কাদামাখা ট্রেঞ্চ ওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত বিশ্বায়নের কল্পিত প্রতিশ্রুতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার সপ্তাহে আমি ইমেইলের মাধ্যমে কথা বলেছিলাম ক্রাসনাহোরকাইয়ের সঙ্গে। আমাদের কথোপকথন দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতার জন্য কথাবার্তাগুলো খানিকটা সম্পাদনা করা হয়েছে।’
—হারি কুঞ্জরু, গডস উইদাউট মেন-এর লেখক
হারি কুঞ্জরু: আপনার গল্প ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’ ইউক্রেনের ওপর ভিত্তি করে লেখা। আপনার কাছে ইউক্রেনের যুদ্ধের অর্থ কী? একজন ইউরোপীয়, একজন হাঙ্গেরীয়, দীর্ঘদিন ধরে জার্মানিতে বসবাসকারী হিসেবে এই সংঘাত সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কী পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, এটা নিয়ে আমার কি ভাবনা? বিষয়টি আমাকে আতংকিত করে। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরি। এখানে অরবান (হাঙ্গেরির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান) রেজিম এক অভূতপূর্ব অবস্থান নিচ্ছে, যা হাঙ্গেরির ইতিহাসে আর কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়। এর আংশিক কারণ হলো, এখন পর্যন্ত সবসময় আমরাই আক্রমণের শিকার হচ্ছি আর হেরে যাচ্ছি; এবং আংশিক কারণ, আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে হাঙ্গেরির রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে তথাকথিত নিরপেক্ষতার কথা বলবেন!
রাশিয়ানরা যখন প্রতিবেশী দেশ আক্রমণ করে, তখন কীভাবে একটা দেশ নিরপেক্ষ থাকতে পারে? আর তারা কি প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়দের হত্যা করে চলছে না? ‘এটা স্লাভিকদের একটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার’ বলতে আপনি কী বোঝাতে চান?—যেমনটা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন? যখন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তখন এটা কীভাবে একটা অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে? এটা এমন একটা দেশের নেতা বলছেন, ইতিহাসজুড়ে যাদের ওপর ক্রমাগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে খুঁজলে দেখা যায়, রাশিয়ানরাই আসলে আক্রমণ করেছে; এবং এখনকার এই রাশিয়ানরা আগের সেই রাশিয়ানই।
এখনকার এই হাঙ্গেরীয় শাসনব্যবস্থা একটা মানসিক রোগের মতো ব্যাপার। এর পেছনে প্রচুর হিসাব করা হয়েছে: হয়তো তারা ইতিমধ্যেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু আমি এটা মেনে নেব যাতে তারা আমার মাকে আর ক্ষতি না করে। কিন্তু তারা তার ক্ষতি করবে। ওরা দুজনকেই মেরে ফেলবে। এই ব্যাপার বোঝা কি এত কঠিন?
এখনকার এই হাঙ্গেরীয় শাসনব্যবস্থা একটা মানসিক রোগের মতো ব্যাপার। এর পেছনে প্রচুর হিসাব করা হয়েছে: হয়তো তারা ইতিমধ্যেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু আমি এটা মেনে নেব যাতে তারা আমার মাকে আর ক্ষতি না করে। কিন্তু তারা তার ক্ষতি করবে। ওরা দুজনকেই মেরে ফেলবে। এই ব্যাপার বোঝা কি এত কঠিন?
~লাজলো ক্রাসনাহোরকা
হারি কুঞ্জরু: ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’ নাটকের কাহিনিতে দুজন মৃতপ্রায় মানুষের দেখা মেলে, যাদের একজন অন্যজনকে বিশ্বায়নের বিস্ময় সম্পর্কে এক ধরনের রূপকথার গল্প বলে। সেই রূপকথার গল্প এবং দুই মৃতপ্রায় মানুষের বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য খুবই স্পষ্ট। এটা দ্রুতগামী দুনিয়া সম্পর্কে এই গল্পের আশাবাদী প্রযুক্তির সুরকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে হয়। আপনি কেন এই দুটো উপাদানকে পাশাপাশি রাখতে চেয়েছেন, এ সম্পর্কে আরও কিছু বলবেন?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: আমি নিজের চোখের সামনে একটা নোংরা, পচে ওঠা যুদ্ধ দেখতে পাই শুধু। এর সঙ্গে বিশ্ব অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে। আমি এতে অভ্যস্ত হতে পারছি না। একজন মানুষ যে অন্য আরেকজনকে হত্যা করছে, তা আমি মেনে নিতে পারছি না। হয়তো আমি একজন মানসিক রোগী। ডিজিটাল স্পেসে ভবিষ্যতের একটা দৃষ্টিভঙ্গির সময় এসব ঘটছে, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যে প্রযুক্তির ভয়াবহ রকমের দ্রুত অগ্রগতির মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর নতুন দুনিয়া আসবে। এটা পুরোপুরি একটা উন্মাদনা। যখন দেখা যাচ্ছে, মৌলিকতার দিক দিয়ে একটা বিংশ শতাব্দীয় যুদ্ধ চলছে, তখন কেউ একজন জানাচ্ছেন, আমরা খুব তাড়াতাড়ি মঙ্গল গ্রহে কীভাবে যাব। আমি আশা করি, পুতিন এবং তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীলরা এর প্রথম যাত্রী হবেন।
হারি কুঞ্জরু: আপনার লেখার বর্ণনাকারী জোর দিয়ে বলে যে ‘সে ভবিষ্যতের বিশ্লেষক ছিল না। তার চেয়ে বরং প্রবণতা আর তথ্যের বিশ্লেষক ছিল।’ সে ‘মহাজাগতিক’ স্তর ও ব্যক্তিগত ‘মনস্তাত্ত্বিক স্তর’ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। সামাজিক স্তর সে পছন্দ করে। ‘ভবিষ্যতের’ জ্ঞান কি এ ধরনের অভিজ্ঞতামূলক এবং ‘তথ্যের ওপর ভর করা’ জ্ঞানের চেয়ে বেশি আধ্যাত্মিক বা মেটাফিজিক্যাল কিছু?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: এটা বেশ অস্বস্তিকর প্রশ্ন। তার ওপর এই লেখায় ঘটনাগুলো সাধারণ কোনো প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত হয় না। এর চেয়ে বরং একজন আহত মানুষ মারাত্মকভাবে আহত অন্য আরেকজনকে একটা খাদে জীবিত রাখার চেষ্টা করছে। সে তার সঙ্গে আশার কথা বলে, একটা সুন্দর নতুন পৃথিবী সম্পর্কে বলে, যেখানে সবকিছু আলাদা হবে, সবকিছু যেখানে হবে দুর্দান্ত। এটা হলো সেই মৌলিক মানবিক প্রবৃত্তি তাকে আরেকটা মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ায়। তাদের অন্য কোনো আশা নেই। এমনকি যে ডিজিটাল ভবিষ্যতের গল্প বলছে, সে নিজেও জানে, সে শুধু সময়ের জন্য থেমে আছে, আশা করছে যে তাদের সহকর্মীরা তাদের জন্য ফিরে আসবে—যদিও সে অন্যজনের মতো জানে যে তাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা অসম্ভব। তাই এই বক্তৃতার কোনো আধ্যাত্মিক বা মেটাফিজিক্যাল মাত্রা নেই; আসলে এটা গভীরভাবে বাস্তবসম্মত: নিরর্থক আশার পরামর্শ দিয়ে নিজের চেয়ে আরও গুরুতর আহত মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
আমরা অতীত সম্পর্কে কিছুই জানি না। কারণ, আমরা যাকে অতীত বলে মনে করি তা কেবল অতীতের গল্প। বাস্তবে, বর্তমানও কেবল একটা গল্প। এতে অতীত আর ভবিষ্যতের গল্প রয়েছে, যা কখনো আসবে না। তবে বর্তমান আছে বলে আমাদের এখন অস্তিত্ব আছে। আর শুধু সেটাই আছে। নরক ও স্বর্গ—দুটোই পৃথিবীতে আছে। আর তারা এখন এখানেই আছে। তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। তবুও আমরা আশার আলোয় নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে যাই।
~লাজলো ক্রাসনাহোরকা
হারি কুঞ্জরু: একটা নৃশংস ট্রেঞ্চ ওয়্যারের মুখোমুখি—এই দৃশ্যপট আপনার লেখায় কিছুটা পরিচিত। আমি জানি সনটাগ (সুজান সনটাগ) আপনাকে ‘মহাপ্রলয়ের মাস্টার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আপনার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে। কিন্তু আপনার লেখা যদি মহাপ্রলয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে হয়, তাহলে এটা হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা বলে মনে হয় না; বরং ধীরগতির ও ক্ষয়িষ্ণু কিছু বলে মনে হয়। ভবিষ্যতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী? এটাই কি শেষ সময়? নাকি আমরা কোন ধরণের মহাপ্রলয়ের পরে বাস করছি?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: মহাপ্রলয়ের একক কোনো ঘটনা না, যেমনটা নিউ টেস্টামেন্টের শেষ বিচারের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা জানি। এটা এমন একটা প্রক্রিয়া যা অনেক দিন ধরে চলছে; এবং অনেক দিন ধরে চলবে। মহাপ্রলয় এই মুহূর্তেও চলছে। মহাপ্রলয় একটা চলমান বিচার।
আমরা শুধু ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে নিজেদের বিভ্রান্ত করতে পারি; আশা সব সময় ভবিষ্যতের। আর ভবিষ্যৎ কখনো আসে না। সব সময়ই মনে হয়, এটা চলে আসছে। শুধু এখন যা আছে তা থেকে যায়।
আমরা অতীত সম্পর্কে কিছুই জানি না। কারণ, আমরা যাকে অতীত বলে মনে করি তা কেবল অতীতের গল্প। বাস্তবে, বর্তমানও কেবল একটা গল্প। এতে অতীত আর ভবিষ্যতের গল্প রয়েছে, যা কখনো আসবে না। তবে বর্তমান আছে বলে আমাদের এখন অস্তিত্ব আছে। আর শুধু সেটাই আছে। নরক ও স্বর্গ—দুটোই পৃথিবীতে আছে। আর তারা এখন এখানেই আছে। তাদের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। তবুও আমরা আশার আলোয় নিজেদের সান্ত্বনা দিয়ে যাই।
হারি কুঞ্জরু: আপনি অনেক কিছু লিখেছেন, বিশেষ করে শিল্প নিয়ে লেখা সেইবো দেয়ার বিলো-তে। ভবিষ্যতকে কল্পনা করা, অস্তিত্বে আনার ক্ষেত্রে শিল্পের ভূমিকা কী? শিল্পে কি উদ্ধার করা অথবা বা মুক্তি দেওয়ার মতো কিছু আছে?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: ভাগ্য নামের হারিয়ে ফেলার অনুভূতির বিরুদ্ধে শিল্প হচ্ছে মানবজাতির অসাধারণ জবাব। সৌন্দর্যের অস্তিত্ব আছে। এটা একটা সীমানার বাইরে, যেখানে আমাদের ক্রমাগত থামতে হয়; আমরা সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে বা স্পর্শ করতে পারি না, আমরা শুধু এই সীমানা থেকে এর দিকে তাকাতে পারি এবং স্বীকার করতে পারি যে হ্যাঁ, একটু সামনে সত্যিই কিছু আছে। সৌন্দর্য একটা নির্মাণ। এটা আশা ও উচ্চতর শৃঙ্খলার একটা জটিল সৃষ্টি।
হারি কুঞ্জরু: আমরা আগেও কথা বলেছি যে গল্পের চরিত্রগুলো কীভাবে লেখকদের মাধ্যমে পৃথিবীতে উপস্থিত হয়ে অস্তিত্ব লাভ করে। ‘দ্য প্যারিস রিভিউ’-এর এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন, ‘তথাকথিত চিরায়ত ফিকশন’-এর প্রতিটা চরিত্র সাধারণ মানুষের ভেতর থেকে এসেছে। এটা একটা গোপন প্রক্রিয়া, তবে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে এটা সত্য।’ বিষয়টি কি আপনি আরেকটু ব্যাখ্যা করবেন?
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই: শুধু সাধারণ মানুষেরই অস্তিত্ব আছে; এবং তারা পবিত্র।
‘শেষবার লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময় তিনি আমার প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন। কথা বলতে গিয়ে সত্যি বলতে, তিনি নিজের একক গদ্যশৈলী সম্পর্কে একটা রেটোরিক্যাল বক্তব্য তুলে ধরছিলেন। আমরা একটা আর্ট গ্যালারিতে দর্শকদের সামনে কথা বললেও সেটা ভালো লেগেছিল। ক্রাসনাহোরকাই অসাধারণ এক কথাসাহিত্যিক, এ কারণে তিনি হাঙ্গেরির অন্যতম বিশিষ্ট লেখক আর নোবেল পুরস্কারের জন্য একজন চিরকালীন প্রার্থী হয়ে উঠেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলা তারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর প্রাথমিক কাজগুলো অস্তিত্বগত হিমশীতল পরিবেশকে বিশ্বজুড়ে সিনেমা-দর্শকদের সামনে নিয়ে এসেছে। তাঁর লেখায় দেখা মেলে একক অবিচ্ছিন্ন বাক্যের, যার ভেতর আবার প্রায় এক ধরনের নমনীয়তা থাকে। একই সঙ্গে থাকে গোলকধাঁধার মতো দার্শনিক চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে লৌকিক হাস্যরসও। লাজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের মতে, প্রেমের মতো অভিজ্ঞতা—বিশেষত যে প্রেম প্রকাশ করতে সময় ও সাহস লাগে—তা ছোট ছোট বাক্যাংশে ধারণ করা যায় না। এর আগে লাজলো ক্রাসনাহোরকাই বলেছিলেন, ফুল স্টপের মালিক আসলে ঈশ্বর; এবং তাঁর লেখার প্রবাহে গভীর মানবতাবাদ রয়েছে। এটা আগের সেই আধুনিকতাবাদী ‘স্ট্রিম অব কনশাসনেস’-এর ভেতর থাকা খণ্ডিত আবরণ নয়; বরং দুনিয়ার ব্যাপারে এক ধরনের সর্বব্যাপী কৌতূহল, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় তার স্রোতের মধ্যে।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য কোথাও যেতে না পারার সময় দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শুরু চিহ্নিত করা যায় (গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করেছিল); এবং তাঁর উপন্যাস, যেমন সেইটানটাঙ্গো ও দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স-এ প্রায় অসহনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায়। আয়রন কার্টেনের পতনের পর তিনি সেওবো দেয়ার বিলো-এর মতো রচনায় এমন একটা হালকা ভাব খুঁজে পেয়েছিলেন, যা এশিয়ান শিল্প ও দর্শনের, বিশেষত বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাস হার্শট ০৭৭৬৯-এ য়োহান সেবাস্তিয়ান বাখকে জার্মান নব্য-নাৎসিবাদের বিপরীতমুখী বলে দেখান হয়েছে। ‘দ্য ইয়েল রিভিউ’-এ প্রকাশ করা তাঁর গল্প ‘অ্যান অ্যাঞ্জেল পাসড আবাভ আস’-এ দেখা যায় ইউক্রেনের যুদ্ধের কাদামাখা ট্রেঞ্চ ওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত বিশ্বায়নের কল্পিত প্রতিশ্রুতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার সপ্তাহে আমি ইমেইলের মাধ্যমে কথা বলেছিলাম ক্রাসনাহোরকাইয়ের সঙ্গে। আমাদের কথোপকথন দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতার জন্য কথাবার্তাগুলো খানিকটা সম্পাদনা করা হয়েছে।’
—হারি কুঞ্জরু, গডস উইদাউট মেন-এর লেখক
যা লিখলাম, যা ভাবছি, যা লিখতে চাই, তা আমার বড় নিজস্ব কথা। কারণ, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে নিয়ে আমার যে শোক, তা আমার একান্তই পারিবারিক, ব্যক্তিগত।
১ ঘণ্টা আগেআজ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের মৃত্যুদিন। বাংলার গ্রামীণ কৃষিজীবি সম্প্রদায়কে অন্যরূপে চিত্রিত করেছেন তিনি। কৃষককে এই রূপে চিত্রিত করার পেছনে কী ছিল তাঁর ভাবনা?
৮ ঘণ্টা আগেপৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের মৃত্যু তাঁদের অস্তিত্বকে মুছে দেয় না, বরং আরও জীবন্ত করে তোলে, আরও প্রেরণার উৎসে পরিণত করে। চে গুয়েভারা ঠিক তেমনই এক নাম।
১ দিন আগেগত কয়েক বছর ধরে হারুকি মুরাকামি কেন নোবেল পান না, তা নিয়ে সাহিত্যপাড়া থেকে সংবাদপত্রের অফিসে যে পরিমাণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা দিয়ে সাত খণ্ড রামায়ণ লেখা যাবে মনে হয়। এ এক আশ্চর্যেরও বিষয় বটে। বছরের পর বছর ধরে নোবেলের শর্ট লিস্টে থাকে এ লেখকের নাম। বাজিতেও অনেকের চেয়েও এগিয়ে থাকেন তিনি। কিন্তু পুরস্কার
১ দিন আগে