যদিও বর্তমানে নানা ধরনের পাবলিক পরিবহন আছে। তবে একসঙ্গে অনেকজন মিলে একই পরিবহনে যাতায়াত বোধহয় বাসেই সর্বপ্রথম করা হয়।
হুমায়ূন শফিক
আজকের ঢাকা, কলকাতা বা লন্ডনে বাস ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এক সময় একসঙ্গে এতজন নিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করবে, তা হয়তো কেউ চিন্তাও করে নি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই চিন্তাটা মানুষ করেছে। কে প্রথম ভাবল সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার কথা?
১৬৬২ সালে ফ্রান্সে প্রথম পাবলিক ‘বাস’ চালু হয়। ব্লেইজ পাসকালের (১৬২৩-১৬৬২) উদ্যোগে ঘোড়ায় টানা গাড়ির একটি ব্যবস্থা চালু করা হয় তখন। নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী প্যারিসের রাস্তায় চলত এই পরিবহন। তবে এই উদ্যোগটি খুব শিগগিরই আজকের পরিভাষায় ‘পণ্য ও বাজারের মধ্যে মেলবন্ধনের অভাব’ (পুওর প্রডাক্ট-মার্কেট ফিট) সমস্যায় পড়ে। এই সেবাটি ছিল শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। শুরুতে এদের কৌতূহল থাকা সত্ত্বেও এই সেবাটির নানা সমস্যার কারণে আগ্রহ দ্রুত কমে যায়। ফলে মাত্র দশ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৮২৬ সাল। প্রায় ১৫০ বছর পরে ‘অমনিবাস’ নামে একটি গণ-পরিবহন চালু হয়। এটি তিনটি ঘোড়ার সাহায্যে চালানো হতো। ৪২ জন যাত্রী নিয়ে চলতো অমনিবাস। এবারও ফ্রান্সই প্রথম এই নতুন ধারণাটি বাস্তবায়ন করে। আর সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, এবার সাধারণ মানুষ ও অভিজাত—উভয়েই এই গাড়িতে চড়তে পারতো। ১৮২৮ সালের মধ্যে ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্ক শহরেও অমবিবাস চালু করা হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য মার্কিন শহরেও ছড়িয়ে পড়ে।
তবে অমনিবাসে যাত্রা সহজ ছিল না। রাস্তা ছিল পাথরের। আসনে ছিল না কোনো গদি। ফলে দীর্ঘ যাত্রা ছিল ভীষণ অস্বস্থিকর। টিকেটের দামও ছিল চড়া। তবুও অমনিবাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এই সেবার মূল গ্রাহকে পরিণত হয়। তারা তখন ব্যক্তিগত কোচ কেনার মতো ধনী না হলেও শহরের হাঁটার কষ্ট থেকে রেহাই পেতে অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত ছিল। মধ্যবিত্তের হাত ধরেই অমনিবাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বাস শব্দটি কিন্তু অমনিবাস থেকেই এসেছে। এর উৎপত্তি নিয়ে আছে দুটি তত্ত্ব—একটি বলছে শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ অমনিবাস থেকে যার অর্থ ‘সবার জন্য’; অন্যটির মতে, এটি এসেছে প্যারিস বাস রুট ‘অমনেস’ থেকে।
১৮৭৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর অ্যান্ড্রু স্মিথ হ্যালিডি (১৮২৬-১৯০০) প্রথম কেবল কার চালু করেন। এতে আর পশুর প্রয়োজন ছিল না; কেবল লাইনের নিচে থাকা চলন্ত কেবল ধরা ক্ল্যাম্পের সাহায্যে গাড়ি চলতো।
তবে নিরাপদ ছিল না এই ব্যবস্থা। কেবল ছিঁড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল প্রচুর। তাই কিছুদিন পরই এই ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। আরও কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজন থেকেই যায়।
১৯ শতকের শেষ দিকে ট্রলি বাস—যাকে ট্রাম, ট্রলি বা বৈদ্যুতিক স্ট্রিটকারও বলা হয়। ঘোড়ার গাড়ির যুগের অবসান ঘটায় এই ট্রলি বাস। এগুলো বিদ্যুৎচালিত ও রেললাইনে চলত। বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই চালু করা সম্ভব হয়। যাত্রী বহনের খরচ কম ছিল এবং দূরত্বও বেশি অতিক্রম করা যেত।
এটি ছিল আমেরিকার অন্যতম যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এর ফলে শহরের বাইরেও বাসে করে যাওয়া সম্ভব হয়। কাজের জায়গায় যাতায়াতও সহজ হয়ে যায়। ট্রলি বাস বহু বছর চলেছে।
১৯৪০-এর দশকে ধীরে ধীরে মোটরচালিত বাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, যদিও প্রযুক্তির দোষে নয়। আজও কিছু শহরে যেমন সিয়াটল, বোস্টন ও ফিলাডেলফিয়াতে ও ইউরোপের অনেক শহরে ট্রলি বাস দেখা যায়।
১৮৯৫ সালে প্রথম মোটরচালিত বাস তৈরি করেন কার্ল বেন্জ (১৮৪৪-১৯২৯)। ১৯০৬ সালে ফ্রান্স আবারও অগ্রণী হয়ে প্রথম ছোট রুটে এই বাস চালু করে।
তবে প্রথম দিকের বাসগুলো যাত্রীদের জন্য তেমন আরামদায়ক ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সঙ্কট ও নতুন রেল বসানোর উচ্চ ব্যয় নতুন ধাঁচের যানবাহনের দিকে পরিচালিত করে।
১৯৫১ সালে মার্সিডিজ বেন্জ পেছনে ইঞ্জিন ও প্রশস্ত কাঠামোর বাস ডিজাইন করে। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রকারের বাস গঠিত হয়—শহরের ট্রানজিট বাস, উপশহরের বাস, আন্তঃনগর বাস, এবং স্কুল বাস। ক্লিভল্যান্ড ও পিটসবার্গের মতো শহরগুলি ব্যাপক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
যদিও তখন ব্যক্তিগত গাড়ির জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে জ্বালানির খরচ বাড়ার ফলে বাস ব্যবহারের হারও বৃদ্ধি পায়। বড় শহরগুলিতে পার্কিং সংকট ও যানজটের কারণে বাস আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আজ বাস হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিবহন ব্যবস্থা। ২০১০-এর দশকে বাস উৎপাদন ব্যবস্থা বৈশ্বিক হয়ে ওঠে— একই ডিজাইন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় এনে অধিকাংশ দেশই গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বহু শহর বাসের নির্গমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হস্তক্ষেপ করছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহর সম্পূর্ণরূপে ইলেকট্রিক বাসে রূপান্তর করতে অগ্রণী হচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তি টেকসই ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী। হাইব্রিড বাস, ফুয়েল সেল বাস ও বৈদ্যুতিক বাস এখন অনেক শহরে চালু হচ্ছে।
কলকাতায় বাসের ইতিহাস কম করে ১৯৩ বছরের। ১৮৩০ সালে বাংলায় প্রথম বাস চালু হয়। ব্যারাকপুর থেকে কলকাতার ধর্মতলার রুটে। তবে নামেই সেটি ছিল বাস। আসলে ছিল এক ধরনের ঘোড়াতে টানা গাড়ি। তিনটি ঘোড়ায় চালিত গাড়িতে ধর্মতলা থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। এটিই হয়তো ১৮২৬ সালের ফ্রান্সের আবিষ্কৃত ‘অমবিনাস’-এর অনুকরণেই করা।
কলকাতা শহরে প্রথম বাস চলে ১৯১৮ সালে। আবদুল এ শোভন নামে এক ব্যক্তি দুটি রুটে বাস চালিয়েছিলেন। রুট দুটি হলো—শিয়ালদা থেকে বেলেঘোটা ও খিদিরপুর থেকে মেটিয়াব্রুজ।
এর ঠিক চার বছর পর ১৯২২ সালে ওয়ালফোর্ড অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি বাস চালাতে শুরু করে ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি বা সিটিসি। তখন থেকেই কলকাতায় পুরোদমে বাস পরিষেবা চালু হয়।
১৯৪০ সালে ওয়ালফোর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিগত সমস্যার কারণে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সিটিসি। এরপর ১৯৪৫ সালে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (এনবিএসটিসি), তারপর ১৯৪৮ সালে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (সিএসসিসি)। ধীরে ধীরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন বাস রুটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয় সিএসটিসি। ১৯৪৮ সালে তৈরি হওয়া সিএসটিসি ২০২৩ সালে ৭৫ বছরে পদার্পণ করছে। ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (এসবিএসটিসি)। সেই সংস্থারও ৬০ বছর হচ্ছে ২০২৩ সালেই। দ্বিতীয় হুগলি সেতু চালু হওয়ার পরে ১৯৯২ সালে পুনরায় বাস পরিষেবা চালু করে সিটিসি। তাদেরও বাস পরিষেবার বয়স ১০০ বছর পেরিয়েছে।
১৮৫৬। ব্রিটিশেরা তখন ধীরে ধীরে ক্ষমতার দিকে যাচ্ছে। তাদের ব্যবসার জন্য পরিবহন পরিষেবার প্রয়োজন হয়। এই সময়ে প্রথম ঘোড়ায় টানা গাড়িগুলোকে এই শহরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এগুলো বেশির ভাগ সময়ে ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহৃত হতো।
এই শহরে ট্রেন আসে ১৮৮৫ সালে। যা নদীবন্দরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। এবং পাশাপাশি পাটকলগুলোর সঙ্গেও। প্রাইভেটকার আসে ১৯১০-র দশকে। ট্যাক্সি ১৯২০-এ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রিক্সা চলা শুরু হয় ১৯৩০ এর দশকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সৈন্যেরা যে ট্রাক ও বাসের মত দেখতে পরিবহনে চলাচল করত সেগুলো রেখেই নিজ নিজ দেশে চলে যায়। তখন এইগুলোই বাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় এই শহরে।
তথ্যসূত্র: ধ্রুব আলম ও অনন্যা রায়, ‘আর্লি ট্রান্সপর্টেশন সিস্টেম অব ঢাকা অ্যান্ড ইটস ইভুলেশন’, বাস ডট কম ও কলকাতা বাস-ওপেডিয়া।
আজকের ঢাকা, কলকাতা বা লন্ডনে বাস ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। এক সময় একসঙ্গে এতজন নিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করবে, তা হয়তো কেউ চিন্তাও করে নি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই চিন্তাটা মানুষ করেছে। কে প্রথম ভাবল সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার কথা?
১৬৬২ সালে ফ্রান্সে প্রথম পাবলিক ‘বাস’ চালু হয়। ব্লেইজ পাসকালের (১৬২৩-১৬৬২) উদ্যোগে ঘোড়ায় টানা গাড়ির একটি ব্যবস্থা চালু করা হয় তখন। নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী প্যারিসের রাস্তায় চলত এই পরিবহন। তবে এই উদ্যোগটি খুব শিগগিরই আজকের পরিভাষায় ‘পণ্য ও বাজারের মধ্যে মেলবন্ধনের অভাব’ (পুওর প্রডাক্ট-মার্কেট ফিট) সমস্যায় পড়ে। এই সেবাটি ছিল শুধুমাত্র অভিজাত শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। শুরুতে এদের কৌতূহল থাকা সত্ত্বেও এই সেবাটির নানা সমস্যার কারণে আগ্রহ দ্রুত কমে যায়। ফলে মাত্র দশ বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৮২৬ সাল। প্রায় ১৫০ বছর পরে ‘অমনিবাস’ নামে একটি গণ-পরিবহন চালু হয়। এটি তিনটি ঘোড়ার সাহায্যে চালানো হতো। ৪২ জন যাত্রী নিয়ে চলতো অমনিবাস। এবারও ফ্রান্সই প্রথম এই নতুন ধারণাটি বাস্তবায়ন করে। আর সবচেয়ে ভালো বিষয় হচ্ছে, এবার সাধারণ মানুষ ও অভিজাত—উভয়েই এই গাড়িতে চড়তে পারতো। ১৮২৮ সালের মধ্যে ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্ক শহরেও অমবিবাস চালু করা হয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য মার্কিন শহরেও ছড়িয়ে পড়ে।
তবে অমনিবাসে যাত্রা সহজ ছিল না। রাস্তা ছিল পাথরের। আসনে ছিল না কোনো গদি। ফলে দীর্ঘ যাত্রা ছিল ভীষণ অস্বস্থিকর। টিকেটের দামও ছিল চড়া। তবুও অমনিবাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ এই সেবার মূল গ্রাহকে পরিণত হয়। তারা তখন ব্যক্তিগত কোচ কেনার মতো ধনী না হলেও শহরের হাঁটার কষ্ট থেকে রেহাই পেতে অর্থ খরচ করতে প্রস্তুত ছিল। মধ্যবিত্তের হাত ধরেই অমনিবাস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বাস শব্দটি কিন্তু অমনিবাস থেকেই এসেছে। এর উৎপত্তি নিয়ে আছে দুটি তত্ত্ব—একটি বলছে শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ অমনিবাস থেকে যার অর্থ ‘সবার জন্য’; অন্যটির মতে, এটি এসেছে প্যারিস বাস রুট ‘অমনেস’ থেকে।
১৮৭৩ সালে সান ফ্রান্সিসকোর অ্যান্ড্রু স্মিথ হ্যালিডি (১৮২৬-১৯০০) প্রথম কেবল কার চালু করেন। এতে আর পশুর প্রয়োজন ছিল না; কেবল লাইনের নিচে থাকা চলন্ত কেবল ধরা ক্ল্যাম্পের সাহায্যে গাড়ি চলতো।
তবে নিরাপদ ছিল না এই ব্যবস্থা। কেবল ছিঁড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল প্রচুর। তাই কিছুদিন পরই এই ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়। আরও কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজন থেকেই যায়।
১৯ শতকের শেষ দিকে ট্রলি বাস—যাকে ট্রাম, ট্রলি বা বৈদ্যুতিক স্ট্রিটকারও বলা হয়। ঘোড়ার গাড়ির যুগের অবসান ঘটায় এই ট্রলি বাস। এগুলো বিদ্যুৎচালিত ও রেললাইনে চলত। বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই চালু করা সম্ভব হয়। যাত্রী বহনের খরচ কম ছিল এবং দূরত্বও বেশি অতিক্রম করা যেত।
এটি ছিল আমেরিকার অন্যতম যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এর ফলে শহরের বাইরেও বাসে করে যাওয়া সম্ভব হয়। কাজের জায়গায় যাতায়াতও সহজ হয়ে যায়। ট্রলি বাস বহু বছর চলেছে।
১৯৪০-এর দশকে ধীরে ধীরে মোটরচালিত বাস দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়, যদিও প্রযুক্তির দোষে নয়। আজও কিছু শহরে যেমন সিয়াটল, বোস্টন ও ফিলাডেলফিয়াতে ও ইউরোপের অনেক শহরে ট্রলি বাস দেখা যায়।
১৮৯৫ সালে প্রথম মোটরচালিত বাস তৈরি করেন কার্ল বেন্জ (১৮৪৪-১৯২৯)। ১৯০৬ সালে ফ্রান্স আবারও অগ্রণী হয়ে প্রথম ছোট রুটে এই বাস চালু করে।
তবে প্রথম দিকের বাসগুলো যাত্রীদের জন্য তেমন আরামদায়ক ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সঙ্কট ও নতুন রেল বসানোর উচ্চ ব্যয় নতুন ধাঁচের যানবাহনের দিকে পরিচালিত করে।
১৯৫১ সালে মার্সিডিজ বেন্জ পেছনে ইঞ্জিন ও প্রশস্ত কাঠামোর বাস ডিজাইন করে। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রকারের বাস গঠিত হয়—শহরের ট্রানজিট বাস, উপশহরের বাস, আন্তঃনগর বাস, এবং স্কুল বাস। ক্লিভল্যান্ড ও পিটসবার্গের মতো শহরগুলি ব্যাপক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
যদিও তখন ব্যক্তিগত গাড়ির জনপ্রিয়তাও বাড়ছিল, ১৯৯০ ও ২০০০-এর দশকে জ্বালানির খরচ বাড়ার ফলে বাস ব্যবহারের হারও বৃদ্ধি পায়। বড় শহরগুলিতে পার্কিং সংকট ও যানজটের কারণে বাস আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আজ বাস হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিবহন ব্যবস্থা। ২০১০-এর দশকে বাস উৎপাদন ব্যবস্থা বৈশ্বিক হয়ে ওঠে— একই ডিজাইন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় এনে অধিকাংশ দেশই গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বহু শহর বাসের নির্গমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হস্তক্ষেপ করছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো শহর সম্পূর্ণরূপে ইলেকট্রিক বাসে রূপান্তর করতে অগ্রণী হচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তি টেকসই ও আরামদায়ক যাত্রা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী। হাইব্রিড বাস, ফুয়েল সেল বাস ও বৈদ্যুতিক বাস এখন অনেক শহরে চালু হচ্ছে।
কলকাতায় বাসের ইতিহাস কম করে ১৯৩ বছরের। ১৮৩০ সালে বাংলায় প্রথম বাস চালু হয়। ব্যারাকপুর থেকে কলকাতার ধর্মতলার রুটে। তবে নামেই সেটি ছিল বাস। আসলে ছিল এক ধরনের ঘোড়াতে টানা গাড়ি। তিনটি ঘোড়ায় চালিত গাড়িতে ধর্মতলা থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। এটিই হয়তো ১৮২৬ সালের ফ্রান্সের আবিষ্কৃত ‘অমবিনাস’-এর অনুকরণেই করা।
কলকাতা শহরে প্রথম বাস চলে ১৯১৮ সালে। আবদুল এ শোভন নামে এক ব্যক্তি দুটি রুটে বাস চালিয়েছিলেন। রুট দুটি হলো—শিয়ালদা থেকে বেলেঘোটা ও খিদিরপুর থেকে মেটিয়াব্রুজ।
এর ঠিক চার বছর পর ১৯২২ সালে ওয়ালফোর্ড অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি বাস চালাতে শুরু করে ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি বা সিটিসি। তখন থেকেই কলকাতায় পুরোদমে বাস পরিষেবা চালু হয়।
১৯৪০ সালে ওয়ালফোর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিগত সমস্যার কারণে বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সিটিসি। এরপর ১৯৪৫ সালে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (এনবিএসটিসি), তারপর ১৯৪৮ সালে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (সিএসসিসি)। ধীরে ধীরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন বাস রুটের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয় সিএসটিসি। ১৯৪৮ সালে তৈরি হওয়া সিএসটিসি ২০২৩ সালে ৭৫ বছরে পদার্পণ করছে। ১৯৬৩ সালে গঠিত হয় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা (এসবিএসটিসি)। সেই সংস্থারও ৬০ বছর হচ্ছে ২০২৩ সালেই। দ্বিতীয় হুগলি সেতু চালু হওয়ার পরে ১৯৯২ সালে পুনরায় বাস পরিষেবা চালু করে সিটিসি। তাদেরও বাস পরিষেবার বয়স ১০০ বছর পেরিয়েছে।
১৮৫৬। ব্রিটিশেরা তখন ধীরে ধীরে ক্ষমতার দিকে যাচ্ছে। তাদের ব্যবসার জন্য পরিবহন পরিষেবার প্রয়োজন হয়। এই সময়ে প্রথম ঘোড়ায় টানা গাড়িগুলোকে এই শহরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যদিও এগুলো বেশির ভাগ সময়ে ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহৃত হতো।
এই শহরে ট্রেন আসে ১৮৮৫ সালে। যা নদীবন্দরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। এবং পাশাপাশি পাটকলগুলোর সঙ্গেও। প্রাইভেটকার আসে ১৯১০-র দশকে। ট্যাক্সি ১৯২০-এ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন রিক্সা চলা শুরু হয় ১৯৩০ এর দশকে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সৈন্যেরা যে ট্রাক ও বাসের মত দেখতে পরিবহনে চলাচল করত সেগুলো রেখেই নিজ নিজ দেশে চলে যায়। তখন এইগুলোই বাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় এই শহরে।
তথ্যসূত্র: ধ্রুব আলম ও অনন্যা রায়, ‘আর্লি ট্রান্সপর্টেশন সিস্টেম অব ঢাকা অ্যান্ড ইটস ইভুলেশন’, বাস ডট কম ও কলকাতা বাস-ওপেডিয়া।
জয়া না বিপাশা– কে বেশি সুন্দর? দুই দিন ধরে ফেসবুকীয় বাহাসের শীর্ষে এই প্রশ্ন। শুনে মনে হতে পারে সালটা ২০০৪। যেখানে সদ্য গোঁফ-গজানো দুই কিশোর সিডির দোকানের বাইরে এই তর্কে-বিতর্কে মশগুল।
১৪ ঘণ্টা আগে১৯৫০ সাল। মাত্র ২১ বছর বয়স তখন কিশোর কুমারের। বছর চারেক আগেই আভাস কুমার গাঙ্গুলী নাম পাল্টে হয়েছেন ‘কিশোর কুমার’। গায়ক হিসেবে তেমন পরিচিত নন তখনও। তাঁর দাদা অশোক কুমার সে সময় হিন্দি সিনেমার আইকনিক অভিনেতা। অশোকের ছোট ভাই হিসেবেই মানুষ তাঁকে চেনে।
১৫ ঘণ্টা আগেআজ আলিয়সের এসি কাফেতে নীরবতার আড়ালে কথা হচ্ছে শুধু আমাদের দুজনে। মান্নান শোনাচ্ছেন তাঁর সদ্য এক প্রেমে পড়ার গল্প।
২ দিন আগেঢাকায় একসময় আফিম থেকে তৈরি নেশাদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ফেসবুকে পুরান ঢাকার একটি আফিমের দোকানের ছবি মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে। দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা, 'আফিমের দোকান'। চার শ বছরের ঐহিত্যবাহী শহর ঢাকায় প্রথম কাদের হাত ধরে এসেছিল আফিম নামের নেশাদ্রব্য? কোন স্বার্থে কারা এর বিস্তার ঘটালেন?
৪ দিন আগে