আফিমের দোকান
ঢাকায় একসময় আফিম থেকে তৈরি নেশাদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল। ফেসবুকে পুরান ঢাকার একটি আফিমের দোকানের ছবি মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে। দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা, 'আফিমের দোকান'। চার শ বছরের ঐহিত্যবাহী শহর ঢাকায় প্রথম কাদের হাত ধরে এসেছিল আফিম নামের নেশাদ্রব্য? কোন স্বার্থে কারা এর বিস্তার ঘটালেন?
ঢাকায় আফিম উৎপাদনের অনালোচিত ইতিহাস।
গৌতম কে শুভ
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘চরশ মেশা চণ্ডুর নেশা মুণ্ডু ঝিমঝিম’ গানে বলেছিলেন, ‘মদের নেশা, গাঁজার নেশা এর কাছে একদম পাঁজা’। ১৯৪০ সালে প্রথম রের্কড হয়েছিল গানটি। নজরুলের গান কিংবা পুরোনো দিনের ঢাকাবিষয়ক বিভিন্ন লেখাপত্র বলছে, আমাদের এ অঞ্চলে সে সময় চন্ডুর নেশার প্রভাব ছিল প্রবল।
ঢাকায়, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় আফিমের নেশাদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল। পপি গাছের কাঁচা ফলের রস থেকে তৈরি হওয়া আফিম থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় যে নেশাদ্রব্য প্রস্তুত করা হতো তার নাম চন্ডু। সেকালে তাই ঢাকায় আফিম খাওয়াকে বলা হতো ‘চন্ডু সেবন’।
খাঁটি আফিমের গন্ধ খুব তীব্র ও ঝাঁঝালো। তাই সরাসরি খাওয়া যেত না। ফলে একে খাওয়ার উপযোগী করতে অনুসরণ করা হতো এক বিশেষ প্রক্রিয়া। আর এ কাজ করতেন চন্ডুওয়ালারা। মূলত তাঁরাই আফিম দোকানের কর্মচারী।
‘কিংবদন্তির ঢাকা’সহ বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ঢাকায় প্রথম আফিম আসে ১৮৩০ সালের দিকে। এই ভয়ানক নেশার প্রচলন হয় রোকনপুরের সোনাউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। আফিমের দোকান খোলার জন্য তিনি এক চীনা নাগরিককে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে নতুন এ নেশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ঢাকার ভোগবিলাসী মুসলমানদের মধ্যে এর প্রচলন ছিল বেশি।
পুরান ঢাকার নবাবপুর, সূত্রাপুর, সদরঘাট, রথখোলা, টিকাটুলী, আরমানিটোলার মতো এলাকায় এ দ্রব্য সহজেই মিলত।
ঢাকার একটি আফিমের দোকানের ছবি মাঝেমধ্যেই আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই। যার সাইনবোর্ডে লেখা, ‘আফিমের দোকান, ২৬২ নং, নবাবপুর রোড, ঢাকা।’
পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের এ আফিমের দোকানটির আশেপাশে ছিল বেশ কয়েকটি গন্ধবণিকের দোকান। সঙ্গে ছিল তাল বা খেজুরের রস দিয়ে বানানো একপ্রকার রসের দোকান; আর মিষ্টির দোকানও ছিল। আফিমের দোকান লাগোয়া ছিল ‘মেসার্স শাহ বণিকের দোকান’ আর রাস্তার উল্টোদিকের ‘আদি মরণচাঁদ ঘোষ অ্যান্ড সন্স’।
দুই শ বছরের পুরোনো শাহ বণিকের দোকানে তিন হাজারের ওপর কবিরাজি, হেকিমি ও বনজ ওষুধ আর উপাদান পাওয়া যায়। আর দেড় শ বছরের পুরোনো মিষ্টির দোকান আদি মরণচাঁদ অ্যান্ড সন্স এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
নবাবপুরের রথখোলার এই আফিমের দোকানটা ছিল বেশ ছোট। ভেতরটা আলো-আঁধারি। আর সামনের কাউন্টারে পিতলের শিক দেওয়া ছিল। কাউন্টারের ওপরের অংশে টানানো থাকত সাইনবোর্ড। সেখানে ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষায় লেখা ছিল: ‘আফিমের দোকান’।
ঢাকার আফিমের দোকানগুলোতে কখনো ক্রেতার অভাব হয়নি। সবসময়ই দু-একজনকে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। অনেক সময় এমনও হতো যে আফিমখোরদের লাইন গিয়ে ঠেকেছে রাস্তায়।
তবে সবাই কিন্তু আফিম কিনতে পারত না। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যাঁদের অনুমতি (পারমিট) দিতেন, শুধু তাঁরাই ছিলেন ক্রেতা। তা-ও আবার নির্দিষ্ট দিনে। আর ক্রেতাদের এটি দেওয়াও হতো নির্দিষ্ট পরিমাণে।
কিন্তু যাঁরা ছিলেন পরিচিত মুখ, তাদের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম অনেক সময় মানা হতো না। আফিম বিকিকিনির এমন মজার বর্ণনা আছে মীজানুর রহমানের ‘ঢাকা পুরাণ’ বইয়ে।
মীজানুর রহমান বলছেন, তখন আফিম ক্রেতাদের মধ্যে সব ধর্মের মানুষকেই দেখা যেত। ধুতি-ফতুয়া পরা হিন্দু বনেদি বাবুদেরকেও দেখা যেত মাঝেমধ্যে। তবে অনেক সময় তাঁরা নিজেরা কিনতে না এসে অন্য কাউকে পাঠাতেন।
নিয়মিত আফিম ক্রেতাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্যই ছিল রুগ্ন। আর আফিমের দোকানে বিক্রি হতো গাঁজাও। তবে খুব দরকার না পড়লে ভদ্রলোকেরা এ দোকানের আশেপাশে ঘেঁষতেন না। ‘ঢাকা পুরাণ’ বইয়ে মীজানুর রহমান সে সময়ের যে বর্ণনা তুলে ধরেন, সেখানে আছে, দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেমন যেন একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে এসে লাগত।
আদতে তখন ঢাকার আফিমখোরদের নিয়ে অনেক মজার গল্প চালু ছিল বাজারে।
ইমরান উজ-জামানের ‘ঢাকার প্রাচীন পেশা ও তার বিবর্তন’ বইয়ের সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভারতবর্ষে প্রথম শুরু করেছিল আফিম চাষ ও ব্যবসা। এই নেশাজাতীয় পণ্যের চাষাবাদ নির্বিঘ্ন রাখতে কোম্পানি কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করত এবং ‘আফিম এজেন্ট’ নিয়োগ দিত। সে সময় ঢাকায় উৎপাদিত আফিম চীনসহ বিশ্বের নানা দেশে রপ্তানিও হতো।
পরে চীনে ব্যাপক হারে আফিমের অপব্যবহার শুরু হলে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে দুটি যুদ্ধও হয়।
প্রথম আফিম যুদ্ধ চলে ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত। আর দ্বিতীয়টি ঘটে ১৮৫৬ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে। দুই যুদ্ধেই পরাজিত হয় চীন। ফলে ব্রিটিশদের আফিম ব্যবসা আরও প্রসারিত হয়। ঢাকা শহরে বেড়ে যায় আফিমের ব্যবহার।
ঢাকায় আফিমের বিস্তারের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় এ শহরের সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজের লেখায়। ১৮৬০ সালের দিকে তিনি ঢাকা শহরে বসবাস করতেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, ১৮৩০ সালে ঢাকায় আফিমের ব্যবহার শুরু হয়। এর পরের ২০ বছরে শহরে আফিমের দোকান বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। এ সময়ের সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি আরও লিখেছেন, শহরে আফিম বেশি সেবন করতেন মুসলমানেরা। আর গ্রামে গাঁজার ব্যবহার বেশি ছিল।
বেশির ভাগ আফিম দোকানের মালিক হিন্দু ব্যবসায়ীরা হলেও মজার ব্যাপার হলো, লোকলজ্জার ভয়ে সামনে আসতেন না তাঁরা। দোকান চালাতেন ‘চন্ডুওয়ালা’ নামে পরিচিত মুসলমান কর্মচারীরা।
পান, হুঁকা, গাঁজা আর আফিমকে তখন খুব সাধারণ নেশা হিসেবে গণ্য করা হতো। একপর্যায়ে এটি আর নেশা থাকল না, হয়ে উঠল একধরনের সামাজিক অভ্যাসের অংশ।
শোনা যায়, সে সময় অনেক নবজাতকের মুখে আফিম দিয়ে তাকে ‘পৃথিবীতে স্বাগত’ জানানো হতো। আবার শিশুর ঠান্ডা সারাতেও ব্যবহৃত হতো আফিম।
তখন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বয়স্কদের আফিম খেয়ে ঝিম ধরা পুরোনো ঢাকার কিছু গলির দৃশ্য ছিল অনেকেরই পরিচিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, আফিম খেলে শক্তি বাড়ে। তাই খাবার পর তাঁরা দুধে মিশিয়ে আফিম খেতেন।
১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার আফিম ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৮৭৮ সালে ‘আফিম অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে গঠন করা হয় ‘আফিম বিভাগ’। একই সময়ে গাঁজা ও মদের ওপরও কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় শুরু হয়। এই আইনের পর বন্ধ হয়ে যায় অনেক আফিমের দোকান। দোকানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১১টিতে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল আফিমের নেশা। সর্বশেষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে সরকার আফিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘চরশ মেশা চণ্ডুর নেশা মুণ্ডু ঝিমঝিম’ গানে বলেছিলেন, ‘মদের নেশা, গাঁজার নেশা এর কাছে একদম পাঁজা’। ১৯৪০ সালে প্রথম রের্কড হয়েছিল গানটি। নজরুলের গান কিংবা পুরোনো দিনের ঢাকাবিষয়ক বিভিন্ন লেখাপত্র বলছে, আমাদের এ অঞ্চলে সে সময় চন্ডুর নেশার প্রভাব ছিল প্রবল।
ঢাকায়, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় আফিমের নেশাদ্রব্যের ব্যাপক প্রচলন ছিল। পপি গাছের কাঁচা ফলের রস থেকে তৈরি হওয়া আফিম থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় যে নেশাদ্রব্য প্রস্তুত করা হতো তার নাম চন্ডু। সেকালে তাই ঢাকায় আফিম খাওয়াকে বলা হতো ‘চন্ডু সেবন’।
খাঁটি আফিমের গন্ধ খুব তীব্র ও ঝাঁঝালো। তাই সরাসরি খাওয়া যেত না। ফলে একে খাওয়ার উপযোগী করতে অনুসরণ করা হতো এক বিশেষ প্রক্রিয়া। আর এ কাজ করতেন চন্ডুওয়ালারা। মূলত তাঁরাই আফিম দোকানের কর্মচারী।
‘কিংবদন্তির ঢাকা’সহ বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ঢাকায় প্রথম আফিম আসে ১৮৩০ সালের দিকে। এই ভয়ানক নেশার প্রচলন হয় রোকনপুরের সোনাউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। আফিমের দোকান খোলার জন্য তিনি এক চীনা নাগরিককে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে নতুন এ নেশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ঢাকার ভোগবিলাসী মুসলমানদের মধ্যে এর প্রচলন ছিল বেশি।
পুরান ঢাকার নবাবপুর, সূত্রাপুর, সদরঘাট, রথখোলা, টিকাটুলী, আরমানিটোলার মতো এলাকায় এ দ্রব্য সহজেই মিলত।
ঢাকার একটি আফিমের দোকানের ছবি মাঝেমধ্যেই আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই। যার সাইনবোর্ডে লেখা, ‘আফিমের দোকান, ২৬২ নং, নবাবপুর রোড, ঢাকা।’
পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের এ আফিমের দোকানটির আশেপাশে ছিল বেশ কয়েকটি গন্ধবণিকের দোকান। সঙ্গে ছিল তাল বা খেজুরের রস দিয়ে বানানো একপ্রকার রসের দোকান; আর মিষ্টির দোকানও ছিল। আফিমের দোকান লাগোয়া ছিল ‘মেসার্স শাহ বণিকের দোকান’ আর রাস্তার উল্টোদিকের ‘আদি মরণচাঁদ ঘোষ অ্যান্ড সন্স’।
দুই শ বছরের পুরোনো শাহ বণিকের দোকানে তিন হাজারের ওপর কবিরাজি, হেকিমি ও বনজ ওষুধ আর উপাদান পাওয়া যায়। আর দেড় শ বছরের পুরোনো মিষ্টির দোকান আদি মরণচাঁদ অ্যান্ড সন্স এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
নবাবপুরের রথখোলার এই আফিমের দোকানটা ছিল বেশ ছোট। ভেতরটা আলো-আঁধারি। আর সামনের কাউন্টারে পিতলের শিক দেওয়া ছিল। কাউন্টারের ওপরের অংশে টানানো থাকত সাইনবোর্ড। সেখানে ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষায় লেখা ছিল: ‘আফিমের দোকান’।
ঢাকার আফিমের দোকানগুলোতে কখনো ক্রেতার অভাব হয়নি। সবসময়ই দু-একজনকে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। অনেক সময় এমনও হতো যে আফিমখোরদের লাইন গিয়ে ঠেকেছে রাস্তায়।
তবে সবাই কিন্তু আফিম কিনতে পারত না। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার যাঁদের অনুমতি (পারমিট) দিতেন, শুধু তাঁরাই ছিলেন ক্রেতা। তা-ও আবার নির্দিষ্ট দিনে। আর ক্রেতাদের এটি দেওয়াও হতো নির্দিষ্ট পরিমাণে।
কিন্তু যাঁরা ছিলেন পরিচিত মুখ, তাদের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম অনেক সময় মানা হতো না। আফিম বিকিকিনির এমন মজার বর্ণনা আছে মীজানুর রহমানের ‘ঢাকা পুরাণ’ বইয়ে।
মীজানুর রহমান বলছেন, তখন আফিম ক্রেতাদের মধ্যে সব ধর্মের মানুষকেই দেখা যেত। ধুতি-ফতুয়া পরা হিন্দু বনেদি বাবুদেরকেও দেখা যেত মাঝেমধ্যে। তবে অনেক সময় তাঁরা নিজেরা কিনতে না এসে অন্য কাউকে পাঠাতেন।
নিয়মিত আফিম ক্রেতাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্যই ছিল রুগ্ন। আর আফিমের দোকানে বিক্রি হতো গাঁজাও। তবে খুব দরকার না পড়লে ভদ্রলোকেরা এ দোকানের আশেপাশে ঘেঁষতেন না। ‘ঢাকা পুরাণ’ বইয়ে মীজানুর রহমান সে সময়ের যে বর্ণনা তুলে ধরেন, সেখানে আছে, দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কেমন যেন একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে এসে লাগত।
আদতে তখন ঢাকার আফিমখোরদের নিয়ে অনেক মজার গল্প চালু ছিল বাজারে।
ইমরান উজ-জামানের ‘ঢাকার প্রাচীন পেশা ও তার বিবর্তন’ বইয়ের সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভারতবর্ষে প্রথম শুরু করেছিল আফিম চাষ ও ব্যবসা। এই নেশাজাতীয় পণ্যের চাষাবাদ নির্বিঘ্ন রাখতে কোম্পানি কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করত এবং ‘আফিম এজেন্ট’ নিয়োগ দিত। সে সময় ঢাকায় উৎপাদিত আফিম চীনসহ বিশ্বের নানা দেশে রপ্তানিও হতো।
পরে চীনে ব্যাপক হারে আফিমের অপব্যবহার শুরু হলে ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে দুটি যুদ্ধও হয়।
প্রথম আফিম যুদ্ধ চলে ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত। আর দ্বিতীয়টি ঘটে ১৮৫৬ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে। দুই যুদ্ধেই পরাজিত হয় চীন। ফলে ব্রিটিশদের আফিম ব্যবসা আরও প্রসারিত হয়। ঢাকা শহরে বেড়ে যায় আফিমের ব্যবহার।
ঢাকায় আফিমের বিস্তারের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায় এ শহরের সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজের লেখায়। ১৮৬০ সালের দিকে তিনি ঢাকা শহরে বসবাস করতেন। তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, ১৮৩০ সালে ঢাকায় আফিমের ব্যবহার শুরু হয়। এর পরের ২০ বছরে শহরে আফিমের দোকান বেড়ে দাঁড়ায় ২০টিতে। এ সময়ের সামাজিক বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি আরও লিখেছেন, শহরে আফিম বেশি সেবন করতেন মুসলমানেরা। আর গ্রামে গাঁজার ব্যবহার বেশি ছিল।
বেশির ভাগ আফিম দোকানের মালিক হিন্দু ব্যবসায়ীরা হলেও মজার ব্যাপার হলো, লোকলজ্জার ভয়ে সামনে আসতেন না তাঁরা। দোকান চালাতেন ‘চন্ডুওয়ালা’ নামে পরিচিত মুসলমান কর্মচারীরা।
পান, হুঁকা, গাঁজা আর আফিমকে তখন খুব সাধারণ নেশা হিসেবে গণ্য করা হতো। একপর্যায়ে এটি আর নেশা থাকল না, হয়ে উঠল একধরনের সামাজিক অভ্যাসের অংশ।
শোনা যায়, সে সময় অনেক নবজাতকের মুখে আফিম দিয়ে তাকে ‘পৃথিবীতে স্বাগত’ জানানো হতো। আবার শিশুর ঠান্ডা সারাতেও ব্যবহৃত হতো আফিম।
তখন প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বয়স্কদের আফিম খেয়ে ঝিম ধরা পুরোনো ঢাকার কিছু গলির দৃশ্য ছিল অনেকেরই পরিচিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন, আফিম খেলে শক্তি বাড়ে। তাই খাবার পর তাঁরা দুধে মিশিয়ে আফিম খেতেন।
১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার আফিম ব্যবসা নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১৮৭৮ সালে ‘আফিম অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে গঠন করা হয় ‘আফিম বিভাগ’। একই সময়ে গাঁজা ও মদের ওপরও কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় শুরু হয়। এই আইনের পর বন্ধ হয়ে যায় অনেক আফিমের দোকান। দোকানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ১১টিতে। এরপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল আফিমের নেশা। সর্বশেষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে সরকার আফিমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ক্যানকুন আসলে চিচেন ইত্জা ভ্রমণের গেটওয়ে। চিচেন ইত্জায় যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁদের অনেকেই প্রথমে এখান থেকে যাত্রা শুরু করেন। সাদাবালির দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের জন্য ক্যানকুন খুবই বিখ্যাত। তাই মেক্সিকোর অন্যতম ব্যস্ত এই ক্যানকুন বিমানবন্দরে বিভিন্ন দেশের মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
২ দিন আগেরাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প ও তার পরপরই সুনামির ঢেউ আবার নতুন করে মনে করিয়ে দেয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে মানুষ কতটা অসহায়। এই ঘটনায় রাশিয়া, জাপান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও জারি হয়েছে সুনামি সতর্কতা। এমন খবরের পর প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাংলাদেশ কি সুনামির ঝুঁকিতে আছে?
৩ দিন আগেহাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের গান নিয়ে বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তবে গেল তিরিশ বছরে বাংলাদেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি একজন অনন্য একজন শিল্পী।
৩ দিন আগেসম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র স্মরণে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রিয় আননোন থার্টি ওয়াই’। গত শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে হয়ে গেল সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো। কী দেখিয়েছে সিনেমাটি?
৫ দিন আগে