আজ বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের মৃত্যুদিন
আজ চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের মৃত্যুদিন। বাংলার গ্রামীণ কৃষিজীবি সম্প্রদায়কে অন্যরূপে চিত্রিত করেছেন তিনি। কৃষককে এই রূপে চিত্রিত করার পেছনে কী ছিল তাঁর ভাবনা?
সৈয়দ নিজার
শেখ মুহাম্মদ সুলতান (১৯২৪-১৯৯৪) বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের একজন। তিনি শুধু চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, তাঁর স্বতন্ত্র দর্শন, রাজনীতি, সমাজ, নন্দনভাবনা ছিল, যা একই সঙ্গে দেশজ ও সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে ‘সহজিয়া’দের ‘সহজ’ হয়ে ওঠার অক্লান্ত প্রচেষ্টার স্মারক। তাঁর চিন্তার ছাপ পড়তে পারত আমাদের ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ ও দর্শনচর্চাসহ জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু তাঁর চিন্তা জ্ঞানের অন্যান্য শাখা তো দূরের কথা, পরবর্তীকালে বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় কোনো ধারাক্রমই সৃষ্টি করতে পারেনি বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীকে প্রভাবিতও করতে পারেনি।
কখনো কখনো সুলতানের কাজ অনেক শিল্পসমালোচকদের কাছে অবোধগম্য ছিল বলে তা অবমূল্যায়িত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে প্রদর্শিত সুলতানের শিল্পকর্মের অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘আত্মসত্তা’। আত্মসত্তার অন্বেষণের অভিপ্রায় এবং প্রচেষ্টা পূর্বে থাকলেও তা মূর্ত হয়েছে কেবল স্বাধীনতা-উত্তর প্রদর্শিত শিল্পকর্মে। তিনি তাঁর চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন দেশজ নন্দনতত্ত্ব ও শিল্পকলার রূপ। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্পকলা উপনিবেশের উত্তরাধিকার। আমাদের সমকালীন নন্দনভাবনা ও শিল্পকলা গভীরভাবে পাশ্চাত্যের আধুনিক শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত। এদেশের শিল্পচর্চার ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই সুলতানের শিল্পকর্মে দেশজ শিল্পের যে রূপ ধরা পড়েছে তা এদেশের শিল্পরসিক ও শিল্পীদের অনেকেই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সে কারণে সুলতানের কোনো উত্তরসূরি নেই। নেই কোনো ধারা। কিন্তু তাঁর শিল্পকর্মে বিউপনিবেশায়নের পদ্ধতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা শুধু শিল্পের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাবই নয় বরং জ্ঞানের যে কোনো ধারার বিউপনিবেশায়নের পদ্ধতি হিসেবেও বিবেচ্য হতে পারে।
সুলতান আমাদের চিন্তা ও শিল্পচর্চায় ঔপনিবেশিকতার ছাপগুলি খুঁজে বের করেছেন, যা বিউনিবেশায়নের প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু তিনি বিউপনিবেশায়নের নামে প্রাক-ঔপনিবেশিক দেশজ শিল্পধারায় ফিরে যাননি; বরং দেশজ শিল্পচেতনার বৈশ্বিক রূপ দান করেছেন। সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদ থেকেও অনন্য। ই. বি. হ্যাবেল, আনন্দ কুমারস্বামী ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভেবেছেন ভারতশিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য ‘আধ্যাত্মিকতা’। আত্মপরিচয় নির্মাণের এই রাজনীতিকে বলা যেতে পারে ‘দ্বি-বিচ্ছেদায়ন’।
সুলতানের শিল্পকলায় বি-বিচ্ছেদায়নের প্রস্তাব রয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর শিল্পকর্মে রয়েছে ঔপনিবেশিক জ্ঞানকাণ্ডের প্রতিবয়ান। সুলতানের এই প্রয়াস, শিল্পসমালোচকদের অবোধগম্যতা ও বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় কোনো ধারাকে প্রভাবিত করতে না-পারার ব্যর্থতার জ্ঞানতাত্ত্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের শিল্পবোদ্ধা ও রসিকদের কাছে তাঁর বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক ধরা পড়েছে ‘অনাধুনিক’ বা ‘নাইভ’ হিসেবে।
আসলে এস এম সুলতানের চিন্তার ক্ষেত্রভূমি ঢাকার শিল্পচর্চা, কলকাতার পুনর্জাগরণবাদ এবং ইউরোপীয় আধুনিক শিল্পকলা। তাঁর ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতা আর্ট কলেজে। তিনি পঞ্চাশের দশকে দেশে ফেরার আগে কিছুকাল আমেরিকায় ও লন্ডনে ছিলেন। তাঁর সেই সময়কার ইউরোপীয় প্রতিচ্ছায়াবাদী ধাঁচে আঁকা ছবিগুলো পিকাসো, দালিদের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে, যা থেকে ধারণা করা যায়, তিনি পাশ্চাত্য অঙ্কনরীতিতে সিদ্ধ হয়েছিলেন।
সর্বোপরি পঞ্চাশের দশকের পর থেকে বাংলাদেশে থাকার ফলে বাংলাদেশের শিল্পচর্চার আত্মপরিচয়ের সংকটের বিষয়ে অবগত ছিলেন। সেই কারণে সুলতানের ভাবনা ক্ষেত্র হলো সদ্য স্বাধীন-হওয়া বাংলাদেশের আত্মপরিচয়, আধুনিকতা আর প্রগতির মধ্যে আটকে পড়া ঢাকার শিল্পচর্চার সংকট এবং বৈশ্বিকতার নামে হাজির পাশ্চাত্য শিল্পকলা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তাঁর বাংলাদেশের শিল্পকলার বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব, যা পরিণত বয়সে সুলতানের শিল্পচৈতন্যের একমাত্র বৈশিষ্ট্য।
এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় শিল্পীর ছবির বিষয়বস্তু, অঙ্কনরীতি ও উপকরণ ব্যবহারে। নৃতাত্ত্বিক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর মনে করেন, সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব অনেকাংশে পুনরাবৃত্তিক, বিশেষ করে ‘চিত্রগত সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁর সমাধান পুনরাবৃত্তিক, সে জন্য তাঁকে মনে হয় গ্রাম্য সরল’।
সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদ থেকে স্বতন্ত্র এবং তিনি অঙ্কনরীতির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন প্রাক-ঔপনিবেশিক শিল্পরীতি থেকে। কিন্তু তিনি প্রাক-ঔপনিবেশিক চিত্ররীতিতে ফিরে যাননি; বরং প্রাক-ঔপনিবেশিক চিত্ররীতির সৃষ্টিশীল বৈশ্বিক রূপান্তর ঘটিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর বিষয়বস্তু ঔপনিবেশিক জ্ঞানভাণ্ডারে একটি প্রতিবয়ান, প্রান্তের জীবনশক্তি এবং বাংলাদেশের হাজার বছর টিকে থাকার ভিত্তির অনুসন্ধান।
আধুনিক শিল্পীদের বিষয়বস্তু প্রায়শই শহুরে জনগোষ্ঠী। শহুরে মানুষের যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা, একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা। দীর্ঘ সারি-সারি দালানে থাকা মানুষের দৃষ্টি জানালা দিয়ে বেশি দূর প্রসারিত হতে পারে না অন্য কোন দালানের জন্য। তাই তাঁদের অভিজ্ঞতা, একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা হয়ে উঠেছে বিমূর্তবাদী, অভিব্যক্তিবাদী আর পরাবাস্তববাদী শিল্পীদের বিষয়বস্তু।
কিন্তু চার দশক আগে ঢাকার বাস্তবতা এমন ছিল না। তখন দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ করার মত দীর্ঘ সারি-সারি দালান ছিল না। পুঁজির চাপে ঢাকার মানুষের নিরন্তন ছুটে চলার জীবন ছিল না। সর্বোপরি, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের আশানুরূপ উন্নতি না হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের মানুষের মতো হতাশা, বিষণ্ণতাও ছিল না। অথচ কখনো-কখনো বাংলাদেশের শিল্পীরা পাশ্চাত্যের অঙ্কনরীতির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়বস্তুও নিয়ে এসেছেন। যা ঢাকার নাগরিক জীবনের সত্যভ্রম নির্মাণ করেছে।
অন্যদিকে, ঢাকার যে কিছু শিল্পীর বিষয়বস্তু বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন ও নিসর্গ, তাঁদের উপস্থাপনা ঔপনিবেশিক উপস্থাপনা থেকে ভিন্ন নয়। ঔপনিবেশিকদের মতো তাঁদের ছবিতেও গ্রামীণ জীবন ধরা পড়েছে নিসর্গের অংশে--‘বিচ্ছিন্ন কোনো অপর’ রূপে। এই লোকজ সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা, জাতীয় সংস্কৃতির ভিত্তি খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে শহুরে মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক সংকট চিহ্নিত করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। যে কারণে আমরা দেখতে পাই স্বাধীনতা-উত্তর অধিকাংশ চিত্রে এদেশের সমাজ-ইতিহাস-দর্শনের অভাব রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নন্দন-ভাবনা হয়ে পড়েছে বিজাতীয় ও লোকজ সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন।
আধুনিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক শিল্প নাগরিক জীবনের সংকট ও আত্মসমালোচনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণ ব্যাখ্যা করে ক্যামেরোন ম্যাক্যার্থি আর গ্রেগ দিমিত্রিয়াদিস বলেন, ‘আধুনিক শিল্পকলার বিষয়বস্তু শহুরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যা পুঁজিবাদের বিকাশ এবং তার জটিল সাংস্কৃতিক শিল্পব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক শিল্প আপস করেছে।’
ম্যাক্যার্থি ও দিমিত্রিয়াদিসের আধুনিক শিল্পের প্রবণতাবিষয়ক বিশ্লেষণ আমাদের বুঝতে সহায়তা করে, কেন সুলতানের বিষয়বস্তু গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। উপনিবেশিত রাষ্ট্রগুলোর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবসময় ইউরোপীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ঢাকার বাস্তবতার মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও এ নগরের প্রভাবশালী সংস্কৃতি প্রসঙ্গেও ক্যামেরোন ম্যাক্যার্থি আর গ্রেগ দিমিত্রিয়াদিসের কথাটি বলা যাবে। বস্তুত এসব কারণে নিজের চিত্রকলায় সুলতান গ্রামীণ মানুষের কর্মময় জীবন বেছে নিয়েছেন। গ্রামীণ মানুষকে তিনি শুধু উৎপাদনের ভিত্তিই মনে করেননি, মনে করেছেন বিউপনিবেশিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত্তিও। তাঁর এই ভাবনায় ভারতীয় বেদান্ত দর্শনের সারসত্তাবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তিনি উৎপাদন ও জীবনযাপনের এমন অংশকে উপস্থাপন করেছেন, যা কালান্তরে অপরিবর্তনশীল এবং ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি যার কোনো বিকৃতি ঘটাতে পারেনি।
এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, সুলতানের চিত্রকলা হলো ভাবনির্ভর; শিল্প সমালোচক হ্যাবেল, কুমারস্বামী, অবনীন্দ্রনাথের মতে, যা ভারতীয় শিল্পেরও মূল বৈশিষ্ট্য। তবে বলা দরকার, এই ভাব আধ্যাত্মিকতা নয়। হাজার বছরের শোষণ, শাসন ও বিজাতিদের লুটের পরে টিকে থাকার ক্ষমতা। গ্রামীণ জীবনের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং তাদের কর্মময় জীবন। এই প্রসঙ্গে এ-ও বলতে হবে, সুলতান মনে করতেন, প্রাচ্যবাদী ও বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদীরা এই অঞ্চলের ভুল আত্মসত্তা চিহ্নিত করেছেন।
‘এস এম সুলতান স্মারকগ্রন্থ’-এর ভূমিকায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সুবীর চৌধুরী সুলতানের ছবিকে ‘নিম্নবর্গীর স্বপ্ন’রূপে চিহ্নিত করেছেন। এ ভূমিকায় ‘নিম্নবর্গের স্বপ্ন’ নিয়ে তাঁরা বিস্তারিত আলোচনা করেননি। কিন্তু শাব্দিক অর্থ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, শহুরে শ্রমিক শ্রেণি বা গ্রামের কৃষক নিম্নবর্গের একটি উদাহরণ। আর এই শ্রেণির জীবনের স্বপ্নই হচ্ছে নিম্নবর্গীয় স্বপ্ন।
সুলতানের বিষয়বস্তু কৃষক হওয়ার প্রেক্ষিতে এটি অনুমেয় যে এখানে কৃষকের সেই স্বপ্নের প্রতিই মনজুরুল ও সুবীর ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু সুলতানের বিষয়বস্তু একেবারেই কৃষকের স্বপ্ন নয়; বরং তা হলো হাজার বছরের বাংলাদেশের কৃষকের কর্মময় জীবন, প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইসহ গ্রামের প্রান্তিক কৃষকের জীবনের মহাবয়ান। যা সুলতানের কাছে পরম সত্য/বাস্তবতা বলেই ধরা পড়েছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ইতিহাস বিশেষজ্ঞ পার্থ চট্টোপাধ্যায় (১৯৯৪), রণজিৎ গুহ (২০০১) ও গৌতম ভদ্র (১৯৯৪) মনে করেন, কৃষকের সচেতন রাজনৈতিক চৈতন্য রয়েছে এবং তারা সমাজ পরিবর্তনে বিপ্লব করতে সক্ষম। কিন্তু সুলতানের চিত্রকলার স্থান, কাল, ব্যক্তি নির্বিশেষে যে বাস্তবতার বয়ান আছে তা হচ্ছে প্রকৃতি, শোষণ ও বঞ্চনার মধ্যে টিকে থাকার মানসিক শক্তি। বড় কোনো রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ইঙ্গিত এখানে নেই। এখানেই হয়তো সুলতানের সঙ্গে পার্থ, রণজিৎ ও গৌতমের কৃষকচৈতন্য পাঠের ভিন্নতা। এজন্য বলা যেতে পারে, সুলতানের ছবিকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সুবীর চৌধুরী যে অর্থে ‘নিম্নবর্গীয় স্বপ্ন’-এর কথা বলে থাকেন না কেন, তার কোনো ইঙ্গিত এ শিল্পীর শিল্পকর্মে নেই। কারণ, সুলতান মনে করতেন, বাংলাদেশের কৃষকরা যুদ্ধ করেছেন, তাদের প্রত্যাশা ভেঙেছে, কিন্তু তাদের কাছে তা কোনো রাজনৈতিক অভীক্ষা নয়।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানকে একদা সুলতান যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তা উদ্ধৃত করে এ লেখার ইতি টানব। সাক্ষাৎকারে কৃষকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক আশা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দে ওয়্যার বিট্রেইড। এই যে একটি এক্সপ্লোরেশন প্রসেস, আমার ছবিগুলো তার প্রতি চ্যালেঞ্জ।’
লেখক: চিত্র সমালোচক; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক।
শেখ মুহাম্মদ সুলতান (১৯২৪-১৯৯৪) বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের একজন। তিনি শুধু চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, তাঁর স্বতন্ত্র দর্শন, রাজনীতি, সমাজ, নন্দনভাবনা ছিল, যা একই সঙ্গে দেশজ ও সময়ের চেয়ে অগ্রগামী এবং জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে ‘সহজিয়া’দের ‘সহজ’ হয়ে ওঠার অক্লান্ত প্রচেষ্টার স্মারক। তাঁর চিন্তার ছাপ পড়তে পারত আমাদের ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ ও দর্শনচর্চাসহ জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু তাঁর চিন্তা জ্ঞানের অন্যান্য শাখা তো দূরের কথা, পরবর্তীকালে বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় কোনো ধারাক্রমই সৃষ্টি করতে পারেনি বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীকে প্রভাবিতও করতে পারেনি।
কখনো কখনো সুলতানের কাজ অনেক শিল্পসমালোচকদের কাছে অবোধগম্য ছিল বলে তা অবমূল্যায়িত হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে প্রদর্শিত সুলতানের শিল্পকর্মের অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে ‘আত্মসত্তা’। আত্মসত্তার অন্বেষণের অভিপ্রায় এবং প্রচেষ্টা পূর্বে থাকলেও তা মূর্ত হয়েছে কেবল স্বাধীনতা-উত্তর প্রদর্শিত শিল্পকর্মে। তিনি তাঁর চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন দেশজ নন্দনতত্ত্ব ও শিল্পকলার রূপ। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্পকলা উপনিবেশের উত্তরাধিকার। আমাদের সমকালীন নন্দনভাবনা ও শিল্পকলা গভীরভাবে পাশ্চাত্যের আধুনিক শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত। এদেশের শিল্পচর্চার ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই সুলতানের শিল্পকর্মে দেশজ শিল্পের যে রূপ ধরা পড়েছে তা এদেশের শিল্পরসিক ও শিল্পীদের অনেকেই উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সে কারণে সুলতানের কোনো উত্তরসূরি নেই। নেই কোনো ধারা। কিন্তু তাঁর শিল্পকর্মে বিউপনিবেশায়নের পদ্ধতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা শুধু শিল্পের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাবই নয় বরং জ্ঞানের যে কোনো ধারার বিউপনিবেশায়নের পদ্ধতি হিসেবেও বিবেচ্য হতে পারে।
সুলতান আমাদের চিন্তা ও শিল্পচর্চায় ঔপনিবেশিকতার ছাপগুলি খুঁজে বের করেছেন, যা বিউনিবেশায়নের প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু তিনি বিউপনিবেশায়নের নামে প্রাক-ঔপনিবেশিক দেশজ শিল্পধারায় ফিরে যাননি; বরং দেশজ শিল্পচেতনার বৈশ্বিক রূপ দান করেছেন। সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদ থেকেও অনন্য। ই. বি. হ্যাবেল, আনন্দ কুমারস্বামী ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভেবেছেন ভারতশিল্পের মূল বৈশিষ্ট্য ‘আধ্যাত্মিকতা’। আত্মপরিচয় নির্মাণের এই রাজনীতিকে বলা যেতে পারে ‘দ্বি-বিচ্ছেদায়ন’।
সুলতানের শিল্পকলায় বি-বিচ্ছেদায়নের প্রস্তাব রয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর শিল্পকর্মে রয়েছে ঔপনিবেশিক জ্ঞানকাণ্ডের প্রতিবয়ান। সুলতানের এই প্রয়াস, শিল্পসমালোচকদের অবোধগম্যতা ও বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় কোনো ধারাকে প্রভাবিত করতে না-পারার ব্যর্থতার জ্ঞানতাত্ত্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের শিল্পবোদ্ধা ও রসিকদের কাছে তাঁর বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক ধরা পড়েছে ‘অনাধুনিক’ বা ‘নাইভ’ হিসেবে।
আসলে এস এম সুলতানের চিন্তার ক্ষেত্রভূমি ঢাকার শিল্পচর্চা, কলকাতার পুনর্জাগরণবাদ এবং ইউরোপীয় আধুনিক শিল্পকলা। তাঁর ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতা আর্ট কলেজে। তিনি পঞ্চাশের দশকে দেশে ফেরার আগে কিছুকাল আমেরিকায় ও লন্ডনে ছিলেন। তাঁর সেই সময়কার ইউরোপীয় প্রতিচ্ছায়াবাদী ধাঁচে আঁকা ছবিগুলো পিকাসো, দালিদের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছে, যা থেকে ধারণা করা যায়, তিনি পাশ্চাত্য অঙ্কনরীতিতে সিদ্ধ হয়েছিলেন।
সর্বোপরি পঞ্চাশের দশকের পর থেকে বাংলাদেশে থাকার ফলে বাংলাদেশের শিল্পচর্চার আত্মপরিচয়ের সংকটের বিষয়ে অবগত ছিলেন। সেই কারণে সুলতানের ভাবনা ক্ষেত্র হলো সদ্য স্বাধীন-হওয়া বাংলাদেশের আত্মপরিচয়, আধুনিকতা আর প্রগতির মধ্যে আটকে পড়া ঢাকার শিল্পচর্চার সংকট এবং বৈশ্বিকতার নামে হাজির পাশ্চাত্য শিল্পকলা। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই তাঁর বাংলাদেশের শিল্পকলার বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব, যা পরিণত বয়সে সুলতানের শিল্পচৈতন্যের একমাত্র বৈশিষ্ট্য।
এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় শিল্পীর ছবির বিষয়বস্তু, অঙ্কনরীতি ও উপকরণ ব্যবহারে। নৃতাত্ত্বিক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর মনে করেন, সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব অনেকাংশে পুনরাবৃত্তিক, বিশেষ করে ‘চিত্রগত সমস্যার ক্ষেত্রে তাঁর সমাধান পুনরাবৃত্তিক, সে জন্য তাঁকে মনে হয় গ্রাম্য সরল’।
সুলতানের বিউপনিবেশায়ন প্রস্তাব বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদ থেকে স্বতন্ত্র এবং তিনি অঙ্কনরীতির ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন প্রাক-ঔপনিবেশিক শিল্পরীতি থেকে। কিন্তু তিনি প্রাক-ঔপনিবেশিক চিত্ররীতিতে ফিরে যাননি; বরং প্রাক-ঔপনিবেশিক চিত্ররীতির সৃষ্টিশীল বৈশ্বিক রূপান্তর ঘটিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর বিষয়বস্তু ঔপনিবেশিক জ্ঞানভাণ্ডারে একটি প্রতিবয়ান, প্রান্তের জীবনশক্তি এবং বাংলাদেশের হাজার বছর টিকে থাকার ভিত্তির অনুসন্ধান।
আধুনিক শিল্পীদের বিষয়বস্তু প্রায়শই শহুরে জনগোষ্ঠী। শহুরে মানুষের যান্ত্রিক জীবনের জটিলতা, একাকিত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা। দীর্ঘ সারি-সারি দালানে থাকা মানুষের দৃষ্টি জানালা দিয়ে বেশি দূর প্রসারিত হতে পারে না অন্য কোন দালানের জন্য। তাই তাঁদের অভিজ্ঞতা, একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা হয়ে উঠেছে বিমূর্তবাদী, অভিব্যক্তিবাদী আর পরাবাস্তববাদী শিল্পীদের বিষয়বস্তু।
কিন্তু চার দশক আগে ঢাকার বাস্তবতা এমন ছিল না। তখন দৃষ্টিকে অবরুদ্ধ করার মত দীর্ঘ সারি-সারি দালান ছিল না। পুঁজির চাপে ঢাকার মানুষের নিরন্তন ছুটে চলার জীবন ছিল না। সর্বোপরি, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের আশানুরূপ উন্নতি না হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের মানুষের মতো হতাশা, বিষণ্ণতাও ছিল না। অথচ কখনো-কখনো বাংলাদেশের শিল্পীরা পাশ্চাত্যের অঙ্কনরীতির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়বস্তুও নিয়ে এসেছেন। যা ঢাকার নাগরিক জীবনের সত্যভ্রম নির্মাণ করেছে।
অন্যদিকে, ঢাকার যে কিছু শিল্পীর বিষয়বস্তু বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন ও নিসর্গ, তাঁদের উপস্থাপনা ঔপনিবেশিক উপস্থাপনা থেকে ভিন্ন নয়। ঔপনিবেশিকদের মতো তাঁদের ছবিতেও গ্রামীণ জীবন ধরা পড়েছে নিসর্গের অংশে--‘বিচ্ছিন্ন কোনো অপর’ রূপে। এই লোকজ সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্নতা, জাতীয় সংস্কৃতির ভিত্তি খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে শহুরে মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক সংকট চিহ্নিত করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। যে কারণে আমরা দেখতে পাই স্বাধীনতা-উত্তর অধিকাংশ চিত্রে এদেশের সমাজ-ইতিহাস-দর্শনের অভাব রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের নন্দন-ভাবনা হয়ে পড়েছে বিজাতীয় ও লোকজ সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন।
আধুনিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক শিল্প নাগরিক জীবনের সংকট ও আত্মসমালোচনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণ ব্যাখ্যা করে ক্যামেরোন ম্যাক্যার্থি আর গ্রেগ দিমিত্রিয়াদিস বলেন, ‘আধুনিক শিল্পকলার বিষয়বস্তু শহুরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যা পুঁজিবাদের বিকাশ এবং তার জটিল সাংস্কৃতিক শিল্পব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক শিল্প আপস করেছে।’
ম্যাক্যার্থি ও দিমিত্রিয়াদিসের আধুনিক শিল্পের প্রবণতাবিষয়ক বিশ্লেষণ আমাদের বুঝতে সহায়তা করে, কেন সুলতানের বিষয়বস্তু গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। উপনিবেশিত রাষ্ট্রগুলোর শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবসময় ইউরোপীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ঢাকার বাস্তবতার মাত্রাগত পার্থক্য থাকলেও এ নগরের প্রভাবশালী সংস্কৃতি প্রসঙ্গেও ক্যামেরোন ম্যাক্যার্থি আর গ্রেগ দিমিত্রিয়াদিসের কথাটি বলা যাবে। বস্তুত এসব কারণে নিজের চিত্রকলায় সুলতান গ্রামীণ মানুষের কর্মময় জীবন বেছে নিয়েছেন। গ্রামীণ মানুষকে তিনি শুধু উৎপাদনের ভিত্তিই মনে করেননি, মনে করেছেন বিউপনিবেশিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ভিত্তিও। তাঁর এই ভাবনায় ভারতীয় বেদান্ত দর্শনের সারসত্তাবাদের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তিনি উৎপাদন ও জীবনযাপনের এমন অংশকে উপস্থাপন করেছেন, যা কালান্তরে অপরিবর্তনশীল এবং ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি যার কোনো বিকৃতি ঘটাতে পারেনি।
এক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে, সুলতানের চিত্রকলা হলো ভাবনির্ভর; শিল্প সমালোচক হ্যাবেল, কুমারস্বামী, অবনীন্দ্রনাথের মতে, যা ভারতীয় শিল্পেরও মূল বৈশিষ্ট্য। তবে বলা দরকার, এই ভাব আধ্যাত্মিকতা নয়। হাজার বছরের শোষণ, শাসন ও বিজাতিদের লুটের পরে টিকে থাকার ক্ষমতা। গ্রামীণ জীবনের উৎপাদন ব্যবস্থা এবং তাদের কর্মময় জীবন। এই প্রসঙ্গে এ-ও বলতে হবে, সুলতান মনে করতেন, প্রাচ্যবাদী ও বঙ্গীয় পুনর্জাগরণবাদীরা এই অঞ্চলের ভুল আত্মসত্তা চিহ্নিত করেছেন।
‘এস এম সুলতান স্মারকগ্রন্থ’-এর ভূমিকায় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সুবীর চৌধুরী সুলতানের ছবিকে ‘নিম্নবর্গীর স্বপ্ন’রূপে চিহ্নিত করেছেন। এ ভূমিকায় ‘নিম্নবর্গের স্বপ্ন’ নিয়ে তাঁরা বিস্তারিত আলোচনা করেননি। কিন্তু শাব্দিক অর্থ থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, শহুরে শ্রমিক শ্রেণি বা গ্রামের কৃষক নিম্নবর্গের একটি উদাহরণ। আর এই শ্রেণির জীবনের স্বপ্নই হচ্ছে নিম্নবর্গীয় স্বপ্ন।
সুলতানের বিষয়বস্তু কৃষক হওয়ার প্রেক্ষিতে এটি অনুমেয় যে এখানে কৃষকের সেই স্বপ্নের প্রতিই মনজুরুল ও সুবীর ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু সুলতানের বিষয়বস্তু একেবারেই কৃষকের স্বপ্ন নয়; বরং তা হলো হাজার বছরের বাংলাদেশের কৃষকের কর্মময় জীবন, প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইসহ গ্রামের প্রান্তিক কৃষকের জীবনের মহাবয়ান। যা সুলতানের কাছে পরম সত্য/বাস্তবতা বলেই ধরা পড়েছে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ইতিহাস বিশেষজ্ঞ পার্থ চট্টোপাধ্যায় (১৯৯৪), রণজিৎ গুহ (২০০১) ও গৌতম ভদ্র (১৯৯৪) মনে করেন, কৃষকের সচেতন রাজনৈতিক চৈতন্য রয়েছে এবং তারা সমাজ পরিবর্তনে বিপ্লব করতে সক্ষম। কিন্তু সুলতানের চিত্রকলার স্থান, কাল, ব্যক্তি নির্বিশেষে যে বাস্তবতার বয়ান আছে তা হচ্ছে প্রকৃতি, শোষণ ও বঞ্চনার মধ্যে টিকে থাকার মানসিক শক্তি। বড় কোনো রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ইঙ্গিত এখানে নেই। এখানেই হয়তো সুলতানের সঙ্গে পার্থ, রণজিৎ ও গৌতমের কৃষকচৈতন্য পাঠের ভিন্নতা। এজন্য বলা যেতে পারে, সুলতানের ছবিকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সুবীর চৌধুরী যে অর্থে ‘নিম্নবর্গীয় স্বপ্ন’-এর কথা বলে থাকেন না কেন, তার কোনো ইঙ্গিত এ শিল্পীর শিল্পকর্মে নেই। কারণ, সুলতান মনে করতেন, বাংলাদেশের কৃষকরা যুদ্ধ করেছেন, তাদের প্রত্যাশা ভেঙেছে, কিন্তু তাদের কাছে তা কোনো রাজনৈতিক অভীক্ষা নয়।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানকে একদা সুলতান যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তা উদ্ধৃত করে এ লেখার ইতি টানব। সাক্ষাৎকারে কৃষকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেক আশা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দে ওয়্যার বিট্রেইড। এই যে একটি এক্সপ্লোরেশন প্রসেস, আমার ছবিগুলো তার প্রতি চ্যালেঞ্জ।’
লেখক: চিত্র সমালোচক; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক।
লাজলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য কোথাও যেতে না পারার সময় দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শুরু চিহ্নিত করা যায় (গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর পাসপোর্ট জব্দ করেছিল); এবং তাঁর উপন্যাস, যেমন সেইটানটাঙ্গো ও দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স-এ প্রায় অসহনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায়।
১ ঘণ্টা আগেপৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের মৃত্যু তাঁদের অস্তিত্বকে মুছে দেয় না, বরং আরও জীবন্ত করে তোলে, আরও প্রেরণার উৎসে পরিণত করে। চে গুয়েভারা ঠিক তেমনই এক নাম।
১ দিন আগেগত কয়েক বছর ধরে হারুকি মুরাকামি কেন নোবেল পান না, তা নিয়ে সাহিত্যপাড়া থেকে সংবাদপত্রের অফিসে যে পরিমাণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তা দিয়ে সাত খণ্ড রামায়ণ লেখা যাবে মনে হয়। এ এক আশ্চর্যেরও বিষয় বটে। বছরের পর বছর ধরে নোবেলের শর্ট লিস্টে থাকে এ লেখকের নাম। বাজিতেও অনেকের চেয়েও এগিয়ে থাকেন তিনি। কিন্তু পুরস্কার
১ দিন আগেআজ বিশ্ব ডাক দিবস। একটা সময়ে চিঠি ছিল একধরনের নীরব সংলাপ। একটা চিঠি লেখা হতো ভালোবাসা মিশিয়ে। এখন ভালোবাসা আসে ‘টাইপিং…’ শব্দে, এবং হারিয়ে যায় ‘লাস্ট সিন এট…’-এ। হেলাল হাফিজের মতো গভীর আবেগ নিয়ে কেউ আর লেখে না ‘এখন তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো, পত্র দিও’ বরং লিখে ‘ইউ ওকে?’
১ দিন আগে