অসম্ভবকে সব সময় সম্ভব করে ফেলাই সুপারম্যানের কাজ। সে সব সময় ‘ভালো কাজ’ করে। কিন্তু সেই ভালো কাজ করতে গিয়ে আইন বা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না সে। সমাজে কি সুপারম্যান থাকা স্বাস্থ্যকর? সুপারম্যানরা কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে সমাজের সঙ্গে?
কৌরিত্র পোদ্দার তীর্থ

আমেরিকান ডিসি কমিক্সের কাল্পনিক চরিত্র ‘সুপারম্যান’। চরিত্রটি দেশ-কাল-পাত্রভেদে অত্যন্ত জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক আইকনে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা তো বটেই, পুরো বিশ্বে সুপারহিরোর আলোচনায় সুপারম্যানের নাম সবার আগে উঠে আসে। ১৯৩৮-এর ‘অ্যাকশন কমিক্স’ হোক কিংবা হালের ‘জাস্টিস লিগ’, সুপারম্যানের প্রভাব সব জায়গায় বিদ্যমান।
সাহিত্যে মানুষের দ্বৈতসত্তা খোঁজার প্রবণতা বেশ পুরনো। জেমস থারবারের ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব ওয়াল্টার মিটি’ কিংবা রবার্ট লুইজ স্টিভেনসনের ‘স্ট্রেঞ্জ কেস অব ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড’ এমন দুটি লেখা। সুপারম্যানও এর ব্যতিক্রম নয়। তার পরিচয় দুটি। একদিকে তিনি অপমানিত, লাঞ্ছিত, সহজ-সরল সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্ট। অন্যদিকে তিনিই আবার হাত দিয়ে উড়োজাহাজ আটকানো, একা বিশাল শত্রুসেনার মোকাবিলা করা, বিপুল সমাদৃত সুপারম্যান।
আক্ষরিক অর্থেই সুপারম্যানের অসাধ্য কিছু নেই। সমাজে বিদ্যমান সব অনিয়ম, অনাচারের বিরুদ্ধে সুপারম্যান একাই লড়তে ও সমাধান করতে প্রস্তুত, তা সেটি যতই সহিংস কিংবা বিচারবহির্ভূত পদ্ধতিতে হোক না কেন।
কানাডীয় দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহান তাঁর ‘দ্যা মেকানিক্যাল ব্রাইড: ফোকলোর অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যান’ বইয়ে বলছেন, সর্বগ্রাসী ও সহিংস পদ্ধতিতে সুপারম্যান তার সমাজের সব অন্যায়ের প্রতিকার করেন। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে তিনি একাই ন্যায়বিচার খুঁজছেন। এটি কোনো সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
নাগরিক চাপে ক্লিষ্ট ও অনাচারে জর্জরিত সমাজের আর্তনাদ হিসেবে এ-জাতীয় কল্পলোকের নায়কদের উপকথা উঠে আসে। ম্যাকলুহান তাই সুপারম্যানকে আখ্যায়িত করেছেন মধ্যযুগীয় রূপকথার আধুনিক সংস্করণ হিসেবে। এখানে কোনো শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও শ্রম ছাড়াই একজন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠছে।

কোনো সন্দেহ নেই, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এমন কারও প্রতীক্ষায় দিন কাটায়। কেননা, তাঁদের কাছে না থাকে সময়, না সাধ্য। তাই লাঞ্ছিত সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্টকে সুপারম্যান হয়ে উঠতে দেখে তাঁরা নিজেকে তার জায়গায় বসান। এদিকে কল্পলোকের গল্প বেচে ডিসি কমিক্স ফুলেফেঁপে ওঠে।
গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর বিখ্যাত রচনা ‘ক্রিটো’-তে সক্রেটিস ও তাঁর বন্ধু ক্রিটোর আলোচনায় ন্যায়বিচার, আইন, ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই সংলাপে সক্রেটিস বারবার সমাজে বিদ্যমান আইনের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন এবং যুক্তিসংগত উপায়ে সেগুলোর কার্যকারিতা তুলে ধরেছেন। সক্রেটিস বলছেন, ‘মানুষ আমাদের নিয়ে কী বলবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি কর্তৃপক্ষ, যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছে, যারা সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের চোখে আমরা কোথায় আছি।’
ম্যাকলুহানও তাঁর লেখায় আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অন্যায়ের প্রতিকারের কথা বলেছেন। এর ব্যত্যয় কখনোই সমাজের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না।
সুপারম্যানের অবশ্য এসব কিছুর বালাই নেই। আইন-আদালত ইত্যাদির ধার না ধেরে, তিনি নিজেই ন্যায়বিচারের মশাল হাতে বেরিয়ে পড়েছেন।
এখানে সুপারম্যান আদতে রূপক। আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য সুপারম্যান বা বলা ভালো, ‘সুপারম্যানীয়’ মানসিকতার লোকেদের দেখা পাওয়া যায়। যারা ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ বিচারে বিশ্বাসী। এতে আসলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেল কি না, তাতে তাদের থোড়াই কেয়ার।
আমেরিকান পপ কালচারে সুপারম্যানের অসংখ্য প্রভাবের মধ্যে একটি হচ্ছে সহিংস, বিচারবহির্ভূত শাস্তির সমর্থন বৃদ্ধি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশের ‘হারকিউলিস’ কাণ্ডও এমন একটি উদাহরণ। সম্প্রতি ঘটা মব ভায়োলেন্সও এর উদাহরণ নয় কি?

আমেরিকান ডিসি কমিক্সের কাল্পনিক চরিত্র ‘সুপারম্যান’। চরিত্রটি দেশ-কাল-পাত্রভেদে অত্যন্ত জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক আইকনে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা তো বটেই, পুরো বিশ্বে সুপারহিরোর আলোচনায় সুপারম্যানের নাম সবার আগে উঠে আসে। ১৯৩৮-এর ‘অ্যাকশন কমিক্স’ হোক কিংবা হালের ‘জাস্টিস লিগ’, সুপারম্যানের প্রভাব সব জায়গায় বিদ্যমান।
সাহিত্যে মানুষের দ্বৈতসত্তা খোঁজার প্রবণতা বেশ পুরনো। জেমস থারবারের ‘দ্য সিক্রেট লাইফ অব ওয়াল্টার মিটি’ কিংবা রবার্ট লুইজ স্টিভেনসনের ‘স্ট্রেঞ্জ কেস অব ড. জেকিল অ্যান্ড মি. হাইড’ এমন দুটি লেখা। সুপারম্যানও এর ব্যতিক্রম নয়। তার পরিচয় দুটি। একদিকে তিনি অপমানিত, লাঞ্ছিত, সহজ-সরল সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্ট। অন্যদিকে তিনিই আবার হাত দিয়ে উড়োজাহাজ আটকানো, একা বিশাল শত্রুসেনার মোকাবিলা করা, বিপুল সমাদৃত সুপারম্যান।
আক্ষরিক অর্থেই সুপারম্যানের অসাধ্য কিছু নেই। সমাজে বিদ্যমান সব অনিয়ম, অনাচারের বিরুদ্ধে সুপারম্যান একাই লড়তে ও সমাধান করতে প্রস্তুত, তা সেটি যতই সহিংস কিংবা বিচারবহির্ভূত পদ্ধতিতে হোক না কেন।
কানাডীয় দার্শনিক মার্শাল ম্যাকলুহান তাঁর ‘দ্যা মেকানিক্যাল ব্রাইড: ফোকলোর অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যান’ বইয়ে বলছেন, সর্বগ্রাসী ও সহিংস পদ্ধতিতে সুপারম্যান তার সমাজের সব অন্যায়ের প্রতিকার করেন। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে তিনি একাই ন্যায়বিচার খুঁজছেন। এটি কোনো সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।
নাগরিক চাপে ক্লিষ্ট ও অনাচারে জর্জরিত সমাজের আর্তনাদ হিসেবে এ-জাতীয় কল্পলোকের নায়কদের উপকথা উঠে আসে। ম্যাকলুহান তাই সুপারম্যানকে আখ্যায়িত করেছেন মধ্যযুগীয় রূপকথার আধুনিক সংস্করণ হিসেবে। এখানে কোনো শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও শ্রম ছাড়াই একজন অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠছে।

কোনো সন্দেহ নেই, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এমন কারও প্রতীক্ষায় দিন কাটায়। কেননা, তাঁদের কাছে না থাকে সময়, না সাধ্য। তাই লাঞ্ছিত সাংবাদিক ক্লার্ক কেন্টকে সুপারম্যান হয়ে উঠতে দেখে তাঁরা নিজেকে তার জায়গায় বসান। এদিকে কল্পলোকের গল্প বেচে ডিসি কমিক্স ফুলেফেঁপে ওঠে।
গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর বিখ্যাত রচনা ‘ক্রিটো’-তে সক্রেটিস ও তাঁর বন্ধু ক্রিটোর আলোচনায় ন্যায়বিচার, আইন, ন্যায়-অন্যায়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই সংলাপে সক্রেটিস বারবার সমাজে বিদ্যমান আইনের প্রতি নিজের শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন এবং যুক্তিসংগত উপায়ে সেগুলোর কার্যকারিতা তুলে ধরেছেন। সক্রেটিস বলছেন, ‘মানুষ আমাদের নিয়ে কী বলবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি কর্তৃপক্ষ, যারা বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছে, যারা সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের চোখে আমরা কোথায় আছি।’
ম্যাকলুহানও তাঁর লেখায় আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অন্যায়ের প্রতিকারের কথা বলেছেন। এর ব্যত্যয় কখনোই সমাজের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনে না।
সুপারম্যানের অবশ্য এসব কিছুর বালাই নেই। আইন-আদালত ইত্যাদির ধার না ধেরে, তিনি নিজেই ন্যায়বিচারের মশাল হাতে বেরিয়ে পড়েছেন।
এখানে সুপারম্যান আদতে রূপক। আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য সুপারম্যান বা বলা ভালো, ‘সুপারম্যানীয়’ মানসিকতার লোকেদের দেখা পাওয়া যায়। যারা ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ বিচারে বিশ্বাসী। এতে আসলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেল কি না, তাতে তাদের থোড়াই কেয়ার।
আমেরিকান পপ কালচারে সুপারম্যানের অসংখ্য প্রভাবের মধ্যে একটি হচ্ছে সহিংস, বিচারবহির্ভূত শাস্তির সমর্থন বৃদ্ধি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশের ‘হারকিউলিস’ কাণ্ডও এমন একটি উদাহরণ। সম্প্রতি ঘটা মব ভায়োলেন্সও এর উদাহরণ নয় কি?

বাংলা গদ্যরীতির শুরু হয়েছিল তিনটি পৃথক ছাঁচ ধরে; যথাক্রমে জনবুলি অসংস্কৃত ছাঁচে উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন’, আরবি-ফারসিমিশ্রিত ছাঁচে রাম রাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণে তৎসম শব্দবহুল ছাঁচে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসনে’র মাধ্যমে।
১ দিন আগে
অস্কারের দৌড়ে থাকা নতুন সিনেমা ‘হ্যামনেট’। উইলিয়াম ও অ্যাগনেস শেক্সপিয়ারের সংসার জীবনকে কল্পনায় তুলে ধরেছে এই সিনেমা। এতে দেখানো হয়েছে সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা।
১ দিন আগে
ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে পিঠার প্রচলন বহু পুরোনো। বিভিন্ন মুখরোচক আর বাহারি স্বাদের পিঠার প্রচলন ছিল আদিকাল থেকেই। এর সন্ধান পাওয়া যায় ১০০ বছরের পুরোনো রেসিপি বইতেও। এমন তিনটি বাহারি পিঠার রেসিপি ‘মিষ্টান্ন-পাক’ বই থেকে তুলে ধরা হলো স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য।
২ দিন আগে
‘পিঠা’ শব্দটি শোনা মাত্রই চোখে ভেসে ওঠে শীতের সকালের কুয়াশা, আগুন জ্বলা চুলা, গরম–গরম ভাপা পিঠা, গুড় আর খেজুর রসের ঘ্রাণ। কিন্তু ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে কোথা থেকে এবং কীভাবে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পিঠা এত গভীরভাবে মিশে গেছে, তা কি জানেন?
২ দিন আগে