তুফায়েল আহমদ
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি লিখেছেন। গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় বৈঠকের সময় ট্রাম্প নিজ হাতে মেলানিয়ার সেই চিঠি পৌঁছে দেন পুতিনের কাছে। উপস্থিত কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন ও রুশ প্রতিনিধিদলের সামনেই পুতিন তৎক্ষণাৎ চিঠিটি পড়ে ফেলেন।
হোয়াইট হাউসের দাপ্তরিক পাতায় লেখা চিঠিটিতে ছিল শিশুদের সার্বজনীন সরলতা ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার আহ্বান।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে মেলানিয়া সেই চিঠির সফট কপি পোস্ট করেন। অনেকেই চিঠিটিকে ‘অত্যন্ত ব্যক্তিগত’ আবার অন্যদিকে ‘সতর্কভাবে রচিত’ বলে বর্ণনা করেছেন। এতে সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো উল্লেখ ছিল না, বরং ছিল শৈশব, শান্তি ও অভিন্ন মানবতার কথা।
চিঠিতে মেলানিয়া আবেদন করেছেন, বিশ্বের প্রতিটি শিশুর জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য। লিখেছেন, ‘একটি শিশুর জন্ম যেখানেই হোক না কেন, সেই শিশু ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও সম্ভাবনা নিয়ে একই রকম স্বপ্ন দেখে।’ তিনি পুতিনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বনেতারা শুধু রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না, ভবিষ্যতের রক্ষকও হন। আর সেই ভবিষ্যতের ভিত হচ্ছে নিষ্পাপ শৈশব।
পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেলানিয়া লেখেন, ‘শিশুদের রক্ষা করা শুধু এক দেশের দায়িত্ব নয়, এটি এক সার্বজনীন নৈতিক দায়িত্ব। আপনি (পুতিন) যদি তাদের হাসি রক্ষা করতে পারেন, তবে আপনি কেবল রাশিয়াকেই নয়, পুরো মানবতারই সেবা করবেন।’
যদিও চিঠিতে ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা সঙ্গে সঙ্গে এটিকে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে অপহরণ করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় শিশুদের দুর্দশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ভাষা বাদ দেওয়া ইচ্ছাকৃত হতে পারে, যাতে চিঠিটি মানবিক আবেদন হিসেবে প্রতীয়মান হয়, রাজনৈতিক দাবি হিসেবে নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, মেলানিয়ার এই চিঠি কূটনৈতিক নয়, কিন্তু প্রচণ্ড কৌশলী। এতে কোনো সামরিক ভাষা নেই, বরং এমন এক মূল্যবোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যা বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য। আর তাতেই এর কার্যকারিতা। এমন এক আহ্বান, যা পুতিনের পক্ষে সরাসরি খারিজ করা কঠিন।
তাই সরাসরি রাজনৈতিক বার্তা না হওয়া সত্ত্বেও এই চিঠি আসলে রাজনৈতিক উপকরণ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এই চিঠির মাধ্যমে মেলানিয়া ট্রাম্প যেন ফার্স্ট লেডির পরিচয় পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন রাজনীতির এক নতুন ভূমিকায়। এখন পর্যন্ত যাঁকে অনেকটাই প্রটোকল ও ফ্যাশনের সীমিত বৃত্তে আবদ্ধ ভাবা হতো, সেই তিনি এবার সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন। তাও আবার এমন সময়, যখন বিশ্ব রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন মেলানিয়ার সক্রিয়তা মূলত ‘বি বেস্ট’ নামের শিশু সুরক্ষা-ভিত্তিক একটি ক্যাম্পেইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধ কিংবা সামরিক সহায়তা–এসব আলোচনায় তাঁকে কখনোই দেখা যেত না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তরাল থেকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান যে আরও দৃঢ় হচ্ছে, তা বারবার সামনে এসেছে। তাঁর স্লোভেনিয়ান শিকড় পূর্ব ইউরোপীয় পটভূমিতে সম্ভবত এই অবস্থানের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
চিঠিটিই যেন সেই ব্যক্তিগত চিন্তার এক পাবলিক ম্যানিফেস্টো। কূটনীতিকেরা বলছেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক পলিসি পেপার নয়, আবার নিছক ‘ফার্স্ট লেডি স্টেটমেন্ট’ও নয়। বরং এটি এক ধরণের ‘সফট পাওয়ার ডিপ্লোম্যাসি’, যেখানে আবেগ ও মানবতার মোড়কে লুকানো থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
দ্য ডেইলি বিস্ট ধরনের প্ল্যাটফর্ম মেলানিয়ার নতুন ভূমিকাকে বলছে, ‘এজেন্ট মেলানিয়া।’ কিছু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি ট্রাম্প পরিবারের ‘পলিটিকাল রিবুটের’ অংশও হতে পারে।
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইরিনা পাভলোভা বলেছেন, ‘ফার্স্ট লেডিরা অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক হয়ে এমন কাজ করে ফেলতে পারেন যা আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিদের পক্ষে সম্ভব নয়। মেলানিয়া-পুতিনের এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া প্রমাণ করে যে, এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধারণা ও অগ্রাধিকারে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।’
২০১৭ সালে জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনে সাক্ষাৎ, ডিনার টেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসা এবং সাম্প্রতিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমার স্ত্রী পুতিনকে পছন্দ করে’ মন্তব্যকে ছাড়িয়ে গেছে এই চিঠির ঘটনা। এটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং নৈতিক আহ্বান; জিওপলিটিকস নয়, বরং অভিন্ন মানবিক মূল্যবোধ। এমনকি রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোও চিঠিটিকে রাজনৈতিক কনটেক্সটের বাইরেই রেখে ‘চাইল্ড প্রোটেকশন’ ও ‘ইথিকাল লিডারশিপ’ হিসেবে ফ্রেম করেছে।
এই ‘কেমিস্ট্রি’ তাই কেবল সুশোভিত ভদ্রতামূলক সম্পর্ক নয়। বরং এটি এক ধরনের সফট স্ট্র্যাটেজি—যেখানে মেলানিয়া ট্রাম্প হয়ে উঠেছেন এমন একজন অনানুষ্ঠানিক বার্তাবাহক, যাঁর উপস্থিতি ‘অরাজনৈতিক’ বলেই রাজনৈতিক।
সমর্থক বা সমালোচক উভয়ের জন্যই এই চিঠি প্রমাণ করে মার্কিন বৈদেশিক নীতিকে ট্রাম্প পরিবার কীভাবে প্রভাবিত করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে তার অবস্থান নিয়ে সমালোচনার মুখে, তখন তাঁর স্ত্রীর চিঠি ভূরাজনৈতিক হিসাবের চেয়ে মানবিক আবেদনকে করেছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চিঠিটি মস্কোর কর্মকাণ্ডে বাস্তব কোনো প্রভাব ফেলবে কি না তা অনিশ্চিত। তবে অনেকের মতে, এর গুরুত্ব নীতিগত ফলাফলের চেয়ে প্রতীকী প্রতিফলনে বেশি। রাজনৈতিক ভাষার বদলে নৈতিক ভাষায় সরাসরি পুতিনকে সম্বোধন করে মেলানিয়া ট্রাম্প জনসম্মুখে নিজের ভূমিকাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
মেলানিয়ার এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ আমেরিকার ফার্স্ট লেডিদের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ভূমিকার ঐতিহাসিক ধারার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের স্ত্রী এলেনর রুজভেল্ট জাতিসংঘে মানবাধিকার সর্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন।
৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার শান্তি আলোচনা ও বৈদেশিক নীতি আলোচনায় অংশ নিতেন। মিশেল ওবামা জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু মেলানিয়া ট্রাম্পের এই চিঠি হয়তো বিশ্ব রাজনীতিতে আগের ফার্স্ট লেডিদের ভূমিকাকে ছাড়িয়ে গেছে।
মার্কিন ইতিহাসবিদ ড. এমিলি রোডসের মতে, ফার্স্ট লেডির দপ্তরের কোনো আনুষ্ঠানিক ম্যান্ডেট নেই। তবে ইতিহাস বলে, এটি সফট পাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেলানিয়া ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। জেলেনস্কি এই উদ্যোগকে ‘মানবতা ও কৃতজ্ঞতার এক নিদর্শন’ বলে প্রশংসা করেন এবং যুদ্ধাহত শিশুদের দুরবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মেলানিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
ইউক্রেনের ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা ও দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এটিকে সংহতি প্রকাশের প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করছে।
গত বছর রাশিয়ায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া এক ছেলের মা, খারকিভের ওলেনা দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘কূটনৈতিক করিডোরগুলোতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছি। ফার্স্ট লেডিকে আমাদের শিশুদের কথা বলতে শুনে কিছুটা আশা জাগে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি চিঠি লিখেছেন। গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় বৈঠকের সময় ট্রাম্প নিজ হাতে মেলানিয়ার সেই চিঠি পৌঁছে দেন পুতিনের কাছে। উপস্থিত কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন ও রুশ প্রতিনিধিদলের সামনেই পুতিন তৎক্ষণাৎ চিঠিটি পড়ে ফেলেন।
হোয়াইট হাউসের দাপ্তরিক পাতায় লেখা চিঠিটিতে ছিল শিশুদের সার্বজনীন সরলতা ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার আহ্বান।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে মেলানিয়া সেই চিঠির সফট কপি পোস্ট করেন। অনেকেই চিঠিটিকে ‘অত্যন্ত ব্যক্তিগত’ আবার অন্যদিকে ‘সতর্কভাবে রচিত’ বলে বর্ণনা করেছেন। এতে সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধের কোনো উল্লেখ ছিল না, বরং ছিল শৈশব, শান্তি ও অভিন্ন মানবতার কথা।
চিঠিতে মেলানিয়া আবেদন করেছেন, বিশ্বের প্রতিটি শিশুর জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য। লিখেছেন, ‘একটি শিশুর জন্ম যেখানেই হোক না কেন, সেই শিশু ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও সম্ভাবনা নিয়ে একই রকম স্বপ্ন দেখে।’ তিনি পুতিনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বনেতারা শুধু রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না, ভবিষ্যতের রক্ষকও হন। আর সেই ভবিষ্যতের ভিত হচ্ছে নিষ্পাপ শৈশব।
পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেলানিয়া লেখেন, ‘শিশুদের রক্ষা করা শুধু এক দেশের দায়িত্ব নয়, এটি এক সার্বজনীন নৈতিক দায়িত্ব। আপনি (পুতিন) যদি তাদের হাসি রক্ষা করতে পারেন, তবে আপনি কেবল রাশিয়াকেই নয়, পুরো মানবতারই সেবা করবেন।’
যদিও চিঠিতে ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা সঙ্গে সঙ্গে এটিকে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে অপহরণ করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় শিশুদের দুর্দশার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ভাষা বাদ দেওয়া ইচ্ছাকৃত হতে পারে, যাতে চিঠিটি মানবিক আবেদন হিসেবে প্রতীয়মান হয়, রাজনৈতিক দাবি হিসেবে নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, মেলানিয়ার এই চিঠি কূটনৈতিক নয়, কিন্তু প্রচণ্ড কৌশলী। এতে কোনো সামরিক ভাষা নেই, বরং এমন এক মূল্যবোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যা বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য। আর তাতেই এর কার্যকারিতা। এমন এক আহ্বান, যা পুতিনের পক্ষে সরাসরি খারিজ করা কঠিন।
তাই সরাসরি রাজনৈতিক বার্তা না হওয়া সত্ত্বেও এই চিঠি আসলে রাজনৈতিক উপকরণ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এই চিঠির মাধ্যমে মেলানিয়া ট্রাম্প যেন ফার্স্ট লেডির পরিচয় পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন রাজনীতির এক নতুন ভূমিকায়। এখন পর্যন্ত যাঁকে অনেকটাই প্রটোকল ও ফ্যাশনের সীমিত বৃত্তে আবদ্ধ ভাবা হতো, সেই তিনি এবার সরাসরি কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন। তাও আবার এমন সময়, যখন বিশ্ব রাজনীতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন মেলানিয়ার সক্রিয়তা মূলত ‘বি বেস্ট’ নামের শিশু সুরক্ষা-ভিত্তিক একটি ক্যাম্পেইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পররাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধ কিংবা সামরিক সহায়তা–এসব আলোচনায় তাঁকে কখনোই দেখা যেত না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তরাল থেকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান যে আরও দৃঢ় হচ্ছে, তা বারবার সামনে এসেছে। তাঁর স্লোভেনিয়ান শিকড় পূর্ব ইউরোপীয় পটভূমিতে সম্ভবত এই অবস্থানের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
চিঠিটিই যেন সেই ব্যক্তিগত চিন্তার এক পাবলিক ম্যানিফেস্টো। কূটনীতিকেরা বলছেন, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক পলিসি পেপার নয়, আবার নিছক ‘ফার্স্ট লেডি স্টেটমেন্ট’ও নয়। বরং এটি এক ধরণের ‘সফট পাওয়ার ডিপ্লোম্যাসি’, যেখানে আবেগ ও মানবতার মোড়কে লুকানো থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
দ্য ডেইলি বিস্ট ধরনের প্ল্যাটফর্ম মেলানিয়ার নতুন ভূমিকাকে বলছে, ‘এজেন্ট মেলানিয়া।’ কিছু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি ট্রাম্প পরিবারের ‘পলিটিকাল রিবুটের’ অংশও হতে পারে।
রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইরিনা পাভলোভা বলেছেন, ‘ফার্স্ট লেডিরা অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক হয়ে এমন কাজ করে ফেলতে পারেন যা আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিদের পক্ষে সম্ভব নয়। মেলানিয়া-পুতিনের এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া প্রমাণ করে যে, এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধারণা ও অগ্রাধিকারে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।’
২০১৭ সালে জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনে সাক্ষাৎ, ডিনার টেবিলে পাশাপাশি চেয়ারে বসা এবং সাম্প্রতিক ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমার স্ত্রী পুতিনকে পছন্দ করে’ মন্তব্যকে ছাড়িয়ে গেছে এই চিঠির ঘটনা। এটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং নৈতিক আহ্বান; জিওপলিটিকস নয়, বরং অভিন্ন মানবিক মূল্যবোধ। এমনকি রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোও চিঠিটিকে রাজনৈতিক কনটেক্সটের বাইরেই রেখে ‘চাইল্ড প্রোটেকশন’ ও ‘ইথিকাল লিডারশিপ’ হিসেবে ফ্রেম করেছে।
এই ‘কেমিস্ট্রি’ তাই কেবল সুশোভিত ভদ্রতামূলক সম্পর্ক নয়। বরং এটি এক ধরনের সফট স্ট্র্যাটেজি—যেখানে মেলানিয়া ট্রাম্প হয়ে উঠেছেন এমন একজন অনানুষ্ঠানিক বার্তাবাহক, যাঁর উপস্থিতি ‘অরাজনৈতিক’ বলেই রাজনৈতিক।
সমর্থক বা সমালোচক উভয়ের জন্যই এই চিঠি প্রমাণ করে মার্কিন বৈদেশিক নীতিকে ট্রাম্প পরিবার কীভাবে প্রভাবিত করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যুতে তার অবস্থান নিয়ে সমালোচনার মুখে, তখন তাঁর স্ত্রীর চিঠি ভূরাজনৈতিক হিসাবের চেয়ে মানবিক আবেদনকে করেছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
চিঠিটি মস্কোর কর্মকাণ্ডে বাস্তব কোনো প্রভাব ফেলবে কি না তা অনিশ্চিত। তবে অনেকের মতে, এর গুরুত্ব নীতিগত ফলাফলের চেয়ে প্রতীকী প্রতিফলনে বেশি। রাজনৈতিক ভাষার বদলে নৈতিক ভাষায় সরাসরি পুতিনকে সম্বোধন করে মেলানিয়া ট্রাম্প জনসম্মুখে নিজের ভূমিকাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
মেলানিয়ার এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ আমেরিকার ফার্স্ট লেডিদের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ভূমিকার ঐতিহাসিক ধারার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের স্ত্রী এলেনর রুজভেল্ট জাতিসংঘে মানবাধিকার সর্বজনীন ঘোষণাপত্র প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন।
৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার শান্তি আলোচনা ও বৈদেশিক নীতি আলোচনায় অংশ নিতেন। মিশেল ওবামা জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু মেলানিয়া ট্রাম্পের এই চিঠি হয়তো বিশ্ব রাজনীতিতে আগের ফার্স্ট লেডিদের ভূমিকাকে ছাড়িয়ে গেছে।
মার্কিন ইতিহাসবিদ ড. এমিলি রোডসের মতে, ফার্স্ট লেডির দপ্তরের কোনো আনুষ্ঠানিক ম্যান্ডেট নেই। তবে ইতিহাস বলে, এটি সফট পাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেলানিয়া ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। জেলেনস্কি এই উদ্যোগকে ‘মানবতা ও কৃতজ্ঞতার এক নিদর্শন’ বলে প্রশংসা করেন এবং যুদ্ধাহত শিশুদের দুরবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মেলানিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
ইউক্রেনের ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা ও দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এটিকে সংহতি প্রকাশের প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করছে।
গত বছর রাশিয়ায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া এক ছেলের মা, খারকিভের ওলেনা দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘কূটনৈতিক করিডোরগুলোতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছি। ফার্স্ট লেডিকে আমাদের শিশুদের কথা বলতে শুনে কিছুটা আশা জাগে।’
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে, শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিকথা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির লেখক তিনি নন, এটি লিখেছেন পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। আইজিপি হওয়ার জন্যই তিনি এই বই সংকলন করেন এবং এতে তাঁর সঙ্গে আরও ১২৩ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে পুলিশের বরাতে খবরগুলোতে...
১৮ ঘণ্টা আগে‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণা প্রথম উত্থাপন করেন রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক থিওডর হার্জেল। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ‘মিসরের সিনাই উপদ্বীপে অবস্থিত ওয়াদি (শুষ্ক নদীর তলদেশ) থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত’ বিস্তৃত হওয়া উচিত।
২ দিন আগেক্লাইমেট চেঞ্জ, ভ্যাক্সিন, পৃথিবী গোল, মানুষ চাঁদে গেছে আরো নানা কিছু আমরা ছোটবেলা থেকে ‘বৈজ্ঞানিক সত্য’ বা হার্ড ট্রুথ হিসেবে জানি, কিন্তু কেউ কেউ তা মানে না। কেন? এরা কি শুধুই কন্সপিরেসি থিওরিস্ট? তর্ক না ভালোবাসা, কী দিয়ে এদের ‘ভালো করে দেওয়া’ যাবে? বিজ্ঞানকে না বলার বৈজ্ঞানিক কারণ কী?
৩ দিন আগেসম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। সেখানে দুই দেশের সরকার প্রধান জনশক্তি রপ্তানি, জ্বালানি সহযোগিতা, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
৪ দিন আগে