গৌতম কে শুভ
ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহির জন্য সিনেমা বানানো কখনো সহজ ছিল না। ২০১০ সালে সরকার তাঁকে ২০ বছর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মনে হচ্ছিল, তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। তখনো তিনি থামেননি। গোপনে বানালেন ‘দিস ওয়াজ নট অ্যা ফিল্ম’। ২০২২ সালে আবার গ্রেপ্তার, ২০২৩ সালে জেল থেকে বের হয়ে বানালেন ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’, আর জিতে নিলেন কানে স্বর্ণপাম। পানাহির সিনেমা আর তাঁর লড়াই নিয়ে জানাচ্ছেন গৌতম কে. শুভ
নিষেধাজ্ঞা, গৃহবন্দিত্ব আর রাষ্ট্রীয় সেন্সরের কাঁটাতার পেরিয়ে ইতিহাস গড়লেন ইরানি চলচ্চিত্র-নির্মাতা জাফর পানাহি। এতদিন তিনি সিনেমা বানিয়েছেন লুকিয়ে। উৎসবে পাঠিয়েছেন গোপনে। এবার সশরীরে উপস্থিত হয়ে তিনি নিজেই হাতে তুলে নিলেন সিনেমার অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার ‘স্বর্ণপাম’।
গতকাল ২৪ মে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার পর ঘোষণা হয় ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিজয়ীদের নাম। সেখানেই জানা যায়, জাফর পানাহির রাজনৈতিক থ্রিলার ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ পেয়েছে এবারে উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান। ২২ বছর পর কান উৎসবে তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু চোখে পড়ার মতোই নয়; বরং তা হয়ে রইল স্মরণীয় এক রাজকীয় জয়যাত্রা।
জাফর পানাহির সংগ্রামের গল্প
ইরানের কঠোর শাসনব্যবস্থার মধ্যেই এই নির্মাতা প্রথম থেকেই সমাজের নানা সংকট আর নিপীড়নের গল্প বলতে চেয়েছেন। তাঁর প্রথম দিকের সিনেমাগুলো ছিল মানুষের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তের বর্ণনা। যেখানে নারীর স্বাধীনতা, শিশুদের ভবিষ্যত ও সমাজের অবিচারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব কাজের জন্যই রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তিনি ‘অপরাধী’।
জাফর পানাহির জন্য সিনেমা বানানো কখনো সহজ ছিল না। ২০১০ সালে ইরান সরকার তাঁকে ২০ বছরের চলচ্চিত্র নির্মাণ নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে। সরকারের চোখে তিনি ছিলেন বিপ্লবী। মনে হচ্ছিল, এটা তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। যেন একেবারে সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। কিন্তু পানাহি সেটা মেনে নেননি। বরং এই কঠিন সময়কেই তিনি রূপ দিলেন এক নতুন রকম প্রতিবাদের। গৃহবন্দী অবস্থায় নিজের ঘরের ভেতরেই বানিয়ে ফেললেন সিনেমার সেট। আর সেখানেই গোপনে বানালেন ‘দিস ওয়াজ নট অ্যা ফিল্ম’।
এই সিনেমাটি ইরান থেকে একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে করে গোপনে ‘কান উৎসব’-এ পাঠানো হয়েছিল। ২০১১ সালের কানে এটি বিশেষভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল। এরপর নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক উৎসবেও দেখানো হয়। এরপর তিনি একটি গাড়িকে স্টুডিও বানিয়ে নির্মাণ করেন ‘ট্যাক্সি’, যেখানে রাস্তায় চলা সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পগুলো উঠে আসে সিনেমায়।
কিন্তু সরকার পানাহিকে ছাড়েনি। দুই সহকর্মী চলচ্চিত্র নির্মাতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করায় ২০২২ সালে তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। প্রশাসনের সমালোচনা করায় ওই দুই নির্মাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন সাত মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন পানাহি। এই সময় তিনি কারাগারে অনশনও করেন। ২০২৩ সালে বন্দীদশা থেকে মুক্তির পর ইরানের সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় (২০১০ সালের) বাতিল করে দেয়। কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে থামাতে পারেনি কখনোই। সিনেমা সব সময় তাঁর অস্ত্র হয়ে থেকেছে।
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’-এর গল্প
ইকবাল নামের লোকটি রাতে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎই এক কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে। এরপর গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে কাছের একটি গ্যারেজে যায় মেরামতের জন্য। সেখানকার এক মিস্ত্রীর নাম ভাহিদ। ইকবালকে চেনাচেনা লাগে ভাহিদের। ভাহিদ টের পায়, সে যখন কারাগারে ছিল, তখন এখানকার কর্মকর্তা ছিল ইকবাল। শুধু তা-ই নয়, কারাগারে তাঁকে অত্যাচার করত ইকবাল।
এরপর শুরু হয় একসঙ্গে নানা অতীত বন্দীদের জমায়েত। তারা পরিকল্পনা করতে থাকে, কী করে এই অত্যাচারী কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া যায়। যন্ত্রণার কথা ভাগ করে নেয় সবাই।
এই সিনেমাটি ইরান, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। পানাহি ইরানি কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়াই এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন। সিনেমার অনেক সংলাপ এসেছে পানাহি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় সেখানের কয়েদিদের কথাবার্তা থেকে।
কেন স্বর্ণপাম পেলেন
প্রথমত জুরি বোর্ড শুধু ছবির চিত্রনাট্যই দেখেনি, তাঁরা দেখেছে পরিচালকের ভয়হীন মনকেও। যেখানে সবকিছু হারানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও নিজের কথা থামেনা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তৈরি এই সিনেমা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। কান ফেস্টিভ্যাল অনেক সময়ই পুরস্কারের মাধ্যমে দমন-পীড়িত রাষ্ট্রের শিল্পীদের পাশে দাঁড়ায়। জাফর পানাহির ক্ষেত্রে সেটাও ভূমিকা রেখেছে।
অনেক ইরানি চলচ্চিত্রকার নির্বাসনে চলে গেছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু পানাহির অবস্থান ভিন্ন। তিনি বরাবরই বলেছেন, আমার দেশ আমার নিজের জায়গা। এখানের গল্পগুলো চেনা। তাই ইউরোপে গিয়ে আমার পক্ষে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়।
কান-জয়ী এই ছবিতে দৃশ্যত বড় বাজেট নেই, নেই হলিউডি গ্ল্যামার। কিন্তু যা আছে, সেটা কেবল একজন যন্ত্রণাদগ্ধ জাফর পানাহিই দেখাতে পারেন।
পাম দ’অর জেতার পর কান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের স্বৈরশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক জোরালো অভিযোগ হিসেবে বিবেচিত এই চলচ্চিত্রটি পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কানের এবারের আসর। বিবিসি কালচারে চলচ্চিত্রটিকে 'একটি ক্ষুব্ধ অথচ মজার প্রতিশোধমূলক থ্রিলার, যা দমনমূলক শাসনের প্রতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে' বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইরানবাসীর প্রতি যে বার্তা দিলেন
পুরস্কার গ্রহণের সময় জাফর পানাহি বলেন, এখন এমন একটা সময় যখন তিনি দেশে কিংবা বিদেশে থাকা সব ইরানিদের এক হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। চলুন আমরা আমাদের সব মতভেদ ভুলে যাই। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের দেশ ও তার স্বাধীনতা।
জাফর পানাহি আরও বলেন, ইরানিদের মধ্যে যেসব সমস্যা আর বিভেদ আছে, সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখতে হবে। দেশের স্বার্থে সবাইকে একত্র হতে হবে। পানাহির মতে, সিনেমা নিজেই একটি সমাজ। এখানে আমরা কী গায়ে দেব, কী করব বা করব না, সেটা যেন আর কেউ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে।
পানাহি সবাইকে স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে বলেন। সবশেষে তিনি কান উৎসবকে, উপস্থিত সবাইকে এবং তাঁকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করায় সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
এই জয় শুধু তার নয়, তা সবার জন্য যাঁরা বঞ্চিত, যাঁরা দমন-পীড়নে আছেন, যাঁরা বিশ্বাস রাখেন মুক্তির আলোয়। জাফর পানাহি আজ প্রমাণ করলেন, সিনেমা হলো মুক্তির ভাষা আর শিল্পীর হৃদয়ই সেই ভাষার জীবন্ত কণ্ঠস্বর।
ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহির জন্য সিনেমা বানানো কখনো সহজ ছিল না। ২০১০ সালে সরকার তাঁকে ২০ বছর চলচ্চিত্র নির্মাণ ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মনে হচ্ছিল, তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। তখনো তিনি থামেননি। গোপনে বানালেন ‘দিস ওয়াজ নট অ্যা ফিল্ম’। ২০২২ সালে আবার গ্রেপ্তার, ২০২৩ সালে জেল থেকে বের হয়ে বানালেন ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’, আর জিতে নিলেন কানে স্বর্ণপাম। পানাহির সিনেমা আর তাঁর লড়াই নিয়ে জানাচ্ছেন গৌতম কে. শুভ
নিষেধাজ্ঞা, গৃহবন্দিত্ব আর রাষ্ট্রীয় সেন্সরের কাঁটাতার পেরিয়ে ইতিহাস গড়লেন ইরানি চলচ্চিত্র-নির্মাতা জাফর পানাহি। এতদিন তিনি সিনেমা বানিয়েছেন লুকিয়ে। উৎসবে পাঠিয়েছেন গোপনে। এবার সশরীরে উপস্থিত হয়ে তিনি নিজেই হাতে তুলে নিলেন সিনেমার অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার ‘স্বর্ণপাম’।
গতকাল ২৪ মে শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার পর ঘোষণা হয় ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিজয়ীদের নাম। সেখানেই জানা যায়, জাফর পানাহির রাজনৈতিক থ্রিলার ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ পেয়েছে এবারে উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান। ২২ বছর পর কান উৎসবে তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু চোখে পড়ার মতোই নয়; বরং তা হয়ে রইল স্মরণীয় এক রাজকীয় জয়যাত্রা।
জাফর পানাহির সংগ্রামের গল্প
ইরানের কঠোর শাসনব্যবস্থার মধ্যেই এই নির্মাতা প্রথম থেকেই সমাজের নানা সংকট আর নিপীড়নের গল্প বলতে চেয়েছেন। তাঁর প্রথম দিকের সিনেমাগুলো ছিল মানুষের জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তের বর্ণনা। যেখানে নারীর স্বাধীনতা, শিশুদের ভবিষ্যত ও সমাজের অবিচারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব কাজের জন্যই রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে তিনি ‘অপরাধী’।
জাফর পানাহির জন্য সিনেমা বানানো কখনো সহজ ছিল না। ২০১০ সালে ইরান সরকার তাঁকে ২০ বছরের চলচ্চিত্র নির্মাণ নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে। সরকারের চোখে তিনি ছিলেন বিপ্লবী। মনে হচ্ছিল, এটা তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ। যেন একেবারে সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। কিন্তু পানাহি সেটা মেনে নেননি। বরং এই কঠিন সময়কেই তিনি রূপ দিলেন এক নতুন রকম প্রতিবাদের। গৃহবন্দী অবস্থায় নিজের ঘরের ভেতরেই বানিয়ে ফেললেন সিনেমার সেট। আর সেখানেই গোপনে বানালেন ‘দিস ওয়াজ নট অ্যা ফিল্ম’।
এই সিনেমাটি ইরান থেকে একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে করে গোপনে ‘কান উৎসব’-এ পাঠানো হয়েছিল। ২০১১ সালের কানে এটি বিশেষভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল। এরপর নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক উৎসবেও দেখানো হয়। এরপর তিনি একটি গাড়িকে স্টুডিও বানিয়ে নির্মাণ করেন ‘ট্যাক্সি’, যেখানে রাস্তায় চলা সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পগুলো উঠে আসে সিনেমায়।
কিন্তু সরকার পানাহিকে ছাড়েনি। দুই সহকর্মী চলচ্চিত্র নির্মাতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করায় ২০২২ সালে তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। প্রশাসনের সমালোচনা করায় ওই দুই নির্মাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখন সাত মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন পানাহি। এই সময় তিনি কারাগারে অনশনও করেন। ২০২৩ সালে বন্দীদশা থেকে মুক্তির পর ইরানের সুপ্রিম কোর্ট আগের রায় (২০১০ সালের) বাতিল করে দেয়। কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে থামাতে পারেনি কখনোই। সিনেমা সব সময় তাঁর অস্ত্র হয়ে থেকেছে।
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’-এর গল্প
ইকবাল নামের লোকটি রাতে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎই এক কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে। এরপর গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে কাছের একটি গ্যারেজে যায় মেরামতের জন্য। সেখানকার এক মিস্ত্রীর নাম ভাহিদ। ইকবালকে চেনাচেনা লাগে ভাহিদের। ভাহিদ টের পায়, সে যখন কারাগারে ছিল, তখন এখানকার কর্মকর্তা ছিল ইকবাল। শুধু তা-ই নয়, কারাগারে তাঁকে অত্যাচার করত ইকবাল।
এরপর শুরু হয় একসঙ্গে নানা অতীত বন্দীদের জমায়েত। তারা পরিকল্পনা করতে থাকে, কী করে এই অত্যাচারী কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া যায়। যন্ত্রণার কথা ভাগ করে নেয় সবাই।
এই সিনেমাটি ইরান, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। পানাহি ইরানি কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক অনুমতি ছাড়াই এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন। সিনেমার অনেক সংলাপ এসেছে পানাহি কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় সেখানের কয়েদিদের কথাবার্তা থেকে।
কেন স্বর্ণপাম পেলেন
প্রথমত জুরি বোর্ড শুধু ছবির চিত্রনাট্যই দেখেনি, তাঁরা দেখেছে পরিচালকের ভয়হীন মনকেও। যেখানে সবকিছু হারানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও নিজের কথা থামেনা। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় তৈরি এই সিনেমা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। কান ফেস্টিভ্যাল অনেক সময়ই পুরস্কারের মাধ্যমে দমন-পীড়িত রাষ্ট্রের শিল্পীদের পাশে দাঁড়ায়। জাফর পানাহির ক্ষেত্রে সেটাও ভূমিকা রেখেছে।
অনেক ইরানি চলচ্চিত্রকার নির্বাসনে চলে গেছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু পানাহির অবস্থান ভিন্ন। তিনি বরাবরই বলেছেন, আমার দেশ আমার নিজের জায়গা। এখানের গল্পগুলো চেনা। তাই ইউরোপে গিয়ে আমার পক্ষে সিনেমা বানানো সম্ভব নয়।
কান-জয়ী এই ছবিতে দৃশ্যত বড় বাজেট নেই, নেই হলিউডি গ্ল্যামার। কিন্তু যা আছে, সেটা কেবল একজন যন্ত্রণাদগ্ধ জাফর পানাহিই দেখাতে পারেন।
পাম দ’অর জেতার পর কান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের স্বৈরশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক জোরালো অভিযোগ হিসেবে বিবেচিত এই চলচ্চিত্রটি পুরস্কার জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কানের এবারের আসর। বিবিসি কালচারে চলচ্চিত্রটিকে 'একটি ক্ষুব্ধ অথচ মজার প্রতিশোধমূলক থ্রিলার, যা দমনমূলক শাসনের প্রতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে' বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইরানবাসীর প্রতি যে বার্তা দিলেন
পুরস্কার গ্রহণের সময় জাফর পানাহি বলেন, এখন এমন একটা সময় যখন তিনি দেশে কিংবা বিদেশে থাকা সব ইরানিদের এক হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। চলুন আমরা আমাদের সব মতভেদ ভুলে যাই। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের দেশ ও তার স্বাধীনতা।
জাফর পানাহি আরও বলেন, ইরানিদের মধ্যে যেসব সমস্যা আর বিভেদ আছে, সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখতে হবে। দেশের স্বার্থে সবাইকে একত্র হতে হবে। পানাহির মতে, সিনেমা নিজেই একটি সমাজ। এখানে আমরা কী গায়ে দেব, কী করব বা করব না, সেটা যেন আর কেউ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে না পারে।
পানাহি সবাইকে স্বপ্ন দেখা চালিয়ে যেতে বলেন। সবশেষে তিনি কান উৎসবকে, উপস্থিত সবাইকে এবং তাঁকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করায় সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।
এই জয় শুধু তার নয়, তা সবার জন্য যাঁরা বঞ্চিত, যাঁরা দমন-পীড়নে আছেন, যাঁরা বিশ্বাস রাখেন মুক্তির আলোয়। জাফর পানাহি আজ প্রমাণ করলেন, সিনেমা হলো মুক্তির ভাষা আর শিল্পীর হৃদয়ই সেই ভাষার জীবন্ত কণ্ঠস্বর।
ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে এখন ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবেই পরিচিত।
৬ ঘণ্টা আগেপ্রাচীন রোমান আইনও সম্মান রক্ষার্থে হত্যাকে ন্যায্যতা দিত এই বলে যে, ব্যভিচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত নারীদের তাদের স্বামীরা হত্যা করতে পারতেন। চীনে কিং রাজবংশের সময়ে পিতা ও স্বামীদের এমন কন্যাদের হত্যা করার অধিকার ছিল, যারা পরিবারের অসম্মান করেছে বলে মনে করা হতো।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্কনীতি সারা দুনিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে তার প্রায় সব দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশও এ আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
৩ দিন আগেনতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি দিয়ে সংশোধিত শুল্কহারের এ ঘোষণা দেয়। ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার ৬৯টি দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কহারের তালিকা দেওয়া হয়।
৫ দিন আগে