স্ট্রিম ডেস্ক
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিল।
ভারতের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ। এর ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং দেশটির কৃষি উৎপাদন গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে।
ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করলে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন-পিসিএ) মামলা করে পাকিস্তান। গত ৮ আগস্ট সেই মামলায় পাকিস্তানের পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত।
রায়ে ভারতকে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, চুক্তির মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো স্থাপনাও (জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ বা এ জাতীয় স্থাপনা) সিন্ধু নদ কিংবা সিন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নদ-নদীতে স্থাপন করতে পারবে না।
আদালত আরও বলেছে, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মূল শর্ত হলো, সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় ৩ নদী, যেগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে—সেগুলোতে পানির প্রবাহ বাধামুক্ত রাখবে ভারত। পিসিএ ভারতকে চুক্তির মূল শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদের ভারতীয় অংশের ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আদালত এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।
পিসিএ বলেছেন, ভারত যদি সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ বা এ জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে এবং চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেটি নির্মাণ করতে হবে।
আদালতের এই রায়ের পর ভারত এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পাকিস্তান এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ইস্যুতে যে রায় দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তান। আদালত ভারতকে সিন্ধু নদের পানি ‘বয়ে যেতে দেওয়া’র নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নদের ওপর বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চুক্তির শর্ত স্মরণে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।’
এর আগে গত সোমবার (১১ আগস্ট) অবশ্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘গত এপ্রিলে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর নয়াদিল্লির সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখা পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আমরা ভারতের বাঁধ নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করব এবং যখন তারা বাঁধ বানাবে, তখন আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তা ধ্বংস করে দেব। সিন্ধু নদীর পানি ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের মিসাইলের কোনো অভাব নেই। আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে ধসিয়ে নিয়ে যাব।’
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয়। চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তান স্বাক্ষর করে।
চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করা হয়। চুক্তিতে বণ্টনের নিয়মও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহারের অনুমতি পায় ভারত। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশ বহু বছর ধরে ভারতীয় ভূখণ্ডে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধ ও বিতর্কে জড়িয়েছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য পাকিস্তান এই নদীব্যবস্থার পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটি বলছে, ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারতীয় বাঁধগুলো নদীর পানির প্রবাহ কমিয়ে দেবে বলে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। দেশটির সেচনির্ভর কৃষির ৮০ শতাংশ পানি জোগায় এসব নদী।
আবার ভারত বলছে, সিন্ধু চুক্তির আওতায় কিশানগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বৈধ। পাকিস্তানের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এমন বিলম্ব এড়াতে চুক্তি সংশোধনের দাবিও তুলেছে ভারত।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পেল পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে যে সংকট, তার সমাধান কী হবে?
১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ৩০ বছরের একটি চুক্তি হয়। যার আওতায় জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানির ন্যূনতম প্রবাহ নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন করা হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকা তিস্তা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। এই নদীর পানির ন্যূনতম প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। চুক্তি নবায়নে ইতিমধ্যে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন কাজ করছে। গত মার্চে কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে তাঁরা চুক্তি নবায়নের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন।
যৌথ নদী কমিশনে (জেআরসি) বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান মোহাম্মদ আবুল হোসেন গত ৪ মার্চে গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি মেনে চলা হচ্ছে।
তবে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়। ফলে সব মিলিয়ে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে দৃশ্যত এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জাতিসংঘে কনভেশনটি হচ্ছে, দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-ন্যাভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস, ১৯৯৭। দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও এই কনভেনশনটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরার কথা বলা আছে। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বা ভারত—কেউই এই আইনটিতে স্বাক্ষর করেনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদী অববাহিকার সবচেয়ে বড় অংশীজন হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই। আর এই কারণে অভিন্ন নদীগুলোয় ভারত একতরফাভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নিজের স্বার্থে এসব নদীর পানিসম্পদকে ব্যবহার করছে। দুই দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ৩৬টিতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বাঁধ, ড্যাম, ব্যারাজ, জলকপাট ও জলবিদ্যুৎ নির্মাণ করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, যা ১৯৯৭ সালের প্রণীত জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের পানি কনভেনশনটি মেনে চলার ক্ষেত্রে ভারতের সদিচ্ছাই মূল কথা।
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার হয়। ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছিল।
ভারতের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ। এর ফলে পাকিস্তানের তিন নদী সিন্ধু, চেনাব এবং ঝিলামের পানি প্রবাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং দেশটির কৃষি উৎপাদন গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে।
ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করলে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন-পিসিএ) মামলা করে পাকিস্তান। গত ৮ আগস্ট সেই মামলায় পাকিস্তানের পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত।
রায়ে ভারতকে সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, চুক্তির মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কোনো স্থাপনাও (জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ বা এ জাতীয় স্থাপনা) সিন্ধু নদ কিংবা সিন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নদ-নদীতে স্থাপন করতে পারবে না।
আদালত আরও বলেছে, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মূল শর্ত হলো, সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় ৩ নদী, যেগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে—সেগুলোতে পানির প্রবাহ বাধামুক্ত রাখবে ভারত। পিসিএ ভারতকে চুক্তির মূল শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই নদের ভারতীয় অংশের ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আদালত এ বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন।
পিসিএ বলেছেন, ভারত যদি সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ বা এ জাতীয় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে এবং চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সেটি নির্মাণ করতে হবে।
আদালতের এই রায়ের পর ভারত এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পাকিস্তান এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘গত ৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ইস্যুতে যে রায় দিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাচ্ছে পাকিস্তান। আদালত ভারতকে সিন্ধু নদের পানি ‘বয়ে যেতে দেওয়া’র নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এই নদের ওপর বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল চুক্তির শর্ত স্মরণে রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।’
এর আগে গত সোমবার (১১ আগস্ট) অবশ্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সিন্ধু নদের ওপর বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘গত এপ্রিলে পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর নয়াদিল্লির সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখা পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আমরা ভারতের বাঁধ নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করব এবং যখন তারা বাঁধ বানাবে, তখন আমরা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তা ধ্বংস করে দেব। সিন্ধু নদীর পানি ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের মিসাইলের কোনো অভাব নেই। আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি আমরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি, তাহলে আমরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে ধসিয়ে নিয়ে যাব।’
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। সিন্ধু পানি চুক্তি অনুসরণ করেই এসব নদীর পানি ব্যবহার হয়। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি হয়। চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তান স্বাক্ষর করে।
চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু এবং এর উপনদীগুলোর পানিকে দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করা হয়। চুক্তিতে বণ্টনের নিয়মও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রুর পানি ব্যবহারের অনুমতি পায় ভারত। আর পাকিস্তানকে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদ-নদী সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাবের অধিকাংশ পানি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
চুক্তিটি কোনো দেশ একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং এতে সুস্পষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশ বহু বছর ধরে ভারতীয় ভূখণ্ডে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধ ও বিতর্কে জড়িয়েছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য পাকিস্তান এই নদীব্যবস্থার পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দেশটি বলছে, ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। তবে ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারতীয় বাঁধগুলো নদীর পানির প্রবাহ কমিয়ে দেবে বলে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। দেশটির সেচনির্ভর কৃষির ৮০ শতাংশ পানি জোগায় এসব নদী।
আবার ভারত বলছে, সিন্ধু চুক্তির আওতায় কিশানগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বৈধ। পাকিস্তানের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এমন বিলম্ব এড়াতে চুক্তি সংশোধনের দাবিও তুলেছে ভারত।
সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পেল পাকিস্তান। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে যে সংকট, তার সমাধান কী হবে?
১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ৩০ বছরের একটি চুক্তি হয়। যার আওতায় জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কায় পানির ন্যূনতম প্রবাহ নিশ্চিত করতে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন করা হয়ে থাকে। দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষের জীবন ও জীবিকা তিস্তা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। এই নদীর পানির ন্যূনতম প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। চুক্তি নবায়নে ইতিমধ্যে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশন কাজ করছে। গত মার্চে কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের কর্মকর্তারা যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে তাঁরা চুক্তি নবায়নের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করেন।
যৌথ নদী কমিশনে (জেআরসি) বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান মোহাম্মদ আবুল হোসেন গত ৪ মার্চে গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি মেনে চলা হচ্ছে।
তবে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়। ফলে সব মিলিয়ে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে দৃশ্যত এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
দুই বা ততোধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদীর পানিবণ্টন নিয়ে জাতিসংঘে কনভেশনটি হচ্ছে, দ্য কনভেনশন অন দ্য ল অব নন-ন্যাভিগেশনাল ইউজেস অব ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারকোর্সেস, ১৯৯৭। দ্বিপক্ষীয় বা আঞ্চলিক পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও এই কনভেনশনটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরার কথা বলা আছে। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বা ভারত—কেউই এই আইনটিতে স্বাক্ষর করেনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদী অববাহিকার সবচেয়ে বড় অংশীজন হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত আইনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে নেই। আর এই কারণে অভিন্ন নদীগুলোয় ভারত একতরফাভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে নিজের স্বার্থে এসব নদীর পানিসম্পদকে ব্যবহার করছে। দুই দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ৩৬টিতে ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বাঁধ, ড্যাম, ব্যারাজ, জলকপাট ও জলবিদ্যুৎ নির্মাণ করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে, যা ১৯৯৭ সালের প্রণীত জাতিসংঘ পানি কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অভিন্ন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের পানি কনভেনশনটি মেনে চলার ক্ষেত্রে ভারতের সদিচ্ছাই মূল কথা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত সোমবার (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়ায় যান। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সফরের মূল লক্ষ্য অভিবাসন সহজ করা এবং বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
৮ ঘণ্টা আগেভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন প্রভাবশালী এক চরিত্র। বাবা জওহরলাল নেহেরুর হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ‘প্রিয়দর্শিনী’ ইন্দিরা। ভারতীয় কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্য থেকে রাজনীতির জীবন শুরু করে টানা ১১ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২ দিন আগেগাজায় ইসরায়েল যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, আজ তার ৬৭৪তম দিন। গতকাল পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আরও দেড় লাখের বেশি মানুষ আহত ও ১১ হাজার মানুষ নিখোঁজ।
৩ দিন আগেদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। বিশেষ করে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই এ নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের দাবিও দীর্ঘদিনের।
৩ দিন আগে