ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ মারামারি
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা কেন বারবার সংঘর্ষে জড়ায়? কী আছে এর নেপথ্যে?
ঊর্মি শর্মা

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ মারামারি করবে, এ আর নতুন কী! এ যেন ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে’র মতো চিরন্তন সত্য একটি ব্যাপার। এই যেমন গত ২২ এপ্রিল গণমাধ্যমগুলো জানায়, সহপাঠীকে মারধরের জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে হামলা করে ঢাকা সিটি কলেজে, প্রায় তিন ঘণ্টা দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়। ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে সিটি কলেজে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১৮ জন। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে ফের সংঘর্ষ হয়। আর ১৮ মার্চের সংঘর্ষে আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ও পথচারী।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে পেছনের বছরগুলোতে এরকম আরও অনেক সংঘর্ষের ঘটনা পাওয়া যাবে। কিন্তু কেন হয় সংঘর্ষগুলো?

বেশির ভাগ সংঘর্ষগুলো ঘটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। কখনো থাকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। সব শিক্ষার্থীই নিজের প্রতিষ্ঠানকে ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবে। প্রতিষ্ঠানের গৌরব থেকেও বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনা থেকে বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ছাড়া ‘রাজনীতি’ একটি বড় কারণ। ঐতিহাসিকভাবেই এই দুই কলেজের শিক্ষার্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। দলের অনুসারীদের মধ্যে গোপন বিরোধ কিংবা ক্ষমতা এই সংঘর্ষগুলোকে আরও তীব্র করে।
একবার কোনো ঘটনা ঘটলে তার রেশ থেকে যায়; যার ক্ষোভ থেকে আবার সংঘর্ষ ঘটে। যেমন, গত বছরের ২০ নভেম্বর কোনো এক কারণে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে বাস ভাঙচুর করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই ভাঙচুরের জেরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়।
পরপর ঘটে যাওয়া এসব সংঘর্ষগুলোর কারণ সম্পর্কে ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিমেল জানান, অনেক তুচ্ছ ঘটনা থেকে ঝামেলা হয়। কিছুদিন আগে আমাদের এক বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বাজেভাবে ট্রল করে। এটা পরে মারামারিতে পৌঁছায়। ওদের কিছু গ্রুপ সবসময় মারমুখী হয়ে থাকে। সিটি কলেজ প্রশাসনের অদূরদর্শীতাও এর কারণ।
সিটি কলেজ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহির বলেন, ‘মারামারি হয় অনেক ছোট ছোট কারণে। ব্যাপারটা এমন যে ওরা মারতেছিল তাই আমরাও মারবো। ঢাকা কলেজের ফেসবুক পেইজ থেকে অনেক উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া হয়। যার কারণে আমাদের পোলাপান উত্তেজিত হয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকেও কলেজের গ্রুপ একসাথে মারামারি করতে চলে যায়’।
সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সংঘর্ষগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। অনেক সময় এটি জন্ম নেয় সুপ্ত ‘গোষ্ঠীগত বিরোধ’ থেকে। এসব কারণে প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ আরও গাঢ় হয়। এই দু্ই কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করার ধারণা গোষ্ঠীবদ্ধ ক্ষোভকে বাড়িয়ে দেয়।

এ রকম গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব আমরা আগেও দেখেছি। যেমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘তৃতীয় মাত্রা’য় গত বছরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার চন্ডারখিল গ্রামে তাজু মিয়ার গ্রুপ ও নাছির মিয়ার গ্রুপের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জেরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২টি দোকানসহ প্রায় ২০টি বসত ঘরে থাকার সব মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে তাজু মিয়ার লোকজন। এর জেরে পরদিন আবার দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। টানা দুই দিনের সংঘর্ষে নারী শিশু মিলিয়ে আহত হয় প্রায় অর্ধ শতাধিক, দোকানসহ কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট করা হয়।
সমাজ বিশ্লেষকেরা বলছেন, গোষ্ঠী বা দলগত সংঘর্ষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঘটতে থাকা সংঘর্ষগুলোর পেছনে থাকে নিজেকে বঞ্চিত বা অবহেলিত মনে করার ধারণা। এ ব্যাপারে নৃবিজ্ঞানী ভিক্টর টার্নার ‘দ্য রিচুয়াল প্রসেস: স্ট্রাকচার এন্ড অ্যান্টি-স্ট্রাকচার’ বইয়ে বলেছেন, ‘যখন কোনও গোষ্ঠী কোনো কারণে আহত বোধ করে, তখন প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা নতুন ধরনের আচরণ করে।’
সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের বারবার সংঘর্ষের কারণও কি তবে এই ধরনের বঞ্চনা? কে কার প্রভাবে নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করছে? আগামীর সমাজতাত্ত্বিকরা নিশ্চয় একদিন কারণগুলো খুঁজে বের করবেন।

ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ মারামারি করবে, এ আর নতুন কী! এ যেন ‘সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে’র মতো চিরন্তন সত্য একটি ব্যাপার। এই যেমন গত ২২ এপ্রিল গণমাধ্যমগুলো জানায়, সহপাঠীকে মারধরের জেরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে হামলা করে ঢাকা সিটি কলেজে, প্রায় তিন ঘণ্টা দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়। ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে সিটি কলেজে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১৮ জন। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে ফের সংঘর্ষ হয়। আর ১৮ মার্চের সংঘর্ষে আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ও পথচারী।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে পেছনের বছরগুলোতে এরকম আরও অনেক সংঘর্ষের ঘটনা পাওয়া যাবে। কিন্তু কেন হয় সংঘর্ষগুলো?

বেশির ভাগ সংঘর্ষগুলো ঘটে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। কখনো থাকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। সব শিক্ষার্থীই নিজের প্রতিষ্ঠানকে ‘শ্রেষ্ঠ’ ভাবে। প্রতিষ্ঠানের গৌরব থেকেও বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনা থেকে বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ছাড়া ‘রাজনীতি’ একটি বড় কারণ। ঐতিহাসিকভাবেই এই দুই কলেজের শিক্ষার্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। দলের অনুসারীদের মধ্যে গোপন বিরোধ কিংবা ক্ষমতা এই সংঘর্ষগুলোকে আরও তীব্র করে।
একবার কোনো ঘটনা ঘটলে তার রেশ থেকে যায়; যার ক্ষোভ থেকে আবার সংঘর্ষ ঘটে। যেমন, গত বছরের ২০ নভেম্বর কোনো এক কারণে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে বাস ভাঙচুর করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই ভাঙচুরের জেরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়।
পরপর ঘটে যাওয়া এসব সংঘর্ষগুলোর কারণ সম্পর্কে ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিমেল জানান, অনেক তুচ্ছ ঘটনা থেকে ঝামেলা হয়। কিছুদিন আগে আমাদের এক বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বাজেভাবে ট্রল করে। এটা পরে মারামারিতে পৌঁছায়। ওদের কিছু গ্রুপ সবসময় মারমুখী হয়ে থাকে। সিটি কলেজ প্রশাসনের অদূরদর্শীতাও এর কারণ।
সিটি কলেজ উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহির বলেন, ‘মারামারি হয় অনেক ছোট ছোট কারণে। ব্যাপারটা এমন যে ওরা মারতেছিল তাই আমরাও মারবো। ঢাকা কলেজের ফেসবুক পেইজ থেকে অনেক উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া হয়। যার কারণে আমাদের পোলাপান উত্তেজিত হয়। ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকেও কলেজের গ্রুপ একসাথে মারামারি করতে চলে যায়’।
সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সংঘর্ষগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। অনেক সময় এটি জন্ম নেয় সুপ্ত ‘গোষ্ঠীগত বিরোধ’ থেকে। এসব কারণে প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ আরও গাঢ় হয়। এই দু্ই কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করার ধারণা গোষ্ঠীবদ্ধ ক্ষোভকে বাড়িয়ে দেয়।

এ রকম গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব আমরা আগেও দেখেছি। যেমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘তৃতীয় মাত্রা’য় গত বছরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার চন্ডারখিল গ্রামে তাজু মিয়ার গ্রুপ ও নাছির মিয়ার গ্রুপের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জেরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২টি দোকানসহ প্রায় ২০টি বসত ঘরে থাকার সব মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে তাজু মিয়ার লোকজন। এর জেরে পরদিন আবার দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। টানা দুই দিনের সংঘর্ষে নারী শিশু মিলিয়ে আহত হয় প্রায় অর্ধ শতাধিক, দোকানসহ কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট করা হয়।
সমাজ বিশ্লেষকেরা বলছেন, গোষ্ঠী বা দলগত সংঘর্ষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঘটতে থাকা সংঘর্ষগুলোর পেছনে থাকে নিজেকে বঞ্চিত বা অবহেলিত মনে করার ধারণা। এ ব্যাপারে নৃবিজ্ঞানী ভিক্টর টার্নার ‘দ্য রিচুয়াল প্রসেস: স্ট্রাকচার এন্ড অ্যান্টি-স্ট্রাকচার’ বইয়ে বলেছেন, ‘যখন কোনও গোষ্ঠী কোনো কারণে আহত বোধ করে, তখন প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা নতুন ধরনের আচরণ করে।’
সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের বারবার সংঘর্ষের কারণও কি তবে এই ধরনের বঞ্চনা? কে কার প্রভাবে নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করছে? আগামীর সমাজতাত্ত্বিকরা নিশ্চয় একদিন কারণগুলো খুঁজে বের করবেন।

গত আট দশকে বিশ্বের কোনো বড় শক্তির মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হয়নি। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর এই কালপর্বকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ শান্তির সময় হিসেবে গণ্য হয়। এই শান্তি একদিনে আসেনি—দুটি ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতার পর বিশ্ব নেতারা বাধ্য হয়েছিলেন শান্তির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে।
১৮ ঘণ্টা আগে
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি দ্বিতীয়বারের মতো ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত বছর জুলাই-আগস্টের দমন-পীড়নের ঘটনায় হাসিনার অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে...
২ দিন আগে
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, যা নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত। বহু বছর ধরে এটি অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দূষণ এবং প্রাণবৈচিত্র্য হারানোর কারণে পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
২ দিন আগে
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল ৫টা ২২ মিনিটের দিকে রাজধানীর মহাখালী এলাকার কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে কড়াইল কেবল একটি বস্তি নয়, বরং ঢাকার রাজনৈতিক অর্থনীতির এক পরীক্ষাগার। সরকারি জমিতে জন্মানো এই জনপদ তিন দশকে একটি শক্তিশালী অনানুষ্ঠানিক আবাসনে পরিণত হয়েছে।
২ দিন আগে