leadT1ad

ভারতের ওপর চড়া শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় বদলের ইঙ্গিত?

রুহুল আমিনঢাকা
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ২৫
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১২
ভারতের ওপর চড়া শুল্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় বদলের ইঙ্গিত? স্ট্রিম গ্রাফিক

ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে এখন ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত মোট শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ট মিত্র হিসেবেই পরিচিত। এমনকি কোনো কোনো বিশ্লেষক তো বলেনও, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি মূলত ভারতেরই দৃষ্টি। তাহলে কি এমন ঘটনা ঘটল যে হুট করে সেই গভীর সম্পর্কে চির ধরল। ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, একের পর এক এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নিজস্ব পথে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দুই বড় অর্থনীতির দেশের এই আপাত ঠোকাঠুকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাঁক বদল, আর দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন পথে যাত্রার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নতুন এক সামরিক অভিযান শুরু করে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (ওয়ার অন টেরর) নামের এই অভিযানে তাদের সঙ্গে ছিল মিত্রদেশগুলোও। সেসময় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিল তুঙ্গে।

মোদির ব্যর্থ কৌশল

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে বেশ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও ধরে রেখেছেন ঘনিষ্ট সম্পর্ক। মোদি এমন সময় এই কৌশল অবলম্বন করেছেন, যখন পশ্চিমারা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে একাট্টা হয়ে মস্কোর ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতের রক্ষা হলো না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেছিল ভারত। এই নিরপেক্ষতার আড়ালে ভারত কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কিনছিল। পরে তা অন্যান্য দেশে বেশি দামে বিক্রি করছিল। যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন করে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, তার পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের মূল যুক্তিই এটি। যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, তেল কেনার মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে ভারত। আর রাশিয়া সেই অর্থ ঢালছে ইউক্রেনীয়দের হত্যার পেছনে। অর্থাৎ ইউক্রেনীয়দের হত্যার বিষয়টি ভারত পাত্তা দিচ্ছে না। আর এই জন্যই ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটন, ডিসিতে হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ তারিখে ওয়াশিংটন, ডিসিতে হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: রয়টার্স

ভারত বলছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড় মূল্যে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ অন্যান্য দেশও ছাড় মূল্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেলে কিনছে। যদিও ভারত কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি।

ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কে ফাটল

ট্রাম্পের সঙ্গেও মোদির সম্পর্ক দারুণ ছিল। এমনকি ট্রাম্প মোদির সঙ্গে সম্পর্কের প্রশংসাও করেছিলেন। ২০১৯ সালে এক জনসভায় ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগে কখনো ছিল না।

তাহলে সম্পর্কের অবনতি হলো কীভাবে? ট্রাম্প যখন দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে আসেন তখনো ধারণা করা হয়েছিল, দুই দেশের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে। কিন্তু সময়ের আবর্তে সেই সম্পর্কে ভাটা পড়তে থাকে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে যুদ্ধবিরতি হওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভূমিকা রেখেছেন—এই দাবির পর থেকেই সম্পর্ক পাল্টে যেতে থাকে। এতে ভারত খুশি ছিল না। সঙ্গে তো ভারতের তেল কেনা রাশিয়ার যুদ্ধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এই অভিযোগও ছিল।

ট্রাম্পও ভারতের তীব্র সমালোচনা করছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে প্রথমদিনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ‍দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়ায় ট্রাম্প স্বভাবতই হতাশ ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই হতাশা ব্যক্তও করেছিলেন তিনি। তিনি লিখেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ভারত কী করে তাতে আমার কিছু আসে যায় না।

ভারত বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ অযৌক্তিক

ভারত বলছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড় মূল্যে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ অন্যান্য দেশও ছাড় মূল্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেলে কিনছে। যদিও ভারত কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি। রাশিয়ার বৃহত্তর তেল ক্রয়কারী দেশ হচ্ছে চীন। তুরস্কের জ্বালানি খাতও রাশিয়ার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু দেশ দুটির ওপর কোনো ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের চাপ দেওয়ার কৌশল ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আতুল কেশাপ বলেন, আলাদা থাকার চেয়ে একসঙ্গে থাকা ভালো। আমাদের নির্বাচিত নেতাদের মধ্যে গত ২৫ বছর ধরে গভীর অংশীদারিত্ব ছিল। এ থেকে উভয়ে যথেষ্ট সমৃদ্ধি অর্জন করেছি এবং আমাদের উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এগিয়ে গেছি।

এটা বলা কঠিন যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হলে যুক্তরাষ্ট্রের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে। চীনের বিপরীতে ভারত ‍যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। অ্যাপলসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানির জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কারণ, ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো চীন থেকে তাদের কারখানা ভারতে স্থানান্তর করেছে।

ভারত যদি রাশিয়াকে বাদ দিয়ে অন্য কোথাও থেকে তেল কেনে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারাও তাতে প্রভাবিত হবেন। রাশিয়া অপরিশোধিত তেল ভারতে পাঠায়। ভারত তা পরিশোধন করে অন্যান্য দেশে বিক্রি করে। কারণ মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার বাইরে তেল পরিশোধন অন্তর্ভুক্ত নয়।

নতুন জোটকে গুরুত্ব দেবে ভারত

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতকে কৌশলগত জোট গড়ার ক্ষেত্রে পুনরায় বিবেচনার দিকে ঠেলে দেবে। এতে রাশিয়া চীন এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।

বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল চীন রাশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত মিলে গঠিত হয় ব্রিকস। পরে এই জোটে যোগ দেয় মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। জোটটিতে ভারতের যোগদান নিয়ে নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র। দিল্লি বিষয়টিকে চরম হস্তক্ষেপ ও জবরদস্তিমূলক মনে করে।

ট্রাম্পের আদেশে ভারত থেকে আসা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয় কিছুদিন আগেই। ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্পের আদেশে ভারত থেকে আসা পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয় কিছুদিন আগেই। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক জোরদার

ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক শুধু তেল কেনা-বেচায় সীমাবদ্ধ নয়। কয়েক দশকের এই সম্পর্ক ভেঙে ফেলাও সহজ নয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ু যুদ্ধের সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জোট নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু গেল শতাব্দীর ৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের প্রতিবেশী দীর্ঘদিনের শত্রু পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে, তখন ভারতকে অস্ত্র দেওয়া শুরু করে রাশিয়াও।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিল্লি ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে শুরু করে। এরপর দেশটি যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্র ফ্রান্স ও ইসরায়েল থেকে অস্ত্র কেনা শুরু করেছিল। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ভারতকে রাশিয়ার দিকে আরও বেশি ঠেলে দেবে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, এখনো রাশিয়ার অস্ত্র ক্রয়কারী দেশের শীর্ষে ভারত। মোদিও পুতিনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এমনকি গত বছর মোদির বিতর্কিত মস্কো সফরে তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। ওই সফরে মোদিকে গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখান পুতিন।

রাশিয়া থেকে কেন তেল ক্রয় বন্ধ করবে না ভারত

রাশিয়ার তেল ভারতের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার তা বৈশ্বিক তেল বাণিজ্যেও প্রধান ভূমিকা রাখে। ভারতের যুক্তি, দেশটি রাশিয়া থেকে তেল কেনে বৈশ্বিক বাজারে তেলের মূল্য কম রাখার জন্য। তারা মধ্যপ্রাচ্যের তেল কেনার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য তা করে না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের সময় যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হয়, তখন প্রত্যেকেই জানতো রাশিয়া থেকে ভারত তেল কিনবে। কিন্তু পশ্চিমারা এটা সহ্য করেছে কারণ তারা জানতো ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল না কেনে তবে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাবে।

ভারত যদি রাশিয়াকে বাদ দিয়ে অন্য কোথাও থেকে তেল কেনে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারাও তাতে প্রভাবিত হবেন। রাশিয়া অপরিশোধিত তেল ভারতে পাঠায়। ভারত তা পরিশোধন করে অন্যান্য দেশে বিক্রি করে। কারণ মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়ার বাইরে তেল পরিশোধন অন্তর্ভুক্ত নয়।

ট্রাম্পও ভারতের তীব্র সমালোচনা করছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে প্রথমদিনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ‍দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি সম্ভব না হওয়ায় ট্রাম্প স্বভাবতই হতাশ ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতের ক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের ক্ষোভও আছে। কারণ কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার কয়েক দিন পরই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিফ মুনীরকে ডেকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এ ছাড়া পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। পাশাপাশি পাকিস্তানে বিশাল তেলের ভান্ডার আছে এবং দেশটির সঙ্গে মিলে তেলের অনুসন্ধান চালানোর ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারত নাখোশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রকৃত পক্ষে ট্রাম্পের এই ঘোষণা দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাঁক বদলেরেই ইঙ্গিত।

কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, ট্রাম্প আসলে চাপ দিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে নেওয়ার কৌশল নিয়েছেন। ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত জিতেন্দ্র নাথ মিশ্র বলছেন, ‘ট্রাম্প হলেন বড় আবাসন ব্যবসায়ী এবং দরকষাকষিতে ঝানু। তাঁর ধরন হয়তো কূটনৈতিক নয়। তবে তিনি কূটনৈতিক উপায়ে ফল আসুক তাও চান। সুতরাং আমি মনে করি, তিনি যা করছেন সবই দরকষাকষির অংশ।’

ভারত সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনকে অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছে দিল্লি। যার মধ্যে শিল্প পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ না করা এবং গাড়ি ও অ্যালকোহলের উপর পর্যায়ক্রমে শুল্ক হ্রাস করা ইত্যাদি বিষয় রয়েছে। এমনকি তারা ইলন মাস্কের স্টারলিংক যেন ভারতে কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সেজন্য একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্টের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এই ঘাটতি কমাতে ভারতের কৃষি এবং ডেইরি খাতে প্রবেশাধিকার চায় যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়ার অন টেরর নয়, ব্যবসা-ই আসল কথা

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নতুন এক সামরিক অভিযান শুরু করে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (ওয়ার অন টেরর) নামের এই অভিযানে তাদের সঙ্গে ছিল মিত্রদেশগুলোও। সেসময় ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিল তুঙ্গে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো থাকলেও তা ঘনিষ্টতায় পৌঁছেনি। আর ভারত তো বরাবরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে মদদের অভিযোগ তুলে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র তখন উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক কর্মকৌশল ভারতের চোখেই দেখত। সঙ্গে তো চীনকে টেক্কা দেওয়ার তাগিদ ছিলই। কিন্তু ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে থাকেন। ব্যবসায়ী ট্রাম্পের কাছে আফগানিস্তান থেকে সিরিয়া, ইরাক থেকে সৌদি আরব—পররাষ্ট্র নীতির দৃশ্যমান বাঁকবদলের ইঙ্গিত মেলে। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ বদলের ক্ষেত্রে। সেটা হতে পারে ভয় দেখিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে নেওয়া, কিংবা সত্যি সত্যিই পাকিস্তানের ওপর ভর করে নয়া নীতিতে উপমহাদেশকে দেখা। তবে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

সূত্র: বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইম, আল-জাজিরা ও সিএনএন

Ad 300x250

‘এই বছরেই তারেক রহমান দেশে আসবেন’

জামায়াতে ইসলামীকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ বিশিষ্ট নাগরিকের

‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি’, সংশোধন চায় জামায়াত

হাজতে শিশু কোলে ছাত্রলীগ নেতা, দুই পুলিশ সদস্য ক্লোজড

জুলাই ঘোষণাপত্র অসম্পূর্ণ, কক্সবাজার ভ্রমণ ‘নীরব প্রতিবাদ’: হাসনাত

সম্পর্কিত