আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার
স্ট্রিম ডেস্ক
রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি আর মানবে না। এই ঘোষণার ফলে নতুন করে এক ধরনের শীতল যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৯৮৭ সালে সামরিক শক্তিসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সই হয়েছিল মধ্যবর্তী পারমাণবিক শক্তি চুক্তি (আইএনএফ)। এই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ কম দূরত্বে (৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালেই এই চুক্তি থেকে সরে আসেন। রাশিয়া গত সোমবার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত এই চুক্তি মেনে চলছিল। মস্কো জানিয়ে আসছিল, ওয়াশিংটন যতদিন চুক্তির বাইরে কিছু না করছে, ততদিন তারা এই চুক্তি থেকে সরে আসবে না।
কয়েক দিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি ‘যথাযথ স্থানে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটিকে রাশিয়া ‘হুমকি’ হিসেবে নিয়েছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ দিচ্ছিল, যাতে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কিনলে ভারতের ওপরও পাল্টা শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। যা এরই মধ্যে কার্যকর করে ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের মস্কোতে সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করা।
তাহলে কেন ক্রেমলিন এই চুক্তি থেকে সরে এল? দুই বড় পরাশক্তির মধ্যে বড় কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে কি না?
১৯৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই চুক্তি করেন তাঁরা। এই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ কম দূরত্বের (৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বা ৩১১ থেকে ৩৪১৮ মাইল) পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিল।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০-এর বেশি মিসাইল ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড বা যুদ্ধাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এই চুক্তি আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য বা সমুদ্রভিত্তিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না।
নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন তখন ৮৪৬টি এবং মস্কো ১৮৪৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপ, ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়ায় মোতায়েন করেছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেহেতু পরিস্থিতি এমন দিকে এগোচ্ছে, যেখানে ইউরোপ ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত ভূমি-ভিত্তিক মধ্য ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে—সেহেতু একই ধরনের রুশ অস্ত্র মোতায়েন না করার একতরফা নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই হুমকি মোকাবিলা ও কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতেই রাশিয়া ওই স্থগিতাদেশ তুলে নিচ্ছে।
সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত হলো ন্যাটো দেশগুলোর রুশবিরোধী নীতির পরিণাম।’
দিমিত্রি মেদভেদেভ আরও সতর্ক করে বলেন, ‘এটা এখন একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের সব প্রতিপক্ষকে মানতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেদভেদেভের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়, যেখানে ট্রাম্প রাশিয়াকে ১০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ বেঁধে দেন।
জবাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার নির্দেশ দেন যে, দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘উপযুক্ত অঞ্চলে’ মোতায়েন করতে হবে। তবে ক্রেমলিন পারমাণবিক বিষয় উসকানিমূলক বক্তব্য বলে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, মার্কিন সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় মোতায়েন আছে। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া—এটা প্রথম বিষয়।’
দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, ‘তবে সামগ্রিকভাবে, আমরা এ ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাই না এবং এর ওপর কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, পারমাণবিক ইস্যুতে সবাইকে খুব, খুব সতর্ক থাকতে হবে।’
রাশিয়া আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার পরিকল্পনার উত্তর দিতেও তারা প্রস্তুত।
রাশিয়ার অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, মস্কো চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, কারণ তাঁরা ভূমি-ভিত্তিক, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম নোভাটর ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করেছে।
রাশিয়ার দাবি ছিল, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা মাত্র ৫০০ কিলোমিটার, যা ১৯৮৭ সালের আইএনএফ চুক্তির সীমার নিচে পড়ে।
ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, চীনও একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যদিও চীন এই চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সামরিক শক্তিকে মোকাবিলা করতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছিল।
কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে প্রথম সাত মাস মূলত শুল্কযুদ্ধ (ট্যারিফ ওয়ার) নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এই যুদ্ধে তিনি বন্ধু ও প্রতিপক্ষ—কাউকেই ছাড় দেননি। তিনি চীনের ওপর এপ্রিলে আরোপ করা উচ্চ হারের শুল্ক বাতিল করে দেন। যদিও মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদন বলছে, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সামরিক ও সাইবার হুমকি।
সম্প্রতি ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া গত নভেম্বরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওরশনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা আইএনএফ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার (৩১১ মাইল)। গত সপ্তাহে পুতিন ঘোষণা দেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে মোতায়েন করা হবে, যা ইউক্রেনের সঙ্গে ১ হাজার ৮৪ কিলোমিটার (৬৭৪ মাইল) সীমান্ত ভাগ করে।
রাশিয়া গত বছর তাদের পারমাণবিক নীতি পুনর্গঠন করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত আরও শিথিল করেছে। অর্থাৎ, এখন তারা পূর্বের চেয়ে কম পরিস্থিতিতেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে প্রস্তুত।
১৯৯১ সালে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখনো বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ দুটি হলো ইউএস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ওই সময়েও তারা ছিল সামরিকভাবে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী।
দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তিও হয়। যেমন ১৯৭২ সালে অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি। আইএনএফও ছিল তাদের মধ্যে যুদ্ধ যাতে না লাগে সেজন্য আরেকটি চুক্তি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০২ সালে ‘অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি’ থেকে সরে আসেন।
এ ছাড়া ট্রাম্পের প্রথম আমলে ১৯৯২ সালের করা আকাশচুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। দুই বছর পরে রাশিয়াও একই কাজ করে।
‘স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি’ এখনো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান শেষ বড় ধরনের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। এটির নাম নিউ স্টার্ট চুক্তি।
চুক্তিটি ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর হয়। এর অধীনে দুই দেশ নিচের বিষয়গুলোতে সম্মত হয়:
১. মোট ১ হাজার ৫৫০টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৭০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমান মোতায়েন করা যাবে।
২. মোট ৮০০টি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যেতে পারে।
৩. প্রতি বছর উভয় দেশ ১৮টি ‘স্ট্রাটেজিক নিউক্লিয়ার অস্ত্র’ পরিদর্শন করতে পারবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কেউ চুক্তির সীমা লঙ্ঘন করেনি, তা নিশ্চিত করা।
২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, মস্কো এই চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ স্থগিত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রও এই চুক্তির আওতায় তাদের পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেয়। তখন এমনিতেই এই যুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
আল-জাজিরার লেখক ও সাংবাদিক সাইফ খালিদের বিশ্লেষণ অবলম্বনে লিখেছেন হুমায়ূন শফিক
রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি আর মানবে না। এই ঘোষণার ফলে নতুন করে এক ধরনের শীতল যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
১৯৮৭ সালে সামরিক শক্তিসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সই হয়েছিল মধ্যবর্তী পারমাণবিক শক্তি চুক্তি (আইএনএফ)। এই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ কম দূরত্বে (৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালেই এই চুক্তি থেকে সরে আসেন। রাশিয়া গত সোমবার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত এই চুক্তি মেনে চলছিল। মস্কো জানিয়ে আসছিল, ওয়াশিংটন যতদিন চুক্তির বাইরে কিছু না করছে, ততদিন তারা এই চুক্তি থেকে সরে আসবে না।
কয়েক দিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি ‘যথাযথ স্থানে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। এটিকে রাশিয়া ‘হুমকি’ হিসেবে নিয়েছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ দিচ্ছিল, যাতে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ সমাপ্ত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কিনলে ভারতের ওপরও পাল্টা শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন। যা এরই মধ্যে কার্যকর করে ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের মস্কোতে সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করা।
তাহলে কেন ক্রেমলিন এই চুক্তি থেকে সরে এল? দুই বড় পরাশক্তির মধ্যে বড় কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে কি না?
১৯৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই চুক্তি করেন তাঁরা। এই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ কম দূরত্বের (৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বা ৩১১ থেকে ৩৪১৮ মাইল) পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করেছিল।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০-এর বেশি মিসাইল ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে পারমাণবিক ও প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়ারহেড বা যুদ্ধাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এই চুক্তি আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য বা সমুদ্রভিত্তিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না।
নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন তখন ৮৪৬টি এবং মস্কো ১৮৪৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছিল।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপ, ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়ায় মোতায়েন করেছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেহেতু পরিস্থিতি এমন দিকে এগোচ্ছে, যেখানে ইউরোপ ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত ভূমি-ভিত্তিক মধ্য ও স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে—সেহেতু একই ধরনের রুশ অস্ত্র মোতায়েন না করার একতরফা নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই হুমকি মোকাবিলা ও কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতেই রাশিয়া ওই স্থগিতাদেশ তুলে নিচ্ছে।
সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত হলো ন্যাটো দেশগুলোর রুশবিরোধী নীতির পরিণাম।’
দিমিত্রি মেদভেদেভ আরও সতর্ক করে বলেন, ‘এটা এখন একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের সব প্রতিপক্ষকে মানতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেদভেদেভের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়, যেখানে ট্রাম্প রাশিয়াকে ১০ দিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ বেঁধে দেন।
জবাবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার নির্দেশ দেন যে, দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘উপযুক্ত অঞ্চলে’ মোতায়েন করতে হবে। তবে ক্রেমলিন পারমাণবিক বিষয় উসকানিমূলক বক্তব্য বলে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, মার্কিন সাবমেরিনগুলো ইতিমধ্যেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় মোতায়েন আছে। এটি চলমান একটি প্রক্রিয়া—এটা প্রথম বিষয়।’
দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, ‘তবে সামগ্রিকভাবে, আমরা এ ধরনের বিতর্কে জড়াতে চাই না এবং এর ওপর কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমরা বিশ্বাস করি, পারমাণবিক ইস্যুতে সবাইকে খুব, খুব সতর্ক থাকতে হবে।’
রাশিয়া আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার পরিকল্পনার উত্তর দিতেও তারা প্রস্তুত।
রাশিয়ার অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে আইএনএফ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, মস্কো চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, কারণ তাঁরা ভূমি-ভিত্তিক, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম নোভাটর ৯এম৭২৯ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করেছে।
রাশিয়ার দাবি ছিল, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা মাত্র ৫০০ কিলোমিটার, যা ১৯৮৭ সালের আইএনএফ চুক্তির সীমার নিচে পড়ে।
ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, চীনও একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, যদিও চীন এই চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সামরিক শক্তিকে মোকাবিলা করতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছিল।
কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে প্রথম সাত মাস মূলত শুল্কযুদ্ধ (ট্যারিফ ওয়ার) নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। এই যুদ্ধে তিনি বন্ধু ও প্রতিপক্ষ—কাউকেই ছাড় দেননি। তিনি চীনের ওপর এপ্রিলে আরোপ করা উচ্চ হারের শুল্ক বাতিল করে দেন। যদিও মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি প্রতিবেদন বলছে, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সামরিক ও সাইবার হুমকি।
সম্প্রতি ট্রাম্প যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া গত নভেম্বরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ওরশনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা আইএনএফ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার (৩১১ মাইল)। গত সপ্তাহে পুতিন ঘোষণা দেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে মোতায়েন করা হবে, যা ইউক্রেনের সঙ্গে ১ হাজার ৮৪ কিলোমিটার (৬৭৪ মাইল) সীমান্ত ভাগ করে।
রাশিয়া গত বছর তাদের পারমাণবিক নীতি পুনর্গঠন করেছে এবং পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত আরও শিথিল করেছে। অর্থাৎ, এখন তারা পূর্বের চেয়ে কম পরিস্থিতিতেও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে প্রস্তুত।
১৯৯১ সালে ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখনো বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ দুটি হলো ইউএস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ওই সময়েও তারা ছিল সামরিকভাবে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী।
দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তিও হয়। যেমন ১৯৭২ সালে অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি। আইএনএফও ছিল তাদের মধ্যে যুদ্ধ যাতে না লাগে সেজন্য আরেকটি চুক্তি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০২ সালে ‘অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি’ থেকে সরে আসেন।
এ ছাড়া ট্রাম্পের প্রথম আমলে ১৯৯২ সালের করা আকাশচুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। দুই বছর পরে রাশিয়াও একই কাজ করে।
‘স্ট্র্যাটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রিটি’ এখনো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান শেষ বড় ধরনের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি। এটির নাম নিউ স্টার্ট চুক্তি।
চুক্তিটি ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যকর হয়। এর অধীনে দুই দেশ নিচের বিষয়গুলোতে সম্মত হয়:
১. মোট ১ হাজার ৫৫০টির বেশি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৭০০টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমান মোতায়েন করা যাবে।
২. মোট ৮০০টি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা যেতে পারে।
৩. প্রতি বছর উভয় দেশ ১৮টি ‘স্ট্রাটেজিক নিউক্লিয়ার অস্ত্র’ পরিদর্শন করতে পারবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, কেউ চুক্তির সীমা লঙ্ঘন করেনি, তা নিশ্চিত করা।
২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, মস্কো এই চুক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ স্থগিত করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে এবং রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রও এই চুক্তির আওতায় তাদের পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেয়। তখন এমনিতেই এই যুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
আল-জাজিরার লেখক ও সাংবাদিক সাইফ খালিদের বিশ্লেষণ অবলম্বনে লিখেছেন হুমায়ূন শফিক
গাজায় ইসরায়েল যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, আজ তার ৬৭৪তম দিন। গতকাল পর্যন্ত ৬১ হাজার ৪৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আরও দেড় লাখের বেশি মানুষ আহত ও ১১ হাজার মানুষ নিখোঁজ।
৫ ঘণ্টা আগেদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। বিশেষ করে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই এ নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এই আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের দাবিও দীর্ঘদিনের।
৭ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের ১৩ জুন আচমকা ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানও নিজেদের সবর্স্ব দিয়ে পাল্টা হামলা করে। ১২ দিন স্থায়ী এ যুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির ভবিষ্যত। জীবনের ঝুঁকি থাকায় যুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি বাঙ্কারে অবস্থান নিয়েছিলেন।
২ দিন আগেফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পুরোটাই দখলে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। আজ শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃবিতে বলা হয়েছে, ‘দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা গাজা দখলে শিগগিরই কাজ শুরু করবে।’
৩ দিন আগে