মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের একটি গ্রামে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করলেও মুরাদের নাম উঠেছে ৩৬ বছর আগে পদ্মায় বিলীন আরেক গ্রামে। একইভাবে মৌসুমী আক্তারকে ভোটার করা হয়েছে ১৮ বছর আগে বিলীন আরেক গ্রামে। কিন্তু দুই ঠিকানায় গিয়ে পাওয়া যায়নি কাউকেই। ওই সব এলাকা ঘুরে এর আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন মো. রাকিবুল ইসলাম।
স্ট্রিম সংবাদদাতা

অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া ও গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রাম। গ্রামগুলো ছিল হরিরামপুর উপজেলার। নেই হওয়া গ্রাম দুটির দুজন ভোটারের নাম রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায়। তবে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য করা আবেদনের ঠিকানাটি ভিন্ন। দুই এলাকা ঘুরেই তাঁদের কারও হদিস পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে মৌসুমী আক্তার নামে একজন ভোটার আছেন। নিয়মানুযায়ী, ভোটের সময় তাদের জন্য আলাদা মুড়ি বইও তৈরি করতে হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামটি নদী ভাঙনে ১৯৮৬ সালেই বিলীন হয়ে যায়। গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামটিও ভাঙনে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় ২০০৪ সালে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না এ দুটি গ্রাম সম্পর্কে। উপজেলার অন্য এলাকার ভোটার হওয়ার আবেদন করলেও তাঁদের নাম বিলীন ওই দুই গ্রামের তালিকা তোলা হয়েছে।
ভোটার তালিকা অনুযায়ী, আজিমনগরের মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ নামে একজন ভোটার তালিকায় আছেন। গ্রামটি বিলীন হওয়ার প্রায় ৩৬ বছর পর ২০২২ সালে ওই গ্রামে তাঁকে ভোটার করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা উপজেলার সুতালড়ি ইউনিয়নের চর ডুবাইল গ্রামের তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।

একইভাবে মৌসুমী আক্তার উপজেলার গালা ইউনিয়নের কালীকাপুর মৌজার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা গ্রামের শায়নাল ফকিরের মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে ভোটার হওয়া আবেদন করেন। কিন্তু বিলীন হওয়ার ১৮ বছর পর ২০২২ সালে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের ভোটার করা হয় তাঁকে।
স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হওয়ার আবেদন করেও বহু আগে বিলীন গ্রামের ভোটার তালিকায় নাম আসা বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন। তবে তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি ২০২৪ সালে, আর এগুলোর আবেদন ও তালিকা হয়েছে ২০২২ সালে, আমি যোগ দেওয়ার আগেই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
তালিকা অনুযায়ী, উপজেলার আজিমনগরের মধ্যপাড়া গ্রামের ভোটার মুরাদ নামে ব্যক্তি। তাঁর বাবার নাম আলমাস। এ ছাড়া উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের ভোটার মৌসুমী আক্তার। তাঁর বাবার নাম মো. শায়নাল ফকির। তবে তাঁদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না ওই এলাকার সাবেক বাসিন্দা ও আশপাশের লোকজন।
মুরাদের ভোটার এলাকায় পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রাম প্রসঙ্গে আজিমনগর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভোটার তালিকায় মুরাদ নামে এক ব্যক্তির নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন শোনা যায়। তয় এ নামে কাউকে কখনো দেখিনি পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়ায়।’
এদিকে মৌসুমী আক্তারের ভোটার এলাকায় উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই গ্রামের সাবেক ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বর্তমান বাসিন্দা আরিফ বিশ্বাস বলেন, ‘একসময় কদমতলীতে অনেক বসতি থাকলেও ২০০৪ সালে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামটি ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভোটার তালিকায় মৌসুমী আক্তার নামে একজন আছে শুনেছি, কিন্তু তাঁকে কখনো দেখিনি।’ এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয় বলে তিনি জানান। গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘কাগজপত্রে একজন ভোটারের নাম থাকার বিষয়টি শুনেছি আমি, কিন্তু তাকে কোনোদিন দেখিনি।’
বিলীন দুটি গ্রামের দুজনের ভোটার হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন ১৫ সেপ্টেম্বর স্ট্রিমকে বলেন, ‘দুটি গ্রামে দুজন ভোটার তালিকায় আছেন, তবে হরিরামপুর পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের ফলে অনেকই বিভিন্ন জায়গায় বসতি স্থাপন করে স্থায়ী হয়েছেন। পরিবেশগত কারণে এমনটি হতেই পারে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করে, সেক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী তা সম্পন্ন হবে।’
স্ট্রিম অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলাকার ভোটার হিসেবে তালিকায় নাম তোলার জন্য নিজেকে উপজেলার গালা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের শায়নাল ফকিরের মেয়ে উল্লেখ করে আবেদন করেন মৌসুমী আক্তার। তবে সরেজমিনে ওই গ্রামে এ নামে কারও সন্ধান মিলেনি।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের কদমতলা গ্রামে ২৭ সেপ্টেম্বর গিয়ে গালা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যকে পাওয়া গেল না। তবে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন পার্শ্ববর্তী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ খান। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এলাকায় ঘুরে এবং স্থানীয় অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেও শায়নাল ফকির বা তাঁর মেয়ে মৌসুমি আক্তার নামে কাউকে খুঁজে না পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সুতালড়ী ইউনিয়নের চর ডুবাইল। এই গ্রামের বাসিন্দা উল্লেখ করে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন মুরাদ নামের ব্যক্তি। তবে ওই গ্রামেও খোঁজ করে মুরাদ নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সুতালড়ী ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাকিল হোসেন বলেন, ‘মুরাদ নামে কাউকে আমি তো চিনিই না। আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেও মুরাদ ও তাঁর বাবা আলমাস নামে কারোর খোঁজ পাইনি।’
নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ এপ্রিল হরিরামপুরে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন হাফিজা খাতুন। এর এক মাস পর ৪ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী এ সময় মৌসুমি আক্তার ও মুরাদের জন্য আলাদা দুটি বাঁধাই করা ভোটার তালিকা কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে।

১৮ ও ৩৬ বছর আগে পদ্মায় বিলীন গ্রামের ভোটার নিবন্ধনের তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে জানতে ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিল স্ট্রিম। এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন ছুটিতে আছেন জানিয়ে, পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে দেখা করতে বলেন। পরের দিনও অফিসে না থাকায় তাঁকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আবেদনকারীর স্থানীয় ঠিকানা ও ভোটার এলাকা ভিন্ন হতেই পারে বলে জানান জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু। তিনি বলেন, ‘দুটি একেবারে ভিন্ন বিষয়। তবে কোনো ঠিকানায়ই যদি তাঁদের না পাওয়া যায়, তাহলে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে হালনাগাদ তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনে থাকা ফোন নম্বর নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।’
হালনাগাদ ভোটার তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আবু তালহা স্ট্রিমকে বলেন, ‘হালনাগাদ ভোটার তালিকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মিডিয়ার সাথে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’
এক এলাকার তথ্য দিলেও আরেক এলাকার ভোটার হওয়া বিষয়টি ‘বেশ সন্দেহজনক’ মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মানিকগঞ্জ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল হোসেন কচি। তা ছাড়া আবেদিত এলাকা বদলে যাওয়া আইনবহির্ভূত কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। কচি বলেন, ‘এর মধ্যে সন্দেহজনক কোনো ব্যাপার থাকতে পারে। দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দা অনেকেই আছে, ভোটার তালিকায় যার নাম নেই। সেখানে অন্য এলাকা থেকে এসে ভোটার হওয়ার প্রয়োজন কী? অনেকে অপরাধ করে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। ওই লোকগুলো নিজেদের অতীত মুছে ফেলতে চাইছেন, আবার ভোটার হয়ে নিজেকে দৃশ্য রাখতেও চাইছেন কি না, খুঁজে দেখা প্রয়োজন।’
আবেদনের ভোটার এলাকা বদলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘এমন ভুলের ক্ষেত্রে ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করে ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় হরিরামপুর। ২৪৫ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নই বহু বছর ধরে পদ্মার ভাঙনের শিকার। অনেক গ্রাম বিলিন হলেও সরকারি নথি তার নাম রাখা হয় ভবিষ্যতে নদীতে চর জেগে ওঠার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ১২১ জন।
উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি গ্রামের মধ্যে একটি গ্রাম এখন আর নেই। এই ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি গ্রামের মধ্যে ৩টি গ্রাম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টি গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রাম ভোটার শূন্য। আগের ভোটারেরা তাদের ভোটার আইডিতে ঠিকানার পরিবর্তন করেছেন। তাই শূন্য হয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের চর আরচাইল গ্রামের একজন ভোটার আছেন। তবে পার্শ্ববর্তী আজিমনগর ইউনিয়নের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ একজনের নাম ভোটার তালিকায় পাওয়া গেলেও ওই এলাকা ও স্থায়ী ঠিকানায় অনুযায়ী কাউকে পাওয়া যায়নি।
আজিমনগর গ্রামের তালেব আলী জানান, নদীভাঙনের ফলে অনেক আগেই এসব গ্রামের মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে এ ঠিকানায় কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি ঘটনা কি কেবল প্রশাসনিক ভুল? নাকি এটি রাষ্ট্রীয় তথ্যব্যবস্থার দুর্বলতার এক প্রকট দৃষ্টান্ত। নদীভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের স্থানান্তর ও পরিচয়-পরিবর্তন একটি সামাজিক বাস্তবতা। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটের সুযোগ নিয়ে কি অচেনা ব্যক্তি ভুয়া পরিচয়ে ভোটার হচ্ছেন? এরকম ঘটনা আসলে কত? ব্যাপক হলে তা নির্বাচনী শুদ্ধতা ও নাগরিক সুরক্ষার জন্য হুমকি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য যাচাই ব্যবস্থায় স্পষ্ট ত্রুটি, স্থানীয় পর্যায়ে ফিল্ড যাচাইয়ের অভাব এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার ঘাটতি—সব মিলিয়ে বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং জাতীয় পরিচয় ও ভোটাধিকার ব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রশ্ন তুলে দেয়। তাই এখন জরুরি হয়ে উঠেছে এই ধরনের ‘ভুতুড়ে ভোটার’ অনুসন্ধান, তথ্যভান্ডার হালনাগাদ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অন্যথায় পদ্মায় বিলীন গ্রামগুলোর মতোই, বাস্তবতা হারিয়ে যাবে সরকারি রেকর্ডের ভেতরেও।

অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে মানিকগঞ্জের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া ও গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রাম। গ্রামগুলো ছিল হরিরামপুর উপজেলার। নেই হওয়া গ্রাম দুটির দুজন ভোটারের নাম রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায়। তবে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য করা আবেদনের ঠিকানাটি ভিন্ন। দুই এলাকা ঘুরেই তাঁদের কারও হদিস পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ এবং গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে মৌসুমী আক্তার নামে একজন ভোটার আছেন। নিয়মানুযায়ী, ভোটের সময় তাদের জন্য আলাদা মুড়ি বইও তৈরি করতে হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামটি নদী ভাঙনে ১৯৮৬ সালেই বিলীন হয়ে যায়। গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামটিও ভাঙনে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায় ২০০৪ সালে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না এ দুটি গ্রাম সম্পর্কে। উপজেলার অন্য এলাকার ভোটার হওয়ার আবেদন করলেও তাঁদের নাম বিলীন ওই দুই গ্রামের তালিকা তোলা হয়েছে।
ভোটার তালিকা অনুযায়ী, আজিমনগরের মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ নামে একজন ভোটার তালিকায় আছেন। গ্রামটি বিলীন হওয়ার প্রায় ৩৬ বছর পর ২০২২ সালে ওই গ্রামে তাঁকে ভোটার করা হয়েছে। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা উপজেলার সুতালড়ি ইউনিয়নের চর ডুবাইল গ্রামের তথ্য দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।

একইভাবে মৌসুমী আক্তার উপজেলার গালা ইউনিয়নের কালীকাপুর মৌজার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা গ্রামের শায়নাল ফকিরের মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করে ভোটার হওয়া আবেদন করেন। কিন্তু বিলীন হওয়ার ১৮ বছর পর ২০২২ সালে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের ভোটার করা হয় তাঁকে।
স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হওয়ার আবেদন করেও বহু আগে বিলীন গ্রামের ভোটার তালিকায় নাম আসা বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন। তবে তিনি বলেন, ‘আমি এসেছি ২০২৪ সালে, আর এগুলোর আবেদন ও তালিকা হয়েছে ২০২২ সালে, আমি যোগ দেওয়ার আগেই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
তালিকা অনুযায়ী, উপজেলার আজিমনগরের মধ্যপাড়া গ্রামের ভোটার মুরাদ নামে ব্যক্তি। তাঁর বাবার নাম আলমাস। এ ছাড়া উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের ভোটার মৌসুমী আক্তার। তাঁর বাবার নাম মো. শায়নাল ফকির। তবে তাঁদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না ওই এলাকার সাবেক বাসিন্দা ও আশপাশের লোকজন।
মুরাদের ভোটার এলাকায় পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রাম প্রসঙ্গে আজিমনগর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভোটার তালিকায় মুরাদ নামে এক ব্যক্তির নাম থাকার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন শোনা যায়। তয় এ নামে কাউকে কখনো দেখিনি পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়ায়।’
এদিকে মৌসুমী আক্তারের ভোটার এলাকায় উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই গ্রামের সাবেক ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বর্তমান বাসিন্দা আরিফ বিশ্বাস বলেন, ‘একসময় কদমতলীতে অনেক বসতি থাকলেও ২০০৪ সালে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামটি ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভোটার তালিকায় মৌসুমী আক্তার নামে একজন আছে শুনেছি, কিন্তু তাঁকে কখনো দেখিনি।’ এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয় বলে তিনি জানান। গোপীনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মোল্লা বলেন, ‘কাগজপত্রে একজন ভোটারের নাম থাকার বিষয়টি শুনেছি আমি, কিন্তু তাকে কোনোদিন দেখিনি।’
বিলীন দুটি গ্রামের দুজনের ভোটার হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন ১৫ সেপ্টেম্বর স্ট্রিমকে বলেন, ‘দুটি গ্রামে দুজন ভোটার তালিকায় আছেন, তবে হরিরামপুর পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের ফলে অনেকই বিভিন্ন জায়গায় বসতি স্থাপন করে স্থায়ী হয়েছেন। পরিবেশগত কারণে এমনটি হতেই পারে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করে, সেক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী তা সম্পন্ন হবে।’
স্ট্রিম অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলাকার ভোটার হিসেবে তালিকায় নাম তোলার জন্য নিজেকে উপজেলার গালা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের শায়নাল ফকিরের মেয়ে উল্লেখ করে আবেদন করেন মৌসুমী আক্তার। তবে সরেজমিনে ওই গ্রামে এ নামে কারও সন্ধান মিলেনি।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের কদমতলা গ্রামে ২৭ সেপ্টেম্বর গিয়ে গালা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যকে পাওয়া গেল না। তবে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন পার্শ্ববর্তী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ খান। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এলাকায় ঘুরে এবং স্থানীয় অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেও শায়নাল ফকির বা তাঁর মেয়ে মৌসুমি আক্তার নামে কাউকে খুঁজে না পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরের গ্রাম সুতালড়ী ইউনিয়নের চর ডুবাইল। এই গ্রামের বাসিন্দা উল্লেখ করে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন মুরাদ নামের ব্যক্তি। তবে ওই গ্রামেও খোঁজ করে মুরাদ নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।
সুতালড়ী ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শাকিল হোসেন বলেন, ‘মুরাদ নামে কাউকে আমি তো চিনিই না। আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেও মুরাদ ও তাঁর বাবা আলমাস নামে কারোর খোঁজ পাইনি।’
নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৯ এপ্রিল হরিরামপুরে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন হাফিজা খাতুন। এর এক মাস পর ৪ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী এ সময় মৌসুমি আক্তার ও মুরাদের জন্য আলাদা দুটি বাঁধাই করা ভোটার তালিকা কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে।

১৮ ও ৩৬ বছর আগে পদ্মায় বিলীন গ্রামের ভোটার নিবন্ধনের তথ্য যাচাইয়ের বিষয়ে জানতে ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েছিল স্ট্রিম। এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা হাফিজা খাতুন ছুটিতে আছেন জানিয়ে, পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে দেখা করতে বলেন। পরের দিনও অফিসে না থাকায় তাঁকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আবেদনকারীর স্থানীয় ঠিকানা ও ভোটার এলাকা ভিন্ন হতেই পারে বলে জানান জেলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু। তিনি বলেন, ‘দুটি একেবারে ভিন্ন বিষয়। তবে কোনো ঠিকানায়ই যদি তাঁদের না পাওয়া যায়, তাহলে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে হালনাগাদ তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদনে থাকা ফোন নম্বর নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।’
হালনাগাদ ভোটার তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আবু তালহা স্ট্রিমকে বলেন, ‘হালনাগাদ ভোটার তালিকা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মিডিয়ার সাথে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’
এক এলাকার তথ্য দিলেও আরেক এলাকার ভোটার হওয়া বিষয়টি ‘বেশ সন্দেহজনক’ মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মানিকগঞ্জ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল হোসেন কচি। তা ছাড়া আবেদিত এলাকা বদলে যাওয়া আইনবহির্ভূত কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন। কচি বলেন, ‘এর মধ্যে সন্দেহজনক কোনো ব্যাপার থাকতে পারে। দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দা অনেকেই আছে, ভোটার তালিকায় যার নাম নেই। সেখানে অন্য এলাকা থেকে এসে ভোটার হওয়ার প্রয়োজন কী? অনেকে অপরাধ করে আত্মগোপনের চেষ্টা করেন। ওই লোকগুলো নিজেদের অতীত মুছে ফেলতে চাইছেন, আবার ভোটার হয়ে নিজেকে দৃশ্য রাখতেও চাইছেন কি না, খুঁজে দেখা প্রয়োজন।’
আবেদনের ভোটার এলাকা বদলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘এমন ভুলের ক্ষেত্রে ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করে ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে বড় হরিরামপুর। ২৪৫ দশমিক ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নই বহু বছর ধরে পদ্মার ভাঙনের শিকার। অনেক গ্রাম বিলিন হলেও সরকারি নথি তার নাম রাখা হয় ভবিষ্যতে নদীতে চর জেগে ওঠার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ১২১ জন।
উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি গ্রামের মধ্যে একটি গ্রাম এখন আর নেই। এই ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি গ্রামের মধ্যে ৩টি গ্রাম ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪টি গ্রামের মধ্যে ১৩টি গ্রাম ভোটার শূন্য। আগের ভোটারেরা তাদের ভোটার আইডিতে ঠিকানার পরিবর্তন করেছেন। তাই শূন্য হয়ে আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলার ধুলশুড়া ইউনিয়নের চর আরচাইল গ্রামের একজন ভোটার আছেন। তবে পার্শ্ববর্তী আজিমনগর ইউনিয়নের পূর্ব আজিমনগর মধ্যপাড়া গ্রামে মুরাদ একজনের নাম ভোটার তালিকায় পাওয়া গেলেও ওই এলাকা ও স্থায়ী ঠিকানায় অনুযায়ী কাউকে পাওয়া যায়নি।
আজিমনগর গ্রামের তালেব আলী জানান, নদীভাঙনের ফলে অনেক আগেই এসব গ্রামের মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নতুন করে এ ঠিকানায় কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামে নতুন ভোটার তালিকা তৈরি ঘটনা কি কেবল প্রশাসনিক ভুল? নাকি এটি রাষ্ট্রীয় তথ্যব্যবস্থার দুর্বলতার এক প্রকট দৃষ্টান্ত। নদীভাঙনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের স্থানান্তর ও পরিচয়-পরিবর্তন একটি সামাজিক বাস্তবতা। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটের সুযোগ নিয়ে কি অচেনা ব্যক্তি ভুয়া পরিচয়ে ভোটার হচ্ছেন? এরকম ঘটনা আসলে কত? ব্যাপক হলে তা নির্বাচনী শুদ্ধতা ও নাগরিক সুরক্ষার জন্য হুমকি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য যাচাই ব্যবস্থায় স্পষ্ট ত্রুটি, স্থানীয় পর্যায়ে ফিল্ড যাচাইয়ের অভাব এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার ঘাটতি—সব মিলিয়ে বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং জাতীয় পরিচয় ও ভোটাধিকার ব্যবস্থার অখণ্ডতার প্রশ্ন তুলে দেয়। তাই এখন জরুরি হয়ে উঠেছে এই ধরনের ‘ভুতুড়ে ভোটার’ অনুসন্ধান, তথ্যভান্ডার হালনাগাদ এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অন্যথায় পদ্মায় বিলীন গ্রামগুলোর মতোই, বাস্তবতা হারিয়ে যাবে সরকারি রেকর্ডের ভেতরেও।

এক হতে যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। বিভক্ত দুই অংশ বিরোধ মিটিয়ে দ্রুতই মিলে যেতে পারে বলে স্ট্রিমকে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
৮ দিন আগে
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন শুলকবহর এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী তফাজ্জল আলী ওয়াকফ এস্টেট ঘিরে দুটি পরিবারের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ওয়াকফ সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে একপক্ষ দাবি করছে, তাঁরা যথাযথ অনুমোদন ও ওয়াকফ প্রশাসনের সুপারিশ অনুযায়ী এস্টেটের দায়িত্বে গ্রহণ করতে চান।
১৭ দিন আগে
পরিবার একটি, তবে তাঁদের মালিকানায় আছে দেশের দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থনপুষ্ট পরিবারটির কয়েক সদস্য গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়েছেন। যাঁদের মধ্যে আছেন এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানও।
২১ দিন আগে
প্রভাব খাটিয়ে গত এক যুগে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠরা ৬১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাগিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫টিই রাজধানীর বাইরে, ২৬ জেলায়। এক জেলায় একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদন দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।
২৩ দিন আগে