leadT1ad

ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া তারেক রহমানের সরাসরি সাক্ষাৎকার

বিএনপি ছাত্রদের নতুন গোষ্ঠীগুলোসহ অন্যান্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত ছিল

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
তারেক রহমান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা তারেক রহমান বলেছেন, তিনি নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসছেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাঁর পূর্বাভাস মতে, গত বছর ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন শেষ হওয়ার পর তাঁর দল বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই বিএনপি নেতা আরও বলেছেন, ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত যে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন ঘটে, সেটির পূর্ণতা আসবে কেবল একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে। ‘আমরা নিশ্চিত, আমরা জিতব,’ বলেছেন তারেক রহমান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া তাঁর প্রথম সরাসরি ইংরেজি ভাষার সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমরা এককভাবেই সরকার গঠনের অবস্থানে আছি। এ ছাড়া ‘আমার দেশে ফেরার সময় খুব কাছেই এসে গেছে বলে মনে করছি’ বলেও মন্তব্য করেছেন এই নেতা।

বাংলাদেশের পরবর্তী সরকার যেই গঠন করুক না কেন, তাদের সামনে থাকবে অনেক চ্যালেঞ্জ—যেমন নাজুক অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত গার্মেন্টস খাত, এবং ভারতের সঙ্গে খারাপ হয়ে যাওয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক। উল্লেখ্য যে শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের পর তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপগুলোতে বিএনপিকে এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছেন। ড. ইউনূসের মতো তারেক রহমানও দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ একটি ‘ফ্যাসিবাদী দল’। তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি প্রয়োজনে এমনকি, গত বছরের গণ-আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা সেই ছাত্রদের নতুন গোষ্ঠীগুলোসহ অন্যান্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত ছিল। ‘আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, তাদের ভবিষ্যৎ আছে।’ বলেন তারেক রহমান।

তিনি ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মসূচির কিছু দিকও তুলে ধরেন—যেমন শুধু গার্মেন্টস রপ্তানির ওপর নির্ভর না করে অ্যামাজন, ই-বে, আলিবাবা’র মতো অনলাইন রিটেইলারদের জন্য বাংলাদেশকে একটি ‘সাপ্লাই হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁর পররাষ্ট্রনীতি হবে ‘বাংলাদেশ সবার আগে’—এবং শেখ হাসিনার আমলের ‘একতরফা সম্পর্ক’ নতুন করে গড়ে তোলা হবে।

বাংলাদেশের রাজনীতির দুই প্রধান দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—একটি পারিবারিক বৈরিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা হচ্ছেন ১৯৭৫ সালে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা।

অন্যদিকে, তারেক রহমানের বাবা ১৯৮১ সালে নিহত জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের আরেক প্রধান নেতা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তারেক রহমানের মা খালেদা জিয়া বহু বছর বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

‘আমরা তাদের রাজনীতিতে স্বাগত জানাব। তারা তরুণ, তাদের ভবিষ্যৎ আছে।’ বলেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বর্তমানে ৫৯ বছর বয়সী। ২০০৮ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির মামলাগুলোকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও দাবী করেন যে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে দলটি নিজস্ব দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে— এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে কিনা—এই প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। ‘যদি তারা অপরাধী হিসেবে দণ্ডিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে?’—বলেন তিনি। তিনি ইঙ্গিত করেন যে দলটির অনেক নেতা এখনো নানা মামলায় অভিযুক্ত।

তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন ছিল দুর্নীতিপরায়ণ ও দমন-পীড়নে ভরা — বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে দেশ চালানো হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচিত হলে বিএনপি সরকার ইউনূস প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হওয়া দুর্নীতির তদন্ত ও বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত আনার কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি দাবী করেন যে এই পাচারের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

তবে উল্লেখযোগ্য যে, বিএনপি যখন ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টানা চার বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে।

২০০৮ সালের এক ফাঁস হওয়া মার্কিন কূটনৈতিক নথিতে তারেক রহমানকে ‘লুটেরা রাজনীতি ও সহিংসতার প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, তিনি প্রায়ই এবং প্রকাশ্যে ঘুষ দাবি করতেন।

এই প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতিটি সরকারের কিছু না কিছু ভুল থাকেই’। তবে তিনি বিএনপির আমলে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের পক্ষে কথা বলেন—যেমন, দলটি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশি কিছু সংবাদমাধ্যমের ছড়ানো ‘মিথ্যা প্রচার’ ছিল মার্কিন কূটনৈতিক নথিটির ভিত্তি। তিনি বলেন যে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা সব মামলাই এখন বাতিল হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) নেতা নাহিদ ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে আসন্ন নির্বাচন ‘সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু নাও হতে পারে’, কারণ বিএনপি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে একক আধিপত্য তৈরি করে ফেলেছে। ঢাকার রাস্তায় সর্বত্র তারেক রহমানের ছবি ছেয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি আমাদের জন্য খুব একটা আনন্দদায়ক নয়।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত