leadT1ad

আবরার ফাহাদ /আবরার ফাহাদ বাংলাদেশের পক্ষের ঐক্যের প্রতীক: আখতার হোসেন

ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লিখে শহীদ হওয়া ‘আবরার ফাহাদ বাংলাদেশের পক্ষের ঐক্যের প্রতীক’ বলে মন্তব্য করেছেন আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
বক্তব্য দিচ্ছেন আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লিখে শহীদ হওয়া ‘আবরার ফাহাদ বাংলাদেশের পক্ষের ঐক্যের প্রতীক’ বলে মন্তব্য করেছেন আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। শহীদ আবরার ফাহাদের ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকীতে স্মরণসভা ও আগ্রাসনবিরোধী আটস্তম্ভের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্যে আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাইয়ে কোনো দল-মত দেখে আমরা আন্দোলন করি নাই। আন্দোলন সেজন্য সফল হয়েছে। ঠিক তেমনি আবরার ফাহাদকে শহীদ করার পর আমরা কোনো দল-মত দেখি নাই। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা সেই আন্দোলন করেছিলাম। সেই আন্দোলনে ছাত্রঅধিকার, ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও বামপন্থীদল সবাই আমরা একসাথে হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম।’

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘ওইসময় বুয়েটের সাহসী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের সূচনা করেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের একগুঁয়ে আচরণ সেই আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল আর আমাদেরও সাহস জুগিয়েছি। শুধু বুয়েট আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই না বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে গিয়েছিল।’

সে সময়ের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘বুয়েটের হলে আবরার ফাহাদ মারা গেলে সেখান থেকে ফোন আসে— শিবির সন্দেহে একজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি তখন বলেছিলাম— এইখানে দলীয় কোনো পরিচয় মুখ্য না, সেটা বলেই আমরা সংগঠিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়েছিলাম।’

ফ্যাসিবাদী আমলে এইদেশে ইসলামোফোবিয়া ভিন্ন রূপ ধারণ করেছিল বলে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সেই সময়ে ইসলামোফোবিয়া এতটাই প্রকট ছিল যে আমরা একটা গায়েবানা জানাজা করব কিন্তু ভয়ে ছিলাম। সেই রাতে আমি হলে থাকতে পারিনি। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গায়েবানা জানাজা পড়বে— সেটাও করতে দিত না ফ্যাসিবাদীরা।’

স্মৃতিস্তম্ভ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে আবরার ফাহাদ জীবন দিয়েছিল— সেই থেকে এটাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ করার চিন্তা মাথায় চেপে বসে। এই স্মৃতিস্তম্ভের কাজ করতে গিয়ে অনেকের সহযোগিতা পেয়েছি, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রঅধিকার পরিষদের আমরা কয়েকজন সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়ে শপথ নিয়েছিলাম। যে কোনো মূল্যে এই আট স্তম্ভ করবই। সেই শপথ আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা শুরুতে বাঁশ দিয়ে আটস্তম্ভ নির্মাণ করি। অনলাইনে মানুষেরা দাঁড়িয়ে, প্রবাসীরা ওয়ানটাইম গ্লাস দাড় করিয়ে আটস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। সেই সময় এগুলো থেকেই আমরা প্রেরণা পাই।’

২০২২ সালের আবরার ফাহাদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আবরার ফাহাদের স্মরণসভার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সেটা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হামলায় আমরা করতে পারিনি। তাঁরা করতে দেয়নি। কারণ তাঁরা জানতো আবরার ফাহাদ ইন্ডিয়ান আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছে। তাঁরা জানতো আবরার ফাহাদ মাথা নোয়াবার নয়। পরিশেষে বলতে চাই, যতদিন এই বাংলাদেশ তাঁর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে পারবে ততদিন বাংলাদেশে আবরার ফাহাদ অমর হয়ে থাকবে।’

স্মরণসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই বিকেল চারটার দিকে আটস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব ও আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবদুল কাদের, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, ইউনাইটেড পিপলস' বাংলাদেশের মুখ্য সমন্বয়ক রাফে সালমান রিফাত, বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাসিব চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক শাহজাহান মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত