leadT1ad

ডাকসু ইশতেহার ০২

নারীদের জন্য কী আছে ডাকসুর প্রার্থীদের ইশতেহারে

আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে সারাদেশে। এবারের ভোটযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে স্ট্রিম-এর বিশেষ আয়োজন। প্রতিনিধিত্বশীল প্যানেলগুলোর ইশতেহার পর্যালোচনা করে এখানে থাকছে কী আছে কোন প্যানেলের ইশতেহারে।

শতাব্দীকা ঊর্মিঢাকা
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ইশতেহার প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্যানেল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। এই ইশতেহারগুলোতে শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন পর্ষদের ইশতেহারে নারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিরোধ পর্ষদ

'প্রতিরোধ পর্ষদ' নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাদের ইশতেহারে নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার নিরাপত্তা, অবাধে চলাফেরা এবং মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলকে কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছাত্রী হল এবং ডিপার্টমেন্টগুলোতে আধুনিক স্যানিটারি প্যাডের ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, গর্ভবতী ও নবজাতকের মায়েদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।

ছাত্রী হলে 'লোকাল গার্ডিয়ান' প্রথার অবসান ঘটিয়ে হয়রানিমুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং নারীদের জন্য হল প্রবেশের সময়সীমা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীরা যাতে রাতে জরুরি চিকিৎসার জন্য সহজে বাইরে যেতে পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

এই প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নারীদের সংকট নিয়ে প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়ন করার দিকে অগ্রসর হবে।’

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য

'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেল নারীবান্ধব ও সকলের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরির লক্ষ্যে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছে। তারা যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলকে আরও কার্যকর, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের আপডেট নিয়মিত অনলাইনে জানানোর ব্যবস্থা, এবং আইনি সহায়তা সেল গঠনের উপর জোর দিয়েছে।

আমাদের ইশতেহারে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা হয়েছে, যার বাস্তব রূপ দিতে চাই। তারা যোগ্য প্রার্থী খুঁজেই ভোট দেবেন। উমামা ফাতেমা, ভিপিপ্রার্থী, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য

সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সেল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে অনলাইন বা অফলাইনে যেকোনো ধরনের হয়রানি বা বুলিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া যায়। তারা নারীদের জন্য মাসে তিন দিনের ঐচ্ছিক 'পিরিয়ড লিভ' চালু করা, প্রতিটি হল ও ডিপার্টমেন্টে স্যানিটারি প্যাডের ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, এবং সন্তান রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খোলার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে।

এ ছাড়া নারী হলগুলোর রিডিং রুম ও সেন্ট্রাল লাইব্রেরি সাউন্ডপ্রুফ করা, হলগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিকাব পরিহিতদের জন্য নারী পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়গুলোও তাদের ইশতেহারে স্থান পেয়েছে।

দূরবর্তী নারী হলগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং রাত পর্যন্ত নারীদের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপরও তারা আলোকপাত করেছে।

ভিপিপ্রার্থী উমামা ফাতেমা গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের ইশতেহারে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা হয়েছে, যার বাস্তব রূপ দিতে চাই। তারা যোগ্য প্রার্থী খুঁজেই ভোট দেবেন।’

ছাত্রদলের আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ

এই প্যানেল 'নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি' শীর্ষক একটি আলাদা বিভাগ রেখেছে। তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।

নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়াই আমাদের লক্ষ্য। আবিদুল ইসলাম খান, ভিপিপ্রার্থী, ছাত্রদল

তারা ভর্তুকি মূল্যে স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, হল কর্মীদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, এবং মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক নারী চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা বলেছে। নারী হলগুলোতে রাত ৯টার পর প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, এক হল থেকে অন্য হলে প্রবেশ সহজীকরণ, এবং জরুরি প্রয়োজনে অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে রাতে হল থেকে বের হওয়ার নিয়ম সহজ করার বিষয়গুলোও তাদের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত।

তারা বেকার নারী স্নাতকদের জন্য স্বল্প খরচে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় হোস্টেল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও, নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য 'নারী উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তহবিল' গঠন এবং সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়াই আমাদের লক্ষ্য।'

নারীদের সকল জরুরি প্রয়োজন পূরণে আমরা চেষ্টা করব। সর্বোপরি, পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষাঙ্গনকে একটি সুস্থ পরিবেশ দিতে আমরা কাজ করব। সাবিকুন্নাহার তামান্না, কার্যনির্বাহী সদস্য প্রার্থী, ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট তাদের 'ইয়েস' তালিকায় 'নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা'কে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা তাদের মূল অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে একটি। তাদের ৩৬ দফা ইশতেহারের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশাধিকার, মাতৃত্বকালীন ছুটি, এবং কমনরুমে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো।

এই প্যানেলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী সাবিকুন্নাহার তামান্না স্ট্রিমকে বলেন, ‘নারীদের সকল জরুরি প্রয়োজন পূরণে আমরা চেষ্টা করব। সর্বোপরি, পুরো ক্যাম্পাসের শিক্ষাঙ্গনকে একটি সুস্থ পরিবেশ দিতে আমরা কাজ করব।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত