স্ট্রিম প্রতিবেদক
জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ নির্ধারণ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সনদ সই অনুষ্ঠানের জন্য জন্য ইতিমধ্যে ৩০ দল ও জোট নামও জমা দিয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবেও কমিশন। সনদ সই হলেও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রণয়নের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আবার গণভোটের সময় নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক পার্টি গণভোটের সময় নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে এখনো পর্যন্ত অনড় আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে ঐকমত্য কমিশন। তবে, সেখানে সনদে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশনের দেওয়া কোনো সুপারিশ থাকবে না। সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সইয়ের পরে বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তৈরি বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেবে কমিশন।
ঐকমত্য কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়নের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাই আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সই অনুষ্ঠান শেষে সেটি সরকারের কাছে আলাদাভাবে জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। গত জুলাই মাসে জুলাই জাতীয় সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল কমিশনের। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এত দিন সনদ আটকে ছিল।
ঐকমত্য কমিশন আগেই জানিয়েছিল, বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়েছে। তবে গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ–পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা কাটেনি। এখন কমিশন বিশেষজ্ঞ মতামত ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে একটি উপায় সরকারকে সুপারিশ করবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তৃতীয় ধাপের পঞ্চম দিন তথা শেষ দিনের সংলাপ গত বুধবার (৮ অক্টোবর) শেষ হয়েছে। সেখানে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দলগুলো একমত হলেও, সময় নির্ধারণে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিএনপিসহ তাদের যুগপৎ আন্দোলনের অধিকাংশ শরিক জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি এবং আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট চায়।
বিষয়টির সমাধানে কমিশন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। শনিবার (১১ অক্টোবর) জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে কমিশন। সেখানেও দল দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে, রোববার (১২ অক্টোবর) বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের পক্ষে তাদের আগের অবস্থান তুলে ধরেছে।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকে মূলত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়, গণভোটের সময় এবং ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশন দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি আনার চেষ্টা করলেও, তিনটি দলই তাদের আগের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মতপার্থক্য দূর করার প্রয়াস সফল হয়নি।
সূত্র মতে, শনিবার (১১ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। ওইদিন বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করে কমিশন।
দুই দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। এনসিপি নেতারা জানান, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংকট নিরসন না হলে সংস্কার প্রক্রিয়া অর্থহীন হবে।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের দিন গণভোট হলে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে— প্রথমত, দলীয় প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মানুষ গণভোটে আগ্রহ হারাতে পারে; দ্বিতীয়ত, সহিংসতা বা সংঘাতের কারণে অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে গণভোটও প্রভাবিত হবে। তাদের মতে, জুলাই সনদের মর্যাদা রক্ষায় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আলোচনা তো গত বুধবারই শেষ হয়েছে। গণভোট নিয়ে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। নতুন কোনো ভাবনা নেই।’
সূত্রে জানা গেছে, এনসিপিও নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই সনদের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) বিষয়টি তুলে দিলে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে তারা ছাড় দিতে রাজি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নিয়ে গণভোটে একটি প্রশ্নের মাধ্যমেই মীমাংসা হতে হবে। সেখানে আপত্তির বিষয় রাখা যাবে না। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে জুলাই সনদ গুরুত্ব হারাবে। তাই জনগণকে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্ত করার জন্য নির্বাচনের আগেই গণভোট জরুরি।’
এদিকে, গতকাল রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনই সবচেয়ে যৌক্তিক।’
তাঁর যুক্তি অনুযায়ী, ঐদিন ভোটের হার বেশি থাকবে, মানুষের আগ্রহও থাকবে এবং খরচ কম হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করলে ভোটের উপস্থিতি কমার পাশাপাশি সহিংসতার আশঙ্কা ব্যয় বাড়বে বলেও বিএনপি মনে করে।
এই বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে অনেকগুলো। সেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা শেষ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামত নিয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ তারিখে আমরা সবাই আশা করছি, যেগুলোতে একমত হয়েছে সেগুলোতে সব দল সই করবে। যেসব বিষয়ে একমত হতে পারেনি সেগুলো আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের ম্যানিফেস্টো হিসেবে নিয়ে আসবে জনগণের সামনে। সেটাকে প্রস্তাব আকারে তারা তুলে ধরবে সেভাবেই তারা চিন্তা করেছেন।’
ঐকমত্য কমিশনের এক সদস্য জানান, গণভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেওয়ার জন্য একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। সনদে সইয়ের জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে কমিশনে নাম পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘৩০টি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে তাদের স্বাক্ষরকারী প্রতিনিধিদের নাম নিশ্চিত করেছে।’
মনির হায়দার বলেন, ‘জুলাই সনদের একটি “মাস্টার পিস” থাকবে, যার তিনটি অংশ থাকবে, সংস্কার উদ্যোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ ভূমিকা, সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা এবং একটি অঙ্গীকারনামা। এদিকে, অঙ্গীকারনামার ৩০টি কপি দলীয় প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরে প্রতিনিধিরা ওই “মাস্টারপিস”-এও স্বাক্ষর করবেন।’
জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান আয়োজনে কমিশনকে সহায়তা করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে কমিশন। দুই পর্বের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সই অনুষ্ঠান মাগরিবের আগেই শেষ করবে। নামাজের বিরতির পরে দ্বিতীয় পর্বের প্রজেকশন ম্যাপিংয়ে সনদ তৈরির পটভূমি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
এদিকে, জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রজেকশন ম্যাপিং ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
এই ব্যাপারে সাংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় পরিবর্তন। এই দলিলটিই আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা ও একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। এই নতুন সাংস্কৃতিক পথে আমাদের রাজনীতিতে প্যারাডাইম শিফট ঘটছে। যা সমাজকেও প্রভাবিত করবে। তাই আমরা চাই—জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর জীবনে স্মরণীয় হয়ে উঠুক।’
জুলাই সনদ সইয়ের তারিখ নির্ধারণ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সনদ সই অনুষ্ঠানের জন্য জন্য ইতিমধ্যে ৩০ দল ও জোট নামও জমা দিয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবেও কমিশন। সনদ সই হলেও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রণয়নের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আবার গণভোটের সময় নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক পার্টি গণভোটের সময় নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে এখনো পর্যন্ত অনড় আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য আগামীকাল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে ঐকমত্য কমিশন। তবে, সেখানে সনদে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে কমিশনের দেওয়া কোনো সুপারিশ থাকবে না। সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সইয়ের পরে বিশেষজ্ঞ ও দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তৈরি বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেবে কমিশন।
ঐকমত্য কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়নের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাই আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সই অনুষ্ঠান শেষে সেটি সরকারের কাছে আলাদাভাবে জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। গত জুলাই মাসে জুলাই জাতীয় সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল কমিশনের। সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এত দিন সনদ আটকে ছিল।
ঐকমত্য কমিশন আগেই জানিয়েছিল, বাস্তবায়নের পদ্ধতি সনদের অংশ হবে না। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে। আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়েছে। তবে গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পথ–পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা কাটেনি। এখন কমিশন বিশেষজ্ঞ মতামত ও দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে একটি উপায় সরকারকে সুপারিশ করবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে তৃতীয় ধাপের পঞ্চম দিন তথা শেষ দিনের সংলাপ গত বুধবার (৮ অক্টোবর) শেষ হয়েছে। সেখানে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দলগুলো একমত হলেও, সময় নির্ধারণে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। বিএনপিসহ তাদের যুগপৎ আন্দোলনের অধিকাংশ শরিক জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি এবং আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই গণভোট চায়।
বিষয়টির সমাধানে কমিশন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। শনিবার (১১ অক্টোবর) জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে কমিশন। সেখানেও দল দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে, রোববার (১২ অক্টোবর) বিএনপি সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের পক্ষে তাদের আগের অবস্থান তুলে ধরেছে।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকে মূলত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়, গণভোটের সময় এবং ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশন দলগুলোর অবস্থান কাছাকাছি আনার চেষ্টা করলেও, তিনটি দলই তাদের আগের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত মতপার্থক্য দূর করার প্রয়াস সফল হয়নি।
সূত্র মতে, শনিবার (১১ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। ওইদিন বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের সঙ্গেও পৃথক বৈঠক করে কমিশন।
দুই দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। এনসিপি নেতারা জানান, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংকট নিরসন না হলে সংস্কার প্রক্রিয়া অর্থহীন হবে।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের দিন গণভোট হলে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে— প্রথমত, দলীয় প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মানুষ গণভোটে আগ্রহ হারাতে পারে; দ্বিতীয়ত, সহিংসতা বা সংঘাতের কারণে অনেক ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলে গণভোটও প্রভাবিত হবে। তাদের মতে, জুলাই সনদের মর্যাদা রক্ষায় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়াই যুক্তিসঙ্গত।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আলোচনা তো গত বুধবারই শেষ হয়েছে। গণভোট নিয়ে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। নতুন কোনো ভাবনা নেই।’
সূত্রে জানা গেছে, এনসিপিও নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই সনদের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) বিষয়টি তুলে দিলে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে তারা ছাড় দিতে রাজি।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নিয়ে গণভোটে একটি প্রশ্নের মাধ্যমেই মীমাংসা হতে হবে। সেখানে আপত্তির বিষয় রাখা যাবে না। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে জুলাই সনদ গুরুত্ব হারাবে। তাই জনগণকে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্ত করার জন্য নির্বাচনের আগেই গণভোট জরুরি।’
এদিকে, গতকাল রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনই সবচেয়ে যৌক্তিক।’
তাঁর যুক্তি অনুযায়ী, ঐদিন ভোটের হার বেশি থাকবে, মানুষের আগ্রহও থাকবে এবং খরচ কম হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করলে ভোটের উপস্থিতি কমার পাশাপাশি সহিংসতার আশঙ্কা ব্যয় বাড়বে বলেও বিএনপি মনে করে।
এই বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য কিছু কিছু জায়গায় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে অনেকগুলো। সেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের মধ্যে আলোচনা শেষ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামত নিয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ তারিখে আমরা সবাই আশা করছি, যেগুলোতে একমত হয়েছে সেগুলোতে সব দল সই করবে। যেসব বিষয়ে একমত হতে পারেনি সেগুলো আসন্ন নির্বাচনে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের ম্যানিফেস্টো হিসেবে নিয়ে আসবে জনগণের সামনে। সেটাকে প্রস্তাব আকারে তারা তুলে ধরবে সেভাবেই তারা চিন্তা করেছেন।’
ঐকমত্য কমিশনের এক সদস্য জানান, গণভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই নেওয়ার জন্য একটি অনুষ্ঠানে আয়োজন করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। সনদে সইয়ের জন্য ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে কমিশনে নাম পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘৩০টি রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে তাদের স্বাক্ষরকারী প্রতিনিধিদের নাম নিশ্চিত করেছে।’
মনির হায়দার বলেন, ‘জুলাই সনদের একটি “মাস্টার পিস” থাকবে, যার তিনটি অংশ থাকবে, সংস্কার উদ্যোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ ভূমিকা, সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা এবং একটি অঙ্গীকারনামা। এদিকে, অঙ্গীকারনামার ৩০টি কপি দলীয় প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরে প্রতিনিধিরা ওই “মাস্টারপিস”-এও স্বাক্ষর করবেন।’
জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান আয়োজনে কমিশনকে সহায়তা করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এতে প্রায় তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে কমিশন। দুই পর্বের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের সই অনুষ্ঠান মাগরিবের আগেই শেষ করবে। নামাজের বিরতির পরে দ্বিতীয় পর্বের প্রজেকশন ম্যাপিংয়ে সনদ তৈরির পটভূমি ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
এদিকে, জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রজেকশন ম্যাপিং ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
এই ব্যাপারে সাংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বড় পরিবর্তন। এই দলিলটিই আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা ও একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। এই নতুন সাংস্কৃতিক পথে আমাদের রাজনীতিতে প্যারাডাইম শিফট ঘটছে। যা সমাজকেও প্রভাবিত করবে। তাই আমরা চাই—জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর জীবনে স্মরণীয় হয়ে উঠুক।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট'। এই প্যানেলের পাঁচ বস্তা খাবার জব্দ করেছে নির্বাচন কমিশন।
৭ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া পোস্ট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে প্রার্থীদের ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগ তুলেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’।
১০ ঘণ্টা আগেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
১১ ঘণ্টা আগেআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একশো আসনে মনোনীত প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে দলটি প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। আগামী ১৬ অক্টোবর সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে
১২ ঘণ্টা আগে