leadT1ad

ইনোভিশন কনসাল্টিং-এর জরিপ

রংপুরে ভোটে এগিয়ে জামায়াত, অন্যান্য বিভাগে বিএনপি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৩২
রংপুরে ভোটে এগিয়ে জামায়াত, অন্যান্য বিভাগে বিএনপি। স্ট্রিম গ্রাফিক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রংপুর বিভাগে জামায়াতে ইসলামী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, দেশের বেশিরভাগ বিভাগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার প্রাধান্য বজায় রেখেছে। তবে, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন। যৌথভাবে ইনোভিশন কনসাল্টিং বাংলাদেশ, ভয়েস অব রিফর্ম ও ব্রেইন আয়োজিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ইনোভিশন কনসাল্টিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সারওয়ার জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে: রাউন্ড ২’ শিরোনামের এই জরিপ গত ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। মোট ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটারের ওপর চালানো এই জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় দলগুলোর মধ্যে সমর্থনের ব্যবধান বেশ কম। জরিপের প্রথম পর্ব গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ ঢাকার। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, রাজশাহীর ১৩ দশমিক ০ শতাংশ, খুলনার ১১ দশমিক ২ শতাংশ, রংপুরের ১১ দশমিক ০ শতাংশ, ময়মনসিংহের ৭ দশমিক ১ শতাংশ, বরিশালের ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং সিলেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

জরিপ কি বলছে

রংপুর বিভাগে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি পেয়েছে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশের সমর্থন।

রাজশাহীতে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বিএনপিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। এর বিপরীতে জামায়াত পেয়েছে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশের সমর্থন।

খুলনার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে বিএনপি এবং জামায়াত পেয়েছে ৩০ দশমিক ১ শতাংশ।

বরিশালে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ২৯ দশমিক ১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এর পরেই রয়েছে জামায়াত।

চট্টগ্রামে বিএনপি ৪১ দশমিক ৯ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত পেয়েছে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমর্থন।

ঢাকায় বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জামায়াত পেয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশের সমর্থন।

সিলেটে বিএনপি ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ সমর্থন নিয়ে জামায়াতের ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ময়মনসিংহে বিএনপির প্রতি ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জামায়াতের প্রতি ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে।

জরিপে বলা হয়েছে, বরিশালে বর্তমানে বিএনপি পিছিয়ে থাকলেও প্রায় ১৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা বিএনপিকে ভোট দিতে পারেন।

এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

অন্যান্য ফলাফল

জরিপে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিয়ে জনগণের সন্তুষ্টিও পরিমাপ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিএনপির তুলনায় জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমের প্রতি মানুষের সন্তুষ্টি বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪১ শতাংশ-এর বেশি বিএনপির কার্যক্রমে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যেখানে জামায়াতের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট প্রায় ৩১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদিও বিএনপির সামগ্রিক ভোটার ভিত্তি বড়, তবে শাসন এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে জামায়াতের ভাবমূর্তি তুলনামূলকভাবে ভালো।

জাতীয় পার্টি (জাপা) সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য উঠে এসেছে এই জরিপে। ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগের মিত্র হলেও, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে জাপার ভোট বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে জরিপ অনুযায়ী জাপা ভোটারদের পঞ্চম পছন্দের দল হিসেবেই থাকবে। যা দলটির নির্বাচনি ফলাফলে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

পিআর সিস্টেম সম্পর্কে অধিকাংশই অবগত নন

জরিপে সংসদের উচ্চকক্ষের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব দেখা গেছে।

প্রায় ৬৮ শতাংশ নারী ভোটার এবং ৪৬ শতাংশ পুরুষ ভোটার জানিয়েছেন যে তারা এই ব্যবস্থার কথা কখনো শোনেননি বা বোঝেন না। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ পুরুষ এবং ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ নারী পিআর ব্যবস্থা প্রবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন। এর বিপরীতে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ দশমিক ১ শতাংশ নারী এর বিরোধিতা করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ এম শাহান বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক জটিল পর্বে প্রবেশ করছে।

এই জরিপ বর্তমান জনমতকে প্রতিফলিত করলেও চূড়ান্ত নির্বাচনি ফলাফল নির্ধারণ করে না উল্লেখ করে আসিফ এম শাহান বলেন, ‘নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে ভোটারদের মনোভাব আবার বদলাতে পারে।’

ড. শাহান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) তাদের সীমিত সম্পদ কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে হবে। শহরাঞ্চলে তাদের উপস্থিতি সবচেয়ে বড় শক্তি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, লিঙ্গ সমতা এবং সুশাসনের মতো বিষয়গুলোতে জোর দিয়ে দলটি তাদের আদর্শিক পরিচয় আরও শক্তিশালী করতে পারে।

বিএনপি সম্পর্কে আসিফ এম শাহান বলেন, দলটির সমর্থক গোষ্ঠী স্থিতিশীল থাকলেও, তা মূলত গ্রামীণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

ড. শাহান বিএনপিকে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে তাদের নীতিগত এজেন্ডা কেন্দ্রীভূত করে ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখার পরামর্শ দেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত