leadT1ad

ফল প্রকাশ নিয়ে সারাদিন যা হলো

শিক্ষিকার মৃত্যুর পর যেখানে গিয়ে ঠেকল জাকসু নির্বাচন

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ২৪
জাকসু নির্বাচনের ভোটগণনা চলছে। স্ট্রিম ছবি

জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা, অব্যবস্থাপনা এবং বিতর্কের মধ্যেই প্রাণ হারালেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। এই ঘটনাকে অব্যবস্থাপনার ফল বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরইে এক সহকর্মী। এদিকে গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষ হলেও এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি। এরই মধ্যে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার টিটো। তবে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল এই পদত্যাগকে দেখছে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন না করতে পারার ফল হিসেবে।

জাবি শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত
জাবি শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের মর্মান্তিক প্রয়াণ

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জাকসু নির্বাচন কমিশন ভবনের তৃতীয় তলায় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সকাল ৯টা ৪ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জাকসু ও প্রীতিলতা হল সংসদ নির্বাচনে পোলিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন।

দুপুরে পুরনো কলাভবনের সামনে জান্নাতুল ফেরদৌসের মরদেহ আনা হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী এ সময় তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক, অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অব্যস্থাপনার জন্য আমার সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এর দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’

এখনো চলছে ভোট গণনা, রাতের মধ্যে শেষ হওয়ার আশ্বাস

গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত সোয়া দশটা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনার কারণে প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হল সংসদগুলোর বেশির ভাগ ভোট গণনা শেষ হলেও কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা এখনো চলছে। নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফল প্রকাশের আশা করলেও, ধীরগতির কারণে তা পিছিয়ে সন্ধ্যার পর বা রাতের শেষভাগেও হতে পারে বলে জানানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাতের মধ্যেই ভোট গণনা শেষ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

অব্যবস্থাপনা ও কারচুপির অভিযোগ

জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক কারচুপি ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন এই নির্বাচনকে স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমে জানান, ‘জাকসু নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। প্রায় সব মহল থেকেই প্রচুর কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।’

নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার টিটো। গতকাল রাত পৌনে নয়টা নাগাদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মাফরুহী বলেন, ‘ভোট গণনা স্থগিতের দাবি তুলেছি। আমি অনেক ত্রুটি, অনিয়ম দেখেছি। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সবাই একমত পোষণ করলেও আমার মতামত গ্রহণে অপারগতা জানায়। তাই ভিসিকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাই। আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন না করতে পেরে পদত্যাগ’

এদিকে জাকসু নির্বাচনে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে না পেরে মাফরুহী সাত্তার পদত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরানো প্রশাসনিক ভবনের (সিনেট ভবন) সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’-এর এজিএস (পুরুষ) পদপ্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এটি খুবই প্রহসনমূলক আচরণ। তিনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা। তিনি কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার কমিটিতে থাকেন? তিনি যে অভিযোগগুলো করে পদত্যাগ করেছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন।’

পুনর্নির্বাচনের দাবি বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের

গতকাল রাতে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাকসু পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচনে বিশেষ একটি দলকে জেতানোর চেষ্টা চলছে। তাঁরা বলেছেন, বিশেষ ওই দলটি মুখে সবসময় সৃষ্টিকর্তার নাম নেয়। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ের জন্য মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে।

জাকসু নির্বাচনের আগের রাতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো’ এবং নির্বাচনের দিনের বিভিন্ন ‘অনিয়ম’ একই সূত্রে গাঁথা বলেও তাঁরা মন্তব্য করেছেন। নির্বাচন ঘিরে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু সুরাহা ও পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন তাঁরা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত