leadT1ad

সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের ‘কাঠগড়ায়’ হাইকোর্টের ৪ বিচারপতি

দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁদেরকে বেঞ্চের বাইরে রেখেছেন।

আহমেদ আল আমীন
ঢাকা
হাইকোর্ট ভবন। সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিষদ সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের 'কাঠগড়ায়' নানা অভিযোগের মুখে রয়েছেন হাইকোর্টের চার জন বিচারপতি। দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁদেরকে বেঞ্চের বাইরে রেখেছেন। তাঁরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান।

ঢাকা স্ট্রিমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জন বিচারপতিকে হাইকোর্টে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অপসারণ ও অন্যান্য কারণে আট জনের বিষয়ে সুরাহা হয়েছে। বাকি চারজনের অভিযোগের বিষয়টি কাউন্সিলে এখনো তদন্ত চলছে।

বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে প্রধান বিচারপতির আদেশে বিচার কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন।

বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান গত বছরের ১৬ অক্টোবর থেকে প্রধান বিচারপতির আদেশে বিচার কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। ২০ অক্টোবর থেকে পুনরুজ্জীবিত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের মুখে রয়েছেন তারা। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও নিষ্পত্তি এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র মতে, এই তালিকায় ছিলেন মোট ১২ জন বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করেছেন, কেউ কেউ অবসর নিয়েছেন, কারও কারও চাকরি আর স্থায়ী করা হয়নি। সর্বশেষ, এই তালিকায় থাকা বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে নিজে স্বাক্ষর করে ৩১ আগস্ট পদত্যাগপত্র পাঠান। ৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।

জানা গেছে, বিচারপতি আখতারুজ্জান যখন রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান, তখনো তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছিল। এরই মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর বিষয়ে অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ২৫ জুন তাঁকে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তলব করা হয়। জবাবে ১ জুলাই বিচারপতি আখতারুজ্জামান কাউন্সিলে হাজির হয়ে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যাখ্যা দেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তাঁর বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি ২৬ আগস্ট শেষ হয়।

গত বছরের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি জাতীয় সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে প্রত্যাবর্তন করে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, অভিযোগ ওঠা ও বেঞ্চ না পাওয়ার পর বিচারপতি আখতারুজ্জামানের মতো পদত্যাগ করে চলে গেছেন বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন। তিনি গত ৩০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক ছিলেন না। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে তাঁরা নিয়োগ পান। আওয়ামী লীগ আমলে গত বছরের ৩০ জুলাই তাঁদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আরও ছয় মাসের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৩০ জানুয়ারি তাঁদের সেই বর্ধিত মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর বর্তমান সরকারের আমলে তাঁদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি বা মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।

অপর দুজন বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান এবং আশীষ রঞ্জন দাস ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন। এর মধ্যে বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান গত ৩০ ডিসেম্বর এবং বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস গত ৩০ জানুয়ারি চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরে যান।

এছাড়া, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর রাষ্ট্রপতি দুজন বিচারপতিকে অপসারণ করেন। তাঁরা হলেন—বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান। বিচারপতি খিজির হায়াতকে গত ১৮ মার্চ অপসারণের পর বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে ২১ মে পদচ্যুত করা হয়। সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আখতারুজ্জামানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

বিচারপতিদের অপসারণের এই ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

গত বছরের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণের বিষয়টি জাতীয় সংসদের পরিবর্তে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে প্রত্যাবর্তন করে।

বিচারপতিদের অপসারণের এই ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

সেই আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত বছরের ১৯ অক্টোবর রায় দেয়। এর ফলে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে নিজের স্বাক্ষরযুক্ত পত্র দিয়ে কোনো বিচারক চাইলে পদত্যাগ করতে পারবেন। প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত