মারুফ ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) যাই না বহুদিন। আজ ৩৩ বছর পর ফিরে এসেছে জাকসু নির্বাচন। সেই উছিলায় আজ যাওয়া যেতেই পারে।
শেষবার গিয়েছিলাম ২০২১ সালে। পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল জাহাঙ্গীরনগরে। ক্যাম্পাসের আরেক ছোট ভাই আসাদ ভীষণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ করেছিল সেবার। সেই আসাদ এখন ডেইলি স্টারের বড় সাংবাদিক!
দেব নাকি আসাদকে একটা ফোন?
না, থাক। আসাদ নিশ্চয় আজ ভীষণ ব্যস্ত। জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে এতক্ষণে। কোন কেন্দ্রে কত ভোটার, তাদের উপস্থিতি কেমন—এসব খবর সংগ্রহ করতে হবে না?
আসাদের ব্যস্ততা দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি, ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের মুখও। এরা সবাই জীবনে প্রথমবারের মতো জাকসুর ভোট দিচ্ছে। কেমন সেই অনুভূতি?
ফোন করলাম, যাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই ছোট ভাই তাসবিরুলকে।
‘তাসবির, কী অবস্থা? ভোট দিতে পেরে কেমন লাগছে?’
‘অবশ্যই ভালো লাগছে ভাইয়া। পুরো ক্যাম্পাস উচ্ছ্বসিত। তবে এক ধরনের খচখচানিও আছে।’
‘সেটা আবার কী?’
‘এখানে বিভিন্ন প্যানেলে নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে শিবির সমর্থিত ‘‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’’ নামের প্যানেলও আছে। মাত্রই এক দিন আগে ডাকসুতে শিবির যে খেল দেখিয়েছে, এখানেও যে দেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কী?’
আমি উচ্চস্বরে হেসে ফোন রাখলাম। তাসবিরের মতো প্রগতিশীল অনেক শিক্ষার্থী ‘শিবির-আতঙ্কে’ ভুগছে। ভোগাটাও একেবারে অমূলক নয়। কারণ বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে নিজের নামের সঙ্গে দুর্নাম যুক্ত করেছে ছাত্রশিবির। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসেও ‘কবির হত্যা’র সঙ্গে শিবির যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজকের জাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে দাঁড়ানো আরিফুল্লাহ আদিব এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দাঁড়ানো মাজহারুল ইসলামের প্যানেলকে সেই শিবির সমর্থন দিয়েছে। অর্থাৎ শিবিরের সমর্থনে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জাকসু নির্বাচনে লড়ছেন আজ। কে জানে, জিতেও যেতে পারে! যদি জিতে যায়, তবে কি বলা হবে, ‘প্রগতিশীলতার দুর্গে প্রতিক্রিশীলতার হানা?’
এমন আশঙ্কার ইতিহাস আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রগতিশীল নানা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ধর্ষণবিরোধী ও যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই জাবির ছাত্র-শিক্ষকেরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
তারপরও শিবির নিয়ে আতঙ্ক কেন? কারণ আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদের ছত্রছায়ায় জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী ডালপালা মেলেছিল। এর অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরেও শেকড় গেঁড়েছিল তারা।
তাদের দৌরাত্ম্যের মধ্যেই ১৯৮৯ সালে জাবি ক্যাম্পাসে খুন হন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের আঙুল ওঠে শিবিরের দিকে। এর পরপরই সর্বদলীয় ঐক্যের মাধ্যমে শিবিরকে জাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই জাবি ‘প্রতিবাদের ক্যাম্পাস’ নামে পরিচিতি পায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেনি শিবিরকে। ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উঠলেও সিদ্ধান্ত হয়—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।’ প্রশাসনিক এই দুর্বলতাই শিবিরকে সেদিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
সেই দুর্বলতার সুযোগে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে শিবিরের তিন নেতা আবার প্রকাশ্যে আসেন। তাঁরা হলেন—জাবি শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি, সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিব এবং প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁরাই পরে জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস পদে মাজহারুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন।
আমার সেই ছোট ভাই তাসবির ও তাঁর মতো অনেক তরুণ মনে করছেন, শিবিরের এই প্রত্যাবর্তন জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ক্যাম্পাস ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার। এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনকারী ছাত্রলীগ ক্যাডার মানিককে ক্যাম্পাসছাড়া করেছে।
এই ক্যাম্পাসেই যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বারবার সোচ্চার হয়েছে। সামরিক স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এখানকার ছাত্র-শিক্ষক। মাত্রই এক বছর আগের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও জাবির শিক্ষার্থীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা—জাহাঙ্গীরনগর কখনোই প্রতিক্রিশীলতার সঙ্গে আপস করেনি। এখানকার আন্দোলনগুলো কেবল বিশ্ববিদ্যালয়কে নয়, পুরো দেশকেই প্রভাবিত করেছে।
তাই আজকের জাকসু নির্বাচন শুধুই একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনৈতিক লড়াই নয়। এটি দেশের ছাত্ররাজনীতিরও প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু একসময় জাতীয় রাজনীতির চালিকাশক্তি ছিল। সেখানে ২৮টি পদের ২৩টিতেই শিবির সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দ্বন্দ্ব উঁকি দিতে শুরু করেছে। সেই সিঁদূরে মেঘ দেখে এখন অনেকেই বলছেন, ‘জাকসুতে ডাকসুর প্রতিধ্বণি শোনা যাচ্ছে’। তাঁদের এই আশঙ্কাকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
তবে সবাই তাসবিরের মতো নৈরাশ্যবাদী নয়। জাবির সাবেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ঊর্মি বলেন, ‘শিবিরের জনপ্রিয়তা খুবই সীমিত। ভোটার সংখ্যা অল্প। তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
ঊর্মি শিবির নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও আমি রাস্তার যানজট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। পাবলিক বাসে যাচ্ছি অফিসে। যানজটের কারণে সময়মতো অফিসে পৌঁছান নিত্যপুরাণে পরিণত হয়েছে। বিরক্তি কাটাতেই ঊর্মির সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। ঊর্মি আমার বন্ধু।
পাসের সিটে বসে আমাদের কথা শুনছিলেন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই একজন। আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘ভাই কি জাকসু নিয়ে কথা বলতেছিলেন? আমিও জাবির স্টুডেন্ট ছিলাম।’
আমি বললাম, ‘জী।’
ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি আব্দুল্লাহ তারেক। পাঁচ বছর আল বেরুনি হলে থাইকা আসছি। ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি আমার চেনা। শোনেন ভাই, জাবির স্টুডেন্টরা অতীতে যেভাবে প্রতিক্রিশীলতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিল, প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ হবে। চিন্তা কইরেন না। ওদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ওরা সময়ের ডাক ঠিকই শুনতে পায়।’
আমার কানে অবশ্য আছড়ে পড়ল কন্ডাকটরের ডাক—‘ওই কারানবাজার… কারানবাজার… কে নামব কারানবাজার…।’
ভিড় ঠেলে নেমে পড়লাম।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) যাই না বহুদিন। আজ ৩৩ বছর পর ফিরে এসেছে জাকসু নির্বাচন। সেই উছিলায় আজ যাওয়া যেতেই পারে।
শেষবার গিয়েছিলাম ২০২১ সালে। পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের ভর্তি পরীক্ষা ছিল জাহাঙ্গীরনগরে। ক্যাম্পাসের আরেক ছোট ভাই আসাদ ভীষণ আতিথেয়তায় মুগ্ধ করেছিল সেবার। সেই আসাদ এখন ডেইলি স্টারের বড় সাংবাদিক!
দেব নাকি আসাদকে একটা ফোন?
না, থাক। আসাদ নিশ্চয় আজ ভীষণ ব্যস্ত। জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে এতক্ষণে। কোন কেন্দ্রে কত ভোটার, তাদের উপস্থিতি কেমন—এসব খবর সংগ্রহ করতে হবে না?
আসাদের ব্যস্ততা দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি, ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়ানো উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের মুখও। এরা সবাই জীবনে প্রথমবারের মতো জাকসুর ভোট দিচ্ছে। কেমন সেই অনুভূতি?
ফোন করলাম, যাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই ছোট ভাই তাসবিরুলকে।
‘তাসবির, কী অবস্থা? ভোট দিতে পেরে কেমন লাগছে?’
‘অবশ্যই ভালো লাগছে ভাইয়া। পুরো ক্যাম্পাস উচ্ছ্বসিত। তবে এক ধরনের খচখচানিও আছে।’
‘সেটা আবার কী?’
‘এখানে বিভিন্ন প্যানেলে নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে শিবির সমর্থিত ‘‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’’ নামের প্যানেলও আছে। মাত্রই এক দিন আগে ডাকসুতে শিবির যে খেল দেখিয়েছে, এখানেও যে দেখাবে না, তার নিশ্চয়তা কী?’
আমি উচ্চস্বরে হেসে ফোন রাখলাম। তাসবিরের মতো প্রগতিশীল অনেক শিক্ষার্থী ‘শিবির-আতঙ্কে’ ভুগছে। ভোগাটাও একেবারে অমূলক নয়। কারণ বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে নিজের নামের সঙ্গে দুর্নাম যুক্ত করেছে ছাত্রশিবির। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসেও ‘কবির হত্যা’র সঙ্গে শিবির যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজকের জাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে দাঁড়ানো আরিফুল্লাহ আদিব এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দাঁড়ানো মাজহারুল ইসলামের প্যানেলকে সেই শিবির সমর্থন দিয়েছে। অর্থাৎ শিবিরের সমর্থনে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জাকসু নির্বাচনে লড়ছেন আজ। কে জানে, জিতেও যেতে পারে! যদি জিতে যায়, তবে কি বলা হবে, ‘প্রগতিশীলতার দুর্গে প্রতিক্রিশীলতার হানা?’
এমন আশঙ্কার ইতিহাস আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রগতিশীল নানা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ধর্ষণবিরোধী ও যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন—প্রতিটি ক্ষেত্রেই জাবির ছাত্র-শিক্ষকেরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
তারপরও শিবির নিয়ে আতঙ্ক কেন? কারণ আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদের ছত্রছায়ায় জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী ডালপালা মেলেছিল। এর অংশ হিসেবে জাহাঙ্গীরনগরেও শেকড় গেঁড়েছিল তারা।
তাদের দৌরাত্ম্যের মধ্যেই ১৯৮৯ সালে জাবি ক্যাম্পাসে খুন হন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের আঙুল ওঠে শিবিরের দিকে। এর পরপরই সর্বদলীয় ঐক্যের মাধ্যমে শিবিরকে জাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই জাবি ‘প্রতিবাদের ক্যাম্পাস’ নামে পরিচিতি পায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করেনি শিবিরকে। ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব উঠলেও সিদ্ধান্ত হয়—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাবহির্ভূত বিধায় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব নয়।’ প্রশাসনিক এই দুর্বলতাই শিবিরকে সেদিন বাঁচিয়ে দিয়েছিল।
সেই দুর্বলতার সুযোগে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে শিবিরের তিন নেতা আবার প্রকাশ্যে আসেন। তাঁরা হলেন—জাবি শাখার সভাপতি হারুনুর রশিদ রাফি, সেক্রেটারি মহিবুর রহমান মুহিব এবং প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁরাই পরে জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে আরিফুল্লাহ আদিব এবং জিএস পদে মাজহারুল ইসলামের নাম ঘোষণা করেন।
আমার সেই ছোট ভাই তাসবির ও তাঁর মতো অনেক তরুণ মনে করছেন, শিবিরের এই প্রত্যাবর্তন জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ক্যাম্পাস ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার। এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপনকারী ছাত্রলীগ ক্যাডার মানিককে ক্যাম্পাসছাড়া করেছে।
এই ক্যাম্পাসেই যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বারবার সোচ্চার হয়েছে। সামরিক স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এখানকার ছাত্র-শিক্ষক। মাত্রই এক বছর আগের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও জাবির শিক্ষার্থীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা—জাহাঙ্গীরনগর কখনোই প্রতিক্রিশীলতার সঙ্গে আপস করেনি। এখানকার আন্দোলনগুলো কেবল বিশ্ববিদ্যালয়কে নয়, পুরো দেশকেই প্রভাবিত করেছে।
তাই আজকের জাকসু নির্বাচন শুধুই একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনৈতিক লড়াই নয়। এটি দেশের ছাত্ররাজনীতিরও প্রতিচ্ছবি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু একসময় জাতীয় রাজনীতির চালিকাশক্তি ছিল। সেখানে ২৮টি পদের ২৩টিতেই শিবির সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দ্বন্দ্ব উঁকি দিতে শুরু করেছে। সেই সিঁদূরে মেঘ দেখে এখন অনেকেই বলছেন, ‘জাকসুতে ডাকসুর প্রতিধ্বণি শোনা যাচ্ছে’। তাঁদের এই আশঙ্কাকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
তবে সবাই তাসবিরের মতো নৈরাশ্যবাদী নয়। জাবির সাবেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ঊর্মি বলেন, ‘শিবিরের জনপ্রিয়তা খুবই সীমিত। ভোটার সংখ্যা অল্প। তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
ঊর্মি শিবির নিয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও আমি রাস্তার যানজট নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। পাবলিক বাসে যাচ্ছি অফিসে। যানজটের কারণে সময়মতো অফিসে পৌঁছান নিত্যপুরাণে পরিণত হয়েছে। বিরক্তি কাটাতেই ঊর্মির সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। ঊর্মি আমার বন্ধু।
পাসের সিটে বসে আমাদের কথা শুনছিলেন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই একজন। আমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললেন, ‘ভাই কি জাকসু নিয়ে কথা বলতেছিলেন? আমিও জাবির স্টুডেন্ট ছিলাম।’
আমি বললাম, ‘জী।’
ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি আব্দুল্লাহ তারেক। পাঁচ বছর আল বেরুনি হলে থাইকা আসছি। ক্যাম্পাসের প্রতি ইঞ্চি আমার চেনা। শোনেন ভাই, জাবির স্টুডেন্টরা অতীতে যেভাবে প্রতিক্রিশীলতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছিল, প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ হবে। চিন্তা কইরেন না। ওদের আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ওরা সময়ের ডাক ঠিকই শুনতে পায়।’
আমার কানে অবশ্য আছড়ে পড়ল কন্ডাকটরের ডাক—‘ওই কারানবাজার… কারানবাজার… কে নামব কারানবাজার…।’
ভিড় ঠেলে নেমে পড়লাম।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের হু-বুহু প্রতিবিম্ব হিসেবে গড়ে তুলতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় মানে তা নয়। সামাজিক বিজ্ঞানের চর্চাকারী হিসাবে জানি, সমাজের হু-বুহু প্রতিভূ হলে তা এমন সংকীর্ণ হবে যে সেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন কিছু সৃষ্টি করা আর হবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টিরই পরিসর, তা অনেকেই
৪ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে। প্রায় ৩৩ বছর দীর্ঘ বিরতির পর আবারও জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২১ ঘণ্টা আগেসমাজ-পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন-অভ্যুত্থান আর নৈরাজ্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। অভ্যুত্থানের গন্তব্য থাকে, কিন্তু নৈরাজ্য গন্তব্যহীন। নেপাল অথবা বাংলাদেশ—যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই কথাগুলো সমানভাবে সত্য।
১ দিন আগেদীর্ঘ বিরতির পর আবারও অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে পুরো দেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে এবারের ডাকসু। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনকে একটি দিক নির্দেশক মাইলফলক হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ আছে।
২ দিন আগে