জেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। অধুনা দুনিয়ায় বহুল আলোচিত একটি প্রজন্ম-পরিভাষা। জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা এরা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাঁদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আলাদা। জেন-জি পরিচয়ে আসলে কারা অন্তর্ভুক্ত? শুধু তুলনামূলক সুবিধাপ্রাপ্ত তরুণেরা, নাকি এর ভেতরে আছেন সুবিধাবঞ্চিতরাও? এ প্রজন্ম সত্যিই কি শুধু প্রশংসাযোগ্য কাজ করছে, নাকি তাদের আছে সীমাবদ্ধতাও? এ আয়োজনে রয়েছে এসবের অনুসন্ধান।
জাভেদ হুসেন
গত দশকে একটি নতুন শব্দের জন্ম হয়েছে। শব্দটি হলো ‘জেনারেশন জি’। এটি এখন যুবসমাজ, আন্দোলন এবং সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনার অংশ।
এই প্রজন্মের তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে পুরো বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্রুত আন্দোলনে যোগ দিতে প্রস্তুত। তারা হলো সেই মুখোশহীন আন্দোলনের চেহারা—যারা পিটিশন, ভাইরাল ক্যাম্পেইন বা আকস্মিক প্রতিবাদের মাধ্যমে একরাতে ক্ষমতার কাঠামোকে দুলিয়ে দিতে পারে বলে মনে হয়।
কিন্তু এই উত্সাহের আড়ালে একটি বড় প্রশ্ন আছে। এই ধরনের অনলাইন ও সামাজিক মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল সক্রিয়তা কি সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে? নাকি এটি কেবল অংশগ্রহণের আকর্ষণ যা বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকেই অক্ষত রাখে?
‘জেন-জি’ শব্দটি প্রথম দেখা দেয় ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে। এটি এসেছে ভোক্তা প্রবণতা এবং বাজার বিশ্লেষণের জগৎ থেকে। ২০০৯ সালের দিকে প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম ট্রেন্ড ওয়াচিং এই শব্দটি জনপ্রিয় করে। তারা দেখিয়েছিল, তখনকার যুবসমাজ এমন এক যুগে প্রবেশ করছে যেখানে ভাগাভাগি, সহানুভূতি এবং উদারতা তাদের জীবনধারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে।
এই সময়টি ছিল শেয়ারিং ইকোনমির সূচনা। এয়ারবিএনবি, উবার, ক্রাউডফান্ডিং, ওপেন-সোর্স প্রজেক্ট—সবকিছুই মানুষকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি নতুন পথ খুলেছিল। মানুষ সহজেই অন্যের সম্পদ, জ্ঞান বা সুযোগের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শুরু করছে তখন। এই প্রেক্ষাপটে ‘জেন-জি’ শব্দটি মনে হয়েছিল এমন এক প্রজন্মের জন্য আদর্শ নাম, যারা সহযোগিতা, ভাগাভাগি এবং সামাজিক সচেতনতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
শুধু বাজার বা অর্থনীতিতে নয়, ধীরে ধীরে জেন-জি ধারণা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের আলোচনায় প্রবেশ করে। দেখা যায় এই সংযুক্ত প্রজন্ম অন্তর্জালে দ্রুত সংহতি তৈরি করতে এবং প্রচারণা চালাতে সক্ষম। তারা অনলাইনে ক্যাম্পেইন শুরু করে, অনৈতিক বা অমানবিক ব্র্যান্ডকে বয়কট করে, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে অংশ নেয়, এবং সংখ্যালঘু বা উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়।
এরা মূলধারার রাজনীতি ও সামাজিক কাঠামোর বাইরে থেকে দ্রুত, দৃশ্যমান এবং প্রায়শই ভাইরালভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এই শক্তি এসেছে ডিজিটাল সংযোগ, সামাজিক মিডিয়া এবং প্রযুক্তির যুগে, যা আগে কখনো যুব আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায়নি।
যদি জেন-জি-এর আসল ‘পরিণতির মুহূর্ত’ সম্ভবত ২০১১ সালের আরব বসন্ত। সেই সময় মিশর, তিউনিসিয়া এবং লিবিয়ার যুবকেরা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশব্যাপী বিপ্লব শুরু করেছিল। তারা টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহার করে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে। সেই দৃশ্য গোটা বিশ্বকে এতটাই আকৃষ্ট করেছিল যে ‘ফেসবুক রেভোলিউশন’ শব্দটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিল, সামাজিক মিডিয়া সত্যিই বিশ্বকে গণতান্ত্রিক করতে পারে।
এই ধারা পরবর্তী বছরগুলিতেও দেখা যায়। ২০১১–২০১২ সালে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন ছিল আরেকটি উদাহরণ। এটি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি বিন্যাসহীন, কেন্দ্রবিহীন আন্দোলন। এই আন্দোলন অনলাইনে লাইভস্ট্রিম এবং ভাইরাল হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭–২০১৮ সালে ‘#MeToo আন্দোলন’ বিশ্বব্যাপী যৌন হেনস্থার ঘটনাগুলো উদঘাটন করে। যারা এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করে। একইভাবে, গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার আন্দোলনে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেয়।
২০২০ সালে হয় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন। অনলাইনের মাধ্যমে সংগঠিত এই আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ রাস্তার প্রতিবাদে রূপ নেয়। এই সব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, জেন-জি খুব দ্রুত এবং বিশ্বব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করতে পারে। কোনো একটি সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন পেতে পারে। এমন নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক শক্তি কোন সরকার, করপোরেশন বা মিডিয়ার চোখে অগোচর থাকে না।
কিন্তু এই দ্রুতগতির অনলাইন-ভিত্তিক আন্দোলন অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি হয়ে যায়। এতে স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো বা পরিকল্পনার অভাব থাকে।
জেন-জি প্রজন্মটি আকাশ থেকে পড়েনি। এই প্রজন্ম গঠিত হয়েছে বিশ্বের সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত অনেক কারণের মাধ্যমে। এই প্রজন্ম ডিজিটালের যুগে বড় হয়েছে। তারা ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্মার্টফোনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। তাদের জন্য রাজনীতি, খবর, বিনোদন, এবং সামাজিক জীবন—সবই মূলত স্ক্রিনের মধ্য দিয়ে চলে। ফলে তারা কোনো প্রতিবাদ বা সামাজিক উদ্যোগ শুরু করতে পারে মাত্র কয়েকটি ট্যাপেই। আগের প্রজন্মের কাছে তা অনেকটা অবাস্তব মনে হতো।
এই প্রজন্মের জীবনধারা অ্যাটেনশন ইকোনমির নিয়মে পরিচালিত। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এক্স—এগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, সবচেয়ে নতুন, সবচেয়ে চমকপ্রদ বা সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়টি দ্রুত ভাইরাল হয়। এটি জেন-জিকে প্রভাবিত করেছে। তারা শিখেছে দ্রুত আন্দোলন তৈরি করতে। কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা স্থায়ী ফলাফল ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।
পরম্পরাগত সংগঠন ও সমাজগত কাঠামোর অবনতি জেন-জি-এর উত্থানকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বে অনেক দেশেই ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন এবং কমিউনিটি গ্রুপগুলোর প্রভাব কমেছে। ফলে তরুণদের আন্দোলন অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়েছে। জেন-জিদের এমন আন্দোলন সহজে শুরু করা যায়, কিন্তু একে দীর্ঘমেয়াদে সংহত ও কার্যকর করা কঠিন।
এই প্রজন্ম মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বড় হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং সাম্প্রতিক মহামারির মতো ঘটনা তাদের চিন্তাভাবনা প্রভাবিত করেছে। তাই তারা তারুণ্যের উত্তেজনা এবং অবিলম্বে প্রভাব দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। অনলাইন পিটিশন, হ্যাশট্যাগ এবং ভাইরাল প্রচারণা তাদের কাছে মনে হয় কার্যকর এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।
জেন-জি প্রজন্ম ডিজিটাল সংযোগ, সামাজিক মনোভাব এবং বিশ্বায়িত জীবনের প্রভাবে তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, দ্রুত সমর্থন জোগাড় করতে পারে। কিন্তু প্রায়শই তাদের মনোযোগ স্বল্পমেয়াদি। তাদের কার্যক্রম অনিয়মিত। সব মিলিয়ে এই আন্দোলনে স্থায়ী পরিবর্তন আনা কঠিন হয়।
জেন-জির আন্দোলন দ্রুত বিশ্বব্যাপী আকার নিতে সক্ষম। এই শক্তি একদিকে যেমন আশাব্যঞ্জক, অন্যদিকে এটি একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করে—এই তরুণ প্রজন্মের সক্রিয়তা কি সত্যিই মূলধারার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে, নাকি কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের সুবিধা দেয়?
দ্রুতগতির, অনলাইন-ভিত্তিক আন্দোলনের কিছু বৈশিষ্ট্যই এই অবস্থার কারণ। প্রথমত, স্বল্পমেয়াদি এবং ভাইরাল প্রকৃতি। হ্যাশট্যাগ, অনলাইন পিটিশন বা ফ্ল্যাশ মোবিলাইজেশন কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ সমর্থক জোগাড় করতে পারে। কিন্তু এই সংহতি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি নয়। তাই সরকার বা করপোরেশন সহজেই সময় পার করে এই চাপকে প্রতিহত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করা সহজে নজরদারির আওতায় আসে। আগের জামানার আন্দোলনগুলো গোপনীয়ভাবে সংগঠিত হত। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সব কর্মকাণ্ড সহজে ট্র্যাক করা যায়, যা কখনো কখনো অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
তৃতীয়ত, বড় করপোরেশনগুলোও জেন-জির শক্তি ব্যবহার করতে শিখেছে। তারা প্রায়শই আন্দোলনের ভাষা বা প্রচারণাকে নিজস্ব পণ্য বা ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করে, কিন্তু মূল সমস্যা বা কাঠামোগত পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ বা সামাজিক ন্যায় সংক্রান্ত দাবিতে তারা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন, প্রচারণা বা সংক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেয়—বাস্তব অর্থে পরিবর্তন আনা হয় না।
ফলে, জেন-জির সক্রিয়তা অনেক সময় এক ধরনের চাপমুক্তি বা ‘প্রেশার রিলিজ’ হিসেবে কাজ করে। এখানে মানুষ মনে করে যে সে আন্দোলন করছে, কিন্তু মূল কাঠামোগত শক্তি অক্ষত থাকে। এতে সমাজের মধ্যে একভাবে শুধু সমাজের সচেতনতা বাড়ায়, কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করার বাস্তব প্রভাব থাকে সীমিত।
সংক্ষেপে, জেন-জির দ্রুতগতির আন্দোলন যেমন নতুন সম্ভাবনার দিক দেখায়, তেমনি এটি ক্ষমতাধরদের কাছেও তা সুবিধাজনক হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, শক্তিশালী সংগঠন এবং স্থায়ী পদক্ষেপ ছাড়া এই অনলাইনভিত্তিক আন্দোলন কতটা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে তা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
আজকাল অনেক সংবাদমাধ্যম, বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক জেন-জিকে একটি বিপ্লবী প্রজন্ম হিসেবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে। এই প্রজন্ম দ্রুত আন্দোলন শুরু করতে পারে, বিশ্বের নানা প্রান্তে সমর্থক জোগাড় করতে পারে, এবং অনলাইনে ভাইরাল হতে পারে। সব মিলিয়ে মনে হয় এই প্রজন্ম ক্ষমতার কাঠামোকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু এই প্রশংসার আড়ালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা লুকিয়ে আছে।
জেন-জির অনলাইন ভিত্তিক আন্দোলনের অনেক অংশ ‘পারফর্মেটিভ’ বা দেখানোর জিনিস। অর্থাৎ অনেক যুবক-কিশোর আন্দোলনে যোগ দেয় শুধু যাতে তারা নিজের নৈতিকতা বা সচেতনতা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু এই অংশ নেওয়া অনেক সময় স্থায়ী প্রভাব ফেলে না।
এই প্রজন্মের যুবকদের মধ্যে ব্রেকডাউন বা বার্নআউটের ঝুঁকি বেশি। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের প্রতিটিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলে মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়ে যায়। ফলে তারা পুরো আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়।
জেন-জির আন্দোলন প্রায়শই বিভক্ত হয়। অনলাইনে হাজারো ছোট ছোট ক্যাম্পেইন চলতে থাকে, যা একত্রিত হয় না। এতে অনেক সময় বড় উদ্দেশ্য বা সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব ছোট হয়ে যায় এবং মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই কারণে, জেন-জিকে শুধুমাত্র একটি বিপ্লবী, বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী প্রজন্ম হিসেবে দেখানো হলে সেই ধারণা ভুল হতে পারে। সামাজিক পরিবর্তন আসলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সংহত সংগঠন, এবং ধৈর্যশীল প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়। জেন-জির শক্তি এবং সম্ভাবনাকে প্রশংসা করা যায়। এই প্রজন্মের শক্তি দিয়ে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে চাইলে পরিকল্পনা, সংগঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অপরিহার্য।
গত দশকে একটি নতুন শব্দের জন্ম হয়েছে। শব্দটি হলো ‘জেনারেশন জি’। এটি এখন যুবসমাজ, আন্দোলন এবং সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনার অংশ।
এই প্রজন্মের তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে পুরো বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্রুত আন্দোলনে যোগ দিতে প্রস্তুত। তারা হলো সেই মুখোশহীন আন্দোলনের চেহারা—যারা পিটিশন, ভাইরাল ক্যাম্পেইন বা আকস্মিক প্রতিবাদের মাধ্যমে একরাতে ক্ষমতার কাঠামোকে দুলিয়ে দিতে পারে বলে মনে হয়।
কিন্তু এই উত্সাহের আড়ালে একটি বড় প্রশ্ন আছে। এই ধরনের অনলাইন ও সামাজিক মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল সক্রিয়তা কি সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারে? নাকি এটি কেবল অংশগ্রহণের আকর্ষণ যা বিদ্যমান ক্ষমতার কাঠামোকেই অক্ষত রাখে?
‘জেন-জি’ শব্দটি প্রথম দেখা দেয় ২০০০-এর দশকের শেষের দিকে। এটি এসেছে ভোক্তা প্রবণতা এবং বাজার বিশ্লেষণের জগৎ থেকে। ২০০৯ সালের দিকে প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম ট্রেন্ড ওয়াচিং এই শব্দটি জনপ্রিয় করে। তারা দেখিয়েছিল, তখনকার যুবসমাজ এমন এক যুগে প্রবেশ করছে যেখানে ভাগাভাগি, সহানুভূতি এবং উদারতা তাদের জীবনধারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে।
এই সময়টি ছিল শেয়ারিং ইকোনমির সূচনা। এয়ারবিএনবি, উবার, ক্রাউডফান্ডিং, ওপেন-সোর্স প্রজেক্ট—সবকিছুই মানুষকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি নতুন পথ খুলেছিল। মানুষ সহজেই অন্যের সম্পদ, জ্ঞান বা সুযোগের সঙ্গে ভাগ করে নিতে শুরু করছে তখন। এই প্রেক্ষাপটে ‘জেন-জি’ শব্দটি মনে হয়েছিল এমন এক প্রজন্মের জন্য আদর্শ নাম, যারা সহযোগিতা, ভাগাভাগি এবং সামাজিক সচেতনতার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
শুধু বাজার বা অর্থনীতিতে নয়, ধীরে ধীরে জেন-জি ধারণা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের আলোচনায় প্রবেশ করে। দেখা যায় এই সংযুক্ত প্রজন্ম অন্তর্জালে দ্রুত সংহতি তৈরি করতে এবং প্রচারণা চালাতে সক্ষম। তারা অনলাইনে ক্যাম্পেইন শুরু করে, অনৈতিক বা অমানবিক ব্র্যান্ডকে বয়কট করে, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে অংশ নেয়, এবং সংখ্যালঘু বা উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়।
এরা মূলধারার রাজনীতি ও সামাজিক কাঠামোর বাইরে থেকে দ্রুত, দৃশ্যমান এবং প্রায়শই ভাইরালভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এই শক্তি এসেছে ডিজিটাল সংযোগ, সামাজিক মিডিয়া এবং প্রযুক্তির যুগে, যা আগে কখনো যুব আন্দোলনের ইতিহাসে দেখা যায়নি।
যদি জেন-জি-এর আসল ‘পরিণতির মুহূর্ত’ সম্ভবত ২০১১ সালের আরব বসন্ত। সেই সময় মিশর, তিউনিসিয়া এবং লিবিয়ার যুবকেরা সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশব্যাপী বিপ্লব শুরু করেছিল। তারা টুইটার ও ফেসবুক ব্যবহার করে রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করে। সেই দৃশ্য গোটা বিশ্বকে এতটাই আকৃষ্ট করেছিল যে ‘ফেসবুক রেভোলিউশন’ শব্দটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। কিছুদিনের জন্য মনে হয়েছিল, সামাজিক মিডিয়া সত্যিই বিশ্বকে গণতান্ত্রিক করতে পারে।
এই ধারা পরবর্তী বছরগুলিতেও দেখা যায়। ২০১১–২০১২ সালে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন ছিল আরেকটি উদাহরণ। এটি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি বিন্যাসহীন, কেন্দ্রবিহীন আন্দোলন। এই আন্দোলন অনলাইনে লাইভস্ট্রিম এবং ভাইরাল হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৭–২০১৮ সালে ‘#MeToo আন্দোলন’ বিশ্বব্যাপী যৌন হেনস্থার ঘটনাগুলো উদঘাটন করে। যারা এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করে। একইভাবে, গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার আন্দোলনে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেয়।
২০২০ সালে হয় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন। অনলাইনের মাধ্যমে সংগঠিত এই আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ রাস্তার প্রতিবাদে রূপ নেয়। এই সব উদাহরণ প্রমাণ করে যে, জেন-জি খুব দ্রুত এবং বিশ্বব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করতে পারে। কোনো একটি সামাজিক বা রাজনৈতিক কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষের সমর্থন পেতে পারে। এমন নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক শক্তি কোন সরকার, করপোরেশন বা মিডিয়ার চোখে অগোচর থাকে না।
কিন্তু এই দ্রুতগতির অনলাইন-ভিত্তিক আন্দোলন অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি হয়ে যায়। এতে স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো বা পরিকল্পনার অভাব থাকে।
জেন-জি প্রজন্মটি আকাশ থেকে পড়েনি। এই প্রজন্ম গঠিত হয়েছে বিশ্বের সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত অনেক কারণের মাধ্যমে। এই প্রজন্ম ডিজিটালের যুগে বড় হয়েছে। তারা ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্মার্টফোনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। তাদের জন্য রাজনীতি, খবর, বিনোদন, এবং সামাজিক জীবন—সবই মূলত স্ক্রিনের মধ্য দিয়ে চলে। ফলে তারা কোনো প্রতিবাদ বা সামাজিক উদ্যোগ শুরু করতে পারে মাত্র কয়েকটি ট্যাপেই। আগের প্রজন্মের কাছে তা অনেকটা অবাস্তব মনে হতো।
এই প্রজন্মের জীবনধারা অ্যাটেনশন ইকোনমির নিয়মে পরিচালিত। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, এক্স—এগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, সবচেয়ে নতুন, সবচেয়ে চমকপ্রদ বা সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়টি দ্রুত ভাইরাল হয়। এটি জেন-জিকে প্রভাবিত করেছে। তারা শিখেছে দ্রুত আন্দোলন তৈরি করতে। কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বা স্থায়ী ফলাফল ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না।
পরম্পরাগত সংগঠন ও সমাজগত কাঠামোর অবনতি জেন-জি-এর উত্থানকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। বিশ্বে অনেক দেশেই ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন এবং কমিউনিটি গ্রুপগুলোর প্রভাব কমেছে। ফলে তরুণদের আন্দোলন অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়েছে। জেন-জিদের এমন আন্দোলন সহজে শুরু করা যায়, কিন্তু একে দীর্ঘমেয়াদে সংহত ও কার্যকর করা কঠিন।
এই প্রজন্ম মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে বড় হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং সাম্প্রতিক মহামারির মতো ঘটনা তাদের চিন্তাভাবনা প্রভাবিত করেছে। তাই তারা তারুণ্যের উত্তেজনা এবং অবিলম্বে প্রভাব দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। অনলাইন পিটিশন, হ্যাশট্যাগ এবং ভাইরাল প্রচারণা তাদের কাছে মনে হয় কার্যকর এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।
জেন-জি প্রজন্ম ডিজিটাল সংযোগ, সামাজিক মনোভাব এবং বিশ্বায়িত জীবনের প্রভাবে তৈরি হয়েছে। তারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, দ্রুত সমর্থন জোগাড় করতে পারে। কিন্তু প্রায়শই তাদের মনোযোগ স্বল্পমেয়াদি। তাদের কার্যক্রম অনিয়মিত। সব মিলিয়ে এই আন্দোলনে স্থায়ী পরিবর্তন আনা কঠিন হয়।
জেন-জির আন্দোলন দ্রুত বিশ্বব্যাপী আকার নিতে সক্ষম। এই শক্তি একদিকে যেমন আশাব্যঞ্জক, অন্যদিকে এটি একটি বড় প্রশ্ন উত্থাপন করে—এই তরুণ প্রজন্মের সক্রিয়তা কি সত্যিই মূলধারার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে, নাকি কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের সুবিধা দেয়?
দ্রুতগতির, অনলাইন-ভিত্তিক আন্দোলনের কিছু বৈশিষ্ট্যই এই অবস্থার কারণ। প্রথমত, স্বল্পমেয়াদি এবং ভাইরাল প্রকৃতি। হ্যাশট্যাগ, অনলাইন পিটিশন বা ফ্ল্যাশ মোবিলাইজেশন কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ সমর্থক জোগাড় করতে পারে। কিন্তু এই সংহতি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি নয়। তাই সরকার বা করপোরেশন সহজেই সময় পার করে এই চাপকে প্রতিহত করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করা সহজে নজরদারির আওতায় আসে। আগের জামানার আন্দোলনগুলো গোপনীয়ভাবে সংগঠিত হত। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সব কর্মকাণ্ড সহজে ট্র্যাক করা যায়, যা কখনো কখনো অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
তৃতীয়ত, বড় করপোরেশনগুলোও জেন-জির শক্তি ব্যবহার করতে শিখেছে। তারা প্রায়শই আন্দোলনের ভাষা বা প্রচারণাকে নিজস্ব পণ্য বা ব্র্যান্ড ইমেজ উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করে, কিন্তু মূল সমস্যা বা কাঠামোগত পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। উদাহরণস্বরূপ, পরিবেশ বা সামাজিক ন্যায় সংক্রান্ত দাবিতে তারা শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন, প্রচারণা বা সংক্ষিপ্ত উদ্যোগ নেয়—বাস্তব অর্থে পরিবর্তন আনা হয় না।
ফলে, জেন-জির সক্রিয়তা অনেক সময় এক ধরনের চাপমুক্তি বা ‘প্রেশার রিলিজ’ হিসেবে কাজ করে। এখানে মানুষ মনে করে যে সে আন্দোলন করছে, কিন্তু মূল কাঠামোগত শক্তি অক্ষত থাকে। এতে সমাজের মধ্যে একভাবে শুধু সমাজের সচেতনতা বাড়ায়, কিন্তু ক্ষমতার কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করার বাস্তব প্রভাব থাকে সীমিত।
সংক্ষেপে, জেন-জির দ্রুতগতির আন্দোলন যেমন নতুন সম্ভাবনার দিক দেখায়, তেমনি এটি ক্ষমতাধরদের কাছেও তা সুবিধাজনক হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, শক্তিশালী সংগঠন এবং স্থায়ী পদক্ষেপ ছাড়া এই অনলাইনভিত্তিক আন্দোলন কতটা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে তা এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
আজকাল অনেক সংবাদমাধ্যম, বিশ্লেষক এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক জেন-জিকে একটি বিপ্লবী প্রজন্ম হিসেবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে। এই প্রজন্ম দ্রুত আন্দোলন শুরু করতে পারে, বিশ্বের নানা প্রান্তে সমর্থক জোগাড় করতে পারে, এবং অনলাইনে ভাইরাল হতে পারে। সব মিলিয়ে মনে হয় এই প্রজন্ম ক্ষমতার কাঠামোকে বদলে দিতে পারে। কিন্তু এই প্রশংসার আড়ালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা লুকিয়ে আছে।
জেন-জির অনলাইন ভিত্তিক আন্দোলনের অনেক অংশ ‘পারফর্মেটিভ’ বা দেখানোর জিনিস। অর্থাৎ অনেক যুবক-কিশোর আন্দোলনে যোগ দেয় শুধু যাতে তারা নিজের নৈতিকতা বা সচেতনতা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু এই অংশ নেওয়া অনেক সময় স্থায়ী প্রভাব ফেলে না।
এই প্রজন্মের যুবকদের মধ্যে ব্রেকডাউন বা বার্নআউটের ঝুঁকি বেশি। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটের প্রতিটিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলে মানসিক ও শারীরিক চাপ বেড়ে যায়। ফলে তারা পুরো আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়।
জেন-জির আন্দোলন প্রায়শই বিভক্ত হয়। অনলাইনে হাজারো ছোট ছোট ক্যাম্পেইন চলতে থাকে, যা একত্রিত হয় না। এতে অনেক সময় বড় উদ্দেশ্য বা সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব ছোট হয়ে যায় এবং মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এই কারণে, জেন-জিকে শুধুমাত্র একটি বিপ্লবী, বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী প্রজন্ম হিসেবে দেখানো হলে সেই ধারণা ভুল হতে পারে। সামাজিক পরিবর্তন আসলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সংহত সংগঠন, এবং ধৈর্যশীল প্রচেষ্টা ছাড়া সম্ভব নয়। জেন-জির শক্তি এবং সম্ভাবনাকে প্রশংসা করা যায়। এই প্রজন্মের শক্তি দিয়ে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে চাইলে পরিকল্পনা, সংগঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অপরিহার্য।
এই প্রজন্মের আন্দোলন, ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রতীক—সব মিলিয়ে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যাকরণ নির্মাণ করছে। এই ব্যাকরণকে বুঝতে হলে আমাদের প্রবেশ করতে হবে তাদের নির্মিত বাস্তবতায়, তাদের ডিজিটাল ছন্দে এবং তাদের মনোজাগতিক প্রতীকতত্ত্বে। অন্যথায়, আমরা শুধু তাদের সহিংসতা দেখব, কিন্তু তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ব
২ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা থাকার কথা না, তবে তাঁর পরিবারের লোকজন নিশ্চয় এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তাঁদের কথা সত্য বলে ধরে নিলে, হুমায়ূনের আত্মজীবনীর প্রায় ৬০ শতাংশই মিথ্যা হিসেবে অবিহিত হবে।
৩ ঘণ্টা আগেপাহাড় প্রশ্নে বাংলাদেশে ‘জাতীয়তাবাদ’ যে সবচেয়ে প্রকট আকারে হাজির হয়, তার আরেকপ্রস্থ নজিরও দেখা গেল। সঙ্গে আর্মি বা সেনাপ্রীতিও।
১ দিন আগেআজকের পেইড অ্যাক্টিভিজম আরও জটিল ও আন্তর্জাতিক। এখন আন্দোলন মানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে প্রচার, পেশাদার সমন্বয়, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, আইনি সহায়তা। গরিব বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে যখন নিজস্ব সম্পদ নেই, তখন দাতাদের অর্থে তাদের কণ্ঠ তুলে ধরা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।
২ দিন আগে